আনন্দের সেরা উৎসব

আনন্দের সেরা উৎসব

কুরআনের আলো জুলাই ২০১৫

ঘুমটা আজ আজানের আগেই ভাঙল। রাতে ঘুম যতটুকু হয়েছে, পুরো সময়টাই যেন স্বপ্নময় ছিল। স্বপ্নগুলো সুন্দরের। সুন্দর ভাবনার। নাফিস যা ভেবেছিল আজকের দিনটি নিয়ে, স্বপ্নে যেন তারই অনুশীলন হলো। এখন শুধু বাস্তবে রূপ দেয়ার পালা। এইতো, সালাতুল ফজর আদায় শেষেই শুরু হবে তার কর্মতৎপরতা।
মসজিদে যেতে যেতে নাফিস বারবার শিহরিত হচ্ছে। বিস্ময় তাকে জড়িয়ে ধরছে পা থেকে মাথা পর্যন্ত। আচ্ছা, সে-তো অনেক আনন্দ-উৎসবেই অংশগ্রহণ করে। বিভিন্ন খেলাধুলা, থার্টিফার্স্ট নাইট ও পয়লা বৈশাখ উদযাপন, বসন্তবরণসহ আরও কত কী! ঈদেও কি সে কম আনন্দ করে?  কিন্তু এবারের এ ঈদের দিনটি তার কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ কেন? আনন্দের চেয়ে দায়িত্বের অনুভূতিটাই যেন বেশি কাজ করছে।
গত জুমায় ইমাম সাহেবের এক হৃদয়স্পর্শী ভাষণ শোনে সে। ঈদ নিয়েই কথা বলেছেন তিনি। কিভাবে ঈদের প্রচলন হলো এ প্রসঙ্গে ইমাম সাহেব একটি হাদিস বললেন। আনাস রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সা. মদিনায় এসে দেখলেন, মদিনাবাসীরা নির্দিষ্ট দু’টি দিনে খেলাধুলার মাধ্যমে আনন্দ-উৎসব করছে। রাসূল সা. তাদের কাছে জানতে চাইলেন, এ দু’টি দিনের তাৎপর্য কী? তারা বলল, জাহেলি যুগে আমরা এ দিনগুলোতে খেলাধুলা করতাম। তাই এখনও করছি। রাসূল সা. বললেন, এ দু’দিনের চেয়ে উত্তম দু’টি দিন আল্লাহ তোমাদেরকে দান করেছেন। একটি ঈদুল আজহা ও অন্যটি ঈদুল ফিতরের দিন। (আবু দাউদ)
ইমাম সাহেব আরও বললেন, ঈদ কারও একার নয়। ছোট-বড়, ধনী-দরিদ্র সবার জন্যই ঈদ। অভাবী মানুষরাও যাতে ঈদের আনন্দে শামিল হতে পারে, এ জন্য ফিতরা দেয়াকে ধনীদের ওপর ওয়াজিব করা হয়েছে। তা ছাড়া, সাধ্য অনুযায়ী সবারই উচিত নতুন পোশাক, ভালো খাবার দিয়ে গরিবদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করা।
এ হাদিস শুনে নাফিস বুঝতে পারল যে, ঈদের দিনের চেয়ে উত্তম কোনো উৎসবের দিন নেই। সত্যিই তো, অন্যান্য উৎসবের কি তেমন কোনো শিক্ষা আছে? কিন্তু ঈদ? কত নির্মল! ঈদ-ই শেখায়, ‘মানুষ মানুষের জন্য’। তাই সে পরিকল্পনা করল, এবারের ঈদে পাওয়া উপহারগুলো বিলিয়ে দেবে দুঃখী ছেলেদের মাঝে। ইতোমধ্যেই তার হাতে নতুন পোশাকের বেশ কিছু ঝলমলে প্যাকেট এসে গেছে। আরও আসবে। কিন্তু তার তো এত কিছুর প্রয়োজন নেই। ঈদের সালাতে যাওয়ার আগেই পাড়ায় বেরিয়ে পড়বে সে। তার বয়সী কিশোরদের নিজের হাতে পরিয়ে দেবে ঈদের পোশাক। এরপর সকলকে বাসায় এনে খাওয়াবে। দলবেঁধে ঈদগাহে যাবে। এখানেই শেষ নয়। সারাটা দিন তাদের নিয়ে আনন্দ-উৎসবে পার করবে সে। ঘুরবে। মাঠে গিয়ে খেলবে। থাকবে গানের আয়োজনও। তার স্কুলের এক সিনিয়র ভাই চমৎকার ইসলামী গান জানেন। তিনি আসবেন, গাইবেন।
ঈদের দিনে যে গানেরও আয়োজন থাকতে পারে, এটা তার জানা ছিল না। ইমাম সাহেবই একটি হাদিস বলেছিলেন এ প্রসঙ্গে। হাদিসটি ইমাম বুখারী সঙ্কলন করেছেন। যার মর্মার্থ হচ্ছে, কোনো এক ঈদের দিনে দু’টি বালিকা গান গাচ্ছিল হজরত আয়েশা রা.-এর ঘরে। এ দৃশ্য দেখে আবু বকর রা. তাদেরকে ধমক দিলেন। তখন রাসূল সা. বললেন, হে আবু বকর! প্রত্যেক জাতিরই আনন্দ-উৎসব রয়েছে। আর এ হচ্ছে আমাদের উৎসব। সুতরাং তাদেরকে গাইতে দাও।
এভাবে একটি অনন্য ঈদ-আয়োজনের পরিকল্পনায় নাফিস আবেগাপ্লুত হয়ে উঠছে। আর যা-ই হোক, অন্তত কয়েকটা কিশোরের মুখে তো হাসির হাসনাহেনা ফুটবে!

গ্রন্থনায় : বিলাল হোসাইন নূরী
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ