আবিরের মাধবী লতা

আবিরের মাধবী লতা

তোমাদের গল্প মে ২০১০

আবির তার দাদুকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। কারণ, দাদু একজন উদ্ভিদপ্রেমিক। দাদু গাছের প্রতি সদা নজর রাখেন। অল্প কয়েকদিন হলো, দাদু শ্রীমঙ্গল ঘুরে এসেছেন।
তিনি কয়েকটি মাধবী ফুলের চারা নিয়ে এসেছেন। সবচেয়ে ছোট্ট চারাটি আবিরের খুব পছন্দ। দাদু আজ আবার সুন্দরবন বেড়াতে যাবেন।
দাদু বলেন, ‘আবির তুই আয় না আমার সঙ্গে।’
আবির কিছু বলল না, কিন্তু দাদু বললেন, ‘আচ্ছা, তুই তোর মায়ের সঙ্গেই থাক। সন্তানরা মায়ের কাছেই ভালো থাকে।’
আবিরের মনে কথাটি গেঁথে গেল। সত্যিই তো সন্তানরা মায়ের কাছেই ভালো থাকে। এখন, দাদুর চেয়ে আবির বেশি মাধবী চারার প্রতি দৃষ্টি রাখে, যতœ করে।
গ্রীষ্মকালীন অবকাশ। আবির তার মা ও বাবার সাথে মামারবাড়ি বেড়াতে যাবে। সে মাধবী ফুলের চারাটি সঙ্গে নিয়ে যাবে। কিন্তু মা তাতে খুশি নন। কারণ, আবিরের মামারবাড়ি অনেক দূর যশোর। চারাটি নেতিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি।
মা বলেন, ‘দেখবি চারাটি নেতিয়ে যাবে।’
আবির বলে, কেন নেতিয়ে যাবে, কেন? একটু পরপর চারায় পানি দেব।’
‘পানি দেবে তাই না? দুই বোতল খাবার পানি, তা গাছকে খাওয়াবে? বললেই হলো?’
আবির মায়ের বকুনি খেয়ে চুপ করে থাকে। সে মনে মনে কথা বলে। সে জানে, গাছের জীবন আছে, গাছ কথা বলে। গাছের অনুভূতি, সুখ ও দুঃখ আছে। সে আরও জানে, গাছের জীবন আছেÑ এ কথাটি বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু ক্রেস্কোগ্রাফ যন্ত্রের মাধ্যমে প্রমাণ করেছিলেন। শুধু বইয়ে কেন, সে নিজেও বুঝে, গাছের জীবন আছে। ঐ যে হলুদ রঙের সূর্যমুখী শুধু সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। লরেল গাছ কাঁদে! লজ্জাবতী গাছকে ছুঁতে না ছুঁতেই পাতা বুজে যায়! গাছ যেন বলে, আমাকে ছুঁয়ো না, আমাকে ছুঁতে নেই।’
আবির ভাবে, ‘তাহলে আমার ছোট্ট চারাটিরও তো প্রাণ আছে। আমি চারাটিতে পানি দেবো না কেন? চারাটি সারাদিনে কী কিছু খাবে না? অবশ্যই খাবে। গাড়ি চলে তো চলে। আবিরের কোন দিকেই মন নেই, শুধু সে চারাটির দিকে তাকিয়ে থাকে।
আবিরের মাধবী গাছটির কচি কচি পাতা, তাতে সে হাত বুলায়। মামারবাড়ি এসেও সারাদিন আবির গাছের তদারকি করে বেড়ায়। সে যেন কচি কচি পাতাগুলোর সাথে কথা বলে। গাছের গোড়ায় সে শুধু পানি আর পানি দেয়।
মা ভাত বেড়ে দিতে দিতে বলেন, ‘আর কত পানি দিবিরে আবির। বেশি দিলে যে গোড়া পচে যাবে। তবুও আবিরের যতেœর কমতি নেই। একদিন আবিরের মাধবী গাছে গোলাপি আর সাদা রঙ মিশ্রিত থোকা থোকা ফুল ধরল। এতে সে আনন্দ বোধ করল। ফুলের মিষ্টি গন্ধে ভরে যায় তার মন, কিন্তু গাছটি তো কেমন মনমরা হয়ে আছে হয়তো, শ্রীমঙ্গলে ফেলে আসা তার মাকে ভুলতে পারছে না। তাইতো সে মনমরা হয়ে আছে। কিন্তু হঠাৎ একদিন চারা গাছটির গোড়া পচে গেল, এতে চারাটি চিরতরে চোখ বুজে নিল।
আবির মনে মনে বলে, ‘এত পানি দেয়ার পরও চারাটি বাঁচল না।’ সবাই শুধু আবিরকে নিয়ে হাসাহাসি করে। কিন্তু দাদুর তো সে কথাই ঠিকÑ ‘সন্তানরা মায়ের কাছেই ভালো থাকে।’ তা নাহলে তরতাজা চারা গাছটি মামারবাড়ি গিয়ে শুকিয়ে মরে যাবে কেন?
আবিরের বুকে ছলকে ওঠে কান্না। জানালাটি বন্ধ করে দিয়ে রাতের অন্ধকারে আবির মায়ের বুকের কাছে বিছানায় শুয়ে পড়ে।

লিখেছেন: নিয়াজুল হাসান জুয়েল মোল্লা
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ