ব্যস্ত শহর ফাঁকা
তোমাদের গল্প নুরুল আজিম ইমতিয়াজ জুলাই ২০২৪
পরের দিন পরীক্ষা ছিল তাই রাত জেগে পড়ছিলাম। পাশে থাকা মোবাইলটা বেজে উঠলো, ভাই নিচে আসেন, চা খেতে যাবো।
মোবাইলে সময় দেখলাম, দেখি ১.১৫ মিনিট। ওসমান ভাই নিচে দাঁড়িয়ে আছে। একটু বিড়ম্বনায় পড়তে হলো। মূল ফটকের সামনে গিয়ে দেখি বন্ধ। দারোয়ানের থেকে চাবি নিয়ে অন্য ফটক দিয়ে বের হলাম। আমি যাওয়ার পর পরই গল্প করতে করতে হাঁটা শুরু হলো। ফুটপাথ দিয়ে হাঁটছিলাম। ব্যস্ত শহরটা পুরোই ফাঁকা। একটু এগোতেই দেখলাম একটা শিশু পাটের বস্তা বিছিয়ে শুয়ে আছে। প্রথমে এড়িয়ে গেলাম পরে ওসমান ভাই ফিরে এসে কথা বললেন।
- নাম কী?
- নিহাল,
- বাড়ি কোথায়?
- সাতকানিয়া
- পরিবারে কে কে আছে?
- মা আছে শুধু।
এ কথা সে কথা বলতে বলতে জানতে চাইলাম, রাতে খেয়েছো?
নিহাল অনেকটা মিন মিন করে বললো- না, খাইনি। পুনরায় জিজ্ঞেস করলে, সে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে- আল্লাহর কসম খাইনি, অনেক ক্ষুধা লাগছে ভাই।
আমি এ কথা শোনার পর থমকে গেলাম। ভাই বিষয়টি বুঝতে পেরে আশপাশে তাকালেন, প্রায় সব দোকানই বন্ধ। একটা খাবার হোটেল খোলা আছে। পথে শুয়ে থাকা ছেলেটাকে নিয়ে গেলেন খাবার হোটেলে। প্লেটে হাত ধোয়ার সময় হাতের নখের ওপর চোখ আটকালো, ইস! দেখে চমকে উঠলাম। তার হাতের পাঁচটা আঙুলের নখই নেই, পচে পচে রক্ত ঝরছে। হাত ধোয়ার পর কেমন জ্বালাপোড়া করছে, জিজ্ঞেস করার মতো শক্তি আমার ছিল না। ওসমান ভাই জিজ্ঞেস করলেন- কোথায় আঘাত পাইছো? সে কিছুই বলছে না, যতটুকু বুঝলাম এগুলো ছোটো না, মানুষের নির্মমতার শিকার, ভাবতেই গা রিনরিন করে ওঠে। ওসমান ভাই খাবারের বিলটা দিলেন, খাওয়া শেষে ছেলেটা আবার সেই জায়গায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।
আমরা রেললাইনের পাশ দিয়ে হাঁটছিলাম। শীতল হাওয়া বইছে। কোনো ধরনের শব্দদূষণ নেই, নেই কোলাহল, মাঝেমধ্যে কোনো একটা পাখি কিচিরমিচির করছে। চাঁদ দেখে দেখে চা খাচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম, পৃথিবীটা কত বিচিত্র! আহা কতেক মানুষের থাকার ঘর নেই, আবার কতেক মানুষের ঘর আছে, থাকার মানুষ নেই। কেউ খাবার অপচয় করে আবার কেউ খাবার খেতে পায় না।
আরও পড়ুন...