আগ্নেয়গিরি মরুভূমি

আগ্নেয়গিরি মরুভূমি

প্রচ্ছদ রচনা মামুন মাহফুজ জানুয়ারি ২০২২

এমন একটি জায়গা কল্পনা করলে কেমন হয় যেখানে রয়েছে টগবগে ফুটন্ত গরম পানি। মাটি থেকে বের হয়ে আসছে ধোঁয়ার মেঘ!
কল্পনা নয়। সত্যিই এমন জায়গা আছে পৃথিবীতে। এই দুর্গম ভয়ঙ্কর ও বৈরি জায়গাটির নাম দাঙ্কিলি ডিপ্রেশন। এটি ইথিওপিয়ায় অবস্থিত।
এই জায়গাটিতে রয়েছে আগ্নেয়গিরি যা ডালল ভলকানো থেকে লেক আসাল পর্যন্ত বিস্তৃত। ইরিত্রিয়া দিয়ে ইথিওপিয়া সীমান্তের কাছে। এই এলাকা সমুদ্রতল থেকে ১০০ মিটার এবং ম্যাগমা পৃষ্ঠের খুব কাছ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
এটি পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণতম অঞ্চল। এটি এমন একটি জায়গা যেখানে সারা বছরের গড় তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এবং গ্রীষ্মকালে গড়ে ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়, যা প্রায়ই ৬৩ ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়তে পারে। ফলে একে পৃথিবীর সবচেয়ে গরম জায়গা বলে গণ্য করা হয়। এর আয়তন প্রায় ৫২ হাজার ৮৭৯ বর্গমাইল। এখানে বছরে মাত্র একবারই বৃষ্টি হয়। যার মাত্রা সর্বোচ্চ ১০০ থেকে ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়।
শুষ্ক এই এলাকাটি মূলত এর আগ্নেয়গিরি এবং ভয়ানক তীব্র তাপমাত্রার জন্য বহুল পরিচিত। এখানে রয়েছে অসংখ্য আগ্নেয়গিরি, বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে দেওয়া গেইসার্স।
এটি পৃথিবীর সবচেয়ে নিচু জায়গা। এখানকার আবহাওয়ার কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা এখানকার মাটির নিচের টেকটোনিক প্লেটগুলোর সংঘর্ষকে দায়ী করেছেন। ভূতত্ত্ববিদগণ মনে করেন, আফ্রিকা মহাদেশ এশিয়া মহাদেশ থেকে আলাদা হওয়ার সময় টেকটোনিক প্লেটের জায়গা পরিবর্তনের ফলে এমন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
বেশির ভাগ মানুষ এই জায়গাটিকে ‘হেল অন আর্থ’ মনে করেন। আবার অনেকে ডাকেন ‘নরকের দুয়ার’ নামে।
এই উত্তপ্ত স্থানে গেলে চামড়া গলে যেতে পারে বা খুব সহজেই ফোসকা পড়তে পারে! ছায়া বা খাবারের পানির তেমন ব্যবস্থা নেই। জীবনধারণ অসম্ভব ব্যাপার হলেও কিছু মানুষ বসবাস করছে এখানে। স্বাচ্ছন্দ্য এবং স্বাভাবিকভাবে। তারা আফার জাতি। তাদেরকে যাযাবর জাতি বলা যায়।

পূর্বপুরুষ থেকে তাদের এখানে বসবাস। বহুকালের বিবর্তনের ফলে তাদের দেহগুলো এখানকার আবহাওয়ার সাথে সহনশীল হয়ে গিয়েছে। তাই তাদের অন্যান্যদের তুলনায় অনেক কম খাবার এবং পানি প্রয়োজন হয়।
আফার জনগোষ্ঠীর প্রধান জীবিকা নির্ভর করে লবণের ওপর। তাদের কাছে লবণ টাকার মতো। তারা বিভিন্ন স্থান থেকে লবণ সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে। আর এসব লবণ পরিবহনের জন্য উট এবং গাধা ব্যবহার করে। স্থানীয় বাজারে লবণ বিক্রি করার জন্য একসঙ্গে উটের পাল নিয়ে লবণ সংগ্রহ করা হয়।
এই মরুভূমিতে বেশ কয়েকটি হ্রদ রয়েছে যা লাভা প্রবাহ দিয়ে গঠিত। এই লাভার হ্রদগুলো জ্বলজ্বল করে, যা রাতের আকাশকেও আলোকিত করে রাখে। এ এক অপূর্ব দৃশ্য! এখানে রয়েছে লেক আফরিরা, যার তীরে পুরু স্যালাইন ক্রাস্টস রয়েছে।
এই এলাকায় একটি মাত্র নদী আছে, যার নাম আওয়াশ। আওয়াশ নদীর পানি অন্যসব নদীর মতো সমুদ্রে মিলিত হয় না। এটি শুধুমাত্র ইথিওপিয়ার উচ্চভূমিতে প্রবাহিত হয়ে ডানাকিল ডিপ্রেশনের লেকে গিয়ে শেষ হয়।
এখানে রয়েছে ১১৬ মিটার গভীর হ্রদ আসেল। এছাড়াও ৮০ মিটার গভীর হ্রদ ‘আফরে’ রয়েছে। সক্রিয় আগ্নেয়গিরির মধ্যে রয়েছে আফরাহাতে মারহো, ডাব্বু, আফডার ও এন্টার আলেসহ আরও বেশ কিছু আগ্নেয়গিরি।
এখানে একটি ত্রিপল জংশন আছে যা তিনটি টেকটোনিক প্লেটস নামে পরিচিত। সেখানে নতুন ভূ-ত্বক তৈরি করেছে। যার ফলে এখানে প্রতি বছর এক থেকে দুই সেন্টিমিটার গভীরতার তিনটি ফাটল দেখা দেয়।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, লক্ষ লক্ষ বছর পরে এই প্লেটসগুলো দূরে সরে যাবে এবং একটি নতুন মহাসাগরের সৃষ্টি হবে যা সত্যিই বিস্ময়কর!

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ