আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস :  সবার জন্য শিক্ষা চাই

আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস : সবার জন্য শিক্ষা চাই

বিশেষ রচনা সেপ্টেম্বর ২০১৩

শফিউল আহমাদ সাক্ষরতা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবীয় অধিকার হিসেবে বিশ্বে গৃহীত হয়ে আসছে। এটি ব্যক্তিগত ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক ও মানবীয় উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণযোগ্য। এমনকি শিক্ষার সুযোগের বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করে সাক্ষরতার ওপর। সাক্ষরতা মৌলিক শিক্ষার ভিত্তি হিসেবেও কাজ করে। দারিদ্র্য হ্রাস, শিশু মৃত্যু রোধ, সুষম উন্নয়ন এবং শান্তি ও সমৃদ্ধি বিকশিতকরণের ক্ষেত্রেও সাক্ষরতা প্রয়োজনীয় হাতিয়ার হিসেবে গণ্য হয়। মূলকথা সবার জন্য শিক্ষাÑ এ স্লোগান বাস্তবায়ন করতে সাক্ষরতাকে ভিত্তি হিসেবে মনে করার পেছনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে। একটি মানসম্মত মৌলিক শিক্ষা মানুষকে সাক্ষরতা ও দক্ষতার সঙ্গে তৈরি করতে সহায়তা করে। সাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন মা-বাবা তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে প্রেরণে উৎসাহিত হন, অব্যাহত শিক্ষায় নিজেকে প্রবেশ করতে উৎসাহ পান এবং উন্নয়নের দিকে দেশকে ধাবিত করার ক্ষেত্রে সচেষ্ট ও সরকারকে চাপ প্রয়োগে সাহায্য করে থাকেন। সাক্ষরতার সংজ্ঞা দেশে দেশে সাক্ষরতার সংজ্ঞা অনেক আগে থেকে প্রচলিত থাকলেও ১৯৬৭ সালে ইউনেস্কো প্রথম সাক্ষরতার সংজ্ঞা চিহ্নিত করে এবং পরবর্তী সময়ে প্রতি দশকেই এই সংজ্ঞার রূপ পাল্টেছে। এক সময় কেউ নাম লিখতে পারলেই তাকে সাক্ষর বলা হতো, কিন্তু বর্তমানে সাক্ষর হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য অন্তত তিনটি শর্ত মানতে হয়Ñ ব্যক্তি নিজ ভাষায় সহজ ও ছোট বাক্য পড়তে পারবে, সহজ ও ছোট বাক্য লিখতে পারবে এবং দৈনন্দিন জীবনে সাধারণ হিসাব-নিকাশ করতে পারবে। এই প্রত্যেকটি কাজই হবে ব্যক্তির প্রাত্যহিক জীবনের সাথে সম্পর্কিত। সারা বিশ্বে বর্তমানে এই সংজ্ঞাকে ভিত্তি করে সাক্ষরতার হিসাব-নিকাশ করা হয়। ১৯৯৩ সালে ইউনেস্কো এই সংজ্ঞাটি নির্ধারণ করে; তবে বর্তমানে এটিও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। অনেক আন্তর্জাতিক ফোরাম বা কনফারেন্স থেকে সাক্ষরতার সংজ্ঞা নতুনভাবে নির্ধারণের কথা বলা হচ্ছে যেখানে সাক্ষরতা সরাসরি ব্যক্তির জীবনযাত্রা পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত হবে। সাক্ষরতা নির্ধারণ সরকার কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠান কিন্তু প্রতি বছরই জরিপ চালিয়ে সাক্ষরতার হার নির্ধারণ করে না। সাধারণত আদমশুমারির সময় যে তথ্য নেয়া হয়, তার ওপর ভিত্তি করে দেশের সাক্ষরতার হার নির্ধারণ করা হয় এবং প্রতি বছর কী হারে মানুষ সাক্ষর হতে পারে, সেই ধারণার (হিসাব-নিকাশের ভিত্তিতে) ওপর পরবর্তী বছরগুলোর সাক্ষরতার হার নির্ধারণ করা হয়। যেহেতু আদমশুমারিতে তুলনামূলকভাবে অধিকাংশ মানুষের তথ্য আনা যায়, তাই সাক্ষরতা জানার ক্ষেত্রে এই তথ্যকে ব্যাপকভাবে নির্ভরযোগ্য বলে ধরা হয়। তবে কোনো নির্দিষ্ট সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব প্রয়োজনে মাঝে মাঝে প্রতিনিধিত্বমূলক জরিপ চালিয়ে থাকে, এবং সরকারের হিসাব-নিকাশের সাথে ওই জরিপের সামঞ্জস্য থাকলে সরকার সেই তথ্যকেও গ্রহণ করতে পারে। আরেকটি মজার ব্যাপার হলো, প্রচলিত যে পদ্ধতিতে সাক্ষরতার হার নির্ধারণ করা হয়, সেটিকে অনেকেই যথাযথ পদ্ধতি বলে মনে করেন না। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে সাক্ষরতার হার নির্ধারণ করা হয় ব্যক্তিপ্রদত্ত-মূল্যায়নের (ঝবষভ-ৎবঢ়ড়ৎঃবফ) ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু গবেষণা করে দেখা গেছে, এই পদ্ধতিতে সাক্ষরতার হার নির্ধারণে ঝুঁকির পরিমাণ অনেক বেশি। অপরদিকে নির্দিষ্ট পরীক্ষার মাধ্যমে সাক্ষরতার হার নির্ধারণ করলে তখন তা অনেক নিচে নেমে যাবে। ১৯৮৫ সালে লেসোথোতে ব্যক্তিপ্রদত্ত-মূল্যায়ন অনুসারে সাক্ষরতার হার ছিল ৬০%Ñ৯০% (একাধিক সংস্থার একাধিক হিসাব), কিন্তু যখনই সাক্ষরতার সংজ্ঞা অনুসারে ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হলো তখন সেটি নেমে এসেছিল ৪৬ শতাংশে। ব্যক্তিপ্রদত্ত-মূল্যায়ন এবং পরীক্ষার এই পার্থক্যের কারণে বাংলাদেশের সাক্ষরতার হার যেটি দাবি করা হচ্ছে, সত্যিকার অর্থে সেই পরিমাণ সাক্ষর মানুষ আছে কিনা তা নিয়েও চাইলেই প্রশ্ন তোলা যায়। কবে থেকে শুরু সাক্ষরতা দিবস ১৯৬৬ সাল থেকে ইউনেস্কো ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। এ দিবসটি পালনের মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষকে তারা বলতে চায়, সাক্ষরতা একটি মানবীয় অধিকার এবং সর্বস্তরের শিক্ষার ভিত্তি। প্রতিবছর একটি বিশেষ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সে বছর সাক্ষরতা দিবস পালন করা হয়। ইউনেস্কোর এ প্রতিপাদ্যকে বেছে নেয়ারও বিশেষ উদ্দেশ্য থাকে। সাক্ষরতা দিবসের উদ্দেশ্য সাক্ষরতার বহুবিধ ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। শুধু সাক্ষরতার মাধ্যমে অর্থনৈতিক মুক্তিই নয়; বরং সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানসিক মুক্তি আনয়নের মাধ্যমে প্রাত্যহিক জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই এর লক্ষ্য। কেননা সাক্ষরতা শান্তি আনয়নে অবদান রাখে এবং মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা অর্জনে সহায়তা করে। শুধু তা-ই নয়, বিশ্ব সম্পর্কে ভালো ধারণা অর্জনেও সাক্ষরতা কাজ করে। যিনি লিখতে ও পড়তে পারবেন, একমাত্র তিনিই জানবেন দেশ ও দেশের বাইরে কোথায় কী ঘটছে। এটি এমন একটি মাধ্যম, যা পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ও সংঘাত নিরসন এবং প্রতিরোধেও সহায়তা করে। সাক্ষরতার সঙ্গে শান্তির সম্পর্ক বা যোগাযোগ এতটাই বেশি যে অস্থিতিশীল, অগণতন্ত্রকামী এবং সংঘাতপূর্ণ দেশগুলোতে সাক্ষরতার পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত করা কিংবা বজায় রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আমরা আফ্রিকা মহাদেশের কিছু দেশে লক্ষ করি, যেখানে শান্তির পরিবর্তে প্রতিনিয়ত সংঘাত চলছে। এসব দেশে সাক্ষরতার চিত্র ভালো নয়। মূলত তাদের দিকে তাকালে সাক্ষরতার সঙ্গে শান্তি প্রত্যয়টির একটি যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে সাক্ষরতা আন্দোলন বাংলাদেশের রয়েছে সাক্ষরতা আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার দীর্ঘ ঐতিহ্য। এ অঞ্চলে সাক্ষরতার জন্য সর্বপ্রথম উদ্যোগ গৃহীত হয় ১৯১৮ সালে নৈশ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। ১৯৩৪ সালে খান বাহাদুর আহসান উল্লাহ ও নবাব আবদুল লতিফ প্রমুখের প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র। ১৯৬০ সালে ভি-এইড কার্যক্রমের আওতায় সফলতার সঙ্গে পরিচালিত বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হয় শত শত দরিদ্র মানুষ। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালে ব্যুরো অব নন ফরমাল এডুকেশন গঠিত হয়। শুধু তা-ই নয়, সাক্ষরতা সমস্যা উত্তরণে বহুবিধ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ১৯৯১ সালে প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়। শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মেয়েদের শিক্ষাবৃত্তি ও বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়েও শিক্ষাবৃত্তি চালু রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষাসহ অন্যান্য মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। সংবিধানের ১৭ নম্বর অনুচ্ছেদে ৬-১০ বছরের ছেলেমেয়েদের জন্য বিনামূল্যে মৌলিক শিক্ষা প্রদানের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সরকার ২০১৪ সাল নাগাদ দেশকে নিরক্ষরতামুক্ত করার ঘোষণা দিলেও জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯-এর চূড়ান্ত খসড়া মতে, বর্তমানে ১৫ বছরের বেশি বয়সীদের সাক্ষরতার হার ৪৯ শতাংশ অর্থাৎ ১৫ বছর বয়সীদের ৫১ শতাংশ এখনো নিরক্ষর। সব মানুষকে সাক্ষরতার আওতায় আনয়নের লক্ষ্যে সরকারের মৌলিক উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে জাতীয় শিক্ষানীতিতে বয়স্ক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার বিষয়টি অধিক গুরুত্ব পাওয়া। শিক্ষানীতির রিপোর্টের তৃতীয় অধ্যায়ে বলা হয়েছে, বয়স্ক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার লক্ষ্য হচ্ছে ২০১৪ সালের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক সব নাগরিককে সাক্ষর করে তোলা। আনুষ্ঠানিক শিক্ষার অপ্রতুলতা ও অনমনীয়তা, অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও দারিদ্র্যের কারণে দেশে বিরাজমান নিরক্ষরতা ব্যাপক। নানা কারণে অনেক ছেলেমেয়ে বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় না বা ভর্তি হয়েও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে না। নিরক্ষরতা সমস্যা সমাধানের জন্য শিক্ষার্থীর বয়স ও শিক্ষাবিষয়কে ভিত্তি করে বয়স্ক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে কার্যকর গণশিক্ষার বিস্তার জরুরি। বয়স্ক শিক্ষার উদ্দেশ্য মানুষকে সাক্ষর, লেখাপড়া ও হিসাব-নিকাশে ন্যূনতম দক্ষ, মানসিক গুণাবলির চেতনায় উদ্দীপ্ত, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সচেতনভাবে গড়ে তোলা এবং পেশাগত দক্ষতা উন্নয়ন। প্রাথমিক পর্যায়ে ভর্তি ১০০ শতাংশে উন্নীত ও প্রাপ্তবয়স্ক সবাইকে সাক্ষর করে না তোলা পর্যন্ত বয়স্ক শিক্ষার এ ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আনুষ্ঠানিক শিক্ষার পরিপূরক ব্যবস্থা, যা প্রয়োজনে শিক্ষার্থীরা বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে পারে। বর্তমান বিশ্বে ৮০০ মিলিয়ন মানুষ এখনো সাক্ষরতা থেকে বঞ্চিত। নানা পদক্ষেপ গৃহীত হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন দেশে সাক্ষরতার অগ্রগতির বিষয়টি ধীরগতিতে এগোচ্ছে। এ কথা সত্য যে বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে; কিন্তু কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার অঞ্চল ও জনসমষ্টিভেদে সাক্ষরতার হারের তারতম্য লক্ষ করা যায়। হাওর অঞ্চল ও আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় শিক্ষার ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা না থাকায় ওই অঞ্চলগুলোয় সাক্ষরতার হার অনেকটা স্থির। ইউনেস্কোর টার্গেট ও বাস্তবতা সাক্ষরতা এমন একটি বিষয়, যা একজন ব্যক্তির অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানসিক মনোবল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, যা বৃহত্তর সমাজকে প্রভাবিত করার মতো উপরোক্ত সব ক্ষেত্রে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা পালন করে। ক্ষুদ্র পরিসর থেকে বৃহত্তর পরিসরে শান্তি আনয়নে সাক্ষরতা কাজ করতে পারে। কেননা, একুশ শতকের এই সময়েও বিশ্বের প্রাপ্ত বয়স্ক জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭৮ কোটিই লিখতে ও পড়তে জানে না। অর্থাৎ বয়স্কদের প্রতি ৫ জনের একজন নিরক্ষর। আর এই জনগোষ্ঠীর ৬৪ শতাংশই নারী। শিশুদের ক্ষেত্রেও চিত্রটা উদ্বেগজনক। জাতিসংঘ ঘোষিত সবার জন্য শিক্ষা স্লোগানের পরও বিশ্বের সাড়ে ৭ কোটিরও বেশি শিশুই জানে না কী করে লিখতে পড়তে হয়! বিশ্বের মোট অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর তিন-চতুর্থাংশই বাস করছে জনবহুল ১৫টি দেশে। বিপুল জনগোষ্ঠীর অর্ধেককে ২০১৫ সাল নাগাদ শিক্ষিত করার লক্ষ্য পূরণে ইউনেস্কোর ‘সবার জন্য শিক্ষা’ কর্মসূচি কতটুকু সফল হবে তাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। শেষ কথা সাক্ষরতা একটি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার সঙ্গে সাক্ষরতার আর সাক্ষরতার সঙ্গে উন্নয়নের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যে দেশের সাক্ষরতার হার যত বেশি সে দেশ তত উন্নত। সাক্ষর জাতি সচেতন জাতি। তাই বাংলাদেশের সাক্ষরতার হারকে বৃদ্ধি করতে এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে। তবেই নিশ্চিত হবে ‘সবার জন্য শিক্ষা চাই’।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ