রিজিকের ভার
কুরআনের আলো বিলাল হোসাইন নূরী ডিসেম্বর ২০২৪
খেতে বসলেই তিন-চারটি বিড়াল এসে একসাথে মিঁউ মিঁউ শুরু করে দেয়। ওপরের দিকে মুখ তুলে চারপাশে ঘুরঘুর করে। সবসময় তো আর মন-মেজাজ একরকম থাকে না। তাই মাঝে-মধ্যে তাসনিয়া খুব বিরক্ত হয়। চিৎকার করে মা-কে ডাকাডাকি শুরু করে দেয়। আজ বললো, মা! এগুলো বাসা থেকে বিদায় করো। তোমার লাই পেয়েই এরা মাথায় উঠেছে। কই, অন্য বাসায় তো এমন দেখি না!মা বললেন, তুমি খাবে আর ওরা খাবে না? তুমি তো মাছ খাও, ওরা খায় কাঁটা! তুমি গোশত খাও, আর তোমার ফেলে দেওয়া হাড্ডিই ওদের খাবার! তাহলে অসুবিধা কোথায়? একবারও ভেবে দেখেছো, আল্লাহর কী চমৎকার ইনসাফ?তাসনিয়া বললো, কিন্তু বিড়ালগুলো যে খুব বিরক্ত করে!মা বললেন, এ বাসা থেকে বের করে দিলেও ওদের কিছু আসবে-যাবে না! আল্লাহ তায়ালা-ই ওদের খাওয়াবেন। শোনো তিনি কী বলেছেন- “জমিনে বিচরণশীল এমন কোনো প্রাণী নেই, যার রিজিকের ভার আল্লাহ গ্রহণ করেননি।” (সূরা হুদ : ৬) সুবহানাল্লাহ! একটা পিঁপড়াও কি কোনোদিন না খেয়ে থাকে? অথবা গভীর জঙ্গলের কোনো অতিকায় প্রাণী? আল্লাহ কীভাবে রিজিক দেন, তার একটা গল্প বলেছেন ইবনুল জাওযী (রহ)। এক লোক দেখলেন, প্রতিদিন একটি চড়–ই পাখি এক টুকরো গোশত নিয়ে উড়ে আসে। একটি খেজুর গাছের মাথায় টুকরোটা রেখে আবার চলে যায়। লোকটির মনে কৌতূহল জাগল। সে ভাবতে লাগল, এ পাখি তো খেজুর গাছে বাসা বাঁধার কথা নয়। সে গাছটিতে উঠল। দেখল, গাছের মাথায় একটি অন্ধ সাপ। পাখিটি এসেই আওয়াজ করে। তখন সাপটি তার মুখ খুলে দেয়। তার মুখে গোশত রেখে সে আবার উড়ে যায়!আল্লাহু আকবার!তাসনিয়ার শরীর শিউরে উঠলো। আল্লাহ একটি প্রাণীকে এভাবেও খাবার খাওয়াতে পারেন! মা বললেন, এ যেন আল্লাহ তায়ালার এ কথারই প্রতিধ্বনি- “এমন বহু জীব-জন্তু রয়েছে, যারা তাদের খাবার মজুদ রাখে না। আল্লাহ-ই তাদের রিজিক দান করেন এবং তোমাদেরও! তিনি সবকিছু শোনেন, সবকিছু জানেন।” (সূরা আল-আনকাবুত : ৬০)এ দিকে মায়ের কথা শুনতে শুনতে তাসনিয়ার ভাতমাখানো হাত শুকিয়ে গেছে। অবাক হয়ে সে শুনছিল আর নিজেকে অপরাধী ভেবে মনে মনে লজ্জিত হচ্ছিল। বললো, মা, আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।এরপর হেসে হেসে বললো- কই রে, বিড়ালগুলো কই গেলি?
আরও পড়ুন...