মহাবিশ্বের ধ্বংসতত্ত্ব

মহাবিশ্বের ধ্বংসতত্ত্ব

বিজ্ঞান সরকার হুমায়ুন জুলাই ২০২৪

কীভাবে মহাবিশ্বের জন্ম হয়েছে? এ নিয়ে রয়েছে বিজ্ঞানীদের নানান তত্ত্ব। মহাবিশ্বের জন্মের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য তত্ত্ব হলো বিগ ব্যাংগ তত্ত্ব। এটি বলে যে, সৃষ্টিতে একটি সিঙ্গুলার পয়েন্ট থেকে মহাবিস্ফোরণ ঘটে। এতে সৃষ্ট মহা উত্তাপে ধোঁয়া (হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস) নির্গত হয়। এই ধোঁয়া সাব অ্যাটমিক কণায় রূপান্তরিত হয়। এই সাব অ্যাটমিক কণাগুলো স্ট্রং নিউক্লিয়ার, উইক নিউক্লিয়ার এবং ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক বলের প্রভাবে অ্যাটমে রূপান্তরিত হয়। অ্যাটম হলো বস্তুর মূল সত্তা। অ্যাটম থেকে হলো অণু। অণু থেকে সৃষ্টি হলো ভারী পদার্থ। এই ভারী পদার্থগুলো বস্তুরূপ ধারণ করে ধুলো, গ্রহাণু হিসেবে ছড়িয়ে পড়লো মহাবিশ্বময়। এই বিগ ব্যাংগ তত্ত্বের ওপর মহান কুরআনের স্বীকৃতি লাভের জন্য উদ্ধৃতি হিসেবে বিজ্ঞান এই আয়াতটি ব্যবহার করে থাকে। (সূরা- ৪১: আয়াত- ১১) অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন। যা ছিল ধূম্রকুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও জমিনকে বললেন,  ‘তোমরা উভয়ে আসো ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বললো, আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম।’) 

বস্তুর মধ্যে সৃষ্টি হলো মহাকর্ষ বল। এই টানশক্তি প্রয়োগ করে মহাকাশীয় বস্তুসমূহ একে অপরকে নিয়ন্ত্রণ করে। এরই মধ্যে সৃষ্টি হতে থাকলো পৃথিবীর মতো গ্রহ, উপগ্রহ, ধূমকেতু এবং সূর্যের মতো তারকা- নীহারিকা। মহাকাশ সম্প্রসারিত হতে থাকলো। 

পৃথিবীর মতো গ্রহ, সৌরজগৎ, ছায়াপথ, লোকাল গ্রুপ, ক্লাস্টার, সুপার ক্লাস্টার, ফিলামেন্ট, গ্রেটওয়াল ইত্যাদির সমন্বয়ে সুবিন্যস্ত হলো প্রথম আকাশ। তারপর ২য় থেকে ৭ম আকাশ পর্যন্ত স্তরে স্তরে প্রথম আকাশের মতোই তারা নীহারিকা দ্বারা অন্যান্য আকাশসমূহ সুসমরূপে সজ্জিত হলো। অনেকগুলো গ্রহ-উপগ্রহ নিয়ে যেমন সৌরজগৎ গঠিত; তেমনি অনেকগুলো সৌররাজ্য এবং তারকা নিয়ে গ্যালাক্সি গঠিত।

আমাদের ছায়াপথের নাম মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি। এটি অন্তত ২০০ বিলিয়ন তারার আবাসস্থল। আমাদের হোম গ্যালাক্সি, মিল্কিওয়ে, একটি সুন্দর  সর্পিল গ্যালাক্সি। যার ব্যাস এক লক্ষ আলোকবর্ষ জুড়ে রয়েছে বলে অনুমান করা হয়। আমাদের সৌরজগতের একটি ঘূর্ণন সম্পূর্ণ করতে প্রায় ২০০ মিলিয়ন বছর সময় লাগে। শেষবার যখন আমরা মিল্কিওয়ের এই অবস্থানে ছিলাম, ডাইনোসররা তখন পৃথিবী শাসন করছিল। বেশির ভাগ মানুষই মনে করে আমাদের গ্রহগুলো সূর্যের চারপাশে ঘোরে কিন্তু বাস্তবে আমাদের পুরো সৌরজগৎ মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করে। আমরা ৮২৮০০০ কিমি/ঘণ্টা বেগে চলছি। পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের ৯৩ বিলিয়ন (এক বিলিয়ন মানে এক এর পরে নয়টি শূন্য  (১০^৯)]=একশো কোটি] আলোকবর্ষের অগাধ ব্যাস রয়েছে বলে অনুমান করা হয়।

প্রতিটি গ্যালাক্সিতে প্রতিদিন যেমন আরও নতুন তারা জন্ম নিচ্ছে তেমনি মৃত্যুও হচ্ছে। তবুও, তারকা কীভাবে জন্মলাভ করে সে সম্পর্কে বিশদ রহস্য থেকে যায়। হাবল টেলিস্কোপ  এবং অন্যান্য মানমন্দির থেকে তথ্য ব্যবহার করে গবেষকরা ৩০৪টি সদ্য জন্ম নেওয়া নক্ষত্র নিয়ে গবেষণা করছেন। তাঁরা যা খুঁজে পেয়েছেন, সেটি হলো তারকার গঠন সম্পর্কে  একটি চ্যালেঞ্জ তত্ত্ব। এই তত্ত্বে তারকার জন্ম রহস্য তুলে ধরা হয়েছে। তারকার বেড়ে ওঠা সম্পর্কে বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

আর এই দুনিয়া কীভাবে ধ্বংস হবে?  এ নিয়েও আছে বিভিন্ন তত্ত্ব।

মহাবিশ্বের মৃত্যু সম্পর্কিত একটি ভীতিকর তত্ত্ব হলো ‘বিগ রিপ’। এই অনুমান অনুসারে, অন্ধকার শক্তির (উধৎশ বহবৎমু) কারণে সৃষ্ট মহাবিশ্বের দ্রুত সম্প্রসারণের ফলে  ছায়াপথ এবং নক্ষত্র থেকে শুরু করে গ্রহ-উপগ্রহ, অণু-পরমাণু এবং এমনকি স্থান-কাল পর্যন্ত সবকিছুই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। পবিত্র কুরআনে মহাবিশ্বের ধ্বংস সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেছেন, (সূরা- ২১ : আয়াত-১০৪) ‘সেদিন আমি আকাশকে গুটিয়ে নেবো, যেমন গুটানো হয় লিখিত কাগজপত্র। যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম, সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করবো। আমার ওয়াদা নিশ্চিত, আমাকে তা পূর্ণ করতেই হবে।’

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ