শাহাজাহান মিয়ার গল্প

শাহাজাহান মিয়ার গল্প

গল্প মুহাম্মদ ইব্রাহিম বাহারী জানুয়ারি ২০২৪

শাহাজাহান মিয়াকে নিয়ে হাসি-তামাশার অন্ত নেই। ছেলে বুড়ো শিশু-কিশোর সবাই তাকে নিয়ে আনন্দ করে, মজা করে। করবে না বা কেন? মজার মজার কাজ তিনি করেন, তাই তাকে নিয়ে মজা করাটাই স্বাভাবিক। শাহাজাহান মিয়াকে কেউ শাজান পাগল, কেউ শাজান সাহেব নামে ডাকে। যে নামেই ডাকা হোক না কেন তাতে সে সাড়া দেয়।

একবার শাহাজাহান মিয়া ভারতে গেলেন কাজের জন্য। দুই মাস কাজ করে বাড়ি আসার একদিন আগে ট্রেনের টিকিট কাটলেন। সকাল নয়টায় ট্রেন ছাড়ার কথা। শাহাজাহান মিয়ার সে খেয়াল নেই। যে বাড়িতে সে কাজ করতো ঐ বাড়ির এক ছেলে বলল, চাচা আপনার বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল না আজ? আমি জানি আপনার ট্রেনের সময় সকাল নয়টায়, এখন তো এগারোটা বাজে। আপনি বাড়ি যাবেন না? শাহাজাহান মিয়া বললেন, তাতে কী, টিকিট আমার হাতে ট্রেন কোথায় যাবে? ট্রেন যেখানে যাক আমি ট্রেন ধরে ফেলবো।

এমনি অদ্ভুত কাজ করেন শাহাজাহান মিয়া। 

একদিন শাহাজাহান মিয়ার বাড়িতে চাল নেই, ঘরে টাকা থাকতেও সে বাজারে গেল না। স্ত্রী তাকে বারবার বাজারে যাওয়ার জন্য তাগিদ দিচ্ছে। সে কোনোভাবে বাজারে যাচ্ছে না। অলসতা করে ঘরের দরজা এঁটে শুয়ে আছে। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলো। স্ত্রীও জেদ ধরলেন কোনোভাবে হাঁড়ি জ্বালাবে না। 

তাই হলো। 

শাহাজাহান মিয়া দরজা খুলে স্ত্রীকে বললেন, টাকা দাও। স্ত্রী পাঁচশত টাকার একটা নোট দিলেন তার হাতে। সে এক গ্লাস পানি দিয়ে স্ত্রীর সামনে টাকাটা চিবিয়ে খেয়ে ফেললেন। স্ত্রী তো রীতিমতো অবাক।

করে কী? 

সে বললেন, টাকা দিয়ে চাল না কিনে টাকা খেয়ে দেখি কেমন লাগে। এমনি অদ্ভুত কাজ তার।

একদিন শাহাজাহান মিয়ার স্ত্রী খেজুরের রস জ্বাল দিচ্ছেন, রস টগবগ করে ফুটছে তো, ফুটছেই। একপর্যায়ে রসে ফুট আসলো, গুড় হবার সময় প্রায়। শাহাজাহান মিয়ার স্ত্রী সংসারের অন্য একটা কাজে চলে গেলেন। রসের কড়াই স্তব্ধ, চুলা নিভে গেল। এমন সময় শাহাজাহান মিয়া কোথায় ছিলেন হঠাৎ চলে আসলেন রসের চুলার দিকে। চুলা নিভে গেছে দেখে সে চুলা জ্বালিয়ে দিলো। চুলা জ্বলে উঠলে গুড়ে ফুট উঠলো, সে ভাবলো গুড় তাকে দেখে রেগে এমনটি করছে। সে সেই রসের কড়াই উপুড় করে ঢেলে দিলেন মাটিতে খুব স্বাভাবিকভাবে। তার স্ত্রী এসে এই কাণ্ড দেখে অবাক! এমন করলে কেন জিজ্ঞেস করলে সে বলল, আমার সাথে ফাজলামো করছে রস তাই ঢেলে দিয়েছি। 

শীতের মৌসুম আলু লাগানোর সময়। প্রতিবেশীরা জমি চাষ করে আলু লাগানোর কাজে ব্যস্ত। শাহাজাহান মিয়ার আলু লাগানোর ইচ্ছে জাগলো। বাজার থেকে আলুর বীজ ক্রয় করলেন। জমি চাষ করলেন, সার প্রয়োগ করলেন। সব ঠিকঠাক করলেন কিন্তু রোপণের সময় ঘটালেন অঘটন। আলুর সারি থেকে সারির দূরত্ব রাখলেন মাত্র দশ ইঞ্চি, সবাই যেখানে কুড়ি ইঞ্চি ফাঁকা রাখছে সেখানে শাহাজাহান মিয়া জমি নষ্ট করবে না, তাই সারি ঘন করে আলু লাগালো।

শুধু কি তাই? 

না।

এক পিস আলু থেকে আরেক পিস আলুর দূরত্ব রাখলো মাত্র এক ইঞ্চি। প্রতিবেশীরা সঠিক পদ্ধতির কথা বললেও সে কারো কথা রাখে না কারো কথা শোনার নয়। ফলে দেখা গেল আলুর ফসল জিরো।

রহমতপুর হাটখোলার পাশে শহিদুল ডাক্তারের সুন্দর বিল্ডিং দেখে শাহাজাহান মিয়ার খুব পছন্দ। পছন্দ যখন হয়েছে তাহলে বিল্ডিংটা বাড়ি নিয়ে যাওয়ার দরকার,  এই ভেবে বিল্ডিং ঠেলা শুরু করলো। বেশ কিছুক্ষণ ঠেলাঠেলি করার পর সে ঘেমে গেল। তখন সে গায়ের জামা খুলে পাশে রেখে আবার ঠেলা শুরু করলো। ঐ পথ দিয়ে যাচ্ছিলো এলাকার  দুষ্টু বালকদের দল। তারা শাহাজাহান মিয়ার জামাটা পাশের শেওড়া গাছের ডালে ঝুলিয়ে রাখলো। এবং তারা দূরে দাঁড়িয়ে থাকলো  শাহাজাহান মিয়া কী করে সেই দৃশ্য দেখার জন্য। 

অনেক ঠেলাঠেলি করার পর শাহাজাহান মিয়া পেছনে ফিরে দেখে তার জামা আর দেখা যাচ্ছে না। নিজে নিজে বলে উঠলো, অনেক দূর ঠেলে নিয়ে এসেছি। একটু জিরিয়ে নিই।

এদিকে বালক দল তার কাণ্ড দেখে, কথা শুনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। 

আরেক দিনের ঘটনা শাহাজাহান মিয়ার পায়ের আঙুলে ইটে হোঁচট লেগে মারাত্মক ব্যথা পেয়েছে। ব্যথার শোকে অগত্যা তাকে ডাক্তারের চেম্বারে যেতে হলো। ডাক্তার ঔষধ দিলেন ও ক্ষত জায়গায় মালিশের জন্য ব্যথানাশক মলম দিলেন এবং বললেন, যেখানে হোঁচট লেগেছে সেখানে ভালোভাবে মালিশ করতে। মিয়া সাহেব বাড়ি আসলেন ঔষধ খেলেন যথানিয়মে কিন্তু সে ব্যথানাশক মলমটার সবটুকু মলম লাগালেন যে ইটে হোঁচট লেগেছিল সেই ইটের মাথায়! পরের দিন ডাক্তারের কাছে যেয়ে ব্যথা যে কমেনি সে কথা বলল। ডাক্তার বলল, মলমটা লাগিয়েছিলেন? মিয়া সাহেব বললেন কৌটার সবটুকু মলম যে ইটে হোঁচট লেগেছিল সেখানে লাগিয়েছি। ডাক্তার তো অবাক...।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ