আমাদের ভাষা আমাদের গর্ব । ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ

আমাদের ভাষা আমাদের গর্ব । ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ

প্রচ্ছদ রচনা ফেব্রুয়ারি ২০১৯

[caption id="attachment_12552" align="aligncenter" width="401"]শিশুরা অবুঝ। কিন্তু ওদের নিজেদেরও একটা নিজস্ব বুঝশক্তি আছে শিশুরা অবুঝ। কিন্তু ওদের নিজেদেরও একটা নিজস্ব বুঝশক্তি আছে[/caption]

ভাষা। ভাব প্রকাশের বাহন। সৃষ্টি জগতের প্রতিটি প্রাণীরই নিজস্ব ভাষা আছে। তারা তাদের পরিমণ্ডলে স্বকীয় ভাষাতেই মনের ভাব প্রকাশ করে থাকে। এ ভাষা হতে পারে মুখের কিংবা কোন অঙ্গভঙ্গির। যারা কথা বলতে পারে তাদের ভাব প্রকাশের প্রধান মাধ্যমই মুখের ভাষা। আর যারা মূক-বধির বা বাকপ্রতিবন্ধী তারা ভাব প্রকাশ করে অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে। আমরা যারা মুখে কথা বলতে সক্ষম তারা কতই না সৌভাগ্যবান। আমরা মুখেও যেমন উচ্চারণ করি তেমনি অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে তা আরো স্পষ্ট করে তুলি। মুখের কথার সাথে সাথে দৈহিক অভিব্যক্তির মাধ্যমে আমরা আমাদের সব চাওয়া-পাওয়ার প্রকাশ ঘটাই। মুখের ভাষা কিংবা মুখে উচ্চারিত অর্থবোধক শব্দকেই মূলত ভাষা বলে আখ্যা দেয়া হয়। তা হতে পারে ধ্বনিভিত্তিক কিংবা লিখিত রূপে। ভাষার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে তাই বলা হয়ে থাকে ‘ভাষা মানুষের মস্তিষ্কজাত একটি মানসিক ক্ষমতা যা বাকসঙ্কেতে রূপায়িত হয়ে একই সমাজের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনে সহায়তা করে।’ সুতরাং ভাষাই মানবিক বন্ধনের অন্যতম প্রধান বাহন।

ভাষা শেখার প্রক্রিয়া

শিশুরা অবুঝ। কিন্তু ওদের নিজেদেরও একটা নিজস্ব বুঝশক্তি আছে। তাইতো শিশুদেরকে জোর করে ভাষা শেখানো লাগে না। যেকোনো মানবভাষার উন্মুক্ত সংস্পর্শে এলেই শিশুরা দ্রুত তা শিখে ফেলতে পারে। শিশুরা কতগুলো নির্দিষ্ট ধাপে ভাষা শেখে। খুব কম বয়সেই ভাষা শেখার প্রক্রিয়াটি শুরু হয়। চার বা পাঁচ বছর বয়সের মধ্যেই শিশুরা ভাষার সম্পূর্ণ ব্যাকরণ আয়ত্ত করে ফেলে। অর্থাৎ এখানে ব্যাকরণ বলতে স্কুলপাঠ্য ব্যাকরণ বই নয়, ভাষার বাক্যগঠনের অন্তর্নিহিত মানসিক নিয়মগুলো আয়ত্ত করতে পারে। এ থেকে বোঝা যায় যে, শিশুরা ফিতরাত বা প্রকৃতিগতভাবেই ভাষা শিক্ষা ও ব্যবহারের ক্ষমতা নিয়ে জন্মায় এবং এ ক্ষমতা বিশ্বজনীন ব্যাকরণেরই অংশ। ছোট শিশুদের মধ্যে প্রবৃত্তিগতভাবেই কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে যা তাদেরকে শিশু বয়সেই মাতৃভাষা শিক্ষার উপযোগী করে তোলে। এ বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে আছে বাগনালীর গঠন, যার মাধ্যমে শিশু তার মাতৃভাষার বিভিন্ন শব্দ উৎপাদন করে। এ ছাড় শিশুদের সাধারণ বৈয়াকরণিক মূলনীতিগুলো এবং বাক্যগঠনের স্তরগুলো বোঝার ক্ষমতা থাকে। শিশুরা কোন নির্দিষ্ট ভাষা শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট হয় না। বরং যে ভাষা তাদের আশপাশে বলা হয়, তারা সে ভাষাই শিখে ফেলে, এমনকি যদি তাদের পিতা-মাতা অন্য কোনো ভাষাতে কথা বলে, তা হলেও। শিশুরা একাধিক ভাষা অর্জনে তেমন কোনো কষ্টের সম্মুখীন হয় না। কিন্তু বয়ঃসন্ধির পরে দ্বিতীয় কোনো ভাষা শিখতে মানুষকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয় এবং প্রায়ই সেই ভাষাতে সে উচ্চস্তরের দক্ষতা অর্জন করতে পারে না। মানুষ যদি দ্বিতীয় ভাষাটি সম্প্রদায়ে ও তাদের সংস্কৃতিতে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয়, তবেই সে ভাষাটি সবচেয়ে সফলভাবে আয়ত্তে আনতে পারে। এ ছাড়া যে সমস্ত সংস্কৃতিতে দ্বিতীয় ভাষা শেখার ওপর জোর দেয়া হয়, সেখানেও দ্বিতীয় ভাষা অর্জন সহজ হয়। উদাহরণস্বরূপ আফ্রিকার বহু দেশে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ফরাসি অর্জনের ঘটনাকে উল্লেখ করা যায়। মূক-বধির শিশুরা প্রতীকী ভাষা শেখার ক্ষেত্রেও অনুরূপ দক্ষতা দেখায়। অর্থাৎ ভাষা অর্জনের ক্ষেত্রে ধ্বনি শোনা বা উৎপাদন করা পূর্বশর্ত নয়। প্রতীকী ভাষাগুলো দৃষ্টি ও ইঙ্গিতভিত্তিক হলেও এগুলো কথ্য ভাষার চেয়ে কোন অংশে অনুন্ন বা গাঠনিক দিক থেকে কম জটিল নয়। ভাষা। ভাব প্রকাশের বাহন।

ভাষার মিল-অমিল

ভাষার বৈশিষ্ট্য ও বিবিধ ভিনড়বতা সত্ত্বেও সব ভাষার শব্দ ও বাক্যগঠনের সূত্রগুলো প্রায় একই ধরনের। সব ভাষাতেই বৈয়াকরণিক ক্যাটাগরি যেমন বিশেষ্য, ক্রিয়া ইত্যাদি দেখতে পাওয়া যায়। সব ভাষাতেই পুং বা স্ত্রী ইত্যাদি বিশ্বজনীন আর্থিক বৈশিষ্ট্য দেখতে পাওয়া যায়। সব ভাষাতেই না-বাচকতা, প্রশ্ন করা, আদে দেয়া, অতীত বা ভবিষ্যৎ নির্দেশ করা ইত্যাদির ব্যবস্থা আছে। মানুষের ভাষায় ভাষায় যে পার্থক্য, তার কোনো জৈবিক কারণ নেই। যেকোনো সুস্থ স্বাভাবিক মানবশিশু পৃথিবীর যেকোনো ভৌগোলিক, সামাজিক, জাতিগত বা অর্থনৈতিক পরিবেশে যেকোনো ভাষা শিখতে সক্ষম। সব ভাষাই সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়। ভাষাও মানুষের মতোই গতিময়। কখনো ব্যাপক শব্দসম্ভার নিয়ে এগিয়ে যায়। আবার কখনো হারিয়ে ফেলে তার ঐতিহ্য। এভাবে প্রতিনিয়ত ভাষা ও ভাষায় শব্দের ব্যবহার পাল্টে যাচ্ছে। অনেক ভাষা অস্তিত্ব রক্ষায় অন্যের সঙ্গে নিজেকে মিশিয়ে নিচ্ছে। যার ফলে খর্ব হচ্ছে ভাষার স্বাতন্ত্র্যিক বৈশিষ্ট্য। গবেষকদের মতে প্রতি ১৫ দিনের মধ্যে একটি করে ভাষা পৃথিবীর বুক থেকে মুছে যাচ্ছে। জন্মও নিচ্ছে অনুরূপভাবে। তবে এগুলো মৌখিক বা কথ্যভাষা। আবার অনেকগুলো ভাষা আছে যেগুলো একটি ভৌগোলিক অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষই ব্যবহার করতেন। বাস্ক, উস্কারা এ রকম অনেক ভাষাই ব্যবহারের অভাবে শেষ হয়ে গেছে। ভাষা। ভাব প্রকাশের বাহন।

বাংলাভাষার বিকাশ ও তার ব্যাপ্তি

বাংলাভাষা দক্ষিণ এশিয়ার বঙ্গ অঞ্চলের স্থানীয় ভাষা। এ অঞ্চলটিকে ঘিরেই বর্তমানে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ নামক আমাদের প্রিয় জন্মভূমিটি প্রতিষ্ঠিত। এ ছাড়াও ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গও এ অংশের স্মৃতিবহন করে। সেইসাথে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, আসাম রাজ্যের বরাক উপত্যকা এবং আন্দামান দ্বীপপুঞ্জেও বাংলা ভাষায় কথা বলা হয়। এ ভাষার লিপিরূপ বাংলালিপি। এসব অঞ্চলের প্রায় সর্বত্রই বাংলাভাষা প্রচলিত হওয়ায় এ ভাষা বিশ্বের সর্বাধিক প্রচলিত ভাষাগুলোর মধ্যে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছে। এ ভাষাভাষীর লোকসংখ্যা এখন ত্রিশ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং ভারতের জাতীয় স্তোত্র এ ভাষাতেই রচিত। বাংলাদেশের জাতীয় ভাষা ও সরকারি ভাষা বাংলা। এ ছাড়াও ভারতীয় সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত ২৩টি সরকারি ভাষার মধ্যে বাংলা অন্যতম। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং ত্রিপুরা রাজ্যের সরকারি ভাষা বাংলা। এ ছাড়াও ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের অন্যতম প্রধান ভাষা বাংলা। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে বাংলা ভাষা ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের দ্বিতীয় সরকারি ভাষারূপে স্বীকৃত। পাকিস্তানের করাচি শহরে দ্বিতীয় সরকারি ভাষারূপে বাংলাকে গ্রহণ করা হয়েছে। ২০০২ সালের ডিসেম্বর মাসে সিয়েরা লিওনের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আহমাদ তেজন কাব্বাহ ওই রাষ্ট্রে উপস্থিত জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর ৫,৩০০ বাংলাদেশী সৈনিকের সেবার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষার মর্যাদা প্রদান করেছেন। বাংলা একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বিকাশমান ভাষা হলেও অষ্টাদশ শতাব্দীর পূর্বে বাংলা ব্যাকরণ রচনার কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ১৭৩৪ থেকে ১৭৪২ সালের মধ্যে ভাওয়াল জমিদারিতে কর্মরত অবস্থায় পর্তুগিজ মিশনারি পাদরি ম্যানুয়েল দ্য আসুম্পসাও সর্বপ্রথম ‘ভোকাবোলারিও এম ইডিওমা বেঙ্গালা, এ পোর্তুগুয়েজ ডিভিডিডো এম দুয়াস পার্তেস’ নামক বাংলা ভাষার অভিধান ও ব্যাকরণ রচনা করেন। ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেড নামক এক ইংরেজ ব্যাকরণবিদবিদ ‘অ্যা গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ’ নামক গ্রন্থে একটি আধুনিক বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেন, যেখানে ছাপাখানার বাংলা হরফ প্রথম ব্যবহৃত হয়। বাঙালি সমাজসংস্কারক রাজা রামমোহন রায় ১৮৩২ সালে ‘গ্রামার অব্ দ্য বেঙ্গলি ল্যাঙ্গুয়েজ্’ নামক একটি ব্যাকরণ গ্রন্থ রচনা করেন। তারপর থেকে আর থেমে এ নেই এ পথ চলার। আজ হাজারও ব্যাকরণের ভাষা আমাদের বাংলাভাষা। গানের ভাষাত আমাদের প্রাণের ভাষা বাংলাভাষা। ভাষা। ভাব প্রকাশের বাহন।

ভাষার গৌরব গৌরবের ভাষা

বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে প্রচলিত বাংলা ভাষার মধ্যে ব্যবহার, উচ্চারণ ও ধ্বনিতত্ত্বের সামান্য পার্থক্য রয়েছে বর্তমানে বাংলা ও তার বিভিন্ন উপভাষা বাংলাদেশের প্রধান ভাষা এবং ভারতে দ্বিতীয় সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা। বাংলা ভাষা আন্দোলনের কারণে বাংলাদেশে এ ভাষার সমৃদ্ধি অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৫১-৫২ সালে পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত বাংলা ভাষা আন্দোলন এই ভাষার সাথে বাঙালি অস্তিত্বের যোগসূত্র স্থাপন করেছিল। ‘পলাশ ফুলে শিমুল ফুলে স্বপ্নফুলে আগুন/ ভাষার মিছিল/ আশার মিছিল/ দেয় জাগিয়ে রক্তঝরা টগবগে লাল ফাগুন।’ ফাগুনের এ মিষ্টি রোদেই ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে শাণিত হয়েছিল অধিকার আদায়ের সংঘবদ্ধ শ্লোগান। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর একগুঁয়েমি আচরণের সমুচিত জবাব দিতেই রাজপথ শিমুলপলাে শর রঙে রঞ্জিত করেছে, ঢেলে দিয়েছে বুকের তাজা খুন। শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ অসংখ্য জীবন্তশহীদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আমাদের স্বকীয়তা ফিরে পেতে সক্ষম হয়েছিলাম। এ ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের বিজয়, আমাদের প্রিয় স্বাধীন বাংলাদেশ। এ কথাও উল্লেখযোগ্য যে, বাংলাদেশ ছাড়াও ১৯৫০-এর দশকে ভারতের বিহার রাজ্যের মানভূম জেলায় বাংলা ভাষা আন্দোলন ঘটে। ১৯৬১ সালে ভারতের আসাম রাজ্যের বরাক উপত্যকায় একই রকমভাবে বাংলা ভাষা আন্দোলন সংঘটিত হয়। তবে ভাষার জন্য প্রাণ দেয়ার নজির বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোন অঞ্চলের মানুষের নেই। মাতৃভাষার জন্য তাদের জীবনদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারির এ দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। জন্মগতভাবে মায়ের কোল থেকে যে ভাষা শেখা হয় তার মায়াই আলাদা। একান্ত আপনজনকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করার সুযোগ এ ভাষা থেকেই পেয়েছি। এ ভাষার লালনে সুলতানি ও মোগল আমলের মুসলিম শাসকদেরও রয়েছে অনন্য পৃষ্ঠপোষকতার গৌরব। কোন দুষ্টুচক্রের কথায় আমরা আমাদের এ ঐতিহ্যকে হারাতে দিতে পারি না। তাইতো আমাদের ফুঁসে ওঠা, আমাদের আন্দোলন, আমাদের রক্তঢালার প্রতিযোগিতা। উনিশ শ’ বায়ান্ন সালে ভাষার অধিকার আদায়ে আমরা বিজয়ী হয়েছি। তখনও প্রমাণিত হয়েছে, জোর করে কোন মতকে আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া যায় না। বাংলাদেশের স্বাধীনচেতা মানুষ স্বকীয় আদর্শ নিয়েই বেঁচে থাকতে পছন্দ করে এবং তা করে ছাড়ে। বায়ান্ন থেকে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের যে অধিকার আমরা আদায় করেছি, নিজের ভাষাচর্চার যে স্বাধীনতা পেয়েছি সে পথ ধরেই এগিয়ে যেতে চাই আজীবন। ধাপে ধাপে সমৃদ্ধ করতে চাই আমাদের প্রিয় বাংলাভাষাকে।

শেষকথা

এতো অর্জনের মাঝেও নিরাশার কালো মেঘ মাঝে মধ্যেই দানা বাঁধে মনের আকাশে। সাংস্কৃতিক বিনিময়ের নামে হিন্দি ভাষা ও সংস্কৃতির মাধ্যমে যে ভাষাগত-সাংস্কৃতিক কালোথাবা আমাদের ওপর পড়েছে তা উদ্ধারের কোন বিকল্প নেই। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এ থাবায় অনেকাংশেই পঙ্গু হয়ে গেছে। সেখানকার শিশুরা এখন আর বাংলাভাষা বলতেই পারে না বলা চলে। অফিসার থেকে শুরু করে মুদি দোকানদাররা পর্যন্ত সে জালেই বন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের মুখে হয়তো হিন্দি নতুবা ইংরেজি। বাংলাভাষার জন্য এখন সম্ভাবনার পথ উন্মুক্ত করতে পারে একমাত্র বাংলাদেশই। সে বাংলাদেশে যেভাবে ডোরেমন, মটু-পাতলুর আগ্রাসন চলছে তাতে শিশুরা যেমন বাংলার চেয়ে হিন্দিতেই বেশি পারদর্শী হয়ে পড়েছে তেমনি হিন্দি গান ও সিনেমার কবলে বাংলাদেশের যুবসমাজও আটকে গেছে বলা চলে। হিন্দি ও পশ্চিম বাংলার সিরিয়ালে নারীদের মনমস্তিষ্ক আটকে যাবার কারণে পরবর্তী প্রজন্ম তাদের কাছে ঐতিহ্যের কোনো শিক্ষা পাচ্ছে না। এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক এবং নিরাশার কালো অধ্যায়। সেই সাথে বাংলাদেশে অভিজাত পল্লীতে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর দৌরাত্ম্যে বাংলা ভাষা এখন কোণঠাসা হতে শুরু করেছে। তাই আগামীতে বাংলাভাষার সমৃদ্ধি ও সম্প্রসারণে শুধু নয় বাংলাভাষা রক্ষার জন্যও যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। এ জন্য চাই মনস্তাত্ত্বিক স্বাধীনতা; নিজেদের স্বকীয়তা এবং প্রকৃতভাবে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আর নতুন প্রজন্মকে হতে হবে ভাষা রক্ষার সংগ্রামে দায়িত্ববান সিপাহসালার।
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ