শরতের গ্রাম-বাংলা

শরতের গ্রাম-বাংলা

ফিচার মঈনুল হক চৌধুরী সেপ্টেম্বর ২০২৪

আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের তুলনা হয় না। কেননা আমাদের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এ দেশটিকে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ নিজ হাতে সাজিয়েছেন। এদেশের কবি-সাহিত্যিকেরা তাঁদের লেখনীতে বাংলার অপরূপ প্রকৃতির বন্দনা করেছেন। ফলে সৌন্দর্যের আধার আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বছরের একেক সময়ে একেক রূপে আমাদের সামনে হাজির হয়ে থাকে। ষড় ঋতুর বাংলাদেশ তাই বিশ্ব মাঝে সকল দেশের রানী হিসেবে আমাদের কাছে সমাদৃত। ঋতু বৈচিত্র্যের এদেশে ঋতুবিশেষ প্রকৃতি নবরূপে আমাদের তার সৌন্দর্য উপহার দেয়। ঠিক তেমনি আমাদের মাঝে সময়ের আবর্তনে হাজির হয় শরৎ ঋতু। শুভ্র মেঘের ভেলা, দিগন্ত বিস্তৃত আকাশে সাদা ও নীলের খেলা আমাদের বিমোহিত করে। প্রকৃতির অভিনবত্ব দেখে মুগ্ধ হয়ে শরৎকে কাছে পাবার তাড়না সবার মাঝে বিরাজ করে থাকে। গ্রাম-বাংলার প্রকৃতিতে এখন শরৎ ঋতু এসে গেছে। তাই স্বচ্ছ নীল আকাশ। তাতে উড়ে বেড়ায় সাদা সাদা মেঘ। আর নদীর জলে তার স্পষ্ট প্রতিবিম্ব দেখা যায়। দুই ধারে ফোটা সাদা কাশফুল হাওয়া-বাতাসে দোল খায়। নদীর বুকে পালতোলা নৌকা। গলা ছেড়ে গেয়ে ওঠেন মাঝি-মাল্ল­ারা। শরৎকে বলা হয় ঋতুর রানী। কারণ শরৎকালই বর্ষার সৌন্দর্যকে সাদরে গ্রহণ করে অপরূপ সাজে নিজেকে সাজিয়ে তোলে। বর্ষার হালকা মেঘ শরতের নির্মল আকাশে সাদা সাদা পাল তুলে মনের আনন্দে ভেসে বেড়ায়। দিনের বেলায় শরতের স্নিগ্ধ রোদে গ্রাম-বাংলার মাঠ-ঘাট, নদী-নালা, বড়ো বড়ো জলাশয় ঝলমল করে। শরতের এমন মন ভোলানো রূপ সত্যিই অতুলনীয়। উল্লেখ্য, প্রাচীনকালে শরৎ ঋতু শুরু হলে রাজরাজড়া যুদ্ধজয়ে বেরিয়ে পড়তেন। অশ্বারোহী সৈন্য থাকতো রাজার সাথে। বুকে থাকতো বিজয়ের নেশা। শরতের সৌন্দর্য তৎকালীন শাসকদের হৃদয়কে প্রভাবিত করেছিল। বাংলাদেশের ঋতু পরিক্রমায় শরৎকালের আছে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান। শরতের সৌন্দর্য আমাদের জাগিয়ে তোলে অনাবিল আনন্দ। ফুল, ফল, আর ফসলের দেশ বাংলাদেশের এই ঋতু সবার মনেই আনন্দের সঞ্চার করে। বাংলা ভাদ্র-আশ্বিন এই দুই মাস শরৎকাল। শরৎ অত্যন্ত মনোরম ঋতু। যার সৌন্দর্যের তুলনা হয় না। বর্ষার একটানা অস্বস্তির পর স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে আসে শরৎ। শরতের পবিত্রতার কাছে সবাই তাই হার মানে। শরতের প্রশংসা না করে কেউ থাকতে পারে না। শরতের আবেদন তাই প্রতিটি মানুষের কাছে আদরণীয়। শরৎ অনেক গুণে গুণান্বিত বলেই একে নিয়ে কল্পনার কোনো শেষ নেই। দেশের মাটি আর মানুষের সাথে গভীরভাবে মিশে আছে শরৎ। 

মিশে আছে প্রকৃতির সাথে একইভাবে। প্রকৃতি যে শরৎকে পেয়ে গর্বিত তার প্রমাণ মেলে আমরা যখন তাকাই প্রকৃতির দিকে। প্রকৃতির সাথে শরতের সুনিবিড় সম্পর্ক আর বোধ হয় অন্য কোনো ঋতুতে এতটা দেখা যায় না। শরতের গ্রাম-বাংলা যেন আমাদের জীবনের প্রতিচ্ছবি। স্বপ্নের মতো মায়াবী আর ছবির মতো ঝকঝকে। এত মায়া এত মমতা এত ভালোবাসার ঢেউ অন্য ঋতুতে পাওয়া কঠিন। শরৎ তাই সুন্দরের ডানা সাজিয়ে আমাদের গ্রাম-বাংলার প্রকৃতিকে উদার হাতে বিলায়। কাশবন সেই দৃশ্যের কোমল ছবি। কাশবনে উড়ে যায় নীল-লাল প্রজাপতি। আরো আছে বেগুনি, হলুদ আর কালো-ধূসর রাঙা প্রজাপতি। শরৎ পাখির পাখায় কম্পন জাগায়। ফুলের মাঝে আনে স্পন্দন। এ সময় বাতাস থমকে দাঁড়িয়ে যায়। অবাক চোখে দেখে ফুল ও প্রজাপতির সুখ। কাশবনে ছুটে আসে মৌমাছি। দারুণ পিপাসা নিয়ে বুকে। তবুও গান করে। বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে সে গান। বাতাস ফেরি করে গানের বাণী। মৌমাছি কাশবনে অতিথি। অতিথি ভোমরা। তাদের মধু বিলিয়ে দিয়ে খুশি করে কাশফুল। কাশের বুকে জেগে ওঠে শরৎ সকাল। শরতের সকাল এক অভূতপূর্ব আনন্দ-অনুভূতির সৃষ্টি করে। শরতের সকালে সূর্য উদিত হয়ে মাঠ ও বিলের অসংখ্য ধানের জমিতে আলোক রশ্মি ছড়িয়ে দেয়। দূর্বাঘাসের ওপর সঞ্চিত শিশির বিন্দুকে রুপালি মুক্তার বিন্দুর মতো মনে হয়। এ সময় সর্বত্র শুভ্র ও নাতিশীতোষ্ণ অবস্থা বিরাজ করে। বর্ষার নিবিড় ঘনঘটা অপসারিত হয়ে আকাশ নির্মল হয়ে ওঠে। সকালে শিশিরভেজা ধান, শিউলি ফুল, কোমল রোদের পুকুরে ভাসমান শুভ্র শাপলার হাসি সবার হৃদয়কে উচ্ছ্বসিত করে। শরতের মেঘ যেন এক বিশাল শামিয়ানার মতোই। মাথার ওপরে নীলাকাশ মাঝেমধ্যে উড়ন্ত সাদা মেঘ এবং সবুজ মাঠের ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়া শালিক, ময়না, টিয়ের ঝাক। আহ! কত অপূর্ব ভালো লাগার দৃশ্য। সব আল্লাহর দান। তারই সৃষ্টি মাধুরীর খেলা। শরতের সাথে প্রকৃতির ভালোবাসা মানুষের অন্তরকে স্পর্শ করে। রূপে-গুণে সৌন্দর্যের তুলনা হয় না বলেই শরৎ রূপের রানী। নদীর ধারে, কাশের বনে, বাতাসের দোলায়, শরতের আগমন যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরো সমৃদ্ধ ও প্রাণবন্ত করে তোলে। সবুজ ঘাসের বুকে শিশিরের বিন্দু শরতের উপস্থিতির ছোঁয়া দিয়ে যায়। শরৎকে পেয়ে প্রকৃতি আরো সবুজ ও সজীব হয়ে ওঠে। শরতের এই সবুজের বুকে আরো সবুজের আস্তরণ ছড়ায় ধানের গাছগুলো। মৃদু বাতাসে নেচে তারা মনের অনন্দ প্রকাশ করে এই শরৎকালে। কচি ধানগুলো আরো সবুজ হয়। আশ্বিনের শেষে চাষির মুখে ফুটে উঠবে হাসি। কৃষকের দামাল শিশুরা ধানের গন্ধ গায়ে মেখে উঠোনে গড়াগড়ি খাবে। ধান পাকবে হেমন্তে। শরৎ সেই হৈমন্তিক বাণী শোনায় কৃষকের কানে। শরতের ভোরে কৃষক ধানের জমির আল ধরে হেঁটে যায়। কৃষকের পায়ে শিশিরভেজা ঘাস আর শরীরে ধানগাছের পাতা পরশ বুলায়। এ পরশ তার মনে সুখের আমেজ আনে। শরতের ভোরে শিশিরে ধুয়ে যায় মাঠঘাট-পথ-গাছপালা। মনে হয় প্রকৃতি যেন সারা রাত স্নান করেছে। মুক্তোর মতো ঘাসের ডগায় সূর্যের আলতো কিরণে ঝলমল করে ওঠে শিশির বিন্দু। শিউলি ফুলের পাপড়িতে কেঁপে ওঠে শরতের ভোর। আদর বুলানো হাওয়া। শিরশির দুলুনিতে মুগ্ধ। ভীষণ আরাম লাগে। ঘুম ঘুম আরামে চোখ বুজে আসে। কিন্তু মানুষ আবার ব্যস্ত হয় কাজে। কাজের সন্ধানে ছুটে চলে মানুষ। ছেলে মেয়েরা যায় পাঠশালায়। চাষি ছুটে ক্ষেত-খামারে। সারাদিন ব্যস্ততার পর আবার মানুষ ফিরে আসে আপন ঠিকানায়। শরতের প্রকৃতি আসলেই মনোমুগ্ধকর। সারা আকাশজুড়ে মেঘেদের ওড়াউড়ি। মেঘগুলো যেন উড়তে উড়তে কাত হয়ে যায়। ঢুকে যায় একদল থেকে আরেক দলে। কখনো উধাও হয়ে যায়। হারিয়ে যায় শূন্য থেকে। 

কোনো কোনো মেঘদল নেমে আসে দিগন্ত ছেড়ে। নেমে আসে পাহাড়ের ঢালে। শরতের আকাশ গাঢ় নীল।  সাদা মেঘের ওপারে নীলের গ্রাম। তাই শরতের আকাশভরা নীলে জেগে ওঠে সমুদ্র। সমুদ্রের বুকে বিছানা পাতে নীল। লোনা আরামে ঘুমিয়ে পড়ে। আবার জেগে ওঠে ঢেউয়ের উচ্ছ্বাসে। শরৎ দাঁড়িয়ে থাকে বকুল তলায়। ঝরে পড়া বকুলেরা দেখে। কাছে আসে শরৎ। বকুলের সৌরভ মেখে নেয়। মেখে নেয় হাতে মুখে গায়ে। শরৎ সুবাসিত হয়। এক সময়ে পুব আকাশে উজ্জ্বল করে সূর্য ওঠে। সকাল পেরিয়ে গড়িয়ে আসে শরৎ দুপুর। বকুল ছায়ায় ভিজিয়ে নেয় শরৎ দুপুর। শরৎ দুপুরের আলোয় ঘাস, ধান, বাঁশঝাড়, খড়ের চালে জমে থাকা শিশির বিন্দুগুলো শুকিয়ে যায়। শরতের দুপুর বড়োই নির্মল। নীলের গভীরতা বেড়ে যায় আকাশে। সাদা হালকা মেঘ আনমনে উড়ে যায়। ওড়ে দক্ষিণা দিগন্ত ছেড়ে। নীরব পাখা মেলে ওড়ে সাদা চিল। মেঘের কাছাকাছি ডানা মেলে শিকারি ঈগল। কোথায় লুকিয়ে আছে তার শিকার। শরতের দুপুর খানিকটা দক্ষিণে বেঁকে যায়। ধীরে ধীরে ছোটো হয়। তারপর হেঁটে যায় বিকেলের দিকে। শরতের বিকেল আরো মায়াবী। রোদ নিজেকে অনেকটা শীতল করে নেয়। সবুজ গাছগাছালি রোদ খেয়ে খেয়ে বেশ তাজা হয়ে ওঠে। কলাপাতার গায়ে রোদের সাথে কাত হয়ে থাকে শরৎ। ফলে বনানীর মতো মাঠও সবুজ হয়ে ওঠে। একসময় মাঠভরা ধানের সবুজে গড়াগড়ি করে শরৎ বিকেল। শরৎ সন্ধ্যা এসে দাঁড়ায় লালিমার নিচে। লাল কমলায় রাঙা হয় শরতের মুখ। শরৎ সন্ধ্যায়  জমে ওঠে কবিতার আসর। গানের জলসা। পাখিদের গানে গানে শরৎ সন্ধ্যা প্রবেশ করে রাতের ঘরে। ঝিরঝির বাতাস হাত বুলিয়ে যায় প্রকৃতির গায়ে। সেই আরাম নিয়ে আসে শরতের রাত। পাখিরা চোখ বুজে, চোখ বুজে প্রকৃতির গাছেরা। ধীরে ধীরে শরৎ হাঁটে রাতের দিকে। রাতের শরৎ মানে ভেজা ভেজা ঘুম। ঘুম ঘুম তারাজ্বলা রাত। রাতভর জেগে থাকে জোনাকি। শরৎ রাতের গায়ে জোনাকিরা খেলে যায়। শরতের রাত বড়ো মজার রাত। না ঠাণ্ডা। না খুব দীর্ঘ, না খুব ছোটো। শরৎ রাতে আকাশে দেখা দেয় ঘন তারকার বন। রাতভর, সারারাত। একটানা জ্বলে। জ্বলতে জ্বলতে কত তারা নিভে যায়। নিভতে নিভতে আবার জ্বলে। কোনো কোনোটি দূর থেকে কাছে আসে, কোনোটি আবার কাছ থেকে দূরে সরে যায়। যেতে যেতে চোখের আড়াল হয়ে যায়। এভাবে কত তারা জ্বলে আর কত তারা নেভে, কে রাখে তার খবর! শরতের মধ্য রাতে আকাশে জমে তারার মিছিল। শরতের পূর্ণিমা রাতে জ্যোৎ¯œায় মন ভরে ওঠে। শরতের রাতে কোনো একটি পূর্ণিমা যদি কেউ দেখে থাকে তবে সে কখনোই শরৎকে ভুলতে পারবে না। এ সময় মেঘমুক্ত রাতের আকাশে চাঁদ তার প্রাচুর্য উজাড় করে ঢেলে দিয়ে আকাশে ভাসে। কী অপূর্ব সেই দৃশ্য! যা ভোলার নয়। শরতের জোছনা শ্রাবণের মতো স্বচ্ছ থাকে না। ধোঁয়ায় মিশিয়ে নামে জোছনারা। কুয়াশা কুয়াশা রাত কুয়াশায় মাখা মাখা চাঁদ। চাঁদের মুখে বিরাট দিঘি। রং মাখা। শরতের রাত বেয়ে পাখিরা উড়ে যায় ভোরের দিকে। সেই ভোর নেমে আসে আকাশ ছুঁয়ে। সেই আকাশই হয়ে যায় শরৎ সুদিন। উল্লেখ্য, শরৎ উৎপাদনের ঋতু। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে বর্ষায় জনজীবন বিপর্যস্ত হলেও বর্ষার কোনো বিকল্প নেই। বর্ষার অবিরাম বর্ষণ আর খাল-নদী-বিল ছাপিয়ে আসা পানি অবারিত সবুজের মাঠ প্লাবিত করলেও পানি নামার সময় থেকে যায় স্তরে স্তরে পলি। যে পলিতে কৃষক বোনে তার আগামীর স্বপ্ন। তার স্বপ্ন জুড়ে থাকে সবুজ ফসলে ভরা দিগন্তজোড়া ক্ষেত। তাই বর্ষার উর্বর মাটিতে সবুজ সোনা ফলাতে আসে শরৎ। শরৎ এলে বৃক্ষরাজির আড়ালে আবডালে থাকা পাখিরা নতুন প্রাণের স্পন্দনে জেগে ওঠে। 

এ কথা সত্য যে বর্ষাকাল বন্য প্রাণীসহ নানা বর্ণের পাখিদের জন্য বেশ কষ্টের। তাই শরতের আগমনে তাদের দুঃসহ স্মৃতি ভুলে নতুন করে বাসা ও আশা বোনে। নানা গায়ক পাখির গানে মুখরিত হয়ে ওঠে শরতের পরিবেশ। এ সময় আমাদের জাতীয় পাখি দোয়েল, কোয়েল, বুলবুলিসহ সকল পাখি গান করে। বিশেষত শরৎকালে দোয়েল পাখির শিস শুনতে কী যে ভালো লাগে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শরতের এই স্নিগ্ধ শোভাকে আরো মোহনীয় করে এই মৌসুমের বিচিত্র ফুলেরা। নদী কিংবা জলার ধারে ফোটে কাশফুল, ঘরের আঙিনায় ফোটে শিউলি-শেফালি, খাল-বিল-পুকুর ডোবায় থাকে অসংখ্য জলজ ফুল। আর শেষ রাতের মৃদু কুয়াশায় ঢেকে থাকা মায়াবী ফুলেরা যেন আরো রূপসী হয়ে ওঠে। শিশির ভেজা শিউলি বাতাসে মৃদু দোল খাওয়া কাশবনের মঞ্জরি, পদ্ম-শাপলা-শালুকে আচ্ছন্ন জলাভূমি শরতের চিরকালীন রূপ। সত্যিই বিচিত্র রূপ নিয়ে শরৎ আমাদের চেতনায় ধরা দেয়। আমাদের অন্যান্য ঋতুগুলো অনেক ফুলের জন্য বিখ্যাত হলেও মাত্র কয়েকটি ফুল নিয়ে শরৎ গরবিনী। তাই কাশ-শিউলির শোভা উপভোগ করতে হলে আমাদের রূপের রানী শরতের কাছে যেতে হবে। ভাবুকদের কাছে শরৎ ঋতু নানা গুণে গুণী। নমনীয়তা, ভদ্রতা, স্নিগ্ধতা ও মিষ্টতার ঋতুও শরৎ। কারো মতে রূপসী রূপের পরী, কারো কাছে ঋতু পরী শরৎ। আসলেই তাই। বসন্তের পর শরৎ ছাড়া এমন কোনো ঋতু নেই যা ছোটো বড়ো সকলের মনে দোলা দিতে পারে। শরতের সুখ মেখে এভাবেই কাটে এ দেশের মানুষের জীবন। ছন্দময়, গতিময় এক অনাবিল শান্তির ঋতু শরৎ। শরৎ আমাদের মাঝে বিভিন্ন উৎসবের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে। এ দেশের মানুষ তখন উৎসবের আয়োজনে মেতে ওঠে। নবান্ন ধানের পিঠা, পায়েস এবং বিভিন্ন প্রকার আহার উৎসব এ ঋতুতে সম্পন্ন হয়ে থাকে। এ সময় সনাতন সম্প্রদায়ের শারদীয় উৎসবও অনুষ্ঠিত হয়। কৃষকের মাঝেও আনন্দ এনে দেয় শরৎকাল। বর্ষা চলে গেলে মাঠ থেকে পানি সরে যায়। কৃষক আবার জমি চাষ করতে মাঠে যান। হেমন্তী ধানের বীজ বোনে, চারা রোপণ করেন। বুকে বাধে সম্ভাবনার স্বপ্ন। সবুজ ফসলের আনন্দে কৃষকেরও মন ভরে ওঠে। বর্ষার স্রােতস্বিনী শরতেও পূর্ণ থাকে। শরতে নির্মল পানিরাশি সাগরের সঙ্গে মিলনের উদ্দেশ্যে বয়ে যায়। নদীর বুকে মাঝি ভাটিয়ালি গান গেয়ে পালতোলা নৌকা ছাড়ে মনের আনন্দে। দু’কূলে সবুজ বনরাজি যেন সবুজের স্বর্গপুরী। কখনো শরতের নদী কিষাণির শাড়ির আঁচল ভিজিয়ে, কখনো অবারিত সবুজ মাঠের বুক চিরে বয়ে যায় দূরে-বহু দূরে। এই শরতে আমাদের মন আন্দোলিত হয় বারবার। তাই শরৎ ঋতুর রানী, শরৎ সুন্দর, শরৎ প্রাণোচ্ছল, শরৎ সজীব। শরতের সাথে জড়িয়ে রয়েছে সৌন্দর্যের ছোঁয়া। স্নিগ্ধতা, স্বচ্ছতা, কোমলতা, নির্মলতায় আজো শরৎ প্রশান্তির পরশ বুলায় মানুষের মনেপ্রাণে। মানুষ তাই অন্তর দিয়ে অনুভব করে শরতের রূপ বৈচিত্র্য।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ