রাহমাতুল্লিল আলামিন
কুরআনের আলো বিলাল হোসাইন নূরী সেপ্টেম্বর ২০২৪
শরতের বিকেল বলে কথা!
আকাশে সাদা মেঘ আর নদীর তীর জুড়ে সাদা সাদা কাশফুল। যতদূর চোখ যায় সাদা আর সাদা। এসবের মাঝেই আইমান যেন এক শাহজাদা। তার গায়েও ধবধবে সাদা পোশাক। একটা সাদা ঘোড়া থাকলে ভালোই হতো। এদিক-সেদিক ছুটে বেড়াতে পারতো বুনো বাতাসের মতো। এমন পরিবেশে আসতে পেরে আইমান ভীষণ খুশি। বাবাকে বললো- ধন্যবাদ বাবা! বাবা বললেন- ধন্যবাদ নয়, বলো- জাজাকাল্লাহু খাইরান! মানে আল্লাহ তোমাকে কল্যাণকর প্রতিদান দিন! আইমান বললো- ও আচ্ছা। সুন্দর কথা তো!
বাবা বললেন- সুন্দর তো হবেই। এ যে নবীজির শেখানো কথা। তিনি দেখতে যেমন সুন্দর ছিলেন, তাঁর কথাও ছিল সুন্দর। আর তাঁর মন তো ছিল কাশফুলের চেয়েও সাদা। তুলো তুলো মেঘের চেয়েও নরম। তাঁর মনে ঠাঁই পেতো সকল জিন-ইনসান। এমনকি উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলের প্রতিও মমতার শেষ ছিল না তাঁর। এ কারণেই তিনি রাহমাতুল্লিল আলামিন। আল্লাহ বলেছেন, “আর আমি তো আপনাকে সৃষ্টিকুলের জন্য শুধু রহ্মতরূপেই পাঠিয়েছি।” (সূরা আল-আম্বিয়া : ১০৭)
- রহ্মত মানে কী, বাবা?
- দয়া, করুণা। তাঁর উসিলাতেই পৃথিবীতে আল্লাহর দয়া নাজিল হয়। এ দয়ার ভাগ পায় সকলেই। হোক সে মুসলিম অথবা অমুসলিম। আগেকার যুগের নবীদের ওপর যারা ঈমান আনেনি, তারা অনেক বিপদের মুখোমুখি হয়েছিল। কোনো জাতি মরেছিল মাটির নিচে চাপা পড়ে, কেউ পানিতে ডুবে। কেউ মানুষ থেকে হয়ে গিয়েছিল বানর। আরও নানান কিসিমের আজাব এসেছিল পৃথিবীতে। নবীজি আসার পর এসব থেকে সবাই নিরাপদ! যদিও আখেরাতে সবাই সবার আমলের যথাযথ ফল পাবে। নবীজি চাইলেই অভিশাপ দিতে পারতেন। যারা তাকে পদে পদে বিরোধিতা করেছিল। কষ্ট দিয়েছিল। হত্যা করতে চেয়েছিল। নবীজিকে বলা হয়েছিল, আপনি মুশরিকদের ওপর বদ্দোয়া করুন। তিনি বলেছিলেন, “আমি অভিশাপকারী হিসেবে প্রেরিত হইনি। প্রেরিত হয়েছি রহমত হিসেবে।”
আইমান যত শোনে, ততই অবাক হয়।
বাবা বললেন- শত্রুদের সাথে যার এমন আচরণ, বন্ধুদের সাথে তাহলে কেমন হতে পারে? এরই নাম রাহ্মাতুল্লিল আলামিন!
আইমান বললো- বাবা! যদি নবীজিকে দেখতে পেতাম, কতই না ভালো লাগতো! আইমানের কথা শুনে বাবার মনটাও হুহু করে কেঁদে উঠলো। নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন- হ্যাঁ বাবা! যদি নবীজির কথা মেনে চলি, তাহলে তাঁর সাথে একদিন দেখা হবে আমাদের। কথাও হবে। বাবার কণ্ঠ ধরে এলো। ফোঁটা অশ্রু জমলো চোখে।
এদিকে আইমানের চোখও ভিজে উঠলো মনের অজান্তেই!
আরও পড়ুন...