ছোটদের প্রিয় কবি ফররুখ

প্রচ্ছদ রচনা মুহাম্মদ জাফর উল্লাহ্ অক্টোবর ২০২৪

জাতীয় জাগরণের কবি ফররুখ আহমদ বাংলাদেশের একজন প্রধান কবি। তিনি বড়োদের জন্য যেমন লিখেছেন তেমনি ছোটদের জন্যও দু’হাতে লিখেছেন। এখনো অপ্রকাশিত রয়েছে তাঁর অনেক পাণ্ডুলিপি। ফররুখ আহমদ রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্রের ছোটদের অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন দীর্ঘ সময়। তাই শিশু মানস অনুযায়ী অনেক কিছু তাকে ভাবতে হয়েছে। তিনি নিজে লিখেছেন ছড়া, গান, কবিতা ও কথিকা, অন্যদের দিয়েও লিখিয়েছেন। ছোটদের মন ভরানোর চেষ্টা করেছেন। তার এসব লেখা ‘কচি ও কাঁচা’, ‘টাপুর টুপুর’, ‘খেলাঘর’, ‘সবুজ পাতা’সহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিভাবান এই লেখক তাঁর জন্মের একশ বছর পরও তাই প্রাসঙ্গিক।

শিশু ভাবনায় ফররুখ ছিলেন অন্যদের চেয়ে আলাদা। স্বপ্নময়তা তো ছিলই তাঁর লেখায় সেই সঙ্গে ছিল আদর্শবোধ। তিনি চাননি শিশুরা কারো ওপর নির্ভর হয়ে গড়ে উঠুক। বরং পরের ওপর ভরসা ছেড়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রেরণা দিয়েছেন তিনি। ছোটদের জন্য শুধু চেয়েছেন ¯্রষ্টার সাহায্য। তিনি বলেন-

তোরা চাসনে কিছু কারো কাছে

খোদার মদদ ছাড়া

তোরা পরের উপর ভরসা ছেড়ে

নিজের পায়ে দাঁড়া।

তিনি বিশ্বাস করতেন ¯্রষ্টার ওপর বিশ্বাস ও আনুগত্য ছাড়া কোনো মানুষই বেঁচে থাকতে পারে না, বড়ো হতে পারে না। ফররুখ নিজে এটা বিশ্বাস করতেন এবং শিশু-কিশোরদেরও এ ব্যাপারে উৎসাহ দিতেন। আর ইতোমধ্যে তাঁর জীবনেও একটা বড়ো পরিবর্তন এসেছিল। তিনি মার্কসবাদের দীক্ষা ছেড়ে ইসলামী ভাবধারার প্রতি নিবিষ্ট হয়েছিলেন। অধ্যাপক মাওলানা আবুল খালেক এ ক্ষেত্রে ছিলেন তাঁর আধ্যাত্মিক গুরু। ফররুখ সুষম সমাজ চাইতেন, সম্পদের সুসমবণ্টন চাইতেন। হেরার রাজতোরণকে তিনি আদর্শের প্রতীক বানিয়েছিলেন।

কর্ম জীবনে কবি ফররুখ ছিলেন ঢাকা বেতার কেন্দ্রের একজন দক্ষ স্টাফ আর্টিস্ট ও পাণ্ডুলিপিকার। গীতিকার, আবৃত্তিকার ও পুঁথি পাঠক। প্রতি শুক্রবার বিকেল পাঁচটায় রেডিও পাকিস্তান ঢাকা থেকে প্রচারিত হতো ছোটদের অনুষ্ঠান ‘কিশোর মজলিস।’ পরিচালনা করতেন কবি ফররুখ। এ অনুষ্ঠানের সফল সংগঠকও ছিলেন তিনি।

সেকালে ক’জনের ঘরেই বা রেডিও সেট ছিল। এছাড়া অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্যও শিশু শিল্পীর ছিল দারুণ সংকট। তখনকার কথা বলছি, যখন এদেশে টেলিভিশন চালু হয়নি।

ছোটদের প্রিয় কবি ফররুখ বহু চিন্তা-ভাবনা, পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ‘কিশোর মজলিস’কে ফুলে ফলে সুশোভিত করে তোলেন। অনুষ্ঠানের আগে ও পরে সুমধুর উচ্চারণে ভেসে আসতো তাঁর অভিভাষণ।

“¯েœহের ছোট বন্ধুরা! অথবা, সোনামণি ভাই-বোনেরা, তোমরা কেমন আছো? আশা করি সবাই ভালো আছো।” এক একদিন এক একটি কবিতার বাছাইকৃত অংশ তিনি আবৃত্তি করতেন। প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে তা আবার বুঝিয়ে দিতেন। এরূপ একটি কবিতা-

শোন হুঁশিয়ার পান্থ সুজন

তোমার চলার পথে গো যদি

গুলশান থাকে, হও শবনম;

সাহারা থাকিলে তুফান হও।

বিভিন্ন জাতীয় দিবস ও ধর্মীয় দিবসের অনুষ্ঠানগুলো হতো খুবই আকর্ষণীয়। ফররুখ সুচিন্তিতভাবে অনুষ্ঠানসূচি সাজাতেন। লিখতেন সুন্দর গান, হাম্দ, না’ত। এতে অংশ নিত ছোট্ট শিল্পীরা।

শিশু শিল্পীদের স্টুডিওতে নিয়ে আসা ছিল তখন খুব কঠিন কাজ। ফররুখকে অফিসের গণ্ডির বাইরেও এজন্য বহু কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। তিনি কখনো নিয়ে আসতেন কোনো সহকর্মীর ছেলেমেয়েকে। কখনো শিক্ষিত কোনো ভদ্রলোককে অনুরোধ করতেন তাঁর সন্তান-সন্ততিকে রেডিওতে পাঠাতে। আবার কখনো পত্র যোগাযোগের মাধ্যমে নতুন সদস্য সংগ্রহ করতেন মজলিসের জন্য।

এই কিশোর মজলিস থেকে বহু প্রখ্যাত কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও শিল্পীর জন্ম হয়। যাঁরা দেশ ও জাতির খেদমতে নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ফওজিয়া খান, সাবিহা মাহবুব, ফারহানা হক, আফসারী খানম, মাহবুবা রহমান, রফিকুল ইসলাম, আতিকুল ইসলাম ও মাসুমা খাতুনের নাম উল্লেখযোগ্য।

শিশু-কিশোরদের তিনি তাঁর হৃদয়ে স্থান দিয়েছেন ঈর্ষান্বিতভাবে। তার প্রমাণ মেলে ছোটদের জন্য লেখা ফররুখের শত শত ছড়া, কবিতা, গান ও হামদ-না’ত।

ইংরেজ কবি ওয়ার্ডস ওয়ার্থ বলেছেন, “ঞযব ঈযরষফ রং ঃযব ঋধঃযবৎ ড়ভ ঃযব সধহ.” আর তাঁর শিক্ষক কবি গোলাম মোস্তফা বলেছেন, “ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা, সব শিশুদের অন্তরে।”

এ দু’কবির মর্মবাণী উপলব্ধি করে ফররুখ বলতেন, “শিশুর মধ্যে নিহিত থাকে বিপুল সম্ভাবনা। আজকের শিশু আগামী দিনের নাগরিক। তারাই পরিচালনা করবে দেশ ও জাতিকে। ছোটবেলা থেকে যদি তাদের আপন কৃষ্টি ও সভ্যতার আলোকে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা না যায়, তবে তা হবে জাতির জন্য চরম মরণাঘাত।”

এ বিশ্বাসকে সামনে রেখে তিনি আমাদের আশপাশের বিবিধ বিষয়, ইসলামের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং প্রচলিত পুঁথি সাহিত্য থেকে সুন্দর সুন্দর উদাহরণ প্রয়োগে রচনা করেন এক একটি ছড়া, কবিতা ও কিস্সা কাহিনী।

ছোটদের জন্য ফররুখের প্রথম বই ‘পাখির বাসা’ বের হয় ১৯৬৫ সালে। প্রকাশ করে বাংলা একাডেমি। ছোটদেরকে কবি এ পৃথিবীর ‘নতুন মানুষ’ রূপে আখ্যায়িত করে তাদের নামে উৎসর্গ করেন ‘পাখির বাসা।’ উৎসর্গিত সে পঙক্তিটি হলো-

নতুন মানুষ এলো যারা

খোদার দুনিয়াতে, 

ছোট্ট আমার পাখির বাসা

দিলাম তাদের হাতে।

পাখির বাসা, মজার ব্যাপার, পাখ-পাখালি, পাঁচ মিশালী, রূপ-কাহিনী, সিতারা ও শাহীন এবং চলার গান এ সাতটি পর্বে বিভক্ত বইটি। যাতে ৪৪টি ছড়া-কবিতা সন্নিবেশিত। অপূর্ব ছন্দে প্রথম কবিতা ‘পাখির বাসা’য় কবি কিশোর মনে দোল ছড়ান এভাবে-

আয়গো তোরা ঝিমিয়ে পড়া দিনটাতে,

পাখির বাসা খুঁজতে যাব এক সাথে।

কোন্ বাসাটা ঝিঙে মাচায়

ফিঙে থাকে কোন্ বাসাটায়

কোন্ বাসাতে দোয়েল ফেরে সাঁঝ রাতে।

অপরের দয়ায় যারা বেঁচে থাকতে চায় তারা কখনো সুখী হতে পারে না। কবি তাই ছোটদের স্বনির্ভরতার ডাক দিয়েছেন রূপক ছড়া ‘চড়–ই পাখির বাসা’য়-

চড়–ই পাখি চালাক তো ভাই

নিজের বাসার ঠিক ঠিকানা নাই,

পরের দালান বাড়ি খুঁজে

থাকে সেথায় মাথা গুঁজে

সবাই তাকে খারাপ বলে

বলে যে, দূর ছাই।

পরের দয়ায় বাঁচতে যারা চায়

দুঃখ তাদের ঘোচানো যে দায় ॥

ছোটদের জন্য কবির এ পরিশ্রম বৃথা যায়নি। ‘পাখির বাসা’ প্রকাশিত হবার পরের বছর ১৯৬৬ সালে আন্তর্জাতিক ‘ইউনেস্কো পুরস্কার’ দেওয়া হয় কবিকে।

১৯৬৯ সালে প্রকাশিত হয় ফররুখের দ্বিতীয় শিশুতোষ কাব্য গ্রন্থ ‘নতুন লেখা’। প্রকাশ করে আহমদ পাবলিশিং হাউস। এ বইয়ের মোট ৬৯টি ছড়া-কবিতায় কবি বাংলার রূপ-প্রকৃতি, ঋতুবৈচিত্র্য, দেশপ্রেম এবং মানব চরিত্রের নানা দোষ-গুণ অপরূপ ভঙ্গিতে তুলে ধরেন। প্রতিটি ছড়া-কবিতায় রয়েছে ছোটদের জন্য বিচিত্র জ্ঞান-সম্ভার আর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ শিক্ষা। যেমন :

বন্ধু নির্বাচন-

“বন্ধু যদি বেড়াও খুঁজে

চিনবে তাকে চুক্ষু বুঝে।”

“লোকটা কেমন?”

মন্দ কি আর 

মন্দ শুধু স্বভাবটা তার

হর হামেশা বাইরে ঘরে

দ্বন্দ্ব-মানে ঝগড়া করে,

হিংসুটে আর কিপ্টে বেজায়

ফূর্তি শুধু পরের কথায়।

ভাষাসৈনিক কবি ফররুখ আহমদ মাতৃভাষা বাংলাকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসতেন। সেই ভালোবাসার সুস্পষ্ট নিদর্শন ছোটদের জন্য লেখা কবির ‘হরফের ছড়া’ বই। বাংলা বর্ণমালাকে শিশুদের কাছে ছন্দে ছন্দে সুখপাঠ্য করে তোলার জন্য তিনি এ বইটি লেখেন।

১৯৬৮ সালে ‘হরফের ছড়া’ প্রকাশ করে বাংলা একাডেমি। আমরা এখানে তিনটি বর্ণের পরিচয় দিচ্ছি-

ক-য়ের কাছে কলমিলতা

কলমিলতা কয় না কথা,

কোকিল ফিঙে দূর থেকে

কলমি ফুলের রঙ দেখে।

ঝ-য়ের পাশে ঝিঙে

ঝিঙে লতায় ফিঙে

ঝিঙে লতা জড়িয়ে গেলো

কালো গরুর শিঙে।

ব-য়ের কাছে বন-বিড়াল

আনলো ডেকে সাত-শিয়াল,

বোল-বোল-বোল আমের বোল

বাদুড় এসে বাজায় ঢোল।

একসময় কবি ছোটদের জন্য নানা বিষয়ে কবিতা রচনা করেন। নাম কবিতাগুচ্ছ। আর সে সব কবিতায় পাখির মুখে আল্লাহর গুণগান প্রকাশ করেন। যেমন তাঁর বুলবুলিকে নিয়ে চার পঙক্তির একটি শিশুতোষ কবিতা-

“বুলবুলি গো বুলবুলি

কোথায় যাবে সুর তুলি?”

বুলবুলি কয়, “খানে কা’বা; কা’বা ঘরে যাই 

চলার পথে খোদার হাম্দ; নবীর তারিফ গাই।

১৯৭০ সালে ছোটদের জন্য ‘ছড়ার আসর’ নামে অনিন্দ্য সুন্দর একটি ছড়ার বই প্রকাশ হয়, যা বাজারে আসার সাথে সাথে নিঃশেষ হয়ে যায়।

প্রতিটি শিশু-কিশোর এমনকি বড়োদের কাছেও প্রাণিজগৎ সম্বন্ধে জানার তীব্র আগ্রহ চোখে পড়ে। এজন্য দেশে দেশে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে অনেক চিড়িয়াখানা। আর চিড়িয়াখানা ছোটদের জন্য এক রহস্যময় পৃথিবী। একটু সুযোগ পেলেই তো সবাই ছুটে যায় চিড়িয়াখানার বিচিত্র জীব-জন্তুকে দেখে নিতে।

ছোটদের জন্য প্রকাশিত ফররুখের ‘চিড়িয়াখানা’ শিশু-সাহিত্যের জগতে এক অনন্য সংযোজন। সুদৃশ্য প্রচ্ছদ, ৩৪টি কবিতার প্রতিটিতে সংশ্লিষ্ট জীব-জন্তুর স্কেচ সংযোজনের সুবাদে ‘চিড়িয়াখানা’ গ্রন্থ সবার কাছে লোভনীয় বস্তুতে পরিণত হয়েছে। ১৯৮০ সালের ১০ জুন কবির ৬২তম জন্ম দিবসে, ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে, রাজশাহী প্রকাশ করে ‘চিড়িয়াখানা।’ এর প্রথম কবিতা-

দেখতে যাব কাজের ফাঁকে

প্রাণীর বাসা জগৎটাকে,

খোদার গড়া এই দুনিয়ায়

কেউ পানিতে, কেউ বা ডাঙ্গায়,

কেউ বা ঘোরে শূন্য হাওয়ায়,

দেখি আজব চিড়িয়াখানায়।

কবি আল্লামা ইকবালের প্রিয় পাখি হলো ‘শাহীন’ আর ফররুখের ‘ঈগল’। কবির প্রত্যাশা আমাদের শিশু-কিশোর-তরুণরা ঈগলের মতো স্বাধীন স্বভাব অর্জন করবে। সুস্বাদু পুষ্টিকর হালাল খাদ্য খাবে। আপন মনে ঊর্ধ্বাকাশ, নীল আসমানে উড়ে বেড়াবে। ঈগলের মতো তাদের দৃষ্টি হবে সুদূরপ্রসারী। শিকার হবে নিশ্চিত। তারা চিত্তে প্রবল শক্তি অর্জন করবে। বুকে থাকবে উচ্চ আশা। সাহসে বলীয়ান এই তরুণ কিশোররা বেঁচে থাকবে সুতীক্ষè দৃষ্টিসম্পন্ন ঈগলের মতো। কবি চিড়িয়াখানা ছড়াগ্রন্থের ঈগল নামক ছড়ায় লেখেন-

ঈগল পাখি, স্বর্ণ ঈগল সকল পাখির রাজা

নীল আকাশে উড়ে যে তার মন থাকে তরতাজা,

উঁচু আশা ঈগল পাখির, সাহস ভরা বুক,

মুক্ত স্বাধীন জীবনে তার নাই ভাবনা দুখ,

পাল্লা দিয়ে ওড়ে ঈগল সবার উপরে;

পাহাড় চূড়ায় বাঁধে বাসা মেঘের শহরে।

চিড়িয়াখানায় প্রকাশিত আরেকটি ছড়া উটকে নিয়ে। মরুভূমির জাহাজ উটকে আমরা খুব ভালোবাসি। এটি আল্লাহর অপার দান। উট আমাদের প্রিয় নবীজিকে আমরণ বহন করেছে। কবি সংক্ষেপে অথচ অত্যন্ত চমৎকারভাবে উটের ছড়ায় লেখেন-

উট চলে ধূ ধূ বালু মরুভূমির পথ ঘুরে,

ভুখ পিয়াসে শান্ত থেকে দূরান্তরে যায় দূরে,

মাথার ওপর গনগনে রোদ আগুন যেন দেয় ঢেলে

মানুষ পিঠে নিয়ে তবু উট চলে দুই চোখ মেলে,

খোদার রহম, মরুভূমির শ্রেষ্ঠ বাহন উট দেখি,

“মরুর জাহাজ” নাম হয় তাই, বন্ধু খাঁটি; নয় মেকি।

ছোটদের প্রিয় কবি ফররুখ ‘আলী বাবার কিস্সা’, ‘আলা উদ্দীনের কিস্সা’, ও ‘সাত মনযিলের কাহিনী’ এ ৩টি গল্পের মাধ্যমে রচনা করেন ‘কিস্সা কাহিনী’ নামক শিশুতোষ কাব্য। ১৯৮৫ সালে এটি প্রকাশ করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। “আলোকলতা” নামে ছোটদের জন্য  তাঁর  লেখা আরো একটি কবিতার বই প্রকাশ করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।

বাংলার বিলে-ঝিলে-মাঠে, নদ-নদী-পুকুরে ও গৃহাঙিনায় ফুটে থাকে বিচিত্র ধরনের ফুল। শাপলা-শালুক, কদম-কেয়া, গোলাপ-ডালিয়া, হাসনাহেনা, রজনিগন্ধা, ঝুমকো-জবা আরো কতশত ফুল। সুসজ্জিত মলাট আর ২৩টি ফুলের ছড়া ছবিসহ ১৯৮৫ সালে ‘বাংলাদেশ শিশু একাডেমি’ ফররুখের ‘ফুলের সজ্জা’ প্রকাশ করে।

উপরোক্ত ৮টি শিশুতোষ গ্রন্থ ছাড়াও ফররুখ ছোটদের জন্য আরো ২৩টি পাণ্ডুলিপি লিখে রেখে যান। যেগুলো এখনো প্রকাশের মুখ দেখেনি। ফলে সুন্দর সুন্দর, শিক্ষামূলক অনেক ছড়া-কবিতা থেকে বঞ্চিত রয়েছি আমরা, আমাদের দেশের লক্ষ-কোটি সত্যসন্ধানী শিশু-কিশোর। সেগুলো হলো-

ছড়ার আসর-২, ছড়ার আসর-৩, পোকা-মাকড়, ফুলের দেশে, পাখির ছড়া, সাত ডাকাত ও হাতেম তায়ী, আলোক লতা, খুশির ছড়া, মজার ছড়া, রং মশলা, জোড় হরফের ছড়া, পড়ার শুরু, ফুলের ছড়া, দাদুর কিস্সা, ছড়া ছবি, হরফ নিয়ে খেলা, হিবিজিবি, কুরআন মঞ্জুষা, আমপারা, সিকান্দার শা’র ঘোড়া, রক্ত গোলাপ, কাব্যগীতি, রাজ-রাজড়া, সাঁঝ-সকালের কিস্সা প্রভৃতি।

ছোটদের জন্য কবি ফররুখ আমৃত্যু দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে যে আনন্দভুবন রচনা করেছিলেন তা বাংলা সাহিত্যে অতুলনীয়। তিনি ছন্দে আনন্দে পরিপূর্ণ করে গিয়েছেন আমাদের শিশুজগৎ। তাঁর এ অবদান বাংলা সাহিত্যে একেবারে বিরল।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ