আফফানের কৌতূহল

আফফানের কৌতূহল

গল্প ডিসেম্বর ২০১৪

 মিজানুর রহমান #

golpoআফফান চটপটে এক শিশু। তার পুরো নাম আফফান মাহমুদ। বয়সের তুলনায় বেশ ভালই কথা বলতে পারে। নিজের সুবিধা-অসুবিধা, পছন্দ-অপছন্দ ও ভালই বোঝে। তার বাবা-মায়ের আর কোনো ছেলেসন্তান না থাকায় সেই সবকিছু। তার একমাত্র বড়বোন আফসা তারান্নোমের ওপর তার মাতব্বরিও যথেষ্ট। বাবা-মাও একমাত্র পুত্রধনের সব দাবি মেনে নেয়ার সাধ্যমত চেষ্টা করেন। তার মোটামুটি বড় সাইজের খেলনা গাড়িটি বেশ দক্ষ হাতে ড্রাইভ করতে পারে সে। তার দুঃসাহসী গাড়ি চালানো দেখে বাসার সবাই আঁতকে ওঠে। এ গাড়িতে তার হবে না। আরো বড় গাড়ি চাই। কিন্তু বাসার ভেতরে যে এর চেয়ে বড় গাড়ি মুভ করতে পারবে না! এ নিয়ে তার যত্ত রাগ। সর্বশক্তি দিয়ে গাড়ির একপাশ কিছুটা উঠিয়ে আছাড় দিতে পারে সে। এতে তার ইচ্ছার প্রতিফলন ও বেশ হচ্ছে। গাড়ির সামনের চাকাগুলো ভেঙে গেছে। তাতে কী! ভাল গাড়ি হওয়ায় তার পর ও চলে। এতে তার হবে না। তার আরো বড় গাড়ি চাই। তাই বাবার গাড়ির দিকে তার মনোযোগ। বাবার গাড়ির ড্রাইভারকে তার শক্ত নির্দেশ ‘আমার গাড়ির চাবি দাও, এটি আমার গাড়ি, তুমি গাড়ি থেকে নেমে যাও, আমি গাড়ি চালাব’ ইত্যাদি। এভাবে শক্ত নির্দেশনা প্রায় প্রতিদিন থাকে গাড়ির ড্রাইভার সাহেবের প্রতি। সে বড় হয়ে গাড়ি চালিয়ে ইউনিভার্সিটিতে পড়তে যাবে। যদিও তার বাবার স্বপ্ন সে ইঞ্জিনিয়ার হবে। সে যে বুদ্ধিমান হবে তা ইতোমধ্যেই তার নানুমনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। একমাত্র ছোট মামাকে কিছুটা ভয় পায়। বাকিরা সবাই তার ফরমায়েশ খাটতে খাটতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। নিজ বাসায় বেশিক্ষণ ভালো লাগে না। তাই পাশেই তার ছোট খালামণির বাসায় আসার জন্য পাগল। ছোটখালামণি তাদের খুবই প্রিয়। ছোটখালামনির সুবাদে ছোটখালাব্বুও প্রিয়। ছোট খালাব্বুর ওপর আফসার মন খারাপ হয় তখনি যখন খালাব্বুর সাথে খালামণি তাদের বাসা ছেড়ে চলে যায়। নোডলস, ছমুছা ইত্যাদি সস্ দিয়ে খেতে আফ্ফানের খুবই পছন্দ। সে ডিমের পুটিং-পুড়িং পেলে মহাখুশি। খাবার দাবার তার পছন্দমত হলেই খাবে। আফ্ফান দুষ্টুমি করলেও ইতোমধ্যে তার মাঝে কিছু চমৎকার গুণের প্রকাশ ঘটেছে। আফ্ফান ছোট হলেও বাবার সাথে নামাজ পড়তে মসজিদে যায়। সিজদায় গিয়ে তার মহান ¯্রষ্টাকে এখন থেকেই হাজিরা দিতে শুরু করেছে। সে অজু করতে চায়। সাচ্ছন্দ্যবোধ করে তার ছোট খালামণির কাছে অজু শিখতে। তার প্রশ্ন খালামণির কাছে। আফ্ফান: অজু কী? খালামণি : অজু হলো আল্লাহর নির্দেশিত উপায়ে ইবাদতের নিয়তে পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা। তুমি যদি নামাজ পড়তে চাও বা দেখে দেখে কুরআন শরীফ পড়তে চাও বা আল্লাহর পবিত্র কাবাঘর প্রদক্ষিণ করতে চাও তাহলে পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করতে হবে। আর অজু কিভাবে করতে হয় তা আমি দেখিয়ে দিচ্ছি বলে খালামণি তাকে বাথরুমে নিয়ে গেল। পানির কল ছেড়ে দিয়ে প্রথমে সমস্ত মুখমন্ডল ধুয়ে দিল। তারপর উভয় হাত কুনুইসহ ধুয়ে দিয়ে মাথার চার ভাগের একভাগ ভেজা হাত দ্বারা মাসেহ করাল। সবশেষে আফ্ফানের দু’পা গোড়ালিসহ ধুয়ে দেয়ার পর খালামণি বলল এই হলো অজু। খালামণি : তুমি এরপর থেকে নিজে নিজে অজু করতে পারবে ? আফ্ফান : হ্যাঁ খালামণি। আফ্ফানদের বাসায় ছোট খালাব্বু বেড়াতে এসেছেন। সে আজ ছোট খালাব্বুর সাথে নামাজ পড়বে। কিন্তু তার তো বড়দের জায়নামাজ নিয়ে নামাজ পড়তে ভাল লাগে না। তাই তার বাবা তাকে আগেই ছোট্ট সুন্দর জায়নামাজ কিনে দিয়েছেন। কিন্তু সে একা নামাজ পড়লে তো হয় না তাই বড় বোন আফসাকেও নামাজ পড়তে হবে। সেও তার ড্রইং, খেলাধুলা, পড়া ইত্যাদির ফাঁকে ফাঁকে বাবা-মায়ের সাথে নামাজ পড়তে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। আফসা স্কুলে কেজিতে পড়ে। তার অনেক স্বপ্ন সে ছোট খালামণির মতো হবে। তার খালামণি তাকে অনেক আদর করে। গান শেখায়। তাই সে খালামণির বাসা ছেড়ে যাবে না। মা-বাবাকে অনেক রিকোয়েস্ট-আমি খালামণির সাথে খালামণির বাসায় থাকবো। তোমরা আফফানকে নিয়ে থাকো। খালামণির বাসায় কোন বেবি নাই তাই খালামণির একা ভালো লাগে না। তোমরা হাসপাতাল থেকে আরেকটা মেয়ে বেবী নিয়ে আস। আল্লাহর কাছে একটি বেবির জন্য বল। তার বিশ্বাস আল্লাহর কাছে বললে বাবা-মাকে আল্লাহ বেবি দেবেন। তাকে সে কোলে নিয়ে আদর করতে পারবে। সে বেবিকে শেখানোর জন্য ইতোমধ্যে অনেক গান শিখেছে। তার গানগুলো সবাইকে মুগ্ধ করার মতো যথেষ্ট সুন্দর। সে সুমধুর সুরে গান করে-আল্লাহ তুমি অপরূপ না জানি কত সুন্দর তোমায় আমি সঁপেছি প্রাণ সঁপেছি এই অন্তর... আরো অনেক গান . . . . আফসার কচিকণ্ঠের আল্লাহ প্রেমে মাতোয়ারা এ গান আরেক কচিকণ্ঠকে মোহিত করে। আফ্ফানও সুর ধরে ‘ফুল কেন ফুটে পাখি কেন গায় নদী কেন ছুটে দূর সীমানায়’ ... আল্লাহর অপরূপ সুন্দর এ পৃথিবীতে মানুষের জন্য অপার করুণাস্বরূপ ফল, ফুল, সুন্দর পাখি, বিস্তৃত নদী, সুবিশাল সাগর ইত্যাদি সৃষ্টি করেছেন মহান আল্লাহ তাআলা। এসব দেখে কৃতজ্ঞ বান্দার মনে ¯্রষ্টার প্রতি প্রেম সৃষ্টি হয়। মানুষ কিন্তু এসবের কোনটিই সৃষ্টি করতে পারে না। আফ্ফান : পাখি কিভাবে আকাশে ভেসে বেড়ায়? পাখি কি আব্বুর গাড়ির মতো পথে কোথাও তেল নেয়? আম্মু : না আব্বু, পাখি আকাশে উড়তে তেলের প্রয়োজন হয় না। আফ্ফান : তাহলে কি ভাবে আকাশে ভেসে বেড়ায়? পড়ে যায় না কেন? আম্মু : তারা মহান আল্লাহর দয়ায় আকাশে ভেসে বেড়ায় । আল্লাহ তাদেরকে আকাশে স্থির রাখেন বলেই তারা পড়ে যায় না। মা তাকে কুরআনের একটি আয়াত তেলাওয়াত করে শুনান। যার অর্থ হলো : “এসব লোকেরা কি তাদের মাথার ওপর দিয়ে আকাশে উড়ে যাওয়া পাখিগুলোকে দেখে না। কিভাবে এরা নিজেদের পাখা মেলে রাখে আবার একসময় তা গুটিয়েও নেয়। তখন পরম দয়ালু আল্লাহ তালায়ই এদের মহাশূন্যে স্থির করে রাখেন। হ্যাঁ- একমাত্র আল্লাহ তায়াল্ইা; তিনি তার সৃষ্টির ছোট বড় সব কিছুই দেখেন।” কী চমৎকার পাখিগুলো মানুষের মাথার ওপর দিয়ে আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে। ভুলেও কোন দিন পড়ে যাচ্ছে না। যে যার গন্তব্যে ছুটে যাচ্ছে প্রেতিনিয়ত। সুদূর সায়বেরিয়া থেকে শীতের দিনে বাংলাদেশে পাখি চলে আসতে দেখা যায়। তাদের গতিপথে কোন দিন ভুল হয় না। তারা প্রতিদিন ঠিকঠাক মত পেট ভরে খায়। কোন দিন তারা অভুক্ত থাকে না। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আফফান : পাখিগুলো কোথায় খায়? তাদেরকে কে খাবার দেন? আম্মু : আল্লাহ। সকল পাখিকে আল্লাহই খাওয়ান। তিনি সকল জীবজন্তু, পশু পাখি, কীটপতঙ্গ সবাইকে তাঁর অফুরন্ত ভাণ্ডার থেকে খাবার দেন। আফ্ফান মায়ের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছিল। সে সাথে বলে উঠল, নানু, বড় খালা মনি, মেজ খালামনি, খালাব্বু, বড় মামা, ছোট মামাদের কে খাওয়ান? মায়ের একই জবাব : আল্লাহ। সবাইকে আল্লাহ খাওয়ান । আফসা বলে উঠল : আম্মু তাহলে পাখিগুলো তাদের গানে কি গায় ? আব্বু : পাখি তার গানে আল্লাহর গুণগান গায়। আফসা : আল্লাহর কী গুণগান গায় তারা? আব্বু : সুললিতকণ্ঠে কুরআনের সূরা নূরের ৪১ নম্বর আয়াত তেলাওয়াত করলে সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনল। আফসা বলল : এ আয়াতের অর্থ কী ? আব্বু : এ আয়াতের অর্থ হলো : “হে মানুষ তুমি কি ভেবে দেখনি, যতো সৃষ্টি আসমানসমূহ ও জমিনে আছে, সবাই আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছে। আর পাখিকুল যারা পাখা বিস্তার করে আকাশে উড়ে চলছে, তারাও সবাই আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। তিনি (আল্লাহ) তাঁর সৃষ্টির প্রত্যেকের প্রশংসা ও মহিমা ঘোষণার পদ্ধতি জানেন। এরা যে যা করছে আল্লাহ তাআলা সবই অবহিত আছেন।” আফ্ফান বলে উঠল : আব্বু, আমি যে দুষ্টুমি করি আল্লাহ কি তাও জানেন? আব্বু বললেন : অবশ্যই, তিনি সব দেখেন, সব জানেন। মা বললেন : তোমরা বড় হয়ে আর দুষ্টুমি কর না আব্বু। বড় হয়ে কেউ দুষ্টুমি করলে আল্লাহ রাগ করেন । আফ্ফান ও আফসা মায়ের সাথে প্রতিজ্ঞা করল বড় হলে আম্মু, আব্বু ও মহান আল্লাহ রাগ করবেন এমন কোন কাজ তারা করবে না। মা-বাবাও তাদের প্রিয় সন্তানদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ