আবদুল্লাহ -শিউলী খন্দকার

আবদুল্লাহ -শিউলী খন্দকার

প্রচ্ছদ রচনা নোমান মুশাররফ জানুয়ারি ২০২৩

রাস্তার পাশে ড্রেনের ধার ঘেঁষে একটি রুগ্ন কুকুরছানা ক্যুই-ক্যুই করে কাঁদছিলো। ছানাটির চামড়া ছাল পাকড়া উঠানো গাছের মতো। কোথাও লোম আছে আবার কোথাও নেই। সাদা আর লালচে রঙের মিশেলে কুঁচকানো চামড়া। ছানাটি দেখতে সদ্য ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার মতো। কাদায় মাখামাখি হয়ে আধশোয়া অবস্থায় হাঁপাচ্ছিলো ছানাটি। ঘন কালো আলকাতরার মতো দুর্গন্ধযুক্ত ড্রেনের ময়লা কাদা পানিতে হাবুডুবু খেয়ে উঠেছে সবে। হয়তো কোনো দুষ্টু ছেলের দল ওকে জোর করে ড্রেনে ফেলে দিয়েছিলো। অনেক কষ্ট করে টেনে হিঁচড়ে কোনো মতে ও উপরে উঠতে পেরেছে। কিন্তু ব্যথায় জর্জরিত হয়ে আর্তস্বরে ক্যুই-ক্যুই করে কাঁদছিলো। তীব্র ব্যথায় চামড়াটা বার বার কেঁপে কেঁপে উঠছিলো। আবদুল্লাহ আর হাবিবা তখন ওই পথ দিয়ে মায়ের হাত ধরে স্কুল থেকে বাসায় ফিরছিলো। কুকুর ছানাটির এ হাল দেখে আবদুল্লাহর মনে খুব মায়া হলো। সে কুকুর ছানাটিকে বাসায় নিয়ে যেতে মায়ের কাছে বায়না ধরলো। মা রেগে বললেন,
- একটা থাপ্পড় দেবো। চল, বাসায় চল। দুপুরের কড়া রোদে মায়ের মন এমনিতেই তিরিক্ষি হয়েছিলো। তারপর আবার আবদুল্লাহর এমন অদ্ভুত আবদার। মা তাই একটু বেশিই রেগে যান। মা প্রতিদিন ওদের দুই ভাইবোনকে স্কুলে দিয়ে ছুটি না হওয়া পর্যন্ত স্কুলের মাঠে অপেক্ষা করেন। ছুটির পর ওদের নিয়ে একসঙ্গে বাড়ি ফেরেন। মায়ের ক্লান্ত, অবসন্ন দেহ তখন এমনিতেই আর চলতে চায় না। তাই মায়ের অসহ্য লাগে। মা আবদুল্লাহকে হাত ধরে টেনে হিঁচড়ে বাসার পথে রওনা হন। যতোই সামনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন, আবদুল্লাহ ততোই বেঁকে বসে। আবদুল্লাহ বায়না ধরে কুকুর ছানাটিকে না নিয়ে সে কিছুতেই বাসায় যাবে না। মা আবদুল্লাহকে ধমকে টেনে হিঁচড়ে বাসায় নেয়ার চেষ্টা করলে আবদুল্লাহ দাঁতমুখ খিঁচে ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। পচ-রকম টানাটানি আর ধস্তাধস্তিতে অনেকটা সময় পার হয়ে যায়। মা আর হাবিবা এক দলে আর আবদুল্লাহ আরেক দলে। ওরা দু’জনে মিলে আবদুল্লাহর সঙ্গে পেরে ওঠে না। আবদুল্লাহ শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে মা আর হাবীবার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। তারপর এক ছুটে কুকুর ছানাটির পাশে শুয়ে পড়ে মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে। আর বলে,
- আমি ওকে বাসায় নিয়ে যাবো। আমি ওকে পালবো। ড্রেনের কাদা জলে আবদুুল্লাহর ধবধবে সাদা শার্টটি মুহূর্তের মধ্যে বিবর্ণ হয়ে যায়। রাস্তার পাশের দোকানিরা তখন চেয়ে চেয়ে মজা দেখে। হাবিবা ওর ছোট ভাইয়ের এ করুণ দশার জন্য মনে মনে অনেক লজ্জা পায়। মা এবার রেগে-মেগে আবদুল্লাহকে পিটাতে পিটাতে বাসায় নিয়ে যান। কুকুর ছানাটি মাথা উঁচিয়ে করুণ নয়নে আবদুল্লাহর দিকে চেয়ে থাকে ।
আবদুল্লাহ বাসায় ফিরে কিছুই খায় না। লেখাপড়াও করে না। অথচ আগামীকাল ওর বার্ষিক পরীক্ষা । মা তাই ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে বলেন,
- না খেলে না খাবে কিন্তু পড়তে তোমাকে হবেই। কিন্তু আবদুল্লাহ কিছুতেই পড়তে বসবে না। সে যা বায়না ধরে তা তার চাই-ই চাই। মা-ও সাংঘাতিক রাগী। ছেলের এমন অন্যায় আবদার কিছুতেই তিনি প্রশ্রয় দেন না। না পড়তে বসলে আবদুল্লাহকে ঘরের বাইরে বের করে দেবেন বলে হুমকি দেন। কিন্তু ওরকম হুমকি ধমকিতেও কোনো কাজ হয় না। আবদুল্লাহ বায়না ধরে বসে আছে। কুকুর ছানাটি তার চাই-ই চাই। মা-ও তার সিদ্ধান্তে অটল। না পড়লে তিনি আজ আবদুল্লাহকে ঘর থেকে বের করবেনই করবেন।
কোনো হুমকিতেই যখন কোনো কাজ হচ্ছিল না তখন মা সত্যি সত্যি আবদুল্লাহকে ঘর থেকে বের করে ছিটকিনি বন্ধ করে দেন। আবদুুল্লাহ সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে কাঁদতে থাকে। নানু আবদুল্লাহর কান্না সহ্য করতে পারেন না। তিনি আবদুল্লাহকে ঘরে ঢুকতে দেয়ার জন্য তিনি মাকে অনেক অনুরোধ করেন। কিন্তু নানুর কোনো অনুরোধই মা গ্রহণ করেন না। মায়ের এক কথা- লেখাপড়া না করলে ওকে ঘরে ঢুকতে দেয়া হবে না। শেষে নানু মাকে বুঝান এই বলে যে, মানুষ একটা ছেলে সন্তান পায় না। একটা ছেলের জন্য মানুষ কতো কি-ই না করে। আর তুমি এই রাত্রিবেলায় ছেলেটাকে এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাইরে রেখে দিয়েছো। যদি কোনো ছেলেধরা এসে সিঁড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। তাহলে কী করবে? কিন্তু এসব কথা মায়ের কানে যায় না। নানু যেন আবদুল্লাহকে দরোজা খুলতে না পারে, সেজন্য মা দরোজায় পিঠ ঠেকিয়ে, একটা উঁচু টুলে দারোয়ানের মতো বসে থাকেন। আর কিছুক্ষণ পর পর বলেন,
- বল, পড়তে বসবি? তাহলে দরোজা খুলবো।
আবদুল্লাহ মায়ের চেয়ে দ্বিগুণ জোরে চেঁচিয়ে কেঁদে কেঁদে বলে,
- না, পড়বো না। মা তাই রেগে বলেন,
- থাক তাহলে, সিঁড়িতেই পড়ে থাক সারারাত। তোকে আজ ঘরে ঢুকতে দেয়া হবে না। হাবিবা এবার চেঁচিয়ে বলে,
- আবদুল্লাহ, তুমি মায়ের কথায় রাজি হয়ে যাও। তা না হলে সিঁড়িতে থাকলে তোমাকে কিন্তু ছেলেধরা নিয়ে যেতে পারে। আবদুল্লাহ কেঁদে কেঁদে বলে,
- ভয় পাই না আমি ছেলেধরা।
একদিকে মা যেমন তার সিদ্ধান্তে অটল। অন্যদিকে আবদুল্লাহও ওর অনড়। কেউ কারো অবস্থান থেকে বিন্দুমাত্র নড়চড় হয় না। শেষে নানু বিরক্তির সুরে মাকে বলেন,
- হয়েছে তো আর কতো শাস্তি দিবি বাচ্চাটাকে। ও একটি শিশু। শিশুর সঙ্গে অতো কঠিন হতে নেই। শিশুদের মন অনেক কোমল। তাই শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুর হতে নেই। শিশুর প্রতি নিষ্ঠুর হলে বড় হলে ওই শিশুরাও কঠিন মনের অধিকারী হয়। তাই শিশুদের আদর স্নেহ দিয়ে গল্পের ছলে বুঝাতে হয়। শিশুদের আদর-স্নেহ দিয়ে বড় করলে বড় হয়ে সেই শিশুরা মানুষের মতো মানুষ হয়। মায়ের রাগ তখনও পড়ে না। মা রেগে মেগে নানুকে বলেন,
- আমি আপনার কথা একটুও শুনবো না। আপনি ওকে আদর আহ্লাদ দিয়ে মাথায় তুলেছেন।
মায়ের সঙ্গে অনেক তর্কাতর্কির পর নানু আবদুল্লাহকে উদ্ধার করতে সমর্থ হন। আবদুল্লাহ এতক্ষণ ধরে কেঁদে কেটে ঘেমে নেয়ে একেবারে অস্থির হয়ে গেছে। নানু আবদুল্লাহকে কোলে নিয়ে অনেক আদর করেন। আবদুল্লাহ পাখির ছানার মতো গুটিসুটি হয়ে নানুর বুকে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। নানু অনেক ভালো কথা বলে আবদুল্লাহকে বুঝান। কান্না থামলে তারপর পড়তে বলেন। কিন্তু আবদুল্লাহ কিছুতেই পড়বে না। সে বলে,
- এখন আমি কার্টুন দেখব। ডরিমন কার্টুন ।
মা চেঁচিয়ে বলেন,
- নো, কোনো কার্টুন-ফাটুন দেখা চলবে না। কাল পরীক্ষা। এখন পড়তে বসতে হবে।
- না, আমি পড়বো না। আগে কার্টুন দেখবো। তারপরে পড়বো। আবদুল্লাহর যেই না বলা অমনি মা হাতপাখার ডাঁট দিয়ে আবদুল্লাহকে পেটাতে আসেন। নানু আবদুল্লাহর হয়ে মায়ের কাছে সুপারিশ করেন। বলেন,
- শিশু তো, একটু যখন কার্টুন দেখতে চাইছে, দেখতে দাও। মা কোনো কথাই শুনতে চান না। তিনি রেগেমেগে বলেন,
- হ্যাঁ, কার্টুন দেখবে? কাল বার্ষিক পরীক্ষা। আর আজ উনি কার্টুন দেখবে। পরীক্ষায় লাড্ডু পেলে তখন কী হবে?
নানু বলেন,
- লাড্ডু পাবে না। আমি সাক্ষী। একটু দেখতে দাও।
মা কার্টুন দেখার জন্য আধা ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে রিমোটটি বিছানার ওপর ছুড়ে ফেলে হন-হন করে হাবিবাকে নিয়ে পাশের রুমে পড়াতে চলে যায়। হাবিবা ক্লাস টুতে পড়ে। এবার ক্লাস থ্রিতে উঠবে। আর আবদুল্লাহ পড়ে ক্লাস ওয়ানে। এবার ক্লাস টুতে উঠবে। কিন্তু কেমন করে সে ক্লাস টুতে উঠবে। আবদুল্লাহ তো লেখাপড়াই করে না।
আবদুল্লাহ আর ওর নানু বিছানায় শুয়ে মজা করে কার্টুন দেখে। আবদুল্লাহর মতো নানুরও কার্টুন খুব প্রিয়। কার্টুন দেখে দু’জনাই খুব পুলকিত বোধ করে। পৃথিবীর সব কিছু ভুলে গিয়ে নিতান্তই দুজন সুখী মানুষের মতো ওরা হাঁ হয়ে তাকিয়ে থাকে টেলিভিশনের দিকে। এভাবে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আবদুল্লাহ কখন যে ঘুমিয়ে পড়ে নানু তা টেরই পাননি। বেঁধে দেয়া সময় পার হয়ে এলে মা চিলের মতো তেড়ে আসেন। ছোঁ মেরে আবদুল্লাহর হাত থেকে রিমোটটি কেড়ে নেন। আবদুল্লাহ টেরই পায় না। কোনো নড়াচড়াও করে না। মা অবাক হন। আবদুল্লাহকে ঠেলা দেন। এবার বুঝতে পারেন আবদুল্লাহ ঘুমিয়ে পড়েছে। এবং বিঘোরে ঘুমুচ্ছে সে। আবদুল্লাহকে ঘুমোতে দেখে মা তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন।
- আমি আগেই ভেবেছিলাম এরকম একটা কিছু ঘটবে। তিনি আবদুল্লাহকে উঠানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ততোক্ষণে আবদুল্লাহর দেহ বেশ নেতিয়ে পড়েছে। নানু আফফোস করে বলেন, আহারে! মানিক আমার দীর্ঘসময় সিঁড়িতে বসে কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। মা এবার গালাগাল করেন নানুকে। বলেন,
- হয়েছে আপনি আর একটা কোথাও বলবেন না। আপনার জন্য ও ঘুমিয়ে পড়েছে। আপনি ওকে ঘুমিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন। আগামীকাল ওর পরীক্ষা। ও কী পরীক্ষা দেবে? ও যদি পরীক্ষায় লাড্ডু পায়, তাহলে কিন্তু এর দায় আপনাকে বহন করতে হবে। আবদুল্লাহ ঘুমিয়ে যাওয়ায় এভাবে মা নানুকে শাসাতে থাকেন। আর নানু বেচারা অপরাধীর মতো মায়ের সব গালাগাল সহ্য করেন। আবদুল্লাহ তো ঘুমিয়ে কাঁদা। ওর কানে এসবের কিছুই যায় না। মায়ের শতো ঝাঁকুনিও ওকে কাবু করতে পারে না। মা চেঁচিয়ে শোরগোল করতেই থাকেন।
- দেখেছেন, কোনো চিন্তা আছে? কী সুন্দর দিব্বি নিশ্চিন্তে ঘুমুচ্ছে। নানু দরদভরা কণ্ঠে বলেন,
- আহা অবুঝ তো। মা রেগে ওঠেন,
- এতো অবুঝ অবুঝ করেই তো আপনি ওকে মাথায় তুলেছেন। আপনার জন্য আমি ওকে শাসন করতে পারি না।
পরদিন সকালে মা রাজ্যের বকাঝকা করে টেনে হিঁচড়ে আবদুল্লাহকে স্কুলে নিয়ে যান। আবদুল্লাহ পরীক্ষার সিটে বসে ঠিক, কিন্তু নিজের খাতায় কিছুই লিখে না। কারণ, ওর পাশের বন্ধু রাহাতের একটি অঙ্কও কমন পড়েনি। রাহাত তাই কাঁদছিল। আবদুল্লাহর দরদি মন তখন রাহাতের জন্য উথলে ওঠে। ছেলেবেলা থেকেই আবদুল্লাহ খুব পরপোকারী। আবদুল্লাহ রাহাতকে সান্ত¡না দেয়। তারপর রাহাতের খাতায় অঙ্ক করে দেয়। অঙ্ক করতে করতে আবদুল্লাহ ভুলেই যায় সে যে নিজের খাতায় কিছুই লিখেনি। এদিকে পরীক্ষার সময় ফুরিয়ে যায়। ঢং ঢং ঢং করে পরীক্ষা শেষের ঘণ্টা বেজে ওঠে। আবদুল্লাহর তখন টনক নড়ে। আবদুল্লাহ তড়িঘড়ি করে নিজের খাতায় লিখতে যাবে এমন সময় মেম এসে এক ঝটকায় আবদুুল্লাহর খাতা নিয়ে যায়। আবদুল্লাহর তখন মনে পড়ে সে যে নিজের খাতায় কিছুই লিখেনি। নিজের ভুলের জন্য কিছুক্ষণ মন খারাপ থাকলেও হল থেকে বেরিয়ে সব কিছু ভুলে যায়। মা জিজ্ঞেস করেন,
- পরীক্ষা কেমন হয়েছে? আবদুল্লাহ বলে,
- ভালো। মা প্রশ্ন খুলে দেখেন। প্রশ্ন খুবই সহজ হয়েছে। এসব অঙ্ক মা আবদুল্লাহকে অনেক আগেই শিখিয়েছেন। মা তাই খুশি হন। আবদুল্লাহ মায়ের বকুনি থেকে এ যাত্রায় রক্ষা পেয়ে যায়।
রেজাল্টের দিন আবদুল্লাহ মায়ের হাত থেকে আর রেহাই পায় না। কারণ আবদুল্লাহ গণিত পরীক্ষায় শূন্য পেয়েছে। আর ওদিকে তার বন্ধু রাহাত ফার্স্ট হয়েছে। প্রথম পুরস্কার পেয়েছে। মা আবদুল্লাহকে অনেক করে মারেন। হাবিবা বলে, আবদল্লাহ, তুমি না বলেছো সব লিখেছো ।
- হ্যাঁ, লিখেছিই তো। কিন্তু আমি তো বন্ধুর খাতায় লিখেছি।
- কেন, বন্ধুর খাতায় কেন লিখেছো?
- কারণ আমার বন্ধু তো কিছুই পারে না। ও তো কাঁদছিলো। আমি তাই ওর অঙ্ক করে দিয়েছি। ওর অঙ্ক করতে করতেই তো ঘণ্টা পড়ে যায়। মেম খাতা নিয়ে যায়। আমি কেমন করে আমার খাতায় লিখবো। আবদুল্লাহর কথা শুনে হাবিবা আর মা মুখ চাওয়া-চাওয়ি করেন। তারা হতাশ হয়ে যায়। মা আবদুল্লাহকে আচ্ছা মতন পেটাতে চান। কিন্তু পারেন না। নানু এসে বাদ সাধেন। নানুর কারণে আবদুল্লাহ এবারও মায়ের পিটুনি থেকে রক্ষা পায়। তবে আপাতত রক্ষা পেলেও মা আর নানুর মধ্যে তুমুল লঙ্কাকাণ্ড বেধে যায়। আবদুল্লাহর হয়ে কথা বলতে গিয়ে নানু মায়ের প্রচুর বকা খান। বকা খেয়ে নানু অনেক কাঁদেন। কারণ আবদুল্লাহ হচ্ছে নানুর জানের জান। নানুর কলিজার টুকরা। আসলে স্নেহ, মায়া, মমতা এসব হচ্ছে নিম্নগামী। যে কারণে মানুষ নিজের চেয়েও ভালোবাসে তার সন্তানকে। তারপর তার সন্তানকে। অতঃপর তার সন্তানকে। এভাবে প্রবহমান বয়ে চলে স্নেহের ধারা। যা ক্রমশ প্রগাঢ় থেকে প্রগাঢ়তর হয়। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। তাইতো নানু তার হাড় জিরজিরে কঙ্কালসার নাতি আবদুল্লাহকে এতো বেশি ভালোবাসেন। বাড়ি জুড়ে চলছে একটি হ-য-ব-র-ল অবস্থা। ঠিক এমন সময় ও বাড়িতে বেড়াতে আসে আবদুল্লাহর খালামণি। নানুকে কাঁদতে দেখে খালামণির চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। খালামণি অবাক হয়ে নানুকে বলে,
- কী হয়েছে আম্মা, আপনি কাঁদছেন কেন? খালামণিকে দেখে নানু যেন অকূলে কূল পেয়ে যান। কান্নায় ভেঙে পড়েন। ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে মায়ের নামে নালিশ করেন। নালিশ শুনে মা পাশের রুম থেকে ছুটে এসে খালামণির কাছে পাল্টা নালিশ করেন। বিচার করতে গিয়ে খালামণিও হিমশিম খেয়ে যায়। ফলে আবদুল্লাহকে নিয়ে পুরো বাড়িটায় একটা কুরুক্ষেত্র বেধে যায়। কত ঝগড়া, কত কথা কাটাকটি, কত কান্নাকাটি যে হয়ে যায় তা আর বলতে। কিন্তু যাকে নিয়ে এতো কিছু তার কোনো তাল নেই। সে সোফার এক কোণে নানুর আঁচলের নিচে বসে আছে। চুপিচুপি মোবাইলে ভিডিও গেমস খেলছে। আবদুল্লাহর এমন অবস্থা দেখে মনে হয় সে যেন গণিতে জিরো পায়নি। বরং জিরো পেয়ে সে যেন হিরো হয়ে গেছে।
টিকা-বুদ্ধিমানেরা সময়ের কাজ সময়ে করে।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ