কে জিতবে বিশ্বকাপ

কে জিতবে বিশ্বকাপ

প্রচ্ছদ রচনা মোশাররফ হোসেন খান ডিসেম্বর ২০২২

এসে গেল আরেকটি ফুটবল বিশ্বকাপ। এবারের বিশ্বকাপের আসর বসছে মধ্যপ্রাচ্যের ছোট্ট দেশ কাতারে। এটি বিশ্বকাপের ২২তম আসর। বিশ্বকাপের পর্দা উঠবে নভেম্বরের ২০ তারিখ। প্রথম দিনেই স্বাগতিক দেশ কাতার মাঠে নামবে ইকুয়েডরের বিপক্ষে।

সাধারণত বিশ্বকাপের আসর বসে জুন মাসে। তবে ইতিহাসে এবারই প্রথম সেটি নভেম্বরে বসছে। এর কারণ কাতারের আবহাওয়া জুন মাসে প্রচণ্ড গরম থাকে। কখনো কখনো তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রির কাছাকাছি চলে যায়। এত গরমে ফুটবল ম্যাচ খেলা সম্ভব নয়, তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় ফিফা এবারের আসরটি নভেম্বর মাসে শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এর আগের ২১টি আসরের মধ্যে ব্রাজিল সর্বোচ্চ ৫ বার, জার্মানি ও ইতালি ৪ বার করে, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স, উরুগুয়ে ২ বার করে এবং স্পেন ও ইংল্যান্ড একবার করে শিরোপা জিতেছে। এবার কার হাতে উঠবে সোনার কাপ? বিশ্বকাপ খেলা মানেই সারা বিশ্বের দর্শকদের মাঝে প্রিয় দলগুলোর শিরোপা জেতার সম্ভাবনা নিয়ে হিসাব-নিকাশ। চলো আমরাও দেখে আসি কোন দলগুলো ফেবারিটের তালিকায় রয়েছে।

ব্রাজিল

সব হিসাব-নিকাশে এবার ব্রাজিলকে টপ ফেবারিট হিসেবে ধরা হচ্ছে। শিরোপা জয়ের সবচেয়ে বড়ো দাবিদার মনে করা হচ্ছে দলটিকে। যদিও তারা গত কোপা আমেরিকা কাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে হেরেছে। তা সত্তে¡ও ব্রাজিল বিশ^কাপের বাছাইপর্বে লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থেকে মূলপর্ব নিশ্চিত করেছে।
দলটির সবচেয়ে বড়ো তারকা নেইমার জুনিয়র। সাম্প্রতিক সময়ে ক্লাব ফুটবলে নেইমারের পারফরম্যান্স খুব একটা ভালো নয়। তবে অসম্ভব প্রতিভাবান এই খেলোয়াড় যে কোনো সময় জ্বলে উঠতে পারেন। সেই সাথে দলটিতে আছেন কাসিমিরো ও থিয়াগো সিলভার মতো অভিজ্ঞ ফুটবলার। আরো আছেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস, ভিনিসিয়াস জুনিয়র। গোলপোস্টের অতন্দ্র প্রহরী হয়ে থাকবেন এলিসন বেকার। তার চেয়ে বড়ো কথা এই দলটির কোচ তিতে, বর্তমান বিশ্বের সেরা কোচদের একজন। যার ক্রীড়া কৌশল যে কোনো মুহূর্তে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।

২০০২ সালের পর থেকে প্রতিবারই হেক্সা জয়ের মিশন নিয়ে বিশ্বকাপে যায় ব্রাজিল। পর্তুগিজ ভাষায় ‘হেক্সা’ মানে ছয়। আগে ৫ বার বিশ্বকাপ জিতেছে ব্রাজিল। এবারের মিশনে তারা জি গ্রুপে খেলবে সার্বিয়া, সুইজারল্যান্ড ও ক্যামেরুনের বিপক্ষে। গ্রুপ পর্ব ব্রাজিল সহজেই পার হবে বলে মনে হচ্ছে। তবে দ্বিতীয় রাউন্ডে নেইমারদের সামনে আসতে পারে পর্তুগাল কিংবা উরুগুয়ে। তাই সেখানে কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়তে হবে। আর কোয়ার্টার ফাইনালেও সামনে আসতে পারে ইংল্যান্ড কিংবা নেদারল্যান্ডসের মতো কঠিন বাধা।

ইংল্যান্ড

১৯৬৬ বিশ্বকাপ জয়ী ইংল্যান্ডকে ফেবারিট তালিকার দুই নম্বরে রাখা হচ্ছে। দলটি গত আসর ইউরো ফুটবলের রানার্স আপ। গ্যারেথ সাউথগেটের শিষ্যরা ইউরোতে দুর্দান্ত খেলেও ফাইনালে ইতালির কাছে হেরে গেছে টাইব্রেকারে। উয়েফা ন্যাশন্স লিগে ২০১৯ সালে হয়েছে তৃতীয়।
এবারের কাতার বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড দলটি যেকোনো দলের চেয়ে প্রতিভা ও দক্ষতার বিচারে এগিয়ে থাকবে। দলের নেতৃত্ব দেবেন অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার হ্যারি কেন, যার রয়েছে গোল করার দুর্দান্ত ক্ষমতা। এছাড়া একঝাঁক ফুটবলার আছেন, যারা সবাই ক্লাব ফুটবলে দারুণ খেলছেন চলতি মৌসুমে। জুড বেলিংহাম, বুকায়ো সাকা, ফিল ফোডেনরা দারুণ ছন্দে আছেন।
গ্রু পে তাদের প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্র, ইরান ও ওয়েলস। তাই ব্রি গ্রুপ থেকে অনেকটা সহজেই ইংল্যান্ড দ্বিতীয় রাউন্ডের টিকিট পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। দ্বিতীয় রাউন্ডেও তাদের জন্য সহজ প্রতিপক্ষ অপেক্ষা করবে, সেটা হতে পারে স্বাগতিক কাতার, সেনেগাল কিংবা ইকুয়েডর। তবে কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের সামনে পড়তে পারে ফ্রান্স কিংবা আর্জেন্টিনা।
এই বাধা পেরিয়ে যেতে পারলে ইংল্যান্ড ও ব্রাজিলের ফাইনাল দেখার অপেক্ষা করছেন অনেকে। কারণ এই দুটি দলের ফাইনালের আগে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

ফ্রান্স

বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরাও আছে টপ ফেবারিটের তালিকায়। ১৯৯৮ ও ২০১৮ আসরের চ্যাম্পিয়নদের সামনে এবার টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জয়ের সুযোগ। আগে ইতালি ও ব্রাজিল ছাড়া কেউ পরপর দুবার শিরোপা জেতেনি। ২০২০-২১ উয়েফা ন্যাশন্স লিগের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। তাই তাদের শিরোপা জয়ের দৌড়ে রাখতেই হবে।
ডি গ্রুপে দলটি পেয়েছে অপেক্ষাকৃত সহজ প্রতিপক্ষ- ডেনমার্ক, তিউনিসিয়া ও অস্ট্রেলিয়াকে। রাশিয়ায় যারা ফ্রান্সকে শিরোপা এনে দিয়েছেন সেই কিলিয়ান এমবাপ্পে, অ্যান্তোনিও গ্রিজম্যান, পল পগবা, এনগলো কন্তে মাঠে নামবেন কাতার বিশ্বকাপেও। তাদের সাথে যোগ দেবেন সময়ের সেরা তারকা করিম বেনজেমা। গত মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতিয়েছেন বেনজেমা। সেই সাথে নিজে হয়েছেন ইউরোপের বর্ষসেরা ফুটবলার।
বেনজেমা কয়েক বছর পর ফিরেছেন ফ্রান্স জাতীয় দলে। এছাড়া দলটিতে বিশ^কাপ উপলক্ষ্যে ডাকা হয়েছে ৭ জন তরুণ ফুটবলারকে, যারা দারুণ মেধাবী। তাই ফ্রান্সের সামনে পড়লে যে কোনো দলকে কঠিন প্রতিদ্ব›িদ্বতার মুখে পড়তে হবে।

আর্জেন্টিনা

গত আসরের কোপা আমেরিকা কাপের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। তবে দলটি গত বিশ্বকাপে হতাশ করেছে সমর্থকদের। বয়সের কারণে মেসিও চলতি মৌসুমে ক্লাব ফুটবলে খুব একটা ভালো খেলতে পারেননি। তবে ক্যারিয়ারের শেষ বিশ^কাপ এটি, এই সুপারস্টারের শেষ সুযোগ বিশ্বকাপ ট্রফি ছুঁয়ে দেখার। সেটি হয়তো মেসিকে তাতিয়ে দিতে পারে।
মেসির সবচেয়ে বেশি তুলনা হয় ডিয়াগো ম্যারাডোনার সাথে। ম্যারাডোনার হাত ধরেই সর্বশেষ ১৯৮৬ সালে বিশ্বকাপ জিতেছে আর্জেন্টিনা। তারপর কেটে গেছে দীর্ঘ ৩৬ বছর। ২০১৪ সালে মেসি আর্জেন্টাইনদের বিশ্বকাপ দুঃখ ঘোচানোর খুব কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন; কিন্তু ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। তারপর গত রাশিয়া বিশ্বকাপটি মোটেই ভালো যায়নি তাদের জন্য।
সি গ্রুপে আর্জেন্টিনা এবার খেলবে মেক্সিকো, পোল্যান্ড ও সৌদি আরবের বিপক্ষে। মেক্সিকো ও পোল্যান্ড কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে মেসিদের সামনে। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলে ২০১৮ সালের মতো দ্বিতীয় রাউন্ডেই দেখা হতে পারে ফ্রান্সের সাথে।
তবে এই লেখা যখন লিখছি, লিওনেল স্কালনির আর্জেন্টিনা তখন টানা ৩২ আন্তর্জাতিক ম্যাচে অপরাজিত। এবং লিওনেল মেসি একাই অনেক কিছু করার ক্ষমতা রাখেন। সেই সাথে অভিজ্ঞ অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া, নিকোলাস ওতামেন্ডিরা মেসিকে সাপোর্ট দেবেন। তাই আর্জেন্টাইন সমর্থকরা আশায় বুক বেঁধে আছেন- কাতার তাদের নিরাশ করবে না!

স্পেন

২০১০ সালের বিশ্বকাপ জয়ী স্পেনের জন্য গত দুটি বিশ্বকাপ ভালো যায়নি। তবে গতবার উয়েফা ন্যাশন্স লিগে রানার্সআপ হয়েছে দলটি। গত ইউরোতে খেলেছে সেমিফাইনালে। লুইস এনরিকের হাতে আছে কয়েকজন দারুণ প্রতিভাবান ফুটবলার। বার্সেলোনার হয়ে মাঠ কাঁপানো পেড্রি, গাভি, তোরেসরা কাতারের মরুর বুকে গোলের উৎসবে মেনে ওঠার ক্ষমতা রাখেন।
তবে জার্মানির সাথে একই গ্রুপে পড়াটা স্পেনের জন্য শুরুতেই একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেবে। দ্বিতীয় রাউন্ডেও বেলজিয়াম কিংবা ক্রোয়েশিয়াকে মোকাবেলা করতে হতে পারে। কাজেই স্পেনের বিশ্বকাপ মিশন শুরু থেকেই কঠিন হবে বলা যায়। তবে দলটিতে প্রতিভার সমাবেশ রয়েছে। তাই সব বাধা টপকে যাওয়া অসম্ভব নয়।

আরো যারা

এই ৫ ফেবারিটের বাইরেও বিশ্বকাপে বড়ো বড়ো কিছু নাম রয়েছে। যেমন বেলজিয়াম, উরুগুয়ে, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, ক্রোয়েশিয়া। জার্মানিতে বড়ো বড়ো ক্লাবে খেলা ফুটবলার আছেন। যদিও দলটি গত বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ পড়ার পর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। নেদারল্যান্ডসও গত আসরে বিশ্বকাপে ছিল না। তবে তাদের কখনোই হিসাবের বাইরে রাখা যাবে না। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর দল পর্তুগালও বড়ো সাফল্য দেখানোর ক্ষমতা রাখে। আবার কখনো এমন কোনো অখ্যাত দলও অঘটন ঘটিয়ে অনেকদূর যেতে পারে।
তাই বিশ্বকাপ কার হাতে উঠবে সেটি জানতে ফাইনাল ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, আর প্রাণভরে উপভোগ করতে হবে ফুটবলের মহাযুদ্ধ।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ