বৃষ্টি ও বন্যার দিনে
হাদীসের আলো বিলাল হোসাইন নূরী অক্টোবর ২০২৪
বন্যার খবর আসছে একের পর এক। ফেনী তো ডুবেই গেছে, ডুবে যাচ্ছে আশপাশের কয়েকটি জেলাও। গাছের মাথায় কোনোমতে ঝুলে থাকা মানুষের হাহাকার আর গবাদিপশুর ভেসে যাওয়া দেখে চোখ বন্ধ করে ফেলে মারজিয়া। তার বুকটা ধড়ফড় করে ওঠে। মাথা ঘুরতে থাকে। বারবার নিজেকে সেখানে কল্পনা করে আর ভাবে- না, এসব দৃশ্য সত্য হতে পারে না!
তারপরও তা সত্য। ভারত তাদের ডুম্বুর বাঁধ খুলে দিয়েছে কিছু না জানিয়েই। মারজিয়ার মনে ক্ষোভ জাগে। ঘৃণা জাগে। এ কেমন প্রতিবেশী তারা?
এ দিকে তাদের এলাকায়ও বৃষ্টি হচ্ছে। তুমুল বৃষ্টি। আকাশে মেঘের গর্জন, বিজলির চমক। কোথাও কোথাও হচ্ছে বজ্রপাতও। বাবা বাসার বাইরে। ভীষণ ভয় কাজ করছে মনে। মা বললেন, মারজিয়া! একটি দোয়া শিখে নাও। নবীজি (সা) যখন মেঘ ও বজ্রের আওয়াজ শুনতেন, তখন বলতেন- “আল্লাহুম্মা লা-তাকতুলনা বি-গদাবিক! ওয়া লা তুহ্লিক্না বি-আজাবিক! ওয়া আফিনা কবলা জালিক!
- হে আল্লাহ! তোমার গজব দিয়ে আমাদের মেরে ফেলো না। তোমার শাস্তি দিয়ে আমাদের নিঃশেষ করো না। বরং তার আগেই আমাদের মাফ করে দাও।” (তিরমিজি)
মারজিয়া কয়েকবার পাঠ করল মায়ের সাথে।
মা বললেন- এ সময়ে আমাদের বেশি বেশি দোয়া করতে হবে। নিজেদের জন্য। বানভাসিদের জন্য। আল্লাহ চাইলেই বৃষ্টি থামিয়ে দিতে পারেন। নামিয়ে নিতে পারেন বন্যার পানি। আনাস বিন মালিক (রা) বলেন- একবার নবীজি জুমার খুতবা দিচ্ছিলেন। এক লোক এসে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেছে, আপনি বৃষ্টির জন্য দোয়া করুন। তিনি যেন আমাদের বৃষ্টি দেন।
তিনি দোয়া করলেন। তখন এত বেশি বৃষ্টি হলো যে, আমরা নিজ নিজ ঘরে পৌঁছতে পারছিলাম না। এমনকি পরের জুমা পর্যন্ত বৃষ্টি হতে থাকলো। তখন সে লোকটি বা অন্য কেউ দাঁড়িয়ে বললো- ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি দোয়া করুন, আল্লাহ যেন আমাদের ওপর থেকে বৃষ্টি সরিয়ে দেন। তখন রাসূল (সা) বললেন- হে আল্লাহ! আমাদের আশপাশে বৃষ্টি দিন, আমাদের ওপর নয়। তখন মেঘ ডানে ও বামে ভাগ হয়ে বৃষ্টি হতে লাগলো। মদিনাবাসীর ওপর আর বর্ষণ হচ্ছিল না। (সহীহ বুখারি)
মারজিয়া বললো- সুবহানাল্লাহ! দোয়ার কী অপরিসীম শক্তি!
মা বললেন, হ্যাঁ! বৃষ্টির সময় নবীজি আরও বলতেন- ‘আল্লাহুম্মা সয়্যিবান নাফিআ’- হে আল্লাহ! আপনি যে বৃষ্টি দিচ্ছেন, তা যেন আমাদের জন্য উপকারী হয়। (বুখারি)
মারজিয়া বললো- এ দোয়াটাও আমাকে শিখিয়ে দাও, মা!
- বিলাল হোসাইন নূরী
আরও পড়ুন...