প্রথম কাতারের সুখ
হাদীসের আলো বিলাল হোসাইন নূরী জুলাই ২০২৪
নাবিলের কাছে নানাবাড়ি মানেই খুশির বাগান। তারার মাহফিলের মতো ঝলমলে এক স্বপ্নপুরী। যখনই সে নানাবাড়ি আসে, কাদাখোঁচা পাখির মতো খুঁজে আনে স্মৃতির নুড়ি। তাছাড়া তার শৈশবের একটা বড়ো অংশ কেটেছে নানাবাড়ির আঙিনায়। কত মায়া, কত সুখ মিশে আছে তার বুকের নরম জমিনে, এ কথা সে ছাড়া আর কে জানে? এই তো, এবারও বেড়াতে এসে তার মনে পড়ে গেল নানার পাশে শুয়ে আরবি হরফের মাখরাজ পড়ার কথা। ছোটো ছোটো আওয়াজে নানা বলতেন, আর নাবিল তার সাথে কণ্ঠ মেলাতো!
নাবিল বললো, নানা, তোমার কি মনে পড়ে এসব? নানা হেসে বললেন, কী বলে পাগলটা! এই দু’দিন আগের কথা মনে থাকবে না? আচ্ছা, তোর কি মনে পড়ে? একবার গাছে উঠে আর নামতে পারছিলি না। তখন নানা নানা বলে চিৎকার করছিলি? নাবিল এবার হেসে উঠলো। বললো, জি নানা, এরচেয়ে মধুর স্মৃতি আর কী হতে পারে! নানা বললেন, মধুর না বিধুর মাটিতে পড়ে গেলেই বুঝতি!
কথা বলতে বলতেই নানা উঠে দাঁড়ালেন। বললেন, চল মসজিদে যাই!
নাবিল অবাক হলো। বললো, এখনও তো জুমার আজানই হয়নি। একটু পরে বের হলেই তো হয়। নানা বললেন, আজান হোক বা না হোক, প্রথম কাতারে জায়গা পেতে হবে। শুধু জুমার নামাজে নয়, প্রত্যেক নামাজেই এই প্রতিযোগিতা থাকা উচিত। নবীজি কী বলেছেন, শোনো- ‘আজান দেওয়া এবং প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর মধ্যে কী মর্যাদা রয়েছে মানুষ যদি জানতো, তা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনে তারা লটারি করতো।’ (বুখারি, মুসলিম)
সুবহানাল্লাহ! প্রথম কাতারে এতটাই ফজিলত? কিন্তু নানা, কিছু মানুষকে তো প্রথম কাতার থেকে রীতিমতো পালাতে দেখি। সামনের কাতারে জায়গা খালি থাকলেও কেউ কেউ নিজে না গিয়ে তার পেছনের কাউকে আহ্বান করে।
নানা বললেন, তারা আর কোনোদিনই এগোতে পারে না। জীবনের সব কাজে তাদের জায়গা পেছনে, একেবারে পেছনে। নবীজি সাহাবিদের প্রথম কাতার থেকে পিছিয়ে যাওয়া দেখে বলেছিলেন, ‘এগিয়ে এসো, অতঃপর আমার অনুসরণ করো। আর যারা তোমাদের পরে আছে, তারা তোমাদের অনুসরণ করুক। মানুষ সবসময় পিছিয়ে যেতে থাকে, শেষ অবধি আল্লাহ তাদের পিছিয়েই দেন।’ (মুসলিম, নাসায়ি) যারা সালাতে প্রথম, তারা দুনিয়া-আখিরাতে প্রথমই থাকবে ইনশাআল্লাহ!
নাবিল আর বসে থাকতে পারলো না। বললো, আমি কেন পিছিয়ে থাকবো নানা? আজ দেখবো, কে প্রথম হয়! তুমি না আমি!
- বিলাল হোসাইন নূরী
আরও পড়ুন...