আবহমান বাংলার বর্ষা

আবহমান বাংলার বর্ষা

বিশেষ রচনা জুলাই ২০১১

এ কে এম সামসুল ইসলাম

ঋতু বৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশ। সুজলা-সুফলা এ দেশ। এ দেশে ছয়টি ঋতু বিরাজমান। এ দেশের প্রকৃতির সাথে প্রতিটি ঋতুর যোগসূত্রের বন্ধন রয়েছে। একই সূত্রে গাঁথা ঋতুর বিচিত্র সমারোহ। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত এক একটি ঋতু সৌন্দর্যের অলঙ্কার, প্রত্যেকটি প্রকৃতির সাথে একান্ত। এদের ছাড়া প্রকৃতি অসুন্দর-বেমানান। এক ঋতু চলে গেলে আরেক ঋতু চলে আসছে। এটাই চিরন্তন। গ্রীষ্মের দাবদাহ থেকে নিস্তার পেতে মানুষ স্বস্তি চায়, অতিষ্ঠ জীবন থেকে পরিত্রাণ পেতে আকাক্সিক্ষত তারা চিরসুন্দর বর্ষার আগমনে পথ চেয়ে থাকে। বর্ষার সুশীতল বর্ষণ প্রকৃতির সকল চাওয়াকে তৃপ্ত করে। বাংলার প্রকৃতির নবরূপে সজ্জিত হয়ে নয়নাভিরাম শোভা নিয়ে শ্যামলী বর্ষা আসে। বর্ষার আগমনে খাল-বিল জলমগ্ন হয়ে যায়। ব্যাঙেরা দলবেঁধে ডাকতে থাকে মেঘ হ মেঘ হ, নবজীবনের আনন্দমেলা শুরু হয়। প্রকৃতির রানী বর্ষা এক আশ্চর্য উপভোগ নিয়ে হাজির হয়। কী এক অফুরন্ত লীলা বৈচিত্র্য! এ বর্ষার আগমনে প্রকৃতি নবরূপে সজ্জিত হয়।

প্রকৃতির গ্রীষ্মের নিমর্মতার পরিসমাপ্তি ঘটে এ বর্ষার কোমলতায়। এ বর্ষা কোন এক দূর সীমানা থেকে মেঘমালা নিয়ে হাজির হয় বাংলার আকাশে। শুরু হয় অঝোরে বর্ষণ, ঝড়ছে যে তা সারাদিন ঝড়ছে। কদম কেয়া ফোটার সময় এ মাস। গ্রীষ্মের বিদায়ে প্রকৃতির শান্তির আভাস জানিয়ে দেয় কদম কেয়া ফুল। মুুক্ত মনের কদমের হাসি ছোঁয়া সহজ সরল আর সুগন্ধি সুবাস ছড়িয়ে বর্ষাকে স্বাগত জানায়। বদলায় প্রকৃতির রূপ।

হলুদ সাদা মিশ্রিত কদম ফুল যেনো শান্তির বার্তা জানিয়ে দিতে এসেছে। শুধু কদমের মধ্যে হাসি, শাপলা ফুলেও এ হাসি শোভা পাচ্ছে। সরোবরে ফুটে আছে অজস্র শাপলা যেনো উৎসব আনন্দে হাসিতে আত্মহারা কবি সাহিত্য মানুষের মাঝেও এ কদমের মোহনীয় হাসি। কদম ফুটলেই মানুষ বোঝে যে বর্ষা এসেছে। তাই কবি বলেন,

বর্ষার আকাশ ফর্সা হয় না

মেঘে ঢাকা গোমড়া

সোনারোদে ঝলক এলে

দেখবে সবাই তোমরা।

ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা কদমকে ভালবেসে হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। কদম বর্ষার প্রতীক। বর্ষার সাথে কদমের অত্যন্ত নিবির সম্পর্ক। কদম ছাড়া বর্ষার রূপ বর্ণনা করা যায় না।

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষির ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছে এ দেশের মানুষ। তাই বর্ষা অতি প্রয়োজনীয় ঋতু। বর্ষার অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্ষা কৃষকের মুখে হাসি ফোটায়। তাই বর্ষা নিয়ে আসে সুখ, শান্তি ও প্রগতি। বর্ষা যেমন আনন্দ বয়ে আনে তেমনি দুঃখ-কষ্টও বয়ে আনে।

বর্ষায় কবিমন বিচিত্রতায় ভরে ওঠে। বাস্তবে রূপ পায়। তাই কতই না কবিতা-ছড়া তার লেখনীতে প্রকাশ পায়। যেন কবি বর্ষার নীল আকাশে হঠাৎ কালো মেঘ করে ঝর ঝর করে পড়তে থাকে। কদম কেয়া শাপলা স্নিগ্ধ হাসি ভাবুক কবিমন আন্দোলিত করে তোলে। ভাবের সঞ্চয় হয় তার মনে। তখন কবিমন -

রিম ঝিম বিষ্টিটা

কোথায় মিষ্টিটা

দিন রাত ঝরছে

নদী নালা ভরছে।

ডাহুক আপন মনে ডাকতে থাকে অনেকক্ষণ, বর্ষার আগমনবার্তা জানিয়ে। বর্ষার মাঠে সবুজ ধানের শিষগুলো দুলতে থাকে আর বর্ষার রূপ কীর্তন গাইতে থাকে। ছোট ছোট খাল-বিলে শাপলা ফুটে হাসতে থাকে। ছোট ছেলেমেয়েরা শালুক কুড়ায় ডুবাইয়ে আর শাপলা তুলে  নৌকায় করে। উদাস করা পল্লীবধূ নৌকায় ঘোমটা পরা রাঙামুখ টেনে ছই নৌকায় বাপের বাড়ি নাইয়র যায়। আর ফিরে ফিরে চায় ফেলে আসা পথ পানে। পাল তোলা নৌকা কল কল করে। চলতে থাকে আপন মনে। কতই না আনন্দ লাগে! আর মাঝি গান গায়।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ