আমাদের মল্লিক ভাই

আমাদের মল্লিক ভাই

বিশেষ রচনা আগস্ট ২০১১

আ. জ. ম. ওবায়েদুল্লাহ.....

তিনি ...
মল্লিক ভাই।
একটি নাম। একটি ইতিহাস। একটি প্রেরণা। একটি চেতনা। কিশোরকণ্ঠের জন্ম থেকে মল্লিক ভাই ছিলেন আমাদের সঙ্গী। আজ তিনি আর সঙ্গে নেই। তিনি চলে গেছেন সব ধরাছোঁয়ার বাইরে। অন্য জগতে। অন্য অন্বেষায়। আর কখনো আমরা তাঁর দরাজ দিলের ডাক শুনতে পাবো না। শুনতে পাবো না সুরে ও বাণীতে সমৃদ্ধ তাঁর কণ্ঠের গান।
জন্ম
খানজাহান আলীর পুণ্যস্মৃতিধন্য বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট ইউনিয়নের বারুইপাড়া গ্রামে ১৯৫৬ সালের ১লা মার্চ জন্ম হয় মতিউর রহমান মল্লিকের। বাবা মুন্সী কায়েম উদ্দিন মল্লিক ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় মানুষ। মা আছিয়া খাতুন একজন অসামান্য গুণবতী নারী। মল্লিক ভাইয়ের শৈশব কেটেছে গ্রামের সরল-সহজ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে।

পড়ালেখা
পড়ালেখার হাতে খড়ি মা-বাবার কাছে। অত্যন্ত মেধাবী বিধায় তিনি স্কুলে যাওয়ার আগেই প্রচুর ছড়া-কবিতা-গান মুখস্থ করে নেন। সুরেলা কণ্ঠের জন্য সবাই তার আবৃত্তি ও গান শুনতে পছন্দ করতেন। একটু বড় হয়ে বারুইপাড়া সিদ্দিকিয়া মাদরাসায় তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা শুরু হয়। এখান থেকে চলে যান পার্শ্ববর্তী যশোর জেলার লাউড়ি মাদরাসায়, খুলনা আলিয়া মাদরাসা, বাগেরহাট প্রফুল্লচন্দ্র কলেজ (পিসি কলেজ) তাঁর অন্যতম শিক্ষাকেন্দ্র। ১৯৭৮ সালে তিনি তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ছাত্র হন।
জগন্নাথ কলেজের ছাত্র থাকাকালীন তিনি কয়েকজন মেধাবী ও দেশবরেণ্য শিক্ষকের সংস্পর্শে আসেন যারা তাঁকে একজন ছাত্র হিসেবে নয় বরং অসাধারণ সংগঠক হিসেবে স্নেহ ও দোয়া করতেন। সব্যসাচী লেখক কবি আব্দুল মান্নান সৈয়দ, ঔপন্যাসিক শওকত আলী, নাট্যকার ও অভিনেতা অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমদ ছিলেন তাঁর সরাসরি শিক্ষক। আব্দুল মান্নান সৈয়দ মল্লিক ভাইয়ের ভর্তিপরীক্ষা নিয়েছিলেন। তিনি প্রায়ই বলতেন, ‘‘ওর গভীরতা দেখে আমি ভাবতেই পারিনি ও জগন্নাথে পড়তে এসেছে।” জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাবসিডিয়ারি পাস করলেও অনার্স ডিগ্রি আর শেষ করেননি মল্লিক ভাই। মাদরাসা থেকে ফাজিল পাস করেছিলেন আগেই।

জ্ঞানের দ্যুতি
কিন্তু অসাধারণ পড়ুয়া, স্মৃতি ও শ্রুতিধর মানুষ মল্লিক ভাই ছিলেন আপাদমস্তক পরিশীলিত শিক্ষিত মানুষ। যেমন কুরআন-হাদিসের জ্ঞানের গভীরতা, তেমনি সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার বিষয়ভিত্তিক পাণ্ডিত্য ছিল তার। তাঁর কাছ থেকে যারা দারসুল কুরআন বা দারসুল হাদিস কিংবা বিষয়ভিত্তিক আলোচনা শুনেছেন তাঁরা কখনো তাঁকে ভুলবেন না। সুললিত কণ্ঠের তিলাওয়াত, বিশুদ্ধ উচ্চারণ আর দর্শক মাতানো উপস্থাপনার সাথে থাকতো আবেগ ও অনুভূতির প্রাণপ্রাচুর্য।

চলে এলেন ঢাকায় : গড়লেন সাইমুম
১৯৭৭ সালে নেতার নির্দেশে স্বজনদের ছেড়ে, মায়ের টান পেছনে ফেলে ঢাকার আলুবাজারে একটা ম্যাসে উঠলেন মল্লিক ভাই। জগন্নাথ থেকে পায়ে হেঁটে পথের দূরত্ব। সুতরাং কলেজ, সংগঠন, লেখালেখি এসবে মেতে উঠলেন তিনি। ঢাকায় এসেই গড়ে তুললেন সংস্কৃতি সেবার অন্যতম সংগঠন সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী। আর সাইমুমের জন্য লিখলেন সঙ্গীত- ‘‘সাইমুমের অরুণ-তরুণ শিল্পী সেনা ভাই, পণ করেছি সত্য ন্যায়ের গান যে গাবো ভাই। ... শিল্পী গায়ক নয়কো মোদের আসল পরিচয়, আল-কুরআনের কর্মী মোরা বিপ্লবী নির্ভয়।”
সাইমুমের প্রতিষ্ঠাতা মল্লিক ভাই শুরু করলেন ঢাকায় নতুন নতুন শিল্পী তৈরি করার কাজ, তাদের জন্য প্রশিক্ষণ। আস্তে আস্তে তাঁর সুযোগ্য পরিচালনায় ঢাকায় সাইমুম এগিয়ে যেতে লাগলো।
এবারে শুরু করলেন বাইরের অভিযান।
ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামে জন্ম নিলো পাঞ্জেরী শিল্পীগোষ্ঠী, খুলনায় টাইফুন শিল্পীগোষ্ঠী, রাজশাহীতে বিকল্প শিল্পীগোষ্ঠী, বরিশালে হেরার রশ্মি শিল্পীগোষ্ঠী, যশোরে তরঙ্গ শিল্পীগোষ্ঠী। এভাবে দেশের সব ক’টি প্রধান প্রধান শহরে একটি করে শিল্পীগোষ্ঠীর জন্ম হলো। মল্লিক ভাই নিজে ঐসব শহরে সফর করে শিল্পীদের প্রাথমিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। তাঁর অসম্ভব রকম হৃদয়স্পর্শী সাহচর্য যারা পেয়েছেন তারা ধন্য হয়েছেন। সবার মাঝে একটি ব্যতিক্রমী চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়েছেন মল্লিক ভাই- ‘‘আমার গানের ভাষা জীবনের সাথে যেনো মিলে মিশে হয় একাকার... নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছি বলতে না পারে কেউ দুঃখভরা কথাগুলো তার...।
প্রতিটি শিল্পী ও কর্মীর মাঝে এ চমৎকার কথাটি গেঁথে দিয়েছেন তিনি।

সংগঠন ছিলো তার নেশা
অনেকগুলো সংগঠনের সাথে নানা মাত্রিকতায় যুক্ত ছিলেন তিনি।
কৈশোরে ছিলেন (১) বাগেরহাটের বারুইপাড়ায় ‘সবুজ মিতালী সংঘের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক (২) প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক : সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী (৩) প্রতিষ্ঠাতা সদস্য : কবিতা বাংলাদেশ (৪) পরিচালক : বিপরীত উচ্চারণ সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ (৫) নির্বাহী সদস্য : বাংলা সাহিত্য পরিষদ (৬) সভাপতি : বাগেরহাট ফোরাম (৭) সদস্য : বাংলাদেশ মসজিদ মিশন (৮) প্রতিষ্ঠাতা তত্ত্বাবধায়ক : ঐতিহ্য সংসদ (৯) প্রতিষ্ঠাতা তত্ত্বাবধায়ক : ঢাকা সাহিত্য সমাজ (১০) সহ-সভাপতি : আল আমিন ফাউন্ডেশন (১১) উপদেষ্টা সম্পাদক : নতুন কলম সাহিত্য পত্রিকা (১২) উপদেষ্টা : কারেন্ট নিউজ, ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা প্রেষণ, আত তাহযীব ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট মাদরাসা, ঢাকা (১৩) প্রতিষ্ঠাতা সদস্যসচিব : বাংলাদেশ সংস্কৃতি কেন্দ্র (১৪) আজীবন সদস্য : কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ, সিলেট।
আনন্দের বিষয় এই প্রতিটি সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত থেকে মল্লিক ভাই সাহিত্য সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যে অবদান রেখেছেন তা চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
শুদ্ধ কবি : গহীনের গীতিকার
মতিউর রহমান মল্লিক বা আমাদের মল্লিক ভাই ছিলেন মূলত একজন শুদ্ধ কবি, অসাধারণ গীতিকার, চমৎকার একজন সুরকার, সমৃদ্ধ প্রবন্ধকার, প্রভাব বিস্তারকারী বাগ্মী, সাবলীল অনুবাদক এবং সার্থক সংগঠক।
দুই হাজারের ওপর গান রচনা করেছেন তিনি। তাঁর গান কতভাবে কতজনকে প্রাণিত করেছে তা লিখে বোঝানো যাবে না। কাজী নজরুল ইসলামের পর বাংলা ভাষায় ইসলামী গানের এত বড় গীতিকার আর কেউ আসেননি। তাঁর গান মানেই- সুরে সুরে যেনো একটি প্রবন্ধ। এ নিয়ে আলাদা একটা বই হতে পারে। তাঁর গানগুলোর রয়েছে চমৎকার সব পটভূমি। আমার ইচ্ছে আছে এ নিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখার।
কোনো তথাকথিত ‘গানের জন্য গান’ মল্লিক ভাই লিখেননি। যা লিখেছেন তার প্রতিটি গানই যেনো এক একটি সদকায়ে জারিয়া। তাঁর গানের একক ক্যাসেট রয়েছে- প্রতীতি ১ ও প্রতীতি ২ নামে। এ ছাড়া রয়েছে গানের বই : ১. ঝংকার ২. সুর-শিহরণ ৩. যত গান গেয়েছি।
মল্লিক ভাইয়ের বেশ ক’টি কবিতার বই বেরিয়েছে। সেখানে আমরা খুঁজে পাই আমাদের সময়কালের এক সাধক কবিকে। ফররুখ আহমদের ভাব ও কল্পনার প্রভাব তাঁর কাব্যকে করেছে সুষমামণ্ডিত। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : ১. আবর্তিত তৃণলতা ২. তোমার ভাষার তীব্র ছোঁয়া ৩. চিত্রল প্রজাপতি ৪. অনবরত বৃক্ষের গান ৫. নীষন্ন পাখির নীড়ে।
এ ছাড়াও তিনি ছোটদের জন্য লিখেছেন রঙিন মেঘের পালকি।

কিশোরকণ্ঠ ও মল্লিক ভাই
কিশোরকণ্ঠের পাঠকদের জন্য রয়েছে একটি মজার খবর। আজ আমরা বাংলা ভাষায় সর্বাধিক প্রচারিত যে কিশোরকণ্ঠ মাসিকটি দেখতে পাচ্ছি ‘নতুন কিশোরকণ্ঠ’ নামেÑ তার জন্মের সাথে ছিলো মল্লিক ভাইয়ের সম্পর্ক। ১৯৮৪ সালে বর্তমান লেখক যখন এ রকম একটি পত্রিকা প্রকাশের বিষয়ে মল্লিক ভাইয়ের অন্যতম কর্মক্ষেত্র বিআইসি-তে ‘কলম’ পত্রিকা অফিসে যান এবং মল্লিক ভাইয়ের কাছে একটি যুৎসই নাম চান, তেমন কোনো ভাবনা-চিন্তা ছাড়াই মল্লিক ভাই বলে উঠলেন- ‘কিশোরকণ্ঠ’ নামটি কেমন হয়? এই নামটি প্রস্তাব আকারে দিলে সবাই একবাক্যে তাতে সমর্থন দেন এবং এভাবেই মল্লিক ভাই হয়ে যান ‘কিশোরকণ্ঠ’ পত্রিকার ইতিহাসের অংশ, নামের প্রস্তাবক। কিশোরকণ্ঠের প্রথম সংখ্যায় কবি আল মাহমুদের পাশাপাশি মল্লিক ভাইয়ের একটি কবিতা ছাপা হয়। মজার বিষয় হলো মল্লিক ভাইয়ের কাছে তখন পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত উদর্ডাইজেস্টসহ কয়েকটি ভাল পত্রিকা আসতো। একটি কিশোর ম্যাগাজিন থেকে মল্লিক ভাই অনুবাদ শুরু করলেন আফগানিস্তানের এক খুদে বালকের জীবনাশ্রয়ী উপন্যাস ‘পাহাড়ী এক লড়াকু’। এটি ছাপা হতে থাকলো কিশোরকণ্ঠে। তিনি অনুরূপ আরেকটি উপন্যাস অনুবাদ করেন যার নাম ‘মহা নায়ক’।
‘কিশোরকণ্ঠ’ পরিবার ইচ্ছে করলে মল্লিক ভাইয়ের একটি কিশোর সমগ্র প্রকাশ করতে পারে, যেখানে এ দুটো উপন্যাস, তাঁর কিশোর কবিতাসমূহ এবং ছোটদের জন্য লেখা অসাধারণ গান ও ছড়াগুলো স্থান পেতে পারে।
মল্লিক ভাই অনেক বড় একজন কবি, গীতিকার ও সুরকার ছিলেন এ কথা ঠিক। কিন্তু আমার কেন যেনো মনে হতো মল্লিক ভাই মরহুম আছিয়া খাতুনের কনিষ্ঠ সন্তান ‘মতি’ সবসময়ই ছিলেন একজন অভিমানী, বড় শিশু। ছোটবেলায় যেমন ঘুরে ঘুরে বেড়িয়ে ঘরে আসতেন চুপিসারে, এক পাশে শুয়ে থাকতেন আর মা বলতেন, ‘মতি আইছিত? কোহানে ছিলিরে বাপ?’ এই স্মৃতি নিয়েই হয়তো তিনি লিখেছেন- ‘আম্মা বলেন ঘর ছেড়ে তুই যাসনে ছেলে আর/ আমি বলি খোদার পথে হোক এ জীবন পার/ কোথায় থাকিস কি যে করিস বুঝিনি কারবার/ নিজের জন্য করলি নাতো কিছু। আল্লাহ জানেন ঘুরিস কাদের পিছু।’

পুরস্কার
মল্লিক ভাই ছিলেন প্রচারবিমুখ, সৃজনশীল মানুষ। প্রচার না চাইলেও সৃজনশীল গরম কবিতা কিছু প্রচার বয়ে আনবেই। যে কারণে তিনি না চাইলেও জীবনে অনেক পুরস্কার ও স্বীকৃতি এসেছিলো তাঁর জীবনে। এর মধ্যে কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলো : ১. সাহিত্য পুরস্কার : সবুজ-মিতলী সংঘ, বারুইপাড়া, বাগেরহাট ২. স্বর্ণপদক : জাতীয় সাহিত্য পরিষদ, ঢাকা ৩. সাহিত্য পদক : কলমসেনা সাহিত্য পুরস্কার, ঢাকা ৪. সাহিত্য পদক : লক্ষ্মীপুর সাহিত্য সংসদ ৫. সাহিত্য পদক : রাঙামাটি সাহিত্য পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম ৬. সাহিত্য পদক : খানজাহান আলী শিল্পীগোষ্ঠী, বারুইপাড়া, বাগেরহাট ৭. সাহিত্য পদক : সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদ ৮. সাহিত্য পুরস্কার : সমন্বিত সাংস্কৃতিক সংসদ, বাগেরহাট ৯. প্যারিস সাহিত্য পুরস্কার : বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ, ফ্রান্স ১০. বায়তুশ শরফ সাহিত্য পুরস্কার : বায়তুশ শরফ আঞ্জুমানে ইত্তেহাদ বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম ১১. ইসলামী সংস্কৃতি পুরস্কার : ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদ, চট্টগ্রাম ১২. সাহিত্য পুরস্কার : বাংলা সাহিত্য পরিষদ, ফ্রান্স।
কিশোরকণ্ঠের জন্য আজ বড় আনন্দের বিষয় মতিউর রহমান মল্লিক ভাই ২০০৩ সালে কিশোরকণ্ঠ সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হন।

কর্মজীবন
ছাত্রজীবন শেষে কর্মজীবনের শুরু হয় সাপ্তাহিক সোনার বাংলার সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে। এ সময়ে পাশাপাশি কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ইসলামী গানের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ এক যুগ তিনি বাংলাদেশের অন্যতম সাহিত্য পত্রিকা কলম-এর সম্পাদক ছিলেন। এরপর ইবনে সীনা ট্রাস্টের সাংস্কৃতিক সমন্বয় কর্মকর্তা ছিলেন কিছুদিন। সর্বশেষ কর্মক্ষেত্র ছিল বাংলাদেশ সংস্কৃতি কেন্দ্র। কেন্দ্রের সদস্যসচিব হিসেবে নির্বাহী দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ‘প্রত্যাশা প্রাঙ্গণ’ ছিলো তার স্বপ্নের অঙ্গন।

বিদেশ ভ্রমণ
মল্লিক ভাই খুব ভ্রমণ-পিয়াসী মানুষ ছিলেন। বাংলাদেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত, সুন্দরবনের গহিন অরণ্য থেকে পাহাড়ের খাড়া ঢালু পথ কোনটাই বাদ রাখেননি তিনি। সেখানেই গেছেন- মাটি, মানুষ, প্রকৃতি নিয়ে গান কবিতা লিখেছেন। দেশের বাইরে গেছেন বেশ কয়টি দেশে। ১৯৮৫ তে যান ণগঙ-র আহ্বানে ব্রিটেনে, ভারতে যান ১৯৯২ সালে স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অব ইন্ডিয়ার বার্ষিক সম্মেলনে, ২০০০ ও ২০০১-এ ইকবাল পরিষদ আয়োজিত সেমিনারে, ২০০২-এ ফ্রান্সে গেছেন বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদের আহ্বানে, ২০০২-এ সিঙ্গাপুর যান ঘুরতে, হজ করতে সৌদি আরব যান ২০০৩ সালে আর ২০১০-এ যান থাইল্যান্ডে চিকিৎসার নিমিত্তে।

চলে গেলেন তিনি
কিন্তু আমাদের কোনো চেষ্টাই আর তাঁকে ফিরিয়ে রাখতে পারেনি। পরিবার- যে পরিবারটি ছিলো তার এক স্বপ্নের ঠিকানা। স্ত্রী ব্যাংকার ও লেখিকা সাবিনা মল্লিক, দুই কন্যা, জুম্মি নাহদীয়া ও নাজমা নাতিয়া আর একমাত্র ছেলে হাসসান মুন হামান্নাকে নিয়ে ছিলো তার সুখের নীড়। সারাদিনের কান্তি শেষে পাখি যেমন নীড়ে ফিরে, জীবনের সব কর্ম শেষ করে, দুনিয়ার এই অস্থায়ী সুখের ঠিকানা ঘরবাড়ি ছেড়ে মল্লিক ভাই চলে গেলেন- ওপারের স্থায়ী নীড়ে। ১২ আগস্ট ২০১০, স্কয়ার হাসপাতালে সিসিইউর কাচঘেরা ঘরটিতে নিথর নীরব মল্লিক ভাই চলে গেলেন সমস্ত কোলাহল ছাড়িয়া। সমগ্র বাংলাদেশে মল্লিকের গানের কলি ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হতে থাকলো- ‘পৃথিবী আমার আসল ঠিকানা নয়, মরণ একদিন মুছে দেবে সকল রঙিন পরিচয়।’
আমাদের মল্লিক ভাই হয়তো আর কখনো আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন না। কিন্তু যতদিন ‘টিক টিক টিক যেই ঘড়িটা ঠিক ঠিক ঠিক বাজে... গানটি ইথারে বাজতে থাকবে ততদিন মল্লিক ভাইকে আমরা কেউ ভুলবো না।
তাঁর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে কিশোরকণ্ঠ পরিবারসহ সবাইকে নিয়ে দোয়া করি-
‘দাও খোদা দাও হেথায় আবার ওমর দরাজ দিল...
আবার একজন মল্লিক দাও জাগাতে নিখিল....॥
মিরপুরের ঘন কোলাহলময় কলোনি কবরস্থানে একাকী শুয়ে আছেন তিনি। সেখানে আর কেউ গিয়ে বলবে না- মল্লিক ভাই, একটা গান, একটা কবিতা দিন না আমাদের!
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ