সোনার পিস্তল
রহস্যভেদ আহমেদ বায়েজীদ অক্টোবর ২০২৪
[গত সংখ্যার পর]
কতক্ষণে পৌঁছে গেল মান্ডা খালপাড় এলাকার একটি গলিতে। গলির মাথায় খুপড়ির মতো একটি ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে দরজায় টোকা দিলো হকার। কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকলো আগন্তুক। ভেতর থেকে একজন বয়স্ক লোক বের হয়ে দরজা খুললো। আগন্তুককে হাতে ইশারা করে ঘরের ভেতর ঢুকে গেল হকার। ইশারা পেয়ে এগিয়ে গেল আগন্তুক।
ছোট একটি ঘর। চারপাশে টিনের বেড়া, চালাও টিনের। একটি চকিতে পাশাপাশি বসা বয়স্ক লোকটি ও হকার। আগন্তুুককে একটি চেয়ার দেওয়া হয়েছে বসার জন্য।
: হ্যালো, আমি জামান। ইউরোপের দেশ অস্ট্রিয়ায় থাকি। গতকালই দেশে এসেছি।
বলতে বলতে হাত বাড়িয়ে দিলো আগন্তুক। সামনে বসা লোকটিকে চেহারায় বৃদ্ধ মনে হলেও বয়স পঞ্চাশের আশপাশেই হবে। বয়সের তুলনায় একটু বেশিই বৃদ্ধ মনে হচ্ছে তাকে। হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করলো । তারপর বললো, আপনার কথা আমি জেনেছি। কী জন্য এসেছেন খুলে বলুন।
: আমি ঐতিহাসিক জিনিসপত্র সংগ্রহ করি। এটি আমার শখ বলতে পারেন। তেমনই একটি জিনিসের খবর পেয়ে এবার দেশে এসেছি। জিনিসটা সোনার তৈরি, আফ্রিকার জিনিস।
বৃদ্ধ লোকটি এসব শুনে বললো, আমার কাছে তো কোনো দামি জিনিসের খবর নেই। আমি গরীব মানুষ। আপনি আমার কাছে কেন এসেছেন?
বৃদ্ধ খুব শক্ত লোক বুঝতে পারলো আগন্তুক। এর আস্থা অর্জন করতে না পারলে কাজ উদ্ধার করা কঠিন। সেই চেষ্টায় আরো কিছুক্ষণ নিজের প্রাচীন জিনিস সংগ্রহের শখ নিয়ে নানা কথা বললো। কীভাবে এই জিনিসটার খবর পেলো সে সম্পর্কেও দু’একটা ক্লু দিলো। লিবিয়া, মিসর, দুবাই হয়ে জিনিসটার এ দেশে আসার কথা জানালো। শেষ পর্যন্ত ফাঁদে পা দিলো বুড়ো। অনেকক্ষণ ভেবে বললো, বুঝতে পেরেছি, আপনি অনেক খবর নিয়েই দেশে এসেছেন। তেমন একটা জিনিসের খবর কয়েকদিন ধরেই শুনছি। আফ্রিকা থেকে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে এদেশে এলেও জিনিসটার শেষ গন্তব্য ইউরোপে। সেখানে চড়া দামে বিক্রি হবে চোরাই মার্কেটে। বলে একটু থামলো বৃদ্ধ। তারপর আবার বললো, কিন্তু জিনিসটা কোথায় পাওয়া যাবে সে সম্পর্কে কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। শুনেছি, জিনিসটা সঠিক জায়গায় এসে পৌঁছায়নি। কোথাও একটা গোলামাল হয়েছে।
: তবু যদি কোনো সূত্র দিতে পারেন, বা কোথায় যোগাযোগ করলে খোঁজ পাবো তেমন কিছু বলতে পারেন তাহলে উপকৃত হবো।
আগন্তুুকের এই কথা শুনে বুড়ো মিনিটখানেক চুপ করে থাকলো। মনে হয় কিছু ভাবলো। তারপর ‘বসুন, দেখি কিছু করা যায় কি না’ বলে উঠে ভেতরের ঘরে গেল। মিনিটখানেক পর ফিরলো একটি পুরোনো ডায়েরি নিয়ে। ডায়েরির কয়েকটি পাতা উলটে একটা ঠিকানা বের করলো। নিজেই একটা টুকরো কাগজে ঠিকানাটা টুকে আগন্তুকের হাতে দিয়ে বললো, আমি সাধারণত এসব বিষয়ে ডিল করি না। তবে এই ঠিকানায় গেলে আপনি মামুন নামে একজনকে পাবেন। তার সাথে যোগাযোগ করলে আশা করি সঠিক তথ্য পাবেন। তবে মনে হয় না, সে সহজে তথ্য দিতে চাইবে। আপনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারলে তবেই কেবল আসল কথা বলবে।
ঠিকানা লেখা কাগজটা পকেটে ঢুকিয়ে নিলো আগন্তুক। নিজের ফোন নম্বর লেখা একটা কাগজ বৃদ্ধের হাতে দিয়ে বললো, কোনো তথ্য জানতে পারলে আমাকে জানাবেন। তারপর মানিব্যাগ বের করে চকচকে দুটো এক হাজার টাকার নোট বৃদ্ধের হাতে দিয়ে বিদায় নিলো।
রাস্তায় বেরিয়ে এসে হ্যাটটা খুলে হকারের হাতে দিলো আসিফ। আপাতত আর ছদ্মবেশ দরকার নেই। গরমে ঘেমে অস্থির হয়ে উঠেছে। খোলা বাতাস গায়ে লাগতে কিছুটা স্বস্তি¡ পেল যেন। গোপনসূত্রে তথ্য সংগ্রহ করতেই এখানে এসেছিল। হকার আনিস ওর বিশ্বস্ত সোর্স। আন্ডারওয়ার্ল্ডের অনেক খবর আনিসের কাছে পাওয়া যায়। সোনার পিস্তলটার বিষয়ে জানতে চাইতেই আনিস এই বৃদ্ধের কথা জানায়। ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে যে-কোনো পুরোনো জিনিস বেচাকেনার খবর থাকে তার কাছে। সে জন্যই ছদ্মবেশ ধরে কমলাপুর স্টেশনে এবং শেষ পর্যন্ত এই বাড়িতে এসেছিল আসিফ মাহবুব।
ছয়.
দুপুরে একজন এসে কিছু খাবার দিয়েছিল। তারপর থেকে আবার একা মাহিম। বন্দিদশা থেকে উদ্ধার পাওয়ার চিন্তা আবার শুরু করলো। যখন ঘরের দরজা খোলা হয়েছিল তখনই খেয়াল করেছে মাথার কাছে একটা জানালা রয়েছে। আবছা আলোতে উঠে দাঁড়িয়ে জানালাটা ধরলো মাহিম। জানালায় মোটা কাঠের পাল্লা। কোনো গ্রিল নেই। জানালা ভেতর থেকেই বন্ধ। সিটকানিটা খুললো খুব সাবধানে। ধাক্কা দিয়ে দরজার একটা পল্লা সরিয়ে দিতেই আলো এসে চোখ ধাধিয়ে দিলো ওর।
কিছুটা অবাক হলো মাহিম। জানালাটায় যে গ্রিল নেই এবং ভেতর থেকে খোলা যায় সেটি কি অপহরণকারীরা টের পায়নি! তাহলে এই ঘরে ওকে কেন রাখলো। সাধারণ কোনো মানুষের মাথায়ও তো এই কথাটা আসা উচিত ছিল। এরা তো পেশাদার অপরাধী, তাহলে ভুলটা কেন করলো? যাই হোক সেসব নিয়ে মাথা ঘামিয়ে সময় নষ্ট করলো না। উঁকি দিয়ে চারপাশটা দেখে নিলো। সামনে একটা মাঠের মতো। জানালায় উঠে লাফ দিয়ে বাইরে পড়লো মাহিম। ছোট্ট মাঠটার এক পাশে এই পুরোনো বাড়িটা। দ্রুত মাঠটা পার হয়ে ছোট্ট একটা রাস্তায় উঠলো। এবার চিনতে পারলো জায়গাটা। ওদের বাসা থেকে তিন কিলোমিটারের মতো দূরত্বের মহল্লাটার নাম চৌধুরীপাড়া। কোনো দিক না তাকিয়ে দ্রুত পা চালালো মাহিম। অবশ্য তাকালেও লাভ হতো না। অনেকটা দূরত্ব রেখে ওকে ফলো করছে একটা লোক। বাইসাইকেলে চড়া। মাহিমের পিছু পিছু আসছে ধীর গতিতে। লোকটা এতটাই সাবধানে চলছে যে, মাহিম পেছনে তাকালেও তাকে দেখতে পেতো না।
সিএন্ডবি রোডে উঠে একটা রিকশা নিলো মাহিম। চললো বাসার দিকে। এবার সাইকেলের গতি বাড়ালো পেছনের লোকটা। চললো রিকশার পিছু পিছু। বাসার কাছাকাছি গিয়ে রিকশার গতি পথ বদলাতে বললো মাহিম। আগে বোনের বাসায় যাবে। রিকশা পথ বদলালো। কয়েক মিনিটের মধ্যে সুবাদের বাসার সামনে পৌঁছে গেল মাহিম। দরজায় তালা দেওয়া। তখনই মনে পড়লো, কাল থেকে ওর নিখোঁজ হওয়ার পর আপু দুলাভাই নিশ্চয়ই ওদের বাসায় গিয়েছে। এমন বিপদের দিনে বোন-দুলাভাই এখন বাবা-মায়ের পাশে থাকবে সেটাই তো স্বাভাবিক।
আরেকটা রিকশা ডেকে এবার বাসার দিকে চললো। বাসায় পৌঁছে দেখলো সবাই মাহিমের চিন্তায় অস্থির। মা ওকে দেখতে পেয়ে জড়িয়ে ধরে কান্না জুড়ে দিলেন। সবাইকে সান্ত¡না দিয়ে মাহিম নিজের রুমে গেল। অপহরণের বিষয়টা পরিবারের কাউকে বলতে চাইলো না। পরে সব খুলে বলবে বলে কথা দিলো। তবে টেলিফোনে আসিফ ভাইয়াকে জানাতে হবে। সেটা পরেও করা যাবে। আপাতত বোন আর দুলাভাইকে নিয়ে তাদের বাসায় যাওয়া দরকার। দেখতে হবে ব্যাগটার মধ্যে কী আছে।
সুবাকে কোলে নিয়ে আপা আর দুলাভাইয়ের সাথে বাসা থেকে বের হলো মাহিম। কয়েক মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেল তাদের বাসায়। বাসায় ঢুকে ব্যাগটা নিয়ে বসলো। সুবা জ্বালাতন করবে তাই ওকে নিয়ে আপা অন্য ঘরে গেলেন। দুলাভাইয়ের সামনে ব্যাগের চেইনটা খুলে ভেতরের জিনিসগুলো একে একে বের করতে শুরু করলো মাহিম। এক পর্যায়ে বের হয়ে এলো নতুন একটা জিনিস। সোনালি রঙের একটি পিস্তল। আগে কখনো পিস্তল হাতে নেয়নি মাহিম। তাই একটু ভয় ভয় করতে লাগলো। পথে আসতে আসতেই দুলাভাইকে খুলে বলেছে বিষয়টা। তিনিও হাতে নিয়ে দেখলেন জিনিসটা। নেড়ে চেড়ে বললেন, জিনিসটা দেখছি সোনার তৈরি। তাহলে এটার জন্যই এত কিছু!
: তাইতো মনে হচ্ছে; কিন্তু এটা নিয়ে এখন কী করবো? যারা এটা এনেছে তারা তো অপরাধী। তাদের হাতে তুলে দেওয়া মানে অন্যায় কাজে সহযোগিত করা। বললো মাহিম।
: তাহলে পুলিশকে জানাও। দুলাভাই বললেন।
: এভাবে পুলিশকে জানাতে গেলেও নানা প্রশ্ন করবে, শেষে আমরাও ফেঁসে যেতে পারি। তাই এমন কিছু করতে হবে যাতে জিনিসটা সঠিক হাতে পড়ে, আবার আমরাও অপরাধী সাব্যস্ত না হই। মাহিম বললো।
: তাহলে আসিফকে জানাও। ও তো ডিবি পুলিশের বড়ো অফিসার। ও নিশ্চয়ই সঠিক কোনো পথ বলে দেবে।
দুলাভাইয়ের বুদ্ধিটা পছন্দ হলো মাহিমের। তাছাড়া সোনার পিস্তল চোরাচালান মামলার সাথে আসিফ ভাইয়ার সম্পর্ক আছে। সেদিন বরিশালে এসে মাহিমকে এই বিষয়ে খুটিনাটি অনেক কিছু জিজ্ঞেস করেছেন। বললো, আমার মনে হয় এই কেসটা নিয়েই কাজ করছেন আসিফ ভাইয়া। আপাতত জিনিসটা এখানেই থাকুক। আমি রাতে আসিফ ভাইয়াকে টেলিফোনে সব খুলে বলবো।
বলে উঠে দাঁড়ালো মাহিম। বাসায় যাবে। এগিয়ে গেল দরজার দিকে। ঠিক এই সময় জানালার কাছ থেকে সরে গেল একটি ছায়ামূর্তি। ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমেছে নগরীতে। মূহুর্তেই আধারে মিলিয়ে গেল ছায়ামূর্তিটি। মাহিম নিজের বাসায় গেল। বাসায় গিয়েই কল করলো আসিফ ভাইয়ার মোবাইল ফোনে। পরপর দুবার রিং হলো; কিন্তু ভাইয়া ফোন ধরলো না। রাতে খাবার পরে আবার কল দেবে ভাবলো মাহিম।
মাহিম বেরিয়ে যাওয়ার ঠিক আধাঘণ্টা পর ওর বোনের বাসার ডোর বেল বেজে উঠলো। দরজা খুললেন দুলাভাই। খোলার সাথে সাথে হুড়মুড়িয়ে বাসার ভেতর ঢুকে পড়লো চারজন লোক। মাহিমের দুলাভাইকে ধাক্কা দিয়ে দরজার সামনে থেকে সরিয়ে ঘরে ঢুকলো লোকগুলো। ঢুকেই কোমর থেকে পিস্তল বের করলো তাদের দু’জন।
সাত.
সেদিন সন্ধ্যায় বৃদ্ধের দেওয়া ঠিকানাটায় ঢু মারলো আসিফ। একাই গেল মিরপুর-৭ এলাকার বাড়িটায়। ১৪ নম্বর সড়কের তিন নম্বর বাড়িটার সামনে পৌঁছে গেল ঠিক রাত আটটায়। নির্মাণাধীন একটা বাড়ি। নিচ তলার কাজ হয়তো শেষ হয়েছে। চারপাশটা দেখে নিয়ে পকেট গেইট ঠেলে ভেতরে ঢুকলো। পুরো বাড়িটা অন্ধকার। টর্চ জ্বেলে দরজার কাছে গেল। দরজায় টোকা দেওয়ার আগেই দেখলো তালা দেওয়া। অর্থাৎ ভেতরে কেউ নেই। সুযোগটা কাজে লাগালো আসিফ মাহবুব। একটু চেষ্টা করতেই তালাটা খুলে গেল। দরজা ঠেলে ভেতের ঢুকলো ধীর পায়ে।
এই সময় নিজের অজান্তেই ছোট্ট একটা ভুল করলো, কিন্তু সেটা টের পেল না। কোমরে পিস্তলটা জায়গা মতো আছে কি-না দেখে নিয়ে টর্চটা জ্বালালো। বাড়ির ড্রয়িং রুম এটা। অবশ্য একটা বিছানাও আছে। নির্মাণাধীন বাড়ির নিচতলা। দুটো রুম আছে এখানে।
দ্রুত হাতে সামনের রুমটা তল্লাশি শুরু করলো আসিফ। বাড়িটা যার তার সম্পর্কে আগে থেকেই তথ্য ছিল পুলিশের কাছে। পুরাকীর্তি চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের সদস্য লোকটা। কয়েকবার পুলিশের হাতে আটকও হয়েছে। দেশের বাইরে থেকে যত মূল্যবান গোপন জিনিস আসে, অথবা দেশ থেকে যেগুলো বিদেশে যায়- তার বড়ো একটা অংশ হয় এর হাত দিয়ে। বিকেলে বৃদ্ধের কাছ থেকে এই ঠিকানাটা পাওয়ার পর আসিফ আরো নিশ্চত হলো যে, এখানে কিছু একটা পাওয়া যেতে পারে।
দ্রুত একটার পর একটা জিনিস উলটে-পালটে দেখতে থাকলো আসিফ। ঠিক কী খুঁজছে নিজেও জানে না। তবে কোনো ক্লু পাওয়া যেতে পারে সেই আশায় খুঁজে যেতে লাগলো। তোষকের নিচ থেকে একটা ডায়েরি পেল। ডায়েরির পাতাগুলো উলটে-পালটে দেখলো, কাজে লাগতে পারে এমন কিছু লেখা নেই। পৃষ্ঠা উলটানোর এক পর্যায়ে ডায়েরির ভেতর থেকে একটা টুকরো কাগজ বেরিয়ে মেঝেতে পড়লো। ডায়েরিটা বিছানার ওপর রেখে টর্চের আলোয় কাগজটা তুলে চোখের সামনে ধরলো। একটা ঠিকানা লেখা : মাহিম, বাবার নাম লিয়াকত আলী, বাড়ি নম্বর ১৭, কালুশাহ সড়ক, আলেকান্দা, বরিশাল।
এই সময় খুট করে একটা শব্দ হলো। সাথে সাথেই রুমের লাইট জ্বলে উঠলো। দরজার দিক পেছন ফিরে কাগজটা পড়ছিল আসিফ। পেছন থেকে ভারি একটা কণ্ঠ বলো উঠলো, খবরদার! একদম নড়বে না। যেভাবে আছো সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকো। হাত দুটো ওপরে তোলো।
কড়া নির্দেশ। আসিফ বুঝে ফেললো কী হতে চলেছে। তাই সাথে সাথেই নির্দেশ পালন করলো। এক হাতে কাগজ আরেক হাতে টর্চ লাইট ধরা অবস্থাতেই হাত দুটো মাথার ওপরে তুললো। এরপর ধীরে ধীরে ঘুরলো দরজার দিকে। তখনই মনে পড়লো দরজাটা খোলা রেখেই ঘরে ঢুকেছে সে। দরজাটা আটকে তল্লাশি শুরু করলে এত সহজে লোকটা ওকে ধরতে পারতো না। এখন আর কিছু করার নেই।
হাত উচু রেখেই ধীরে ধীরে ঘুরলো আসিফ। এক হাতে টর্চ লাইট, আরেক হাতে কাগজের টুকরোটা। দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে লোকটা। ডানহাতে ধরা পিস্তলটা আসিফের বুক বরাবর তাক করা। লোকটা লম্বায় ছয় ফুটের কাছাকাছি, চওড়া কাধ, সুঠাম দেহ। গায়ে বেশ শক্তি রাখে বোঝাই যাচ্ছে। লোকটার চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে রইলো আসিফ। তবে খুব সতর্ক থাকলো। লোকটার চোখ দুটো শিকারি বাঘের মতো জ্বলজ্বল করছে, চেহারার মধ্যে একটা নিষ্ঠুর ভাব ফুটে উঠেছে। আসিফের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বলছে, অস্ত্র হাতে এমন মানুষ খুব বিপজ্জনক। যে-কোনো সময় গুলি করে বসতে পারে। তাই সাবধানে খেলতে হবে। সামান্য সুযোগও নিখুঁতভাবে কাজে লাগাতে হবে।
কথা বলে উঠলো লোকটা। কে তুমি, এখানে কেন এসেছো?
চুপ করে রইলো আসিফ। কী জবাব দেবে ভেবে পাচ্ছে না।
: কথা বলছো না কেন? এবার আরো কঠোর শোনালো লোকটার গলা। কী খুঁজছো বলো?
: তোমরা যা খুঁজছো তাই। শান্ত কিন্তু কঠোর স্বরে বললো আসিফ।
: কে তুমি? কী করে জানলে আমরা কী খুঁজছি? পালটা প্রশ্ন করলো লোকটা।
: সোনার পিস্তলটা খুঁজছো তোমরা তাই না! আমিও সেটাই খুঁজছি।
কথা বলে সময়ক্ষেপণ করতে চেষ্টা করলো আসিফ। আর ততক্ষণে যদি মাথায় কোনো বুদ্ধি এসে যায়। তাছাড়া কথা বলতে বলতে লোকটা যে-কোনো ভুল করে বসতে পারে। সেই সুযোগটাই চাইছে আসিফ।
: কোন গ্রুপের লোক তুমি? আমার বাসার ঠিকানা পেলে কোথায়? আবার প্রশ্ন করলো লোকটা। পিস্তল ধরা হাতটা এতটুকুও নড়েনি।
: সামান্য একটা বাসার ঠিকানাই যদি না পাই, তাহলে এই পথে নেমেছি কী জন্য। মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো আসিফ; কিন্তু ওর হাসিতে মন গললো না নিষ্ঠুর চেহারার লোকটার। সে আর কথা বাড়াতেও আগ্রহী নয়। কড়া স্বরে নির্দেশ দিলো, হাতের কাগজটা টেবিলের ওপরে রাখো।
এবার একটা অজুহাত খুঁজে পেল আসিফ। ওর বামহাতে তখনো মাহিমের ঠিকানা লেখা সেই টুকরো কাগজটা। কাগজটা টেবিলে রাখার অজুহাতে একটু নড়লো। বাম দিকে এক পা এগিয়ে টেবিলের কাছে গেল। ভাবখানা এমন যে কাছে না গেলে টেবিলের ওপর রাখা যাবে না কাগজটা। ঠিক এই মুহূর্তে লোকটার দৃষ্টি সরে গেল টেবিলটার দিকে। আসিফের হাত সেখানে কাগজটা রাখছে কি না সেটা দেখতে চোখটা একটু ডানদিকে ঘোরালো নিষ্ঠুর মুখের লোকটা। এমন একটা সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিল আসিফ এবং সুযোগটা সাথে সাথে লুফে নিলো। ওর বাম হাতটা যখন টেবিলের ওপর কাগজটা রাখতে যাচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে ডান হাতের টর্চ লাইটটা সর্বশক্তিতে ছুঁড়লো লোকটার মাথা লক্ষ্য করে।
কাজটায় ঝুঁকি ছিল; কিন্তু আর কোনো উপায় ছিল না আসিফের হাতে। ভালো করেই জানতো, টার্গেট মিস হলে পরের সুযোগেই লোকটা গুলি করবে ওকে। তাই টর্চটা ছুঁড়ে দিয়েও সতর্কতাবশত মাথাটা নিচু করে বসে পড়লো। টর্চটা গিয়ে লোকটার কপাল বরাবর লেগেছে। পেছন দিকে পড়ে যেতে যেতে টাল সামলালো লোকটা। দুই হাত দিয়ে কপাল চেপে ধরলো। এই সুযোগ বসা অবস্থা থেকেই লোকটাকে লক্ষ্য করে লাফ দিলো আসিফ। এক হাতে ওর পিস্তল ধরা হাতের কবজিটা ধরলো। আরেক হাতে উপর্যুপুরি ঘুষি চালানো নাক মুখ লক্ষ্য করে। ঘুষি খেয়েও পিস্তল ধরা হাতটা ছাড়িয়ে নিতে জোরে টান দিলো লোকটা। এতে পিস্তলটা হাত থেকে ছুটে গিয়ে দেওয়ালে বাড়ি খেয়ে মেঝেতে পড়লো। এবার পরপর দুটো ঘুষি চালালো আসিফের মুখ লক্ষ্য করে। প্রথমটায় মুখটা সরিয়ে নিলো আসিফ। দ্বিতীয়টা থুতুনিতে লাগলো।
ঘুষি খেয়ে জিদ বেড়ে গেল আসিফের। ডান পায়ের হাঁটু দিয়ে প্রচণ্ড জোরে মারলো লোকটার পেটে। কোৎ করে একটা শব্দ করলো লোকটা। মনে হলে পেটের সব বাতাস বের হয়ে গেছে। আর কোনো প্রতিরোধের চেষ্টা করলো না। দরজার দিকে ঘুরে দৌড়ে পালাতে লাগলো। আসিফ ওর পিছু পিছু অনেকটা দূর দৌড়ে এসেও ধরতে পারলো না। কয়েক মিনিট এদিক ওদিক করে বুঝতে পারলো, আর পাওয়া যাবে না।
আট.
একটা সিএনজি অটোরিকশা ডেকে বাসার পথ ধরলো আসিফ। বাসায় ফিরতে ফিরতে পুরো বিষয়টা নিয়ে ভাবলো। লোকটার বাসায় মাহিমের ঠিকানা পাওয়া গেছে। তার অর্থ হচ্ছে, যে কোনোভাবেই হোক মাহিম এই কেসটার সাথে জড়িয়ে গেছে। একই কারণে হয়তো মাহিমের বাসায় চোর ঢুকেছিল। সেদিন বিকেলেও ওদের ফলো করেছিল একটা লোক। মাহিম কীভাবে এই কেসটার সাথে জড়িয়ে গেল সেটা বুঝতে পারছে না আসিফ। ওই লোকটার বাড়িতে মাহিমের বাসার ঠিকানা যেভাবে স্পষ্ট করে লেখা ছিল, তাতে এটা স্পষ্ট যে, অপরাধীরা মাহিমের সম্পর্কে সব কিছুই জেনেছে। বরিশালে নিশ্চয়ই ওদের লোক আছে। তাই মাহিমের বিপদ হতে পারে যে কোনো সময়।
কিন্তু চোরাচালানের এই কেসে মাহিম কীভাবে এলো এটা কিছুতেই মেলাতে পারছে না আসিফ। সারাটা পথ ভাবলো; কিন্তু কোনো সমাধান পেল না। ভাবনায় এতটাই ডুবে ছিল যে কখন বাসার সামনে এসে পড়েছে টের পায়নি। সিএনজি থামতে সংবিৎ ফিরে পেল। আসিফ ভাড়া মিটিয়ে দিতে দিতে গেট খুলে দিলো দারোয়ান। লিফটের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই লিফট খুলে গেল। ওপর থেকে সুটকেস হাতে নামছেন আসিফের পাশের বাসার মামুন সাহেব।
সালাম বিনিময়ের পর আসিফ জানতে চাইলো, এত রাতে কোথায় যাচ্ছেন মামুন ভাই।
: মালয়েশিয়া যাচ্ছি, রাত ১০টায় ফ্লাইট।
এটুকু বলে মামুন সাহেব সুটকেস হাতে এগিয়ে গেলেন। আনমনে ‘ফ্লাইট’ শব্দটা দুই তিনবার উচ্চারণ করতে করতে লিফটে ঢুকলো আসিফ। এই ফ্লাইট শব্দটাই ওকে পৌঁছে দিলো সমাধানে। এতক্ষন যে সমাধানটা মেলাতে পারেনি সেটা এবার মিলে গেছে। ‘ইয়েস’ বলে নিজের ডান হাত দিয়ে বাম হাতের তালুতে ঘুষি মারলো আসিফ। ফ্লাইট থেকেই সম্ভবত মাহিম জড়িয়ে পড়েছে সোনার পিস্তলের কেসটায়।
শুরু থেকে বিষয়টা মেলাতে শুরু করলো ও। দুবাই থেকে এক যাত্রী সোনার পিস্তলটা সঙ্গে নিয়ে আসছে এমন তথ্য ছিল গোয়েন্দাদের কাছে। তথ্যটা খুবই নির্ভরযোগ্য ছিল; কিন্তু ওই যাত্রীকে তল্লাশি করে কিছুই পাওয়া যায়নি। ওই যাত্রীর পাশের সিটেই ছিল মাহিম। পথে মাহিমের সাথে বেশ খাতির জমিয়েছে লোকটা। ওর বাসার ঠিকানা নিয়েছে। সেদিন রাতেই চোর আসে মাহিমের বাসায়। ওর কাছে হুমকি দেওয়া চিঠিও আসে। ওকে ফলো করা শুরু হয়। এ সবের মানে একটাই দাঁড়ায়- বিমানেই ওই যাত্রী কোনোভাবে সোনার পিস্তলটা মাহিমের ব্যাগে ঢুকিয়ে দেয়। সেটা মাহিম টের পায়নি। না জেনেই বড়ো একটা অপরাধী চক্রের সাথে ফেঁসে যায় কিশোর ছেলেটা।
কিন্তু অস্ত্রটা গেল কোথায়?
মাহিম ব্যাগে কিছু পেলে তো আসিফকে জানাতো। তেমন কিছুই তো ব্যাগে পাওয়া যায়নি। ভাবতে ভাবতে বাসায় প্রবেশ করলো আসিফ। ঘটনা যাই হোক আগে মাহিমকে সাবধান করতে হবে। ভয়ংকর এক অপরাধী চক্র লেগেছে ওর পেছনে। সতর্ক না থাকলে বড়ো বিপদ হতে পারে। ওরা যে-কোনো মূল্যে পিস্তলটা হাতে পেতে চাইবে। এসব অপরাধীরা স্বার্থের জন্য খুন করতেও পিছপা হয় না।
ঘরে ঢুকেই ড্রয়ার থেকে স্মার্ট ফোনটা বের করলো আসিফ। স্মার্ট ফোনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকে, তাই গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনে গেলে সেটা বাসায় রেখে যায়। ফোনটা বের করেই দেখলো মাহিমদের নম্বর থেকে দু’বার কল এসেছিল।
নয়.
অস্ত্র হাতে লোকগুলোকে দেখে হতভম্ভ হয়ে গেল মাহিমের দুলাভাই। তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই অস্ত্রধারীদের একজন পিস্তল নাচিয়ে বললো, সোনার পিস্তলটা কোথায়? দ্রুত দিয়ে দাও।
মাহিমের দুলাভাই চুপ করে রইলো। লোকটা আবার বললো, লুকানোর চেষ্টা কইরা লাভ নেই। তাহলে জানে মারা পরবা। তাড়াতাড়ি আমাদের জিনিসটা আমাদের দিয়ে দাও।
লোকজনের কথা শুনে মাহিমের বোন সুবাকে নিয়ে ভেতরের রুম থেকে সামনের রুমে আসেন। এতগুলো লোককে অস্ত্রহাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভয় পেয়ে যান তিনি। অস্ত্রধারীদের একজন সুবার সামনে গিয়ে মাহিমের দুলাভাইকে উদ্দেশ্য করে বলে, মেয়ের জীবনের জন্য মায়া আছে না তোমার? তাইলে খারাপ আচরণ করতে বাধ্য কইরো না। ভালো ছেলের মতো পিস্তলটা দিয়া দাও।
কী করা উচিত বুঝে উঠতে পারছেন না দুলাভাই। ভয়ে মাহিমের বোনের মুখ শুকিয়ে গেছে। কাঁপা কাঁপা গলায় স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বললেন, দিয়ে দাও ওনাদের জিনিসটা। তারপর লোকগুলোর দিকে চেয়ে অনুনয়ের সুরে বললেন, প্লিজ আপনারা আমাদের কোনো ক্ষতি করবেন না। আপনাদের যা নেওয়ার নিয়ে নিন।
দুটো লোক ঘরটাতে তল্লাশি শুরু করলো। ওয়ার্ডড্রবের একটা ডয়ার থেকে কালো ব্যাগটা পাওয়া গেল। ব্যাগটা হাতে নিয়ে একজন নেতাগোছের লোকটার কাছে এলো। ব্যাগটা থেকে পিস্তলটা বের করে একটা তৃপ্তির হাসি দিলো সে। তারপর মাহিমের দুলাভাইয়ের দিকে পিস্তল নাচিয়ে বললো, আমরা চইলা যাইতাছি। পুলিশ-টুলিশের ঝামেলা কইরা লাভ নাই। তাতে আপনাগোই ক্ষতি হইবো।
বলে লোকগুলো বেরিয়ে গেল বাসা থেকে। বাসার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল তাদের মাইক্রোবাস। চারজন গাড়িতে উঠে চলে গেল।
ওই পথ ধরেই কোচিং থেকে সাইকেল চালিয়ে ফিরছিল রাতুল। মাহিমের বোনের বাসার সামনে দিয়ে আসার সময় দেখলো ওই বাসা থেকে কয়েকজন লোক বের হয়ে মাইক্রোবাসে উঠছে। লোকগুলোকে চেনে না রাতুল। দেখতেও ভদ্রলোক বলে মনে হলো না। বিষয়টি সন্দেহ জাগালো ওর মনে। মাইক্রোবাসটার চলে যাওয়াটাও কেমন যেন চোখে লাগার মতো। ঝড়ের বেগে বেরিয়ে গেল সেটি বাসার সামনে থেকে। সাধারণত আবাসিক এলাকার রাস্তায় এত জোরে গাড়ি চালায় না কোনো ড্রাইভার।
সাইকেল ঘুরিয়ে মাইক্রোবাসটার পিছু নিলো রাতুল। এর মধ্যে ওর চোখের আড়ালে চলে গেছে সেটা। তবু সেই পথ ধরে চলতে লাগলো। গায়ের সবটুকু জোর খাটিয়ে সাইকেলের প্যাডেল দিতে লাগলো। সাইকেল উড়ে চললো যেন। কতদূর গিয়ে মাইক্রোবাসটাকে দেখতে পেল। ভাগ্য ভালোই বলতে হবে, রাস্তায় আজকে রিকশার চাপ বেশি। যে কারণে মাইক্রোবাসটা ঝড়ের বেগে বেশি দূর যেতে পারলো না। গতি কমাতে বাধ্য হলো। কিছুদূর গিয়েই রাতুল গাড়িটাকে দেখতে পেল। পুরোনো মডেলের সাদা রঙের একটা গাড়ি। পেছনের গ্লাসে ধুলো জমে আছে। এক পাশের লাইট ভাঙা। সবার আগে গাড়ির নম্বরটা মুখস্ত করে নিলো ও। তারপর মনে মনে আল্লাহর সাহায্য চাইলো, রাস্তায় রিকশার চাপ যাতে এরকমই থাকে। মাঝে মধ্যে রাস্তা একটু ফাঁকা হলেই মাইক্রোবাসটা এগিয়ে যাচ্ছে অনেক দূর। রাতুল তখন গায়ের জোরে সাইকেল চালিয়ে ব্যবধান কমানোর চেষ্টা করে।
একসময় সিএন্ডবি রোডে গিয়ে উঠলো মাইক্রোবাসটা। চার লেনের চওড়া সড়ক। রাতুল বুঝতে পারলো এখন আর ওর পক্ষে মাইক্রোবাসটাকে নজরে রাখা সম্ভব হবে না। তবু চেষ্টা চালিয়ে গেল। ভাগ্য আবারো ওর সহায় হলো। দক্ষিণ দিকে কিছুটা গিয়ে ডান দিকে মোড় নিলো সেটা। চৌধুরীপাড়ার দিকে ঢুকলো গাড়িটা। রাতুলও সাইকেল ঘুরিয়ে নিলো। মহল্লায় ঢুকে কয়েকবার মোড় নিলো গাড়ি। ততক্ষণে অন্ধকার নেমে গেছে। তবে রোডলাইটগুলো জ্বলছে, যে কারণে রাতুলের চলতে সমস্যা হলো না।
এক পর্যায়ে একটা বাড়ির গেইটের কাছে থামলো গাড়িটা। রাতুল কিছুটা দূরে সাইকেল থামিয়ে লক্ষ করতে লাগলো। একে একে পাঁচজন বের হলো গাড়ি থেকে। গেইট পেরিয়ে বাড়ির ভেতর ঢুকলো। মাহিমের বোনের বাসা থেকে চারজনকে বের হতে দেখেছিল রাতুল। আরেকজন সম্ভবত ড্রাইভার, যে গাড়িতেই বসে ছিল। তার মানে এখন গাড়িতে কেউ নেই।
রাতুল সাবধানে ধীরে ধীরে সাইকেল চালিয়ে গাড়িটার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় খেয়াল করে দেখলো আসলেই গাড়িতে কেউ নেই। কিছুটা দূরে একটা অন্ধকার মতো জায়গা দেখে সাইকেল রেখে বাড়িটাকে ভালো করে দেখলো। পুরোনো একটা বাড়ি। গেইটের পরে একটা ছোট মাঠের মতো খোলা জায়গা, এরপর একতলা একটা বিল্ডিং। সামনের দিকে একটা বাল্ব জ্বলছে। যে কারণে পুরো বাড়িটা চোখে পড়ছে। তবে কোনো লোকজন দেখা যাচ্ছে না। গাড়ি থেকে নামা পাঁচজন সম্ভবত বিল্ডিংটার ভেতরে ঢুকেছে।
কী করবে ভাবতে লাগলো রাতুল। ও জানে না এই লোকগুলো কারা, আসলে কী ঘটেছে। শুধুমাত্র সন্দেহের বসে লোকগুলোর পিছু নিয়েছে। কাজেই না জেনে কিছু করা ঠিক হবে না। মাহিমকে ফোন করে বিষয়টা জানানোর সিদ্ধান্ত নিলো। কিছুটা দূর একটা মোবাইল ফোন রিচার্জের দোকান দেখতে পেয়ে সেখানে গেল। দোকান থেকে টাকার বিনিময়ে কল করার ব্যবসা এখন বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ এখন সবার হাতে হাতে মোবাইল ফোন। কেউ আর দোকান থেকে কল করে না। একসময় ১০ টাকা, পরে ৫ টাকা আরো পরে ২ টাকা রেটে প্রতি মিনিট কল করা যেত দোকান থেকে। রাতুল দোকানদারকে অনুরোধ করে বললো, আঙ্কেল আমার একটা জরুরি কল করা দরকার।
দোকানদার রাজি হলো। মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে দোকানের এক পাশে গিয়ে মাহিমের মায়ের নম্বরে কল করে মাহিমকে চাইলো। ওদিকে সব কিছু ঠিক আছে কি না জানতে চাইলো। মাহিম জানালো কিছুই ঠিক নেই। একদল অস্ত্রধারী লোক ওর বোনের বাসায় হানা দিয়ে মূল্যবান জিনিসটা নিয়ে গেছে। রাতুল বুঝতে পারলো ও হয়তো সেই লোকগুলোকেই ফলো করে এখানে এসেছে। সংক্ষেপে মাহিমকে সব বুঝিয়ে বলে জায়গাটার ঠিকানা দিলো। বর্ণনা শুনেই মাহিম চিনতে পারলো বাড়িটা। ওকেও কিডন্যাপাররা এখানেই বন্দি করেছিল। ও এখুনি আসছে জানিয়ে রাতুলকে আশপাশে অপেক্ষা করতে বললো।
রাতুল দোকানের লোকেশনটা জানিয়ে আগে মাহিমকে সেখানে আসতে বললো। দোকানটা বাড়িটা থেকে কিছুটা দূরে। এখানে থাকলে কেউ সন্দেহ করবে না। দোকানদারকে রাতুল ফোনের বিল দিতে চাইলে সে নিলো না। বন্ধু আসবে জানিয়ে সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার অনুমতি নিয়ে দোকানেই বসে থাকলো রাতুল।
দশ.
রাতুলের কাছ থেকে খবর পাওয়ার আধা ঘণ্টা আগে মাহিমের কাছে ওর আসিফ ভাইয়ার ফোন এসেছিল। মিরপুরে সেই বাড়িটা থেকে বাসায় ফিরেই মাহিমের মিসডকল দেখে কল ব্যাক করলো আসিফ। মাহিম ফোন ধরতেই আসিফ বললো, মাহিম তোর সাথে অনেক জরুরি কথা আছে। বড়ো বিপদের মধ্যে জড়িয়ে পড়েছিস তুই। খুব সাবধানে থাকতে হবে তোকে।
: এদিকেও গতকাল থেকে অনেক কিছু ঘটে গেছে ভাইয়া। মাহিম বললো। তোমাকে জানানোর সুযোগ পাইনি। আমাকে গতকাল সন্ধ্যায় কিডন্যাপ করা হয়েছিল। সকালে আমি সেখান থেকে পালিয়ে আসতে পেরেছি। গুন্ডাগুলো আমাকে বলেছে, বিমানে আমার ব্যাকপ্যাকে পিস্তল রাখার কথা। আমি বাড়ি ফেরার পর ব্যাগটা সুবা নিয়ে গিয়েছিল, তাই পিস্তলটা আমার চোখে পড়েনি। অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে আসার পর ব্যাগে পিস্তলটা খুঁজে পাই।
: গুড, ভেরি গুড। আমিও ঢাকায় বসেই জানতে পেরেছি ব্যাপারটা। চোরাকারবারিদের বিশাল একটা গ্যাং জড়িত এই ঘটনার সাথে। তোকে এখন খুবই সতর্ক থাকতে হবে। পিস্তলটা পুলিশের হাতে তুলে না দেওয়া পর্যন্ত যে-কোনো কিছু ঘটতে পারে।
: অলরেডি ঘটে গেছে ভাইয়া।
: ঘটে গেছে! কী ঘটে গেছে? আসিফের কণ্ঠে উদ্বেগ।
: আজ সন্ধ্যার পরে আপার বাসায় কয়েকটা অস্ত্রধারী লোক ঢুকেছিল। তারা অস্ত্রের মুখে সোনার পিস্তলটা নিয়ে গেছে। ওরা কীভাবে বিষয়টা জানলো তা বুঝতে পারছি না।
: আমি বুঝতে পারছি। আগেই বলেছি, তোর ওপর চোরাকারবারিরা সারাক্ষণ নজর রাখছে। তোর গতিবিধি অনুসরণ করেই ওরা পিস্তলটার সম্পর্কে জেনে গেছে। বিষয়টা খুবই খারাপ হলো। এখন নতুন করে পিস্তলটার সন্ধানে নামতে হবে। যাক, আমি কাল সকালেই তোদের শহরে আসছি।
: আরেকটা কথা তোমাকে বলা হয়নি ভাইয়া। আপার বাসায় যে গুন্ডামতন লোকগুলো এসেছিল রাতুল ওদের খোঁজ পেয়েছে। আমাকে যে বাড়িতে বন্দি করা হয়েছিল সেখানেই গেছে গুন্ডাগুলো। রাতুল ওদের ওপর চোখ রাখছে। আমিও এখন যাচ্ছি সেখানে।
: খুব সাবধানে থাকবি। ওরা কিন্তু বিপজ্জনক। আর শোন, ঝুঁকি নিয়ে কিছু করার দরকার নেই। যা করার পুলিশই করবে। তোরা শুধু ওদের ওপর চোখ রাখ। আর যাওয়ার সময় খালাম্মার মোবাইলটা সঙ্গে রাখবি। কোনো সমস্যা হলে লোকেশন ট্রেস করে খুঁজে পেতে সহজ হবে।
সংক্ষেপে ওই বাড়িটার ঠিকানা আসিফ ভাইয়াকে জানিয়ে ফোন রেখে দিলো মাহিম। তারপর সাইকেলটা নিয়ে বের হলো। বাসা থেকে সোজা চললো চৌধুরী পাড়ার দিকে। ঝড়ের বেগে সাইকেল ছোটালো মাহিম।
এগারো.
১৫ মিনিটের মধ্যে মাহিম চলে এলো দোকানটার সামনে। ওকে দেখেই দোকানদারকে ধন্যবাদ দিয়ে বেরিয়ে এলো রাতুল। তারপর ওর সাইকেলের সাথে মাহিমের সাইকেলটা তালা দিয়ে রেখে এগোল বাড়িটার দিকে। গেইটের কাছে দাঁড়িয়ে কয়েক মিনিটে বাড়িটা ভালো করে দেখলো দু’জন। তারপর বিসমিল্লাহ বলে পকেট গেইট ঠেলে ভেতরে ঢুকলো। সোজাসুজি বিল্ডিংটার সামনে যাওয়ার বদলে পশ্চিম পাশের জানালার কাছে গেল দু’জন। সবগুলো জানালায় কাঠের পাল্লা আর ভেতর থেকে লাগানো। তাই কিছুই দেখতে পেল না। সেই জানালাটা খুঁজতে লাগলো মাহিম যেটা দিয়ে ও পালিয়েছে। বাড়িটার চারপাশে একটা চক্কর দিতেই জানালাটা খুঁজে পেল। একটা পাল্লা এখনো খোলা। জানালায় উঁকি দিলো মাহিম। ঘরটা অন্ধকার। এখান দিয়েই ঢোকার সিদ্ধান্ত নিলো।
কেন ঢুকবে, ঢুকে কী করবে কিছুই জানে না মাহিম; কিন্তু কী যেন ভর করেছে ওর ওপর। তাই যে-কোনো মূল্যে সোনার পিস্তলটা উদ্ধার করতে চায়। এতগুলো অস্ত্রধারী গুন্ডার সাথে ওরা দু’জন কিশোর কী করে পারবে সেটাও চিন্তা করে দেখলো না। ঝোঁকের বসে একটার পর একটা সাহসী আর ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে লাগলো। হাতে ভর দিয়ে জানালার চৌকাঠে উঠলো মাহিম। তারপর ধীরে ধীরে ওপাশে নেমে গেল। ওকে অনুসরণ করলো রাতুল। অন্ধকারে কিছুই দেখতে না পেয়ে পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে লাইট জ্বাললো।
এগিয়ে গেল দরজার দিকে। ধীরে ধীরে ধাক্কা দিলো দরজায়। সামান্য ক্যাক শব্দ করে খুলে গেল দরজা। একটা পাল্লা ফাঁকা করে মিনিটখানেক অপেক্ষা করলো দুই কিশোর। কোনো পরিবর্তন লক্ষ করলো না। বোঝা গেল ওদের উপস্থিতি টের পায়নি লোকগুলো। দরজা দিয়ে উঁকি দিলো মাহিম। সামনে একটা ঘর। তার ওপাশে আরো দুটো ঘর। মাঝখানের ঘরটাতে লাইট নেই। তবে ওপাশের ঘরটায় লাইট জ্বলছে। সেই আলোয় মাঝের ঘরটা পরিষ্কার হয়ে আছে। ওপাশের ঘরটা থেকে লোকজনের কথা ভেসে এলো। লাইট বন্ধ করে মোবাইল ফোনটা পকেটে রাখলো।
এ সময় ওপাশের ঘর থেকে একটা লোক মাঝের ঘরে এলো। উঁকি দিয়েই আবার পিছিয়ে গেল লোকটা। ঘরের মাঝখানে মাহিম আর রাতুলকে দেখতে পেয়ে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো সে। ভয় জড়ানো কণ্ঠে বলে উঠলো, এই তোমরা কারা! তোমরা কারা!
লোকটির চিৎকার শুনে পাশের ঘর থেকে কয়েকজন ছুটে এলো। একজন ঘরটার বাতি জ্বালিয়ে দিলো। মাহিম আর রাতুলকে দেখে একজন বলে উঠলো, আরে এ দেখি বিচ্ছুগুলো! তোরা এই পর্যন্ত আইয়া পড়ছোস, কী চাস তোরা? মরতে চাস?
আরেকজন বললো, এই মতিন, ধর এগুলারে। বাইন্দা রাখ। বাপরে বাপ, কী সাহস! আমাগো আস্তানায় আইস্যা পড়ছে।
দু’জন ছুটে এসে রাতুল আর মাহিমকে শক্ত করে ধরলো। নেতাগোছের মোটা লোকটা বললো, এই তোরা কী চাস সত্যি করে বলতো? বল তাড়াতাড়ি, নইলে পিটাইয়া মাইরা ফালামু।
লোকটার হুংকার শুনে একটু ভয় পেল মাহিম আর রাতুল। শত হোক ওরা এখন এই লোকগুলোর হাতে বন্দি। তারপরও সাহস সঞ্চার করে মাহিম বললো, এমনিতেই এসেছি। সোনার পিস্তলটা নিয়ে আপনারা কী করেন সেটা দেখতে এসেছি।
: দেখতে আইছোস না, না গোয়েন্দাগিরি করতে আইছোস! তোদের মতো বিচ্ছুগুলারে আমার চেনা আছে। গোপনে খোঁজ নিয়া তারপর পুলিশ পাঠাবি?
: না, আমাদের তেমন কোনো উদ্দেশ্য নেই। আমরা শুধু কৌতূহলের কারণে এই বাড়িতে ঢুকেছি।
: এই একদম মিথ্যা কথা বলবি না। ধমক দিলো নেতা গোছের লোকটা। তোদের মতো বিচ্ছুদের আমার চেনা আছে। মাহিমের দিকে আঙ্গুল তুলে বললো, আর তুই, তুইতো স্বীকারই করতে চাইলি না পিস্তলটার কথা। আমাদের মূল্যবান জিনিসটা দেখে লোভ হইছিল না! জানিস ওটার দাম কত?
আরেকটা লোক বললো, ওস্তাদ সকাল বেলা জানালা দিয়া পালাইছে তো, তাই নিজেরে হিরু মনে করছে। আসলে যে আমরা অরে পালানোর সুযোগ দিসি সেইটা বোঝে নাই।
: জানতাম তোর কাছেই জিনিসটা আছে। তাই তোরে পালানোর সুযোগ দিয়া তোর ওপর নজর রাখছি। তারপরই জানতে পারলাম পিস্তলডা তোর বোনের বাসায় আছে। মুখে হাসি নিয়ে নেতা লোকটি বললো।
মাহিম বুঝলো কেন জানালা দিয়ে ও এত সহজে পালাতে পেরেছিল। সেটা ছিল গুন্ডাগুলোর একটা ফাঁদ।
: ওস্তাদ এগুলার লগে কতা বাড়াইয়া লাভ নাই। চলেন বাইন্দা রাহি। বললো আরেকটা লোক।
: হ, ঠিকই কইছোস। ওই ঘরে নিয়ে তালা দিয়া রাখ দুইডারে।
ধাক্কা দিয়ে দু’জনকে অন্য একটা ঘরে নিয়ে গেল লোকগুলো। যে ঘরে গতকাল মাহিমকে বন্দি করা হয়েছিল এটা সেই ঘর নয়। পাশের আরেকটা ঘরে দু’জনকে ঢুকিয়ে তালা লাগিয়ে দিলো। তালা লাগানোর সময় একজন নেতা গোছের লোকটার কাছে জানতে চাইলো, এই দুইটারে নিয়া কী করবেন ভাই?
: দেখি, আগে জিনিসটা জায়গা মতো পাঠাই। তারপর এই দুইডারে নিয়া চিন্তা করুম। জবাব দিলো সে। বলতে বলতে চলে গেল অন্য ঘরে।
বন্দি হয়ে ঘরের মেঝেতে বসে রইলো দু’জন। এই ঘরেও একটি জানালা আছে, তবে সেটিতে শক্ত গ্রিল রয়েছে। খালি হাতে ভাঙা সম্ভব নয়। দুই বন্ধু মেঝেতে বসে মুক্তি উপায় খুঁজতে লাগলো। অন্য ঘর থেকে লোকগুলোর গল্পগুজবের শব্দ আসছে। সম্ভবত তাস খেলছে ওরা। বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে এক পর্যায়ে মেঝেতে শুয়ে পড়লো দুই বন্ধু। মশার কামড় উপেক্ষা করে শুয়ে থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে জানে না। ঘুম ভাঙলো কারো ধাক্কায়।
: এই মাহিম, এই রাতুল ওঠ, কিরে আরামের ঘুম দিয়েছিস যে!
ধাক্কা খেয়ে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো দুই কিশোর। উঠেই সামনে দেখলো আসিফ ভাইয়াকে। বুঝতে পারলো না কী হয়েছে। মাহিম বললো, ভাইয়া তুমি কখন এলে?
জবাব না দিয়ে আসিফ পালটা প্রশ্ন করলো, গভীর ঘুম দিলি দু’জনে, মেহমানদারি কি খুব ভালো হয়েছে এখানে?
ধীরে ধীরে সব স্পষ্ট হলো ওদের কাছে। মনে পড়লো রাতের কথা। আসিফ ভাইয়া যে ওদের মুক্ত করতে এসেছে সেটাও বুঝতে পারলো; কিন্তু বিষয়টা কীভাবে ঘটলো তা বুঝতে পারছে না। রাতুল জানতে চাইলো, ভাইয়া তুমি কীভাবে এলো? ওই লোকগুলো কোথায়?
: সবগুলোকে গাড়িতে তোলা হয়েছে। ওদের নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। অবশ্য তোরা যে চিন্তা করার লোক নয় তা বোঝাই যাচ্ছে। বন্দি অবস্থায় থেকেও যে ঘুম দিলি!
আসিফের খোঁচা মারা কথায় লজ্জা পেল দুই কিশোর। চুপ করে থাকলো। আসিফই আবার বললো, হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না। এমনিতে যা করেছো তাই অনেক। দুর্দান্ত সাহসের পরিচয় দিয়েছো তোমরা। তোমাদের কারণেই এই চক্রটাকে সহজে ধরা গেছে।
বাইরে এসে ওরা দেখলো দুটো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। তখনো সকাল হয়নি। একটা পুলিশ ভ্যানে আসামীগুলোকে উঠিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। স্থানীয় পুলিশ সদস্যরা তাদের নিয়ে গেল। অন্য গাড়িটায় মাহিম আর রাতুলকে নিয়ে উঠলো আসিফ। ওদের সাইকেল দুটো সেখানেই থাকলো। পরে এসে নিয়ে যাবে।
গাড়ি ছেড়ে দিলো আসিফ। এমন সময় ফজরের আজান শুরু হলো চারদিকের মসজিদে। মাহিম বললো, ভাইয়া তোমার না সকালে রওয়ানা দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এই ভোররাতে তুমি বরিশালে এলে কী করে?
: তোদের কথা চিন্তা করে আসতে হয়েছে বুঝলি! রাতে তো তোকে বলেছিলাম সকালে রওয়ানা দেবো; কিন্তু যখন শুনলাম তুই আর রাতুল লোকগুলোর পেছনে ছুটছিস তখন আর অপেক্ষা করে ঝুঁকি বাড়াতে মন চাইলো না। তখনই অফিস থেকে একটা গাড়ি নিয়ে রওয়ানা দিয়েছি। সারারাত একা একা ড্রাইভিং করে তিনটার কিছু পরে বরিশাল আসি। তারপর স্থানীয় পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে তাদের সহায়তায় এখানে অভিযান চালাই।
: তাহলে তো তোমার অনেক কষ্ট হয়েছে। বললো রাতুল। আচ্ছা ভাইয়া, সোনার পিস্তলটা কোথায়? ওটা দিয়ে কী করবে?
: ওটা জব্দ করা হয়েছে। যেহেতু বিদেশি জিনিস। ওটার ব্যাপারে এখন সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। হয়তো ওই দেশে ফিরিয়ে দেওয়া হবে, অথবা বিশ্বের নামী কোনো জাদুঘরে ওটার স্থান হবে।
: দারুণ কিন্তু জিনিসটা, আমি হাতে নিয়ে দেখেছি। মাহিম বললো।
: তোর সৌভাগ্য বলতে হবে। এমন জিনিস বিশ্বে খুব বেশি নেই। যাক আর কোনো কথা নয়, গল্প পরেও করা যাবে। চল্ তাড়াতাড়ি বাসায় যাই। নামাজ পড়ে লম্বা ঘুম দেবো। তোরা তো শত্রুর আস্তানায় আরামে ঘুমিয়েছিস। আমাকে সারারাত গাড়ি চালাতে হয়েছে।
বলেই হাসিতে ফেটে পড়লো আসিফ মাহবুব। আবারো লজ্জা পেল দুই কিশোর।
[সমাপ্ত]
আরও পড়ুন...