একশ বছর পর
কুরআনের আলো বিলাল হোসাইন নূরী জুন ২০২৩
দাদার কবরের পাশ দিয়েই মসজিদে আসা-যাওয়ার পথ। বাবা যতবার মসজিদে আসেন, ততবারই একটু দাঁড়ান সেখানে। সালাম পাঠান দাদার কাছে! কখনো কখনো তাঁর চোখ দুটি ভিজে ওঠে। কখনো কেঁদে উঠেন হাউমাউ করে! নাজিমের বুকেও তখন উথালপাথাল ঝড় ওঠে নদীর ঢেউয়ের মতো। দাদার মুখটা ভাসতে থাকে চোখের আয়নায়। একদিন সে বলল, বাবা! দাদার সাথে কি আর কখনো দেখা হবে না আমাদের?
অবশ্যই দেখা হবে। জান্নাতে, ইনশাআল্লাহ!
দাদার শরীর তো মাটিতেই মিশে গেছে। আমরাও মিশে যাব একইভাবে! তাহলে কীভাবে আবার আগের মতো হয়ে যাবে সবকিছু? কীভাবে?
বাবা বললেন, যে আল্লাহ প্রথমবার সৃষ্টি করতে পেরেছেন, তিনি দ্বিতীয়বারও পারবেন। একটি গল্প শোনো। তাহলে বুঝতে পারবে, কী নিপুণ তাঁর সৃষ্টির শিল্প!
আল্লাহর এক নেককার বান্দা ছিলেন উজায়ের (আ)। অনেকেই বলেছেন, তিনি নবী ছিলেন। একদিন তিনি এক জনপদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। অত্যাচারী রাজা বখতে নসর যে জনপদকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। সেখানে আর না আছে মানুষ, না আছে বাড়ি-ঘর! এক সময়ের মুখরিত নগরে এখন সুনসান নীরবতা! কী করুণ! কী নির্মম! তিনি বললেন- ‘আল্লাহ এ নগরীকে তার মৃত্যুর পর কীভাবে জীবিত করবেন’? আল্লাহ উজায়েরকে সেখানেই মৃত্যু দিলেন। আবার তাকে জীবিত করে তুললেন তিনি! বললেন- ‘তুমি এভাবে কতদিন ছিলে’? তিনি বললেন- ‘একদিন অথবা তারচেয়েও কম’! আল্লাহ বললেন- ‘বরং তুমি একশ বছর ছিলে! তোমার খাবার ও পানীয়ের দিকে তাকাও। তা পরিবর্তন হয়নি। আর গাধাটার দিকেও তাকাও’। (সূরা আল-বাকারা : ২৫৯)।
গাধাটার মৃত্যু হয়েছিল। তার হাড়গোড় ডানে-বামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। বাতাস সেগুলো এক জায়গায় নিয়ে আসে। তারপর একটির সাথে আরেকটি জোড়া লেগে যায়! উজায়ের (আ)-এর চোখের সামনেই তৈরি হয়ে যায় এক কঙ্কালের গাধা! এরপর আল্লাহ তা গোশত দিয়ে আবৃত করে দিলেন। ফেরেশতা এসে নাকে ফুঁ দিতেই গাধাটা জীবিত হয়ে উঠল! উজায়ের (আ)-তো আগে থেকেই জানতেন, আল্লাহ সবই পারেন। এবার আল্লাহ সরাসরি দেখালেন- তিনি কীভাবে মৃতকে জীবিত করেন!
নাজিম বলল, সুবহানাল্লাহ!
বাবা বললেন, এভাবেই আমরা আবার জীবিত হয়ে উঠব! আবার আমাদের দেখা হবে। কথা হবে। ভালো কাজ করলে জান্নাতে, না হয় জাহান্নামে!
আরও পড়ুন...