ঘুমিয়ে থাকা শব্দগুলো
কুরআনের আলো বিলাল হোসাইন নূরী জানুয়ারি ২০২৫
এ শহর আর ভালো লাগছে না। ইট-পাথরের এ জনপদে সবকিছু আছে, তবু কী যেন নেই। মাটির মায়া নাহিয়ানকে টেনে নিয়ে যায় দাদাবাড়িতে। তার মনটা পড়ে থাকে লাল শাপলার বিলে, সবুজ পাতার বনে। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে অথই পুকুরে রাজহাঁসের মতো ভেসে থাকতে। মাছরাঙার মতো চুপটি করে বসে থাকতে ঘন ঝোপের আড়ালে। মধ্য-দুপুরে ঘুঘুর করুণ সুর ভীষণ ভালো লাগে তার। ঘুমভাঙা রাতে ডাহুকের ডাক তো আরও প্রিয়।
সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে সবার সাথে মন খুলে কথা বলার স্বাধীনতা।
শহরের শত কোলাহলের মধ্যেও তার পৃথিবীটা যেন একটু ছোটো। বাংলার চেয়ে ইংরেজিতে কথা বলতেই সবাই জোর করেন। কোনো কোনো শিক্ষক তো নিয়মই করে দিয়েছেন, বাংলায় কথা বললে জরিমানা দিতে হবে। আবার বাসায় ফিরলেও বিপদ। আব্বু-আম্মুও তার সাথে ইংরেজি বলতে চান প্রায় সময়ই। অথচ তারাই তাকে শিশুকাল থেকে বাংলা শিখিয়েছেন। তবে সুখের কথা হচ্ছে, ভুল বললেও কেউ ভুল ধরেন না। এভাবে বলতে বলতেই নাকি শেখা হয়ে যাবে। নাহিয়ান এখন ভালো ইংরেজি বলতে পারে, এ কথাও সত্য।
কতদিন হলো নিজের ভাষায় কথা বলা হয় না!
নাহিয়ান আব্বু-আম্মুকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে সোজা চলে এলো দাদাবাড়ি। এখানে আর ইংরেজির বালাই নেই। এখানে সে বাংলায় হাসে, বাংলায় কাঁদে। বাংলায় গান গায়। চাচাতো ভাইদের সাথে জমে ওঠে তুমুল আড্ডা। যখন-তখন শুরু হয়ে যায় কিসসা-কাহিনির উৎসব।
নাহিয়ানের এমন আনন্দ দেখে সবার সামনে আব্বু বললেন, সত্যি! মাতৃভাষাই আমাদের প্রাণ। এ ভাষাতেই সব অনুভূতি নিঃসংকোচে প্রকাশ করা যায়। এজন্য সবার আগে নিজের ভাষাটাই শেখা উচিত ভালোভাবে। প্রয়োজন না হলে অন্য ভাষায় কথা বলার কী দরকার? আল্লাহ বলেছেন- “আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আকাশ ও জমিনের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। এতে তো অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য।” (সূরা আর-রুম : ২২)
আর আল্লাহ তায়ালা কিন্তু নবী-রাসূলদেরও তাঁদের নিজ নিজ ভাষার অধিবাসীদের মধ্যে প্রেরণ করেছেন। যাতে মানুষদের তারা সহজভাবে বোঝাতে পারেন।
নাহিয়ানকে বাবা বললেন, এখন থেকে বাসায়ও আমরা বাংলাই বলব ইনশাআল্লাহ। সবসময়।
নাহিয়ান বলল- আহ, কী শান্তি!
তার বুকের ভেতর ঘুমিয়ে থাকা মিষ্টি-মধুর শব্দগুলো যেন ভোরের পাখির মতো কিচিরমিচির করে জেগে উঠল।
আরও পড়ুন...