বিশ্বের বিস্ময় মক্কা রয়েল ক্লক টাওয়ার
প্রচ্ছদ রচনা মুহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম নভেম্বর ২০২৩
বর্তমান বিশ্বের অন্যতম আলোচিত ও নান্দনিক স্থাপনা মক্কা রয়েল ক্লক টাওয়ার। মক্কা নগরীতে অবস্থিত ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র মসজিদ হারাম শরিফের দক্ষিণ প্রবেশপথ সংলগ্ন এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে এটি। শৈলী, সৌন্দর্য ও আভিজাত্যে, পৃথিবীর অন্যতম আকর্ষণীয় স্থাপনা এই মক্কা ক্লক টাওয়ার। হজ ও ওমরাহ করতে আসা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের কাছে এটি বিশেষ আকর্ষণ।
১৭ কিলোমিটার দূর থেকে সময় গণনা করা যায় এই ঘড়ির। সুইস ও জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশের ২৫০ জন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে, ৩৬ হাজার টনের এই ঘড়িটি স্থাপন করতে সময় লেগেছে ৮ বছর। ঘড়ির ওপরের অংশের ওজন ১২ হাজার টন। মাটি থেকে ৬০১ মিটার উচ্চতায় স্থাপন করায়, রাতে ৩০ মিলিমিটার দূর থেকে দেখা যায় এই ঘড়িটি। চন্দ্র পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র, জাদুঘর এবং হজ ও ওমরাহ পালনকারীদের জন্য অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত তিন হাজার কক্ষ রয়েছে এই টাওয়ারে।
২০০৪ সালে এই টাওয়ারের নির্মাণকাজ শুরু হয়ে, শেষ হয় ২০১১ সালে। ২০১২ সালে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় এই রয়াল ক্লক টাওয়ারের। ৮০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই টাওয়ারে ১০ হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারে। টিকেট কেটে প্রবেশ করলে ঘড়ির সকল যন্ত্রপাতিসহ, সকল তথ্য জানা যায়।
ঘড়িটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, যারা কানে কম শোনেন এবং কথা বলতে পারেন না তারা যেন দূর থেকে ঘড়ির কাটা দেখে নামাজের সময় বুঝতে পারেন। আর সেজন্য দিনে সাদা কালো আর রাতে সাদা সবুজ রঙ ধারণ করে এই ঘড়ি। এটি দেখতে গিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মুসলিমগণ।
ঘড়িটির ওপরে রয়েছে ৯৩ মিটার দীর্ঘ অগ্রচূড়া এবং স্বর্ণালি মোজাইক ও ফাইবার গ্লাসের তৈরি ৩৫ টন ওজনের নতুন চাঁদ। টাওয়ারের নিচ থেকে ওপরে বিভিন্ন কৌশলগত স্থানে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বহু লাউড স্পিকার স্থাপন করা হয়েছে, যা সাত কিলোমিটার দূর পর্যন্ত আজান ও নামাজের ধ্বনি প্রচার করতে পারে।
আবরাজ আল-বাইত
পবিত্র মসজিদে হারাম শরিফ সংলগ্ন সাতটি আকাশচুম্বী ভবন নিয়ে দ্য আবরাজ আল-বাইত কমপ্লেক্স গঠিত। মক্কা রয়েল ক্লক টাওয়ার এই কমপ্লেক্সেরই অংশ। এই সবগুলো ভবনই সৌদি সরকারের মালিকানাধীন। এই কমপ্লেক্স দেশটির সৌদ রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আবদুল আজিজের স্বপ্ন পূরণের একটি প্রকল্প। তিনি চেয়েছিলেন পবিত্র মক্কাকে একটি আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে, যেন প্রতি বছর সেখানে আসা হজযাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে হজ সম্পন্ন করতে পারেন।
সাতটি অট্টালিকার মধ্যে ঠিক মাঝখানেরটি হলো মক্কা রয়েল ক্লক টাওয়ার। বর্তমানে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু ক্লক টাওয়ার। এছাড়া এটি পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম ভবন। অন্যান্য স্থাপনা মিলিয়ে এটি পৃথিবীর পঞ্চম উচ্চতম নিদর্শন।
সাত টাওয়ারের কমপ্লেক্সটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মসজিদ এবং মুসলিমদের পবিত্রতম স্থান মক্কার গ্রেট মসজিদের পাশেই ৩০০ মিটার দূরে অবস্থিত। বিশাল প্রকল্পের এই কমপ্লেক্স নির্মাণ করেছে সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় নির্মাণ সংস্থা বিন লাদেন গ্রুপ। পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল কমপ্লেক্স বলা হয় এটিকে। এটি নির্মাণে প্রায় ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয়েছে। ২০১২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা এই টাওয়ারের বিভিন্ন ফ্লোরের সর্বমোট স্পেস হচ্ছে ১ কোটি ৬১ লাখ ৫০ হাজার বর্গফুট।
বিখ্যাত আজিয়াদ দুর্গ ধ্বংস করে নতুন এই কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়। একসময় মক্কা থেকে পাহাড়ের ওপর ওই দুর্গটি চোখে পড়ত। ওই দুর্গ ছিল অষ্টাদশ শতকে নির্মিত উসমানীয় সাম্রাজ্যের একটি স্থাপত্য নিদর্শন। নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০০২ সালে ওই দুর্গটি সৌদি সরকার যখন ভাঙতে শুরু করে তখন আন্তর্জাতিকভাবে তারা সমালোচনার শিকার হয়। এ ঘটনায় সবচেয়ে বড় প্রতিক্রিয়া দেখায় তুরস্ক।
যেভাবে অনন্য এই কমপ্লেক্স
সাত টাওয়ারের কমপ্লেক্সে সবচেয়ে উঁচু যে টাওয়ারটি তা সৌদি আরবের সবচেয়ে উঁচু ভবন। এর উচ্চতা প্রায় ৬০১ মিটার বা ১ হাজার ৯৭২ ফুট। ভবন ছাড়াও পৃথিবীর অন্যান্য সব স্থাপনা মিলিয়ে বর্তমানে এই টাওয়ারটি উচ্চতার দিক থেকে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। উচ্চতার দিক থেকে এই ভবনটি চীনের শেনঝেনে অবস্থিত পিং অ্যান ফিন্যান্স সেন্টারকে অতিক্রম করে গেছে। তবে, এটি সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা, জাপানের টোকিও স্কাইট্রি, চীনের সাংহাই টাওয়ার এবং চীনের গুয়াংঝুতে থাকা ক্যান্টন টাওয়ার থেকে নিচু। মক্কার ‘মসজিদ আল-হারাম’ এর প্রধান প্রবেশদ্বার আব্দুল আজিজ গেট থেকে দক্ষিণে পিয়াজ্জা এলাকাজুড়ে এটি বিস্তৃত। মসজিদ আল-হারামের ভেতরেই রয়েছে মুসলিমদের কেবলা ও পবিত্রতম স্থান কাবা শরিফ।
কাবা শরিফে হজ করতে আসা মুসলিমদের জন্য আবরাজ আল-বাইত টাওয়ারগুলোতে দুটি বিশাল নামাজ কক্ষ রয়েছে। এই নামাজ কক্ষের একটি পুরুষ অন্যটি নারীদের জন্য নির্ধারিত। সম্মিলিতভাবে এই দুটি কক্ষে এক সঙ্গে ১০ হাজার জন নামাজ আদায় করতে পারেন। সবচেয়ে উঁচু ভবনটিতে একটি পাঁচ তারকা হোটেলও আছে। হোটেলটি পরিচালনা করছে ‘ফেয়ারমন্ট হোটেলস অ্যান্ড রিসোর্টস’। প্রতি বছর মক্কায় যাওয়া হজযাত্রীদের একাংশ এই হোটেলে অবস্থান করে। এ ছাড়াও আবরাজ আল-বাইত কমপ্লেক্সের মধ্যে একটি পাঁচ তলা শপিংমলও আছে। এই মলটি ‘দ্য আবরাজ আল-বাইত শপিংমল’ হিসেবে পরিচিত। এই কমপ্লেক্সের গাড়ি পার্কিং এলাকায় একসঙ্গে কয়েক হাজার গাড়ি রাখা সম্ভব। ২০০৬ সালে প্রাথমিকভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছিল সবচেয়ে উঁচু ভবনটি ৭৩৪ মিটার বা ২ হাজার ৪০৮ ফুট উঁচু হবে। যদিও শেষ পর্যন্ত ভবনটি ৬০১ মিটার উঁচু করা হয়। এই ভবনটি ১ হাজার ৪৮০ ফুট নির্মাণের পর বাকি ৪৯২ ফুটের নকশা করেন জার্মান স্থপতি মাহমুদ বদো র্যাশ এবং তার প্রতিষ্ঠান। এই অংশটুকুতে ব্যবহার করা হয় প্রিমিয়ার কম্পোজিট টেকনোলজি। এই অংশটিতে রয়েছে বিশাল বড় একটি ঘড়ি। এই ঘড়িটি নির্মাণ করেছে জার্মান প্রতিষ্ঠান ‘প্যারট জিএমবিএইচ অ্যান্ড কোং’। সৌদি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সমগ্র কমপ্লেক্সের নির্মাণ ব্যয় ১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
প্রধান হোটেল টাওয়াটির প্রত্যেক পাশেই ঘড়িটি রয়েছে। তাই ওই অঞ্চলে যে কোনো অবস্থান থেকে ঘড়ির সময় চোখে পড়বে। কমপ্লেক্সের সর্বোচ্চ ১ হাজার ২১০ ফুট উঁচু পর্যন্ত মানুষ বসবাস করে। টাওয়ারে থাকা বিশাল ঘড়িটি দৈর্ঘ্য-প্রস্থ সব দিকেই ১৪১ ফুট। বর্তমানে এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ঘড়ি। ভবনের ঠিক সাড়ে চারশো মিটার উঁচু থেকে ঘড়িটি অবস্থান করছে। তাই অবস্থানের দিক থেকেও ঘড়িটি অন্যান্য ঘড়ির চেয়ে সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থান করছে। ঘড়িটির উচ্চতা মিলিয়ে এটি ৬০১ মিটার উঁচু পর্যন্ত বিস্তৃত। ঘড়িগুলো ভবনটির যে অংশটিতে আছে সেই অংশটিতে জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কিত প্রদর্শনী করা হয়। এখান থেকেই ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ দিবস এবং মাসগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ার জন্য চাঁদের ওপর নজর রাখা হয়। এছাড়াও ঘড়িগুলোকে নিয়ন্ত্রণের জন্য ওই অংশটুকুতে একটি স্বয়ংক্রিয় ঘড়ি ব্যবস্থাও রয়েছে।
টাওয়ারগুলোর বৈশিষ্ট্য
আবরাজ আল-বাইত কমপ্লেক্সের মূল ভবনের চারপাশে থাকা চারটি ঘড়ি এতই বিশাল যে প্রত্যেক দিকে অন্তত ২৫ কিলোমিটার দূর থেকে ঘড়িটি দেখা যায়। আয়তনেও এই ঘড়িগুলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ঘড়ি। এর আগে আয়তনের দিক থেকে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অবস্থিত শেভাইর মলে থাকা ঘড়িটি ছিল সবচেয়ে বড়। আবরাজ আল-বাইত কমপ্লেক্সের ঘড়িগুলোর প্রত্যেকটির ব্যাস ১৪১ ফুট। আর এগুলোকে উজ্জ্বল ও সুসজ্জিত করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে প্রায় ২০ লাখ ছোট ছোট এলইডি লাইট। টাওয়ারে উত্তর দিকের ঘড়িটির ঠিক ওপরেই আরবি হরফে লেখা আছে ‘আল্লাহু আকবার’ (আল্লাহ মহান)। অন্য তিন দিকের ঘড়ির ওপরে আরবিতেই লেখা আছে- ‘কালেমা তৈয়্যেবা’ ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। মুহাম্মদ তার প্রেরিত রাসূল।’
ঘড়ির চারপাশে পিলারগুলোর ওপরে রয়েছে চারটি সোনালি গম্বুজ। ঘড়িতে সবুজ এবং সাদা আলোর ব্যবহার করা হয়েছে। সৌদি আরবের পতাকায়ও এই দু’টি রঙ রয়েছে। এ ছাড়াও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সঙ্কেত দেওয়ার জন্য ওই ঘড়িগুলোতে পাঁচবার ফ্ল্যাশ আলো জ্বালানো হয়। এই আলো দেখে ৩০ কিলোমিটার দূর থেকেও নামাজ আদায় করতে পারে মুসলিমরা।
নববর্ষের মতো বিশেষ দিনগুলোতে ওই টাওয়ার থেকে ১৬ ব্যান্ডের উল্লম্ব আলোকসজ্জা করা হয়, যার আলোকরেখা আকাশের ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। ঘড়িগুলো প্রায় ৯ কোটি ৮০ লাখ গ্লাস মোজাইকের টুকরো দিয়ে আবৃত রয়েছে। ঘড়িগুলোর মাঝখানে সোনালি রঙে সৌদি আরবের প্রতীক আড়াআড়িভাবে রাখা দু’টি তলোয়ার দেখা যায়। প্রত্যেকটি ঘড়ির মিনিটের কাঁটা প্রায় ৭৫ ফুট দীর্ঘ। আর ঘণ্টার কাঁটাটি ৫৬ ফুট দীর্ঘ।
ভূমি থেকে টাওয়ারের ১ হাজার ৮৩১ ফুট উঁচুতে একটি পর্যবেক্ষণ ডেকও রয়েছে। ১ হাজার ২৯০ ফুট উঁচুতেও একটি পর্যবেক্ষণ ডেক রয়েছে। এই ডেকটি সাধারণ পর্যটকদের জন্য নির্ধারিত। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল ঘড়িগুলোতে মক্কার স্থানীয় সময় দেখা যাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এগুলোতে আরবের প্রমাণ সময় সেট করে দেওয়া হয়।
টাওয়ারের সবার ওপরে রয়েছে একটি সোনালি রঙের সরু মিনার। এই অংশটি আটতলা বিশিষ্ট। যেখানে একটি বৈজ্ঞানিক কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে এবং একটি প্রদর্শনী ব্যবস্থা রয়েছে। এর চূড়ায় রয়েছে একটি বাঁকা চাঁদ। টাওয়ারের নামাজ কক্ষটি প্রায় ১ হাজার ৫৭০ ফুট ওপরে। টাওয়ারের সর্বোচ্চ তলার ফ্লোরটিকে বলা হয় কন্ট্রোল টাওয়ার ফ্লোর। মক্কার আকাশে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য এই ফ্লোরটিকে ব্যবহার করা হয়। সাধারণত কোনো হেলিকপ্টার এবং উড়োজাহাজ মক্কার আকাশে ওড়ার অনুমতি দেওয়া হয় না। এ ছাড়াও লাইট, শব্দ এবং অন্যান্য আরও কয়েকটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করা হয় সর্বোচ্চ তলাগুলোর মাধ্যমে। এমনকি বাঁকা চাঁদটির মধ্যেও দুটি তলা রয়েছে। এই চাঁদটি প্রিমিয়ার কম্পোজিট টেকনোলজিস ২০১১ সালে দুবাইয়ে তৈরি করেছে। এই চাঁদটি ফাইবার গ্লাসের ওপর গোল্ড মোজাইক করা। এর ওজন প্রায় ৩৫ টন।
প্রিমিয়ার কম্পোজিট টেকনোলজিসের কর্মকর্তা পিউগট জোসেফ বলেন, পাঁচজন প্রকৌশলী এবং কয়েক শ’ শ্রমিক এই চাঁদটির বাস্তব রূপ দিয়েছে। এটি নির্মাণ করতে প্রায় ৯ কোটি আমিরাতি দিরহাম খরচ হয়েছে। আর এটি নির্মাণ করতে প্রায় ৩ মাস সময় লেগেছে। দুবাই থেকে মক্কায় নিয়ে আসার জন্য ১০টি খণ্ডে বিভক্ত ছিল চাঁদটি। ঘড়ির যে বেজমেন্ট সেখানেই চাঁদের টুকরোগুলো জোড়া লাগানো হয়। ২০১১ সালের ৬ জুলাই এটিকে টাওয়ারের শীর্ষস্থানে বসানোর কাজ শুরু হয়।
মিনারের অংশ জুড়ে লাউড স্পিকার সংযুক্ত আছে, যার মাধ্যমে আজান দেওয়া হয়। প্রায় ৭ কিলোমিটার দূর থেকে এর আওয়াজ শোনা যায়। এই অংশ থেকেই দুই ঈদ এবং হিজরি সনের প্রথম দিনটিতে ১৬টি আলোকরশ্মি আকাশের দিকে ফেলা হয়। আর সবুজ এবং সাদা রঙের যে আলো ঘড়িতে শোভা পায় তা মূলত মক্কা এবং এর আশপাশের শহরের বধিরদের জন্য। যেন তারা শুনতে না পেলেও আলো দেখে নামাজের সঠিক সময়টিকে ধরতে পারে।
নির্মাণ দুর্ঘটনা
আবরাজ আল-বাইত কমপ্লেক্স নির্মাণ করতে গিয়ে অন্তত দুটি অগ্নি দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। প্রথম দুর্ঘটনাটি ঘটে ২০০৮ সালে ২৮ অক্টোবর কমপ্লেক্সের ‘হজর’ টাওয়ারে। এই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ৪০০ অগ্নিনির্বাপক কর্মীর প্রায় ১০ ঘণ্টা সময় লেগেছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানা যায়, মাঝরাতের পর হঠাৎ করেই ওই টাওয়ারে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। আর এই আগুনটি দ্রুত ছড়িয়ে যাচ্ছিল। কারণ নির্মাণকাজে অসংখ্য কাঠ ব্যবহার করা হয়েছিল। দ্রুতই পুরো টাওয়ারটি ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। হাসপাতালগুলোতে নেওয়া হয় বাড়তি সতর্কতা। তবে, ওই অগ্নিকাণ্ডে কেউ হতাহত হয়নি। নির্মাণকাজ চলাকালীন ২০০৯ সালের ১ মে দ্বিতীয়বারের মতো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে কমপ্লেক্সের সাফা টাওয়ারে। ওই অগ্নিকাণ্ডেও কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।
বিশাল এই কমপ্লেক্স নির্মাণ করতে গিয়ে বেশ কিছু বিতর্কেরও সূত্রপাত হয়েছিল সে সময়। অষ্টাদশ শতকে নির্মিত উসমানীয় স্থাপনা আজিয়াদ দুর্গ ধ্বংস করা এই বিতর্কের অন্যতম কারণ। তবে, সৌদি পরিকল্পনা অনুযায়ী, সম্পূর্ণ আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তোলা হবে পবিত্র নগরী মক্কাকে। যে জন্য এরই মধ্যে ভেঙে ফেলতে হয়েছে প্রাচীন অনেক স্থাপনা। ২০৪০ সাল নাগাদ সেটা আরও বড় করার পরিকল্পনা আছে সৌদি সরকারের। এখন যেখানে ৩০ লাখ মানুষ একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন, সেই জায়গায় ৭০ লাখ মানুষের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করার চিন্তা করছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন...