অভিজাত সুগন্ধির নাম আগর  -আবদাল মাহবুব কোরেশী

অভিজাত সুগন্ধির নাম আগর -আবদাল মাহবুব কোরেশী

প্রচ্ছদ রচনা জুন ২০১৬

আমাদের ধর্মীয় বিধানে সুগন্ধি ব্যবহারের ক্ষেত্রে রয়েছে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা। যেহেতু ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা সেহেতু তার সৌন্দর্যকে ধারণ করতে সে পৃথিবীর সকল মানুষকে আহ্বান করে। সে হিসেবে আগর একটি বিরাট ভূমিকা পালন করে। সুগন্ধি ব্যবহার করতে আমাদের মহানবী (সা) মানুষকে উৎসাহিত করেছেন, এবং নিজেও সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। নবী করিম (সা) যে রাস্তা দিয়ে যেতেন সে রাস্তার পুরো ভাগটাই সুঘ্রাণে ভরা থাকতো। মানুষ খুব সহজেই বুঝতে পারতো এই রাস্তা দিয়ে আল্লাহর রাসূল অতিক্রম করেছেন।
শুধু আমাদের নবীরই (সা) সুগন্ধি প্রিয় ছিল তা নয়, অন্য নবীদেরও এ সুগন্ধি প্রিয় ছিল। হজরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) এরশাদ করেন, চারটি বস্তু সব নবীর সুন্নত ‘আতর (সুগন্ধি), বিয়ে, মেসওয়াক ও লজ্জাস্থান ঢাকা।’ (মুসনাদে আহমাদ) রাসূল (সা) সব সময়ই সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। হজরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা)কে তার মুহরিম অবস্থায় নিজ হাতে খুশবু লাগিয়ে দিয়েছি এবং মিনাতে রওনা হওয়ার আগে আমি খুশবু লাগিয়েছি। (বুখারি) হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা) এর কাছে এক ধরনের মিশ্রিত খুশবু ছিল, যা তিনি সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহার করতেন। (মুসলিম) হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা) এরশাদ করেন, উত্তম সুগন্ধি হলো মেশক (তিরমিজি) আল্লাহর রাসূল (সা) সাধ্যমতো অন্য মানুষকে সুগন্ধি ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা) এরশাদ করেন, জুমার দিন যথাসম্ভব তোমরা সুগন্ধি ব্যবহার করো। এ ক্ষেত্রে মহানবী (সা) এর বাণী হচ্ছে “পাক-পবিত্র থাকা ঈমানের অর্ধেক অংশ।”

আগর কী
আগর এক প্রকার চিরসবুজ দ্রুত বর্ধনশীল বৃক্ষ। এটি একটি সুগন্ধি উদ্ভিদ ও ভেষজ গাছ। এটি ঞযুস বষধবধপবধব পরিবারের অন্তর্গত। আগর সাধারণত ১৫ থেকে ৪০ মিটার লম্বা হতে পারে। এবং একটি পূর্ণ গাছ ০.৬ থেকে ২.৫ মিটার ব্যাস হয়ে থাকে। এ গাছ থেকে আতর, আগরবাতি তৈরির পাশাপাশি মহা মূল্যবান হরেক রকম সুগন্ধি ও ওষুধের কাঁচামাল তৈরি হয়। একটি গাছের বয়স তিন বছরের কাছাকাছি সময়ে তার শাখায় সাদা বর্ণের ফুল দেখা যায়ও পরবর্তীতে ক্যাপসুলের মতো ছোট ফলও দেখতে পাওয়া যায়। ছোট সবুজ পাতাসমৃদ্ধ আগর গাছ স্রষ্টার এক অনুপম সৃষ্টি।

আগরের উৎপত্তি, স্থান প্রক্রিয়া ও জলবায়ু
ইতিহাস থেকে জানা যায় আগর গাছের মূল উৎপত্তি স্থান হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রেইন ফরেস্টে, সেখান থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আগরের চাষ বিস্তার লাভ করেছে, তার মধ্যে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ভারত, ভুটান অন্যতম। বিশ্বে আগরের চাহিদা উপলব্ধি ও জলবায়ু অনুকূলে থাকায় বাংলাদেশেও আগরের চাষ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে এবং ইতোমধ্যে তা ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে এবং দেশের অথনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছে।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭৫০ মিটার বা প্রায় ২৫০০ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত আগরের চাষ করা যেতে পারে। অতিরিক্ত হালকা বুনটের মাটি ছাড়া সব ধরনের মাটিতে আগর জন্মায়। মাটির প্রক্রিয়া ৪.০-৬.০, গড় বৃষ্টিপাত ২০০০ সেন্টিমিটারের কম এবং ২৭-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা আগর চাষের জন্য উপযোগী। অম্লীয় মাটি আগর গাছের সাথে সম্পর্কিত জীবাণুর উপযোগী আবাসস্থল বলে মনে করা হয়। আগর গাছ পাহাড় বা টিলার পর্যাপ্ত মাটিতেও জন্মানো যায়। ফলে মাটির ভূমিধস নিয়ন্ত্রণে এ গাছ ব্যবহার করা যায়। সনাতন পদ্ধতি থেকে বের হয়ে নিত্যনতুন পদ্ধতি অনুসরণ করে কৃত্রিমভাবে আগর গাছে সংক্রমণের আধুনিক প্রযুক্তির প্রবর্তন করা গেলে এবং আগর তেলসহ অন্যান্য আগরজাত পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করা সম্ভব হলে আগর শিল্প বাংলাদেশ নজরকাড়া সাফল্য অর্জন করতে পারে। তার জন্য উন্নত বিশ্ব যেমন থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ভারত প্রভৃতি দেশের আধুনিক প্রযুক্তি, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো গেলে আগর শিল্প বাংলাদেশের একটি অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হিসেবে স্থান করে নেবে সন্দেহ নেই।

আগরের চারা তৈরি
আগর গাছের ফল থেকে যে বিচি পাওয়া যায় সে বিচি থেকে আগরের চারা বের হয়। আগর ফল দেখতে অনেকটা ক্যাপসুলের মতো মনে হয়। গাঢ় বাদামি রঙের প্রতিটি ফল ১.৫ থেকে ২.০ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। প্রতিটি ফলে দু’টি করে বীজ থাকে।
বীজ থেকে চারা বের করতে প্রথমে বালুর বেডে চারা তৈরি করা হয়, যা পরবর্তীতে পলিব্যাগে স্থানান্তরিত করা হয়। সাধারণত বীজ গজানোর ২০ থেকে ২৫ দিন পর স্থানান্তরের কাজ করা হয়। চারার জন্য অস্থায়ী শেডের ব্যবস্থা রাখতে হয়। চারায় প্রয়োজনমত পানি দিতে হয়।

চারা রোপণ
বর্ষা মৌসুম-ই আগর গাছের চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে মাটি থেকে চারা গাছ তার পর্যাপ্ত খাদ্যচাহিদা মেটায়। তাই জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে চারা রোপণ করলে অধিকাংশ চারাই বেঁচে যেতে পারে। ২০ থেকে ২৫ ইঞ্চি গর্ত করে এবং প্রায় ১০ থেকে ১২ কেজি গোবর মাটির সাথে মিশিয়ে চারা রোপণের সময় প্রয়োগ করলে ভালো হয়। আমাদের দেশে সামাজিক বনায়নের আওতায় আগর বাগান করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। সে হিসেবে আগর স্কুল, কলেজ, পার্ক, রাস্তার দু-পাশ, পুকুর বা খালের পাড় এমনকি আবাসিক এলাকায়ও রোপণ করা যেতে পারে। একটি সমান দূরত্ব বজায় রেখে আগর চারা রোপণ করা হয়। এককভাবে চাষাবাদের ক্ষেত্রে কম দূরত্ব এবং মিশ্র বাগান বা আন্তঃফসল আবাদের ক্ষেত্রে বেশি দূরত্ব বজায় রাখা আবশ্যক। চারা রোপণের সময় সম্ভব হলে প্রতি গর্তে ১৫ কেজি গোবর মাটির সাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করলে ভালো হয়।

আগর চাষে বাংলাদেশের অবস্থান
আগর উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে তেমনভাবে উল্লেখ করার মতো না হলেও মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার সুজানগর ইউনিয়নে প্রচুর পরিমাণে আগরের ফলন লক্ষ্য করা যায়। অত্র এলাকায় ব্যাপকভাবে আগরের চাষ সবার দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়েছে। এখানের ছোট বড় শত শত আগরের বাগান চোখে পড়ার মতো। বাগানের পাশাপাশি বসতবাটির আঙিনাসহ সামান্য পতিত জায়গায়ও আগরের গাছ দেখতে পাওয়া যায়। জানা যায়, তৃতীয় ও চতুর্থ হিজরিতে বিখ্যাত পর্যটক সয়রাফি এবং ইবনে বতুতার পর্যটনকাহিনী এবং সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে বাংলা ও আসামের কর্তৃত্বাধীন সেনাপতি মির্জা নাথানের স্মৃতিকথা থেকে জানা যায় অত্র এলাকা অর্থাৎ সুজানগরের আগর ও আতর চাষের কথা। যদিও অনেকে বলে থাকেন গোলাপ ফুল থেকে প্রথম আতর তৈরি করেছেন মোগল সম্রাজ্ঞী নূরজাহান। এখানকার আগর চাষের ইতিহাস প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো। কিন্তু কিভাবে এর সূচনা হয়েছে তা স্পষ্ট করে জানা না গেলেও ধারণা করা হয় মৌলভীবাজার জেলার সীমান্তবর্তী ভারতীয় কোনো এক অঞ্চল থেকে আগর চাষের জ্ঞান ও প্রযুক্তি এখানে এসেছে। সেই থেকে বর্তমান পর্যন্ত আগরের চাষ এ অঞ্চলের মানুষের কাছে আয়ের এক প্রধান উৎস।
বর্তমানে বিশ্বে আগরের চাহিদা উপলব্ধি করে বাংলাদেশ সরকার বন বিভাগের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আগর বাগান করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং ইতোমধ্যে তা অনেকটা সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে। তা ছাড়া চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে ব্র্যাকের নিজস্ব বাগানে ২০০৭ সাল থেকে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বল্প সময়ের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে আগর উড সংগ্রহের লক্ষ্যে আগর প্ল্যান্টেশনের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানা যায়।

ধর্মীয় ও ঔষধ হিসেবে আগরের ব্যবহার
প্রায় সকল ধর্মের ধর্মীয় কাজে আগরের ব্যবহার উল্লেখ করার মতো। কি মুসলিম, কি বৌদ্ধ, কি হিন্দু, কি খ্রিষ্টান আগর যেন সকল ধর্মের মানুষের কাছে পবিত্রতার এক প্রতীক। এ সকল সম্প্রদায়ের মানুষ আগরের সুগন্ধিকে মহা মূল্যবান বস্তু হিসেবে মনে করে। ছেলে, বুড়ো, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা সবার কাছে সমান আবেদন বজায় রেখে আগর এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আগর উড থেকে আহরিত তেল বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান সুগন্ধি। আর এ তেলকে আতর বলে। এ তেলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি একটি অ্যালকোহলমুক্ত সুগন্ধি। তাই বিশ্বজুড়ে সকল ধর্মের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক আয়োজনে এ সুগন্ধির আকাশছোঁয়া চাহিদা। আগর উড থেকে তৈরি কাঠের টুকরা, আগর তেল বা আগর উভয়ই সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আতর ছাড়া কাঠকে পাউডারজাত করে ধূপের ন্যায় প্রজ্বলনের মাধ্যমে আগরের সুবাস নেয়া হয়। আগর উডের নির্যাস সুগন্ধি সাবান, স্যাম্পুসহ অন্যান্য প্রসাধনসামগ্রী তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
শুধু তাই নয়, আগরের সুগন্ধি প্রশান্তিদায়ক এবং শরীরের শক্তি বৃদ্ধিকারী বলে কেউ কেউ মনে করে থাকেন। মালয় ও চাইনিজদের আদি চিকিৎসাপদ্ধতিতে রোগ নিরাময়ের ঔষধ প্রস্তুতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে আগর কাঠ ব্যবহার হয়ে আসছে। অ্যারোমাথেরাপিতেও এর ব্যবহার আছে। এ ছাড়া কোষ্ঠ পরিষ্কারক হিসেবে এর ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। বিভিন্ন ত্বকের রোগ, ব্রংকাইটিস, হাঁপানি ও বাত রোগে এর ব্যবহার হয়ে থাকে।

আগর গাছে সুগন্ধি পদার্থ সৃষ্টির কারণ
আগর গাছের সুগন্ধি পদার্থের উৎস হলো আগর উড যা আগর গাছের জাইলেম বা কাষ্ঠল অংশের অভ্যন্তরে থাকা গাঢ় রঙের কাঠবিশেষ। গাছের গভীরে রেজিনযুক্ত যৌগিক পদার্থসমৃদ্ধ আগর উড ধারণ করলে গাছটি মূল্যবান হিসেবে ধরে নেয়া হয়। প্রাকৃতিকভাবে চাষ করা হলে আগর উড তৈরি হওয়ার সাথে গাছের বয়সের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ গাছ বড় এবং পরিপক্ব হলেই রেজিন ধারণ করবে বা আগর উড সংগ্রহ করা যাবে জিনিসটা আসলে সে রকম নয়। আগর গাছে প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম উপায়ে সৃষ্ট ক্ষত এর মাধ্যমে বিভিন্ন ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটে। প্রাকৃতিকভাবে সংক্রমণের কারণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ধারণা মতে তরহুবৎধ পড়হভবৎঃধ প্রজাতির ংঃবস নড়ৎবৎ-এর লার্ভা আগর গাছে গর্ত তৈরি করে, যা অনেকটা সুড়ঙ্গের মতো। ছত্রাক এই সুড়ঙ্গপথে গাছের ভেতর প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটায়। কয়েক ধরনের ছত্রাক দ্বারা এই সংক্রমণ ঘটে থাকে।
ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার প্রতিরক্ষাব্যবস্থা (ফবভবহংরাব সবপযধহরংস) স্বরূপ গাছ উচ্চমাত্রায় উদ্বায়ী জৈব যৌগসমৃদ্ধ এক প্রকার রেজিন উৎপন্ন করে, যা সংক্রমণস্থলে ছত্রাকের বৃদ্ধি বা বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। আগর গাছের কাষ্ঠল অংশের অভ্যন্তর ভাগে যেখানে রেজিন উৎপন্ন হয় সেই অংশের কাঠ হালকা বাদামি থেকে কালো বর্ণ ধারণ করে। গাছের যে যে অংশে সংক্রমণ ঘটে সেখানেই কেবল গাঢ় রঙের কাঠ দৃষ্ট হয়। আর উপযোগী অবস্থায় গাছ কর্তনের পর কেবলমাত্র সেই অংশগুলো সংগ্রহ করে পাতনপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে মূল্যবান সুগন্ধি আগর তেল বা আতর সংগ্রহ করা হয় কিংবা আগর উড জাত অন্যান্য সামগ্রী তৈরি করা হয়। রেজিনযুক্ত জৈব পদার্থের মধ্যে ঝবংয়ঁরঃবৎঢ়বহবং নামক এক বিরল উপাদানই প্রকৃতপক্ষে আগর কাঠ বা আতরের সুগন্ধ প্রদান করে থাকে। কৃত্রিমভাবে এই উপাদানটি সংশ্লেষণ করা এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। এ কারণে সারা পৃথিবীতে উৎকৃষ্টমানের আগর উডের কোনো বিকল্প নেই।

বিশ্ববাজারে আগরের মূল্য
বিশ্ববাজারে আগরের মূল্য আকাশছোঁয়া। ভালোমানের আগর উডের মূল্য প্রতি কেজি কয়েক ডলার থেকে ১০,০০০ মার্কিন ডলার বা প্রায় ৭.৭৫ লক্ষ টাকার বেশি। তবে মানের দিক বিবেচনা করে দামেরও হেরফের হতে পারে। আবার আবাদকৃত গাছের প্রতি কেজি আগর উডের মূল্য ৫০০০ ডলার বা প্রায় ৩.৮৭ লক্ষ টাকা। মোটামুটি মানের আগর তেলের প্রতি কেজির মূল্য ৮০০০ ডলার বা প্রায় ৬.২০ লক্ষ টাকা। তবে উচ্চমানের আগর তেল ৫০,০০০ ডলার বা প্রায় ৩৮.৭৫ লক্ষ টাকার বেশি মূল্যে বিক্রি হয়। পৃথিবীর প্রায় ৮০টি দেশ আগর জাত সামগ্রী আমদানি করে থাকে। দেশগুলোর মধ্যে প্রধান আমদানিকারক দেশ হলো- তাইওয়ান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জাপান ও সৌদি আরব। প্রধান রফতানিকারক দেশ হলো- সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দেনেশিয়া ও থাইল্যান্ড। প্রতি বছর সিঙ্গাপুর থেকে প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলার বা৯,৩০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের আগর জাতসামগ্রী রফতানি করা হয় (জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা)।

কয়েকটি আগর তেল বা আতরের নাম ও তার মূল্য
একটি আগর তেল বা আতরের নাম হলো আগোরাত এটি সিলেটে তৈরি। মানেগুণে অতি উন্নত এই আতরটির সবচেয়ে বেশি চাহিদা মধ্যপ্রাচ্যে। সেখানকার রাজা, বাদশাহ ও শেখরা এই সুগন্ধি আতরটি খুবই পছন্দ করেন। আমাদের দেশে প্রতি তোলা আগোরাত আতর ৩০ হাজার টাকা দামে বিক্রি হলেও সৌদি আরবে প্রতি তোলার দাম ৮০ হাজার থেকে লাখ টাকা বিক্রি হচ্ছে। পয়েজ আতর প্রতি তোলা ১০ হাজার টাকা, আল নাইম প্রতি তোলা ১ হাজার, আল হারামাইন প্রতি তোলা ৪৪০ টাকা, সুরতি প্রতি তোলা ১২ হাজার, আল রিহাব প্রতি তোলা ১০০ টাকা করে আমাদের দেশীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়াও বাজার ঘুরে যেসব আতর বিক্রি হতে দেখা গেছে সেগুলো হলো, আল থোরাইয়া, আসিম, আতিফা, বাখুরখজ, জিজিয়ান, জান্নাতুল ফেরদৌস, জান্নাতুল নাঈম, মোখাল্লাত মালকি, মাইনুস মোখাল্লাত, উদ মালিক আতিক, উদ আমিরি, খালতাত আল মুলুক, খালতাত আল জাওয়াহের, খালতাত আল থানি, খালতাত আল মাহা, আতর আল কসুর, আলমাস, মাতার আল হাব, নাইট ড্রিম, তোফা আতর, বোরাক, টুইন ফ্লাওয়ারসহ বিভিন্ন মানের আতর। মান ও ওজনভেদে এসব আতরের দাম পড়ছে সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

শেষ কথা
আমাদের নদীমাতৃক কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে আগর একটি অতি সম্ভাবনাময় শিল্প। যেহেতু দেশের জলবায়ু ও আবহাওয়া আগর চাষের অনুকূলে সেহেতু সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত ও পলিসি এ শিল্পকে দেশের বৈদেশিক আয়ের এক অন্যতম খাত হিসেবে বিবেচনায় আনা যেতে পারে। পাশাপাশি দেশের এক উল্লেখযোগ্য বেকার জনগোষ্ঠীকে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি দেয়া যেতে পারে। তাই দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামোর ভিত শক্তিশালী করতে বাণিজ্যিকভাবে আগরের চাষ একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ