অন্যরকম গল্প  - হোসেন মোতালেব

অন্যরকম গল্প - হোসেন মোতালেব

তোমাদের গল্প এপ্রিল ২০১৬

ভূতের গল্প নিয়ে কৌতূহল কার না আছে। আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই ভূতের গল্প শুনতে ভালোবাসে। আর ছোটদের ক্ষেত্রে তো কথাই নেই। ছোট্ট নিশিলা প্রতিদিনই বায়না ধরবে দাদুর কাছে ভূতের গল্প শুনতে। না, শুধু দাদুর কাছে নয়, নাছোড়বান্দার মত মা-বাবা থেকে শুরু করে রীতিমত সবাইকে একেবারে বিরক্ত করে ছাড়বে। শুধু যে ভূতের গল্প শুনবে তা-ই নয়, ভূত কী? কোথায় থাকে? দেখতে কেমন? ইত্যাদি হাজারো প্রশ্ন করে একদম নাস্তানাবুদ করে ছাড়বে। ভূতের গল্প কতইবা বলা যায়। দাদা তো সেদিন রীতিমত রেগেই গিয়েছিলেন। কিন্তু কি আর করা তিনি যে নিশিলাকে বড্ড ভালোবাসেন। নিশিলার মন খারাপ হলে দাদা সহ্য করতে পারেন না। ঐ যে গেল সপ্তাহে কে বা কারা নিশিলার ফুলের টব থেকে একটি ফুল ছিঁড়েছিল, তা নিয়ে সে দুই দিন খাবারই খাইনি, শুধু গোমড়ে গোমড়ে কেঁদেছে। না জানি আজকে ভূতের গল্প শুনাতে না পারলে আবার কোন বিপদ ঘটে। তাই সুবোধ বালকের মত অত্যন্ত শান্ত মেজাজে দাদা গল্প বলা শুরু করলেন। না গল্প নয়, দাদা এবার তার জীবনের এক বাস্তব ঘটনা বলতে লাগলেন। সবুজ বৃক্ষে ভরা মানিকদহ গ্রাম। গ্রামের পাশ দিয়ে চলে গেছে মেঠোপথ। পথের পাশে একটা খালি যায়গা ঝোপঝাড়ে ঘেরা জনমানবহীন একটা ভিটা নাম তার পুরাভিটা। কেউবা আবার ভূতের ভিটাও বলে। জায়গাটি এতই নিস্তব্ধ যে, দিনের বেলায়ও সেখান দিয়ে চলতে গেলে গা ছমছম করে। যত সাহসী মানুষই হোক না কেন ঐ ভিটার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় গায়ের পশম সজারুর কাঁটার মত দাঁড়িয়ে যায়। গ্রামের এক সাহসী যুবক আজগর একবার দাদুর সাথে ধরল আড়ি। দাদু বললেন- তুমি কি গভীর রাতে ঐ  পোড়াভিটায় একা যেতে পারবে? আজগর বলল, হ্যাঁ অবশ্যই পারব। এক গাল হেসে দাদু বললেন- অতীতে অনেকেই তো বুক চাপড়ে বলেছে কিন্তু যেতে পারেনি কেউ। হয়তোবা তুমিও পারবে না। আজগর বলল, আমি অত ভীত নই। তাহলে গভীর রাতে এই ছোট্ট কাঠিটা পোড়াভিটায় পুঁতে এলেই বুঝতে পারব সত্যই তুমি পোড়াভিটায় গিয়েছ। সত্যি সত্যিই আজগর একটি কাঠি নিয়ে এক পা দু পা করে এগোতে থাকে আর অতীতের অনেক কাহিনীর কথা মনে করে ভয়ে ওর গা ছম ছম করতে থাকে। ভয় শঙ্কা আর সাহস মিলিয়ে গুটিগুটি পায়ে পৌঁছল পোড়াভিটায়। এবার লুঙ্গি পরিহিত আজগর কাঠিটি পুঁততে থাকে আর এদিক সেদিক তাকায়, ঐ বুঝি এলো ভূত, এই এখনই আমাকে ধরবে, আর রক্ষা নাই। হঠাৎ দখিনা বায়ুতে গাছের পাতাগুলো দুলতে থাকে। দুলতে থাকে পাশের কলাই ক্ষেতের ফানুসটাও। না শুধু দুলছেই না বরং ফরফর শব্দও করছে। একে তো পূর্ণিমার চাঁদ, অন্যদিকে ফরফর শব্দে দুলিত ফানুসটার দিকে দৃষ্টি পড়তেই ওর পিলে চমকে যায়। আর দেরি নয় দে দৌড়। যেই দৌড়, আর যাই কোথায়। ধপাস করে মাটিতে পড়েই জ্ঞানহারা। কাটলো কিছুক্ষণ ততক্ষণে পূর্বাকাশে লাল সূর্য উঁকিঝুঁকি মারছিল। দাদু এবার খবর নিলেন আজগরের। দেখেন পড়ে আছে অচেতন অবস্থায়। কিছুক্ষণ সেবা যতেœর পর চেতনা ফিরে এলো তার। এবার মুখ খলল সে।
নির্দ্বিধায় বলতে লাগল সব ঘটনা। বলল- আসলে ভূত বলতে কিছুই নেই। আমি কাঠিটি পোঁতার সময় ভীত বদনে এদিক সেদিক তাকাচ্ছিলাম আর নিজের অজান্তে কখন যে কাঠিটি নিজের লুঙ্গিসহ পুঁতেছিলাম টেরই পাইনি। আর টেরপাইনি বলেইতো দৌড় দেয়ার সাথে সাথে পড়ে গিয়েছিলাম মাটিতে। ভেবেছিলাম এই বুঝি আমাকে ধরে ফেলেছে ভূতে। আসলে মনের ভয়ই হলো বড় ভূত। গল্প শুনে নিশিলা বলল, দাদু তাহলে কি আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি ভূত বলতে কিছুই নেই। ও সবই মানুষের মনগড়া কেচ্ছা-কাহিনী।
দাদু হেসে বললেন, হ্যাঁ ঠিকই বলেছো।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ