অন্ধবিশ্বাস -সাজেদা আক্তার জেরিন

অন্ধবিশ্বাস -সাজেদা আক্তার জেরিন

গল্প অক্টোবর ২০২০

দীপা মফস্বল শহরের একটি ছোট্ট মেয়ে। যার কল্পনা শক্তির কাছে বড়ো বড়ো কবিরাও হার মানেন। দীপা একা একা থাকে, ওর কোনো বোন নেই। দুষ্টু প্রকৃতির একটি ভাই আছে। দীপা সবসময় চেষ্টা করে ওর থেকে দূরে থাকতে। দীপা মাকে খুব ভয় পায়। সে সামান্য কারণে চিৎকার চেঁচামেচি করে, মারধর করে। মায়ের ভয়ে দীপা তেমন একটা খেলতে যেতে পারে না। ওর খুব ইচ্ছে করে বান্ধবীদের সাথে অনেক জায়গায় ঘুরতে যেতে। কিন্তু কল্পনাই ওর সহায়। দীপা যখন ওর কোনো আত্মীয়ের বাসায় যায় ওর বড়ো আপুদের মধ্যে মারামারি লেগে যায় ওকে নিয়ে। কারণ ও অনেক ভালো গল্প বলে। সবই বানিয়ে বানিয়ে কিন্তু খুব মজা করে বলে। রাতে ঘুমানোর আগে ও সবাইকে গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়ায়।
দীপা খুব ভালো মনের মেয়ে। সরল মেয়েই বলা যায়। যে যা বলে ও তাই বিশ্বাস করে ফেলে। একদিন ছাদে বসে খেলতে খেলতে দেখলো কোথা থেকে যেন তুলা উড়ে আসছে। ওর একটা বান্ধবী তখন বললো চাঁদে একটা বুড়ি থাকে। বুড়িটা তুলা দিয়ে কাপড় বানায়। সেখান থেকে উড়ে আসে। চাঁদে তো বাতাসই নেই ওখান থেকে তুলা উড়ে আসবে কী করে! তাছাড়া চাঁদে মানুষ বাস করার মতো পরিবেশ থাকলে তো ওখানে কোনো বুড়ি বসে বসে কাপড় বুনবে। আসলে কাছেই কয়েকটা শিমুল তুলার গাছ ছিলো। দীপার সেটা বোঝার মতো বুদ্ধি থাকার কথা নয়। এর কিছুদিন পর একদিন রাতে ছাদে চাঁদ দেখতে গিয়ে দীপার মনে হলো চাঁদের বুড়িটা তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। ওমনি ভয়ে দিলো দৌড়। অসাবধানতায় সিঁড়ির দরজায় হোঁচট খেয়ে পড়ে পা গেলো কেটে।
মায়ের কাছে বকাও খেলো। সেদিন মা ওকে বললো রাতের বেলায় ছাদে ভূত (ভূত বলে বাস্তবে কিছু নেই, এটা মানুষের মনের ভয়) থাকে। মাঝরাতে যে পায়ের আওয়াজ শোনা যায় ওটা ভূতেরই পায়ের আওয়াজ। রাতে ছাদে গেলে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে পারে। ওই দিন কোনো ভূতই ওকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে। ভুলেও যেনো রাতের বেলা ছাদে টাদে না যায়। দীপা মায়ের কথা খুব বিশ্বাস করলো। ওর তখন মনে হতে লাগলো কেউ যেন ওকে ধাক্কা দিয়েই ফেলে দিয়েছে।
তারপর একদিন বিকেল বেলা ছাদে খেলতে গিয়ে দীপা দেখলো বাসার সামনে একটা গণ্ডগোল হয়েছে। বাউন্ডারিহীন একতলা ছাদের কিনার থেকে উঁকি মেরে দেখতে গিয়ে হঠাৎ মনে হলো ওর পেছনে কেউ আছে। ঝট করে পেছনে তাকিয়ে দেখলো ও ছাড়া বাকি সবাই নিচে চলে গেছে। তখনই একপাশে মানুষের ছায়ার মতো কালো কী যেন একটা দেখলো। ও এমন ভয় পেলো যে, যে হাতটাতে ভর দিয়ে নিচে তাকাচ্ছিল সেটা ফসকে গিয়ে ও নিচে মানুষের মাথার ওপর গিয়ে পড়লো।
এরপর থেকে ওর বাইরে যাওয়াই বন্ধ হলো। ওর কী দোষ! মা ওকে যথারীতি খুব বকাঝকা করলো। বাইরে যেতে নিষেধ করলো। এর কয়েক মাস পর একদিন ওর একটা বন্ধু বললো চল আমরা সিএনজিতে চড়ে একটু ঘুরে আসি। আমার এক সিএনজিওলা আঙ্কেল নিয়ে যাবে বলেছে। দীপা ঘরে বন্দি থাকতে থাকতে খুব বোরড হয়ে গেছিলো। এই প্রস্তাব ওর পক্ষে অস্বীকার করা সম্ভব হলো না। কিন্তু কিছুদূর যাবার পর ওর একটা কথা মনে হওয়ায় খুব ভয় পেয়ে গেলো। মা ওকে বলেছিলো অপরিচিত লোকেরা বাচ্চাদের ঘুরতে নিয়ে যাবার কথা বলে গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে পাচার করে দেয়। দীপার তখন চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগলো ও অচেনা একটা জায়গায় হারিয়ে গেছে, মা-বাবা কিংবা পরিচিত কেউ কাছে নেই। বাঁচার জন্য চলন্ত সিএনজি থেকে দিলো লাফ...
ভাগ্যিস সিএনজির একটা হাতল ধরে ছিলো, নইলে মাথাটা পড়তো চাকার নিচে। পেছন থেকে লোকজন চিৎকার করে যখন সিএনজিটা থামালো ততক্ষণে সারা শরীর রক্তাক্ত হয়ে গেছে।
এই অবস্থায়ও বাবা রাগের মাথায় ওকে মারলো। ওর ঘরের বাইরে যাওয়া একদম বন্ধ করে দেওয়া হলো। দীপারও বেরুতো ইচ্ছে করতো না।
মেয়েটি সত্যি একটু বোকাই ছিলো কিন্তু বাচ্চাদের এইরকম অতিরিক্ত শাসন আর ভয় ভীতি দেখানো কি ঠিক? পৃথিবীর প্রত্যেকটি ঘটনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে। যেটা জানি না সেটা নিয়ে কেন আমরা মনগড়া ব্যাখ্যা দেই? বিশেষ করে বাচ্চাদের, যারা বড়োদের যেকোনো কথাই বিশ্বাস করে।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ