আমাদের স্বাধীনতা     -ড. এম এ সবুর

আমাদের স্বাধীনতা -ড. এম এ সবুর

প্রচ্ছদ রচনা মার্চ ২০১৭

সুপ্রিয় বন্ধুরা! নিশ্চয়ই তোমরা চিড়িয়াখানায় বাঘ-সিংহ দেখেছ। ওদের কি তোমরা ভয় পেয়েছ? নিশ্চয়ই না! কারণ, ওরা কিছুই করতে পারে না। চিড়িয়াখানায় বাঘ-সিংহকে লোহার খাঁচায় বন্দি করে রাখা হয়। ওদের কোন স্বাধীনতা নেই, ওরা পরাধীন। ওদেরকে ভয় পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তাই না? বরং কেউ কেউ ওদের দিকে ভেঙচি কাটে! কেউ বা ঢিল ছুঁড়ে মারে! আসলে পরাধীন শক্তিশালী হলেও সবাই তাকে অবজ্ঞা-অবহেলা করে। সুযোগ পেলে আঘাতও করে। কারণ, পরাধীনের কোন শক্তি থাকে না। পরাধীনকে কেউ সম্মান করে না, ভয়ও পায় না। তাই পরাধীনের মনে কোন সুখ থাকে না। কেউ পরাধীনভাবে বাঁচতেও চায় না। সবাই মুক্ত থাকতে চায়। স্বাধীনভাবে বাঁচতে চায়। কবির ভাষায়,
স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায়
হে কে বাঁচিতে চায়?
দাসত্ব-শৃঙ্খল বলো কে পরিবে পায়
হে কে পরিবে পায়?
অর্থাৎ সবাই স্বাধীন-মুক্তভাবে বাঁচতে চায়। আর আমাদের দেশের মানুষ সব সময়ই স্বাধীনচেতা। তারা কখনোই পরাধীনতাকে পছন্দ করেন না। এ দেশের জনগণ সবসময় স্বাধীনতার পথ খুঁজেছেন। তারা বার বার পরাধীনতার শিকল থেকে মুক্ত হতে চেয়েছেন। এজন্য তারা অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। যার ফলে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। আর এ দেশের মানুষ মুক্তি পেয়েছে।
বন্ধুরা! জানো, কোন মাস অগ্নিঝরা? নিশ্চয়ই মার্চের নাম বলবে তোমরা! তাই না? হ্যাঁ, মার্চ মাসই অগ্নিঝরা! কারণ এ মাসেই বাংলাদেশীদের প্রাণে চরম ক্ষোভের আগুন জ্বলেছিল। এ মাসেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার চূড়ান্ত ডাক এসেছিল। এ মাসেই আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল। তাই মার্চ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য মাস। মার্চ আমাদের স্বাধীনতার মাস। তবে ১৯৭১ সালের মার্চে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হলেও এর প্রেক্ষাপট দীর্ঘ সময়ের। এ দেশের মানুষের স্বাধীনতার সংগ্রাম দীর্ঘদিনের। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা হারিয়ে যায়। এ যুদ্ধে ব্রিটিশ বণিকনেতা লর্ড ক্লাইভ, মীরজাফর, রায়দুর্লভ, ঘসেটি বেগম প্রমুখ গোপনে আঁতাত করে বাংলার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে হারিয়ে দেয়। আর ব্রিটিশরা এ দেশের শাসনক্ষমতা দখলে নেয়। এতে বাংলাদেশ স্বাধীনতা হারিয়ে ব্রিটিশের কাছে পরাধীন হয়। ব্রিটিশ লোকজন শাসন ক্ষমতা পেয়ে আমাদের দেশের সম্পদ-অর্থ লুটে নেয়ার সুযোগ পায়। তারা আমাদের দেশের বিশ্ববিখ্যাত মসলিন কাপড় উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। এ দেশের কৃষকদের ধান-পাট চাষাবাদ বন্ধ করে নীল চাষে বাধ্য করা হয়। এ দেশের প্রচলিত অফিস-আদালতের ভাষা বাতিল করে ইংরেজি ভাষাকে চাপিয়ে দেয়। তারা আমাদের দেশীয় শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তে তাদের গোলামি করার শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন ঘটায়। এ দেশের মানুষের ওপর অনেক অত্যাচার-নির্যাতন চালায়। এ কারণে এ দেশের লোকজন তাদের ওপর ক্ষেপে যায়। তারা ব্রিটিশদের অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় এবং এ দেশের স্বাধীনতা ফিরে পেতে চায়। এতে ব্রিটিশরা এ দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। তবু এ দেশের মানুষ হারানো স্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালায়। ব্রিটিশ শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে শহীদ তিতুমীর, হাজী শরীয়তুল্লাহসহ এ দেশের অনেকেই সংগ্রাম-আত্মত্যাগ করেছেন।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শোষণের নাগপাশ থেকে স্বাধীন হয়ে আমাদের দেশ পূর্বপাকিস্তান নাম ধারণ করে। স্বাধীন দেশ পেয়ে এ দেশের লোকজন খুব খুশি হয়েছিলেন। তারা মুক্তির আশায় বুক বেঁধেছিলেন। স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে তারা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জাতির সেই আশা ও স্বপ্ন পূরণ হয়নি। ফলে ১৯৭১ সালে আবারও স্বাধীনতার দাবিতে এদেশের মানুষ যুদ্ধ ও সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সবশেষে তারা দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে। যার ফলে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। এতে বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থান হয়েছে। আর সারা বিশ্বেই স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা গৌরবের সাথে উড়ছে!
অনেক সংগ্রাম-সাধনার মাধ্যমে অর্জিত এ স্বাধীনতাকে আমাদের সম্মান করতে হবে। অনেক কষ্ট-ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের লাল-সবুজের পতাকাকে সমুন্নত রাখতে হবে। কোনভাবেই যেন আমাদের দেশের স্বাধীনতা হারিয়ে না যায় সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। এজন্য সবাইকে ভালোভাবে পড়ালেখা করতে হবে। ভালো মানুষ হতে হবে। খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে। অন্যায় কাজের বাধা দিতে হবে। হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে সবাই মিলে একসাথে থাকতে হবে। মারামারি-বিবাদ-বিশৃঙ্খলা পরিহার করতে হবে। গরিব-দুঃখীদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। আমাদের দেশীয় ভাষা-সংস্কৃতি চর্চা করতে হবে। বিদেশী-বিজাতি সংস্কৃতি পরিহার করতে হবে। আমাদের সামাজিক নিয়মনীতিকে শ্রদ্ধা করতে হবে। বড়দের সম্মান আর ছোটদের ¯েœহ করতে হবে। আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস, এ দেশের মানুষের ইতিহাস পড়তে হবে। দেশের সকল মানুষের অধিকার আদায় করতে হবে। মানুষে মানুষে বৈষম্য দূর করতে হবে। দেশকে ভালোবাসতে হবে, দেশের মানুুুুষদের ভালোবাসতে হবে। দেশের জন্য, দশের জন্য কাজ করতে হবে। এতে আমাদের দেশ উন্নত হবে। বিশ্বের বুকে আমাদের দেশের সম্মান আরও বাড়বে। আমাদের স্বাধীনতা সুসংহত হবে। আর স্বাধীনতার মাসে এ প্রত্যাশা সবার কাছে।
পরিশেষে একজন প্রখ্যাত কবির ‘বিজয়ের পতাকা’ নামক একটি চমৎকার কবিতার মধ্য দিয়ে আজকের লেখার পরিসমাপ্তি টানছি। কবিতাটি এরকমÑ

“বিজয়ের পতাকা উড়ছে বাতাসে
পত্ পত্ করে
আমার পতাকা উড্ডীন থাকুক
লক্ষ বছর ধরে॥
আমার পতাকা ঊর্ধ্বে রেখেছে
উঁচু করে শির
লাল-সবুজে জানান দিয়ে দেয়
আমরা কত বড় বীর,
আমার পতাকা এদেশের কেবল,
মাথা নোয়ানোর নয়-
লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া
তরতাজা রক্তের জয়!
এই পতাকার গৌরব অনেক
অনেক বেশি দামি
বহু ত্যাগের বিনিময়ে পেয়েছি
বিজয়ের পতাকা আমি।” হ
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ