কুরআনের আলো
কুরআনের আলো বিলাল হোসাইন নূরী নভেম্বর ২০২৪
অল্পতেই খুশি
নাহ্!
এ কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। এত শখের গাড়িটা বাবা শেষমেশ বেচেই দেবেন? এ গাড়িতে করেই সে স্কুলে আসা-যাওয়া করতো। এখন সে সহপাঠীদের মুখ দেখাবে কীভাবে? কী ভাববে তারা? আবার হাসাহাসি করবে না তো তাকে নিয়ে? এখন যদি রিকশায়ই চড়তে হয়, মান-ইজ্জত আর কিছু থাকবে?
আরিফ বললো- আচ্ছা বাবা! আমাদের নতুন গাড়ি আসছে তাহলে?
বাবা হাসলেন। বললেন- মানুষের দিন সবসময় একরকম যায় না। তুমি তো জানোই, তোমার দাদিজানের চিকিৎসার জন্য আমাদের এখন অনেক টাকার প্রয়োজন। তাই গাড়ির মায়া আপাতত ছাড়তে হচ্ছে। এটা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পরীক্ষা। তাই সবর করতে হবে আমাদের। শুকরিয়া আদায় করতে হবে তাঁর দেওয়া নেয়ামতের। তা পরিমাণে যত অল্পই হোক! দেখো, কুরআনে তিনি কী বলেছেন- “আর মানুষ তো এমন যে, যখন তার রব তাকে পরীক্ষা করেন, অতঃপর তাকে সম্মান এবং অনুগ্রহ প্রদান করেন, তখন সে বলে- ‘আমার রব আমাকে সম্মানিত করেছেন’। আর যখন তিনি তাকে পরীক্ষা করেন এবং তার রিজিক সংকুচিত করেন, তখন সে বলে, ‘আমার রব আমাকে অপমানিত করেছেন’।” (সূরা আল ফাজ্র : ১৫-১৬)
আরিফ বললো, আসতাগফিরুল্লাহ! বাবা! সত্যি সত্যিই আমি বিষয়টাকে অপমানজনক ভেবেছিলাম। এ আয়াত আগে থেকে জানা থাকলে হয়তো এমন অনুভব হতো না।
বাবা খুশি হলেন। বললেন- যাদের গাড়ি নেই, তাদের জীবনও তো কেটে যাচ্ছে। তাদেরও আনন্দ আছে। সুখ আছে। যাদের থাকার জায়গা নেই, তারাও ফুটপাতে কী গভীর ঘুমে ডুবে যায়! যেন পৃথিবীর কোনো কোলাহল তাদের ছুঁতেই পারে না। এ সুখ তোমার কাছে তখনই ধরা দেবে, যখন তুমি অল্পতেই খুশি থাকতে পারবে। হারিয়ে যাওয়া জিনিসের জন্য হা-হুতাশ বাদ দিতে পারবে। আল্লাহর ইচ্ছাকে মেনে নিতে পারবে। তাঁর ওপর ভরসা করতে পারবে। তখন দেখবে তোমার কোনো অভাব নেই। দুঃখ নেই। মনের জানালায় অবিরাম বইছে হাজার ফুলের সুবাসমাখা ফুরফুরে হাওয়া।
মহানবী (সা) একজনকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন, এই সম্পদ শ্যামল সুস্বাদু। যে তা লোভহীন মনে গ্রহণ করে, তার জন্য তা বরকতময় করা হয়। আর যে লোভসহ গ্রহণ করে, তার জন্য তা বরকতময় করা হয় না। যেন সে এমন, খায় কিন্তু ক্ষুধা মেটে না।
আরিফ বললো, আমার আর কোনো দুঃখ নেই বাবা!
বাবার চোখে-মুখে তখন বিজলির মতো চমকে উঠছে রাজ্যজয়ের হাসি।
আরও পড়ুন...