পাখি-পাগল দুই বোন
গল্প আবদুল লতিফ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সাবা ও সুহা পাখি-পাগল দুই বোন। পাখিদের প্রতি তাদের ভালোবাসা অফুরান। একবার দু’জন মিলে তাদের বাবার কাছে খাঁচায় পোষার জন্য একজোড়া ঘুঘু পাখি কিনে দেওয়ার আবদার করেছিল। কিন্তু বন্য পাখি পোষা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ বলে বাবা তাদের দু’টি লাল মোরগ কিনে দিলেন। তাতেই দুই বোন ভীষণ খুশি হলো। খুব দ্রুতই মোরগগুলো পোষ মেনে নেয়। তারপর থেকে সারাদিন মোরগ দুটি টো-টো করে দু’বোনের পিছে পিছে ঘুরে এবং তারাও এটা ওটা খাওয়াতে থাকে।
একদিন দাদু বাড়ির বাঁশঝাড়ের ওপর একটা বকের বাসা দেখতে পেল, যাতে বকের বাচ্চাও ছিল। মা পাখিটা যখনই খাবার নিয়ে আসে বাচ্চাগুলো চিঁচিঁ সুর তুলে হাঁ করে থাকে আর মা পাখিটা মুখে খাবার পুরে দেয়। এই দৃশ্য দেখে তারা খুব মজা পায় এবং বাবা-মাকে ডেকে এনে দেখায়। মা মজা করে বলেন, ‘তোমাদেরও ছোটো সময় এমন করে খাওয়ানো হতো।’ এ কথা শুনে তারা একটু লাজুক হাসি হাসলো। সঙ্গে বাবা-মাও হাসলেন। এভাবে যখনই চিঁচিঁ শব্দ শুনে, তখনই দৌড়ে ছুটে যায় বাঁশঝাড়ের কাছে।
বকের ছানাগুলো পেড়ে দেওয়ার জন্য দু’বোন মাঝে মাঝে বাবাকে অনুরোধ করতো আর বাবা তাদের বুঝিয়ে বলতেন, ‘ছোটো ছানাগুলো তাদের মায়ের আদর ছাড়া বাঁচতে পারবে না।’
এরই মধ্যে এক বিকেলে বাবা গ্রামের বাজারে গিয়ে দেখতে পেলেন, এক ছেলে একটা বকপাখি ফাঁদ পেতে ধরে খাঁচায় করে বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছে। অনেকেই শুধু দেখছে, কেনার প্রতি কারো তেমন আগ্রহ নেই। কেউ দাম জিজ্ঞেস করলেও পাল্টা কোনো দাম না বলেই চলে যাচ্ছে। তা দেখে মেয়েদের আবদারের কথা মনে পড়তেই ছেলেটার কাছ থেকে খাঁচাসহ বকটাকে কিনে নিলেন আর চিন্তা করলেন পাখিটা নিয়ে কয়েকদিন খেলাধুলার পর বাচ্চাদের বুঝিয়ে ছেড়ে দেবেন।
বাড়িতে ফিরতেই বক পাখিটা দেখে সুহা-সাবা দু’জনেই খুশিতে আটখানা। তারা ব্যস্ত হয়ে পড়লো বকের খাবার জোগানো নিয়ে। বক পাখি কী কী খায় তা জানতে ইউটিউবেও খুঁজতে শুরু করলো।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে, বক পেয়ে বিকেলের পর বাঁশঝাড়ের বকের ছানাদের কথা ভুলেই গিয়েছিল তারা। কিন্তু বকপাখিটা অস্থির চিত্তে শুধু ডাকাডাকি করছে কিছু খাচ্ছেও না। একসময় লক্ষ করলো বাঁশঝাড়ের বকের ছানাগুলোও চিঁচিঁ করছে। সারারাত খাঁচার পাখিটার সাথে সাথে বাঁশঝাড়ের ছানাগুলোও চিঁচিঁ করেছে। কিন্তু এর আগে রাতে কখনো ছানাগুলোর শব্দ শোনা যায়নি।
খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেই বাবা বাঁশঝাড়ের ছানাগুলো দেখতে গেলেন। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে লক্ষ করলেন ছানাগুলো শুধু চিঁচিঁ করেই যাচ্ছে, অন্যদিনের মতো মা পাখিটা খাবার নিয়ে আর আসছে না। ততক্ষণে বুঝতে পারলেন, ঘরে যে বক পাখিটা খাঁচায় বন্দি সেই পাখিটাই আসলে বাঁশঝাড়ের ছানাগুলোর মা, যে কিনা ছানাদের জন্য খাবার আনতে গিয়ে শিকারির ফাঁদে পড়ে এবং সেই পাখিটাই তিনি কিনে এনেছেন। সুহা এবং সাবাকে বিষয়টা বুঝিয়ে বলার পর তারাও বুঝতে পারে। তখন খাঁচার পাখিটাকে বাঁশঝাড়ের কাছে নিয়ে যেতেই ছানাগুলোর সাথে খাঁচার পাখিটাও অস্থির হয়ে ডাকতে লাগলো। যেই খাঁচার দরজা খুলে দিলেন, অমনি খাঁচার পাখিটা উড়ে বাঁশঝাড়ে ছানাদের কাছে যেতেই সবার ডাকাডাকি থেমে গেল।
বাবা সাবা ও সুহাকে বললেন, ‘দেখো তোমাদের মা তোমাদের রেখে দূরে কোথাও গেলে তোমাদের যেমন কষ্ট হয়, পাখির ছানাগুলোরও তেমন কষ্ট হচ্ছিল। তোমরা যেমন সবসময় ঘরে থাকা পছন্দ করো না; পাখিরাও তেমনি খাঁচায় বন্দি থাকতে পছন্দ করে না। সুহা এবং সাবার চোখ জলে টলমল করছিল। তারা বলল, ‘বাবা, এখন থেকে আমরা আর কোনো পাখি খাঁচায় বন্দি করে রাখবো না।’
আরও পড়ুন...