ভালো ছেলের গল্প

ভালো ছেলের গল্প

গল্প এনায়েত রসুল নভেম্বর ২০২৪

স্কুল থেকে ফিরে টুলু মাকে বললো, মা, আজ ফুটবল ম্যাচ আছে। আমি মাঠে যাচ্ছি। 

মা বললেন, মাঠে যাচ্ছিস যা। তবে তাড়াতাড়ি ফিরে আসিস। আর একটা কথা, কারো সঙ্গে ঝগড়া করিস না।

টুলু বললো, আচ্ছা মা, ঝগড়া করবো না।

মধ্যপাড়ার সঙ্গে টুলুদের কোনাপাড়ার ফুটবল ম্যাচ। টুলু টিমের ক্যাপ্টেন। সবার খুব আস্থা টুলুর ওপর। সেই আস্থার প্রতি সম্মান দেখিয়ে খেলার হাফ টাইমের আগে টুলু মধ্যপাড়াকে দু’টি গোল দিয়ে ফেললো। তা দেখে সবাই টুলুকে বাহবা দিলো। বললো, টুলুর মতো খেলোয়াড় আর একজনও নেই। টুলুও বুক ফুলিয়ে বললো, সবে তো শুরু। শুধু ধৈর্য ধরে দেখে যাও, আমি ওদের দশটা গোল দেবো।

বললো তো দশটা গোল দেবে, কিন্তু হাফ টাইমের পর যখন খেলা শুরু হলো তখন ঘটলো উলটো ঘটনা। দশ-এগারো মিনিট খেলা হতে না হতেই মধ্যপাড়ার মিঠু কোনাপাড়ার খেলোয়াড়দের বোকা বানিয়ে, ধোঁকা দিয়ে ঝটপট তিনটি গোল দিয়ে ফেললো! 

ফুটবল খেলায় এমন চমক দেওয়া ঘটনা ঘটতেই পারে- আজকেও তেমন ঘটেছে। কিন্তু এতে টুলু অপমানিত বোধ করলো। আর ভাবলো, এই মেজাজ খারাপ করানোর মতো ঘটনাটা মিঠু ঘটিয়েছে। তাই মিঠুকে শায়েস্তা করতে হবে। 

সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর টুলু আর এক সেকেন্ডও দেরি করলো না। এরপর থেকে সে মিঠুর আগে-পিছে ছুটে চলতে লাগলো আর একসময় সুযোগ পেয়ে ওর পা মিঠুর পায়ের ভেতর ঢুকিয়ে দিলো। ফলে মিঠু ডিগবাজি খেয়ে আছড়ে পড়লো। বেচারা নিজ থেকে আর উঠে দাঁড়াতে পারলো না। ওর দলের খেলোয়াড়রা ছুটে গিয়ে চ্যাংদোলা করে ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল। ডাক্তার মিঠুর পা পরীক্ষা করে বললেন, মিঠুর পা মচকে গেছে। ওকে বিশ্রামে থাকতে হবে অন্তত দশ দিন।

খেলা শেষ হতে তখনো বাকি ছিল। কিন্তু রেফারি খেলা বন্ধ করে দিলেন। আর সেই সুযোগে টুলু ভালো ছেলের মতো বাড়িতে ফিরে এলো। ওকে দেখে মা খুশি হলেন। তিনি ভাবলেন, যাক, আজ ছেলেটা সন্ধ্যা না হতেই বাড়ি ফিরে এসেছে।

টুলু ফিরে আসার একটু পরেই মধ্যপাড়ার ছেলেরা এসে টুলুর নামে নালিশ জানালো। বললো, আন্টি, টুলু ল্যাঙ মেরে মিঠুর পা ভেঙে দিয়েছে। মিঠুর খুব কষ্ট হচ্ছে। ওর পা আর ভালো হবে কি না তার কোনো গ্যারান্টি নেই। সব হয়েছে টুলুর জন্যে।

ছেলেগুলোর কথা শুনে মা দুঃখ পেলেন। তিনি বললেন, কাল সকালে টুলুকে নিয়ে আমি মিঠুকে দেখে আসবো। আর টুলুকে আজ বকে দেবো।

মায়ের কথা শুনে টুলু পাশের ঘর থেকে চেঁচিয়ে বললো, তোমার ইচ্ছে হলে তুমি যেও। আমি মিঠুকে দেখতে যাবো না।


দুই.

টুলু আর মা প্রতিদিন একসঙ্গে খেতে বসেন। আজ টুলু বসলো কিন্তু মা বসলেন না। মা খেতে বসছেন না দেখে টুলু জিজ্ঞেস করলো, তুমি খাবে না? 

মা বললেন, খেয়ে কী হবে? বেঁচে থাকতেই ইচ্ছে করছে না। আজ একঘর ছেলের সামনে বলে দিলি তুই মিঠুকে দেখতে যাবি না। এমন অপমান করে কথা বললে কষ্ট হয় না? 

মায়ের কান্না এসেছিল, মা কাঁদলেন। চোখের পানি মুছতে মুছতে মা পাশের ঘরে চলে গেলেন। 

মাকে কাঁদতে দেখে টুলুর মন অনুশোচনায় ভরে গেল। টুলু ভাবলো, মাকে আমি কষ্ট দিয়েছি। তাই মা কাঁদছেন। মাকে কষ্ট দেয় খারাপ ছেলেরা। কিন্তু আমি তো খারাপ ছেলে নই। শুধু কোনটা খারাপ আর কোনটা ভালো কাজ, আমি তা বুঝতে পারি না। তাই মাঝে মাঝে খারাপ কাজ করে ফেলি। তবে এমন ভুল আর করবো না। এখন থেকে মায়ের কথামতো চলবো। তাহলে মাকে আর কাঁদতে হবে না।

সকালে মা যখন মিঠুদের বাসায় গেলেন তখন মায়ের পিছুপিছু টুলুও মিঠুদের বাসায় গেল। ব্যান্ডেজ বাঁধা পা নিয়ে মিঠু শুয়ে ছিল। ওর মাথায় হাত রেখে মা বললেন, টুলু তোমার পা ভেঙেছে। শুনে খুব খারাপ লেগেছে।

মায়ের কথা শেষ হতেই টুলু বললো, আমাকে ক্ষমা করিস মিঠু। তোর সাথে অমন করা আমার উচিত হয়নি। আমি দুঃখিত।

টুলুর কথা শুনে মিঠুর মন থেকে সব দুঃখ মুছে গেল। মিঠু বললো, খেলতে গেলে কত কিছু হয়। সে জন্য রাগ করে থাকার কোনো মানে হয় না। তবে শেষ পর্যন্ত খেলা চললে তোরা আরো একটা গোল খেয়ে যেতিস- সে কথা সত্যি। 

টুলু হেসে ফেলে বললো, সেই ভয় ছিল বলেই তোর পা ভেঙেছি।

টুলুর কথা শুনে মিঠু হা-হা-হা করে হেসে উঠলো। সেই হাসির শব্দ শুনে পাশের ঘর থেকে মিঠুর মা ছুটে এলেন। তিনি দেখতে পেলেন মিঠু আর টুলু হেসে হেসে কথা বলছে। টুলুর মা পাশে বসে আছেন।

মিঠুর মাকে দেখে টুলুর মা বললেন, ভাবী! কাল টুলু যে কাজটা করেছে, সেজন্য আমি ক্ষমা চাইতে এসেছি।

মিঠুর মা বললেন, কি যে বলেন! ওসব ছেলেদের ব্যাপার। সব ভুলে ওরা বন্ধু হয়ে যাবে।

মা বললেন, বন্ধু তো ওরা হয়েই আছে। তবুও কাজটা টুলু অন্যায় করেছে। টুলুর ক্ষমা চাওয়া উচিত। 

টুলু তো পাশেই ছিল। মায়ের কথা শুনে সে বললো, আমি মিঠুর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি, মা। তোমাকে কথা দিচ্ছি, আর কোনো দিনও কাউকে হিংসে করবো না। মেজাজ গরম করে কোনো কাজ করবো না। সবার সাথে মিলেমিশে থাকবো।

টুলুর কথা শুনে মায়ের মন ভালোলাগায় ভরে গেল। আর মিঠুর মা পরম ¯েœহে টুলুকে বুকে টেনে নিলেন।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ