আত্মবিশ্বাস

আত্মবিশ্বাস

তোমাদের গল্প জানুয়ারি ২০১৫

মো: হাসবিতুল হাসান নিঝুম#

আজ থেকে রিয়াজ কাশেম স্যারের নিকট প্রাইভেট পড়া শুরু করবে। বন্ধুদের কাছে সে শুনেছে, কাশেম স্যার নাকি খুব ভালোভাবে পড়ান। খুব সুন্দরভাবে পড়া বুঝিয়ে দেন। তাই রিয়াজ কাশেম স্যারের নিকট প্রাইভেট পড়ার জন্য মনস্থির করেছে। আগে রিয়াজ রুনা ম্যাডামের নিকট প্রাইভেট পড়তো। ম্যাডামও খুব ভালো পড়ান। ক্লাশ থ্রি’র ফার্স্ট বয় শরীফও (রিয়াজের ক্লাসমেট) তার নিকট প্রাইভেট পড়ে। বরাবরই সে ক্লাসে ফার্স্ট বয় হয়। কেউ তাকে পেছনে ফেলতে পারে না। শরীফ প্রথম শ্রেণী থেকে রুনা ম্যাডামের নিকট প্রাইভেট পড়ছে। ম্যাডামের কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করেই সে ক্লাসে ফার্স্ট বয় হয়েছে। তাই রিয়াজও দুই মাস যাবৎ ম্যাডামের নিকট প্রাইভেট পড়ছে। কিন্তু, রুনা ম্যাডাম যেভাবে পড়ান, তাতে রিয়াজের কোন উপকার হয় না। কারণ, সে পড়া বুঝতে পারে না। রিয়াজ ক্লাসের সেকেন্ড বয় হলেও লেখাপড়ায় শরীফের ধারে কাছেও যেতে পারে না। তাই সে রুনা ম্যাডামের কাছে প্রাইভেট পড়া শুরু করেছিল। কিন্তু রুনা ম্যাডামের পড়ানো তার কাছে বোধগম্য না হওয়ায় সে পড়া বাদ দিয়েছে। কাশেম স্যারের নিকট প্রাইভেট পড়ে রিয়াজের ভালোই লাগল। স্যার সকল ছাত্রকে গুরুত্ব দিয়ে পড়ান। স্যারের পড়ানো তার কাছে বোধগম্য হওয়ার ফলে সে কাশেম স্যারের নিকটই প্রাইভেট পড়ার জন্য মনস্থির করল। কয়েকদিন পরের ঘটনা। সেদিন রুনা ম্যাডাম রিয়াজকে ডেকে নিয়ে প্রশ্ন করলেন, - তুই আমার নিকট প্রাইভেট পড়া বাদ দিলি কেন? - ম্যাডাম, আপনার পড়া আমি বুঝি না। - কী! তুই কাশেম স্যারের নিকট আমার বোঝানোর চেয়ে বেশি বুঝিস? - জি ম্যাডাম। আমি আশা করি, স্যারের নিকট পড়লে আমি আরো ভালো রেজাল্ট করবো। - আরো ভালো রেজাল্ট মানে! তুই ক্লাসের ফার্স্ট বয় হতে চাস নাকি? - সম্ভব হলে তাই। - শরীফ আমার ছাত্র। তার চেয়ে ভালো  রেজাল্ট তুই কখনো করতে পারবি না। - সময় হলেই তা দেখা যাবে। - আচ্ছা, আমিও দেখবে তুই কী করে রোল ১ করিস। এরপর রিয়াজ সেখানে থেকে চলে এলো। সে বুঝতে পারল, রাগের মাথায় সে ম্যাডমাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এসেছে। তার দ্বারা কখনো শরীফকে পেছনে ফেলা সম্ভব নয়। কিন্তু, সে এই চ্যালেঞ্জে না জিতলে তো তার সাথে সাথে কাশেম স্যারের মানসম্মানও ধুলোয় মিশে যাবে। রিয়াজ ভাবল, তাকে আত্মপ্রত্যয়ী হতে হবে। আত্মপ্রত্যয়ীরা সকল কাজেই সফলতা লাভ করে। তাকে স্যারের মুখ রক্ষা করতেই হবে। শরীফ ম্যাডামের নিকট রিয়াজের চ্যালেঞ্জের কথা শুনে তাকে টিটকারি করতে লাগল। সে রিয়াজকে নানাভাবে অপমান করতে লাগল। রিয়াজ মনোবল হারালো না। সে শুধু এ কথাই জানে যে, সে আত্মপ্রত্যয়ী। সে মানে, শরীফকে পেছনে ফেলার ও ক্লাসের ফার্স্ট বয় হওয়ার ক্ষমতা তার আছে। কারণ, আত্মপ্রত্যয়ীরা কখনো হারে না। রিয়াজ তার আত্মপ্রত্যয়ের ওপর ভরসা করে নতুন উদ্যমে লেখাপড়া শুরু করল। বার্ষিক পরীক্ষা চলে এলো। রিয়াজ পরীক্ষা দিতে গিয়ে শুধু ভাবল সে আত্মপ্রত্যয়ী। আত্মপ্রত্যয়ীরা হারতে জানে না। তাই সেও হারবে না। রিয়াজ আত্মপ্রত্যয়ের সাথে সকল পরীক্ষা খুব ভালোভাবে দিল। পরীক্ষার রেজাল্ট দেবে আজ। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সকল ক্লাসের রেজাল্ট দিলেন। তিনি  ঘোষণা করলেন, তৃতীয় শ্রেণী থেকে সর্বোচ্চ মার্কস পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে রিয়াজ চতুর্থ শ্রেণীতে উঠেছে। এ কথা শুনে সে লাফিয়ে উঠল। রিয়াজ শুধু তার মনোবল ও আত্মপ্রত্যয়ের জন্যই এতো ভালো রেজাল্ট করতে পারল। সে এখন চতুর্থ শ্রেণীর ফার্স্ট বয়। রুনা ম্যাডামের সাথে দেখা হলে ম্যাডাম মাথা নিচু করে চলে যান। রিয়াজ রুনা ম্যাডামকে সম্মান করে। কারণ, তিনি চ্যালেঞ্জ না করলে রিয়াজ আত্মপ্রত্যয়ী হতে পারতো না। এতো ভালো রেজাল্টও সে করতে পারতো না। আত্মপ্রত্যয়ীদের হারায় কে?

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ