মায়ের কথা বাবার কথা
হাদীসের আলো বিলাল হোসাইন নূরী ফেব্রুয়ারি ২০২৫
হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর চলে এসেছে তাওফিক। হঠাৎ চোখে পড়ল বিশাল এক সরষে ক্ষেত। সরষে ফুল দেখতে তার ভালোই লাগে। তবে আজকের সরষে ফুল তার চোখে ধরা পড়েছে বাগধারার সরষে ফুল হয়ে। তার চোখের সামনে হলুদ আর হলুদ। এ হলুদ যেন শুধুই মন খারাপের।
মা-বাবার সাথে রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে সে। আজ আর ঘরেই ফিরবে না। তবে কোথায় যাবে? একটু পরেই সন্ধ্যা নামবে। তখন কী হবে?
আশা-নিরাশার দোলাচলে দুলছে তাওফিক। এ দিকে রাগও কমছে না। দূর থেকে দেখতে পেল, কে যেন তার দিকে এগিয়ে আসছে। চেনা চেনা লাগছে। ও হ্যাঁ, এ তো শামীম ভাইয়া। তাদেরই এলাকার। ভাইয়া কলেজে পড়েন। খুবই ভালো মানুষ। তাওফিকের বুক তো দুরুদুরু কাঁপছে। ভাবছে, এখানে কী করছি- জানতে চাইলে কী বলব তখন?
যা-ই হোক, সাহস করে সত্য কথাটাই বলে দিলো তাওফিক।
ভাইয়া তার মাথায় হাত রাখলেন। বললেন, আমার জীবনের গল্প শুনবে? তোমার তো একজন মা আছেন, যার সাথে যখন-তখন রাগ দেখাতে পারো। আর আমার তো মা-ই নেই। কেউ যখন ‘মা’ বলে ডাকে, আমি থমকে দাঁড়াই। ভাবি, আহা! আমিও যদি এভাবে ডাকতে পারতাম! কখনো কখনো একা একা মা মা বলে ডাকি। কল্পনা করি, এই তো মা বলছেন- ‘কী রে খোকা! এত ডাকছিস কেন?’ আর বাবাও তো আমার জন্মের দু’মাস আগে আল্লাহর পথে শহীদ হয়ে গিয়েছেন। আমার যদি মা থাকতো, আমি তাকে ভালোবাসতাম আবু হুরাইরাহ (রা)-এর মতো। আর বাবাকে ভালোবাসতাম ফাতিমা (রা)-এর মতো।
ভাইয়ার চোখে হয়তো পানি। কিন্তু তাওফিক তার চোখের দিকে তাকাতে পারছে না। তার চোখও তখন পানিতে ভিজে ঝাপসা হয়ে গেছে।
একটা হাদিস শুনবে? এক সাহাবী জিহাদে যেতে চাইলেন। মহানবী (সা) তাকে বললেন, তোমার মা-বাবা কি বেঁচে আছেন? তিনি বললেন, জি। মহানবী (সা) বললেন, তাহলে তাঁদের কাছে ফিরে যাও। তাদের সেবাই তোমার জিহাদ। (বুখারি-মুসলিম)
তাহলে মা-বাবার কাছেই তো ফিরে যেতে হবে। না-কি? তারা তোমাকে শাসন করতে পারেন। কিন্তু তোমার তো তাদের সাথে রাগ দেখানোর অধিকারই নেই।
তাওফিক আবার পা রাখল বাড়ির পথে। ভাবতে লাগল- আহা! ভাইয়ার সাথে দেখা না হলে কী ভুলটাই না হয়ে যেত তার!
- বিলাল হোসাইন নূরী
আরও পড়ুন...