শেষ ভালো যার
হাদীসের আলো বিলাল হোসাইন নূরী জুন ২০২৩
প্রতিদিনের মতো আজও, ফজরের পর নাহিয়ান পেঁপে গাছগুলোর কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। আঙিনার এককোণে নিজ হাতেই সে এসব লাগিয়েছিল। গাছগুলো এখন ফুলে-ফলে সুশোভিত হয়ে উঠেছে। কী যে ভালো লাগছে দেখতে! সবুজ সবুজ পেঁপের শরীর সে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখছে। আর বারবার বলছে- আলহামদুলিল্লাহ! পাশের বাড়ি থেকে হঠাৎ কান্নার আওয়াজ ভেসে এলো কানে। বহু মানুষের কান্না!
নাহিয়ান যা ভেবেছিল, তা-ই। কেউ একজন মারা গেছেন। কিন্তু যে মারা গেছে, তার কথা ভাবেনি কেউই। এভাবেই মারা যাবে, তা তো আরও কল্পনাতীত! কে জানতো, শাকিলের মতো টগবগে যুবক নিজেকে শেষ করে দেবে? অথচ সে-তো অনেক ভালো কাজ করত! নামাজ-রোজায়ও কমতি ছিল না খুব একটা। তাহলে কেন এমন হলো! হিসাব মিলাতে পারছে না কেউ! সবার মুখে মুখে আফসোস- একটা সোনার জীবন মুকুলেই ঝরে গেল!
মন খারাপের ভেতরই কেটে গেল নাহিয়ানের সারাটা দিন। মাগরিবের পর বাবাকে বলল- শাকিল ভাইয়ার কী হবে এখন? বাবা বললেন, আল্লাহ চাইলেই মাফ করে দিতে পারেন। তবে তিনি কোনো মানুষকে আত্মহত্যার অনুমতি দেননি। এ বড়ো কঠিন পাপ।
তাহলে তার ভালো কাজগুলোর কি কোনো মূল্যই নেই?- বলল, নাহিয়ান।
বাবা বললেন, খায়বারের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজনের ব্যাপারে নবীজি বলেছিলেন, এই লোকটি জাহান্নামি! লোকটি ভীষণভাবে যুদ্ধ করল। ক্ষত-বিক্ষত হলো। একজন সাহাবি এসে বললো- হে আল্লাহ্র রাসূল! আপনি যাকে জাহান্নামি বলেছেন- সে তো তুমুল যুদ্ধ করেছে আল্লাহ্র রাস্তায়। বিপুল আহত হয়েছে। তিনি বললেন- জেনে রাখো, সে জাহান্নামি!
কিছু মুসলিমের মনে সংশয় জাগল। পরে জানা গেল, লোকটি আঘাতের ব্যথা সইতে না পেরে তীর দিয়ে আত্মহত্যা করেছে! কিছু মুসলিম নবীজির কাছে দৌড়ে গিয়ে বলল- হে আল্লাহ্র রাসূল! আল্লাহ্ আপনার কথাকেই সত্য করে দেখালেন! অমুক তো আত্মহত্যা করেছে। নবীজি বললেন- হে বিলাল! উঠো এবং ঘোষণা করো- মু’মিন ছাড়া কেউ জান্নাতে যাবে না। আর আল্লাহ্ পাপীকে দিয়েও এ দ্বীনের সাহায্য করে থাকেন। (বুখারি ও মুসলিম)।
দেখেছো? আল্লাহর পথে জিহাদ করেও মানুষ জাহান্নামি হতে পারে! মূলত শেষ ভালো যার, সব ভালো তার!
নাহিয়ান কাতর কণ্ঠে বলল- মাবুদ! ভুলেও যেন এমন পথে পা না বাড়াই।
বিলাল হোসাইন নূরী
আরও পড়ুন...