আমার দাদী

আমার দাদী

তোমাদের গল্প জুলাই ২০১৫

নাহিদ জিবরান#

কী আর লিখবো!
কিছুই লেখার আর বাকি নেই।
তবুও লিখতে হচ্ছে জীবনের বয়ে যাওয়া কিছু স্মৃতি নিয়ে। আবার বলা যায় জীবনকে উৎসর্গ বা ভেতরের কথাগুলো বাইরে বের করে আনা। আরও কত কি!
আমার মনে যা যা ঘটে তাই আমি লিখতে চেষ্টা করি। বলা যায় লেখার মাধ্যমে সবাইকে জানান দেই।
আমি নিজেও বুঝি না আমার এখন কি করা দরকার। আমার একটা সমস্যা হলো আমি যখন যেটা ভাববো ঠিক সেই কাজটি আমি করে ফেলি। আব্বাজান আবার এগুলো পছন্দ করেন না। কারণ হঠাৎ করে কিছু করে ফেললে যে কেউই অসন্তষ প্রকাশ করবে। আমি নিজেও এটাকে উপলব্ধি করি। কিন্তু কিছুতেই কিছু করতে পারি না। কী বা করতে পারি। হ্যাঁ পারি! সব সময়ের জন্য নয়। এর জন্য কি আমি কম বকুনি খেয়েছি। কিছুই করার নেই আমার।
আমি এমন এক মানুষ যে, কোনো কিছুর জন্য প্রস্তুত থাকি না। যা হয় হঠাৎ করেই হয়। মাঝে মধ্যে নিজেকে প্রশ্ন করি এ আমি কি করছি। অবশ্য এরকম বুঝ নিয়ে আজ পর্যন্ত আমার কিছুই হয়নি। আর আমার মনে হয় হবেও না।
কিছু উদাহরণ দিলে বোধ হয় ভালো হয় সবার ক্ষেত্রে। যেমন : বাসায় থাকতে আর ভালো লাগছে না। কি করা যায়! দুষ্টু বুদ্ধি এসে মাথার মধ্যে ঘূর্ণি পাকাতে থাকে। কিছু না কিছু পেটের ডগায় এসে গুড়–ম গুড়–ম করে ডাকতে থাকে। মনে হয় যেন দরজায় কেউ দাঁড়িয়ে কলিংবেল চাপছে। তারপর যেখানে যেতে ইচ্ছে করে সেটার কথা বাসায় বলা হয়, প্রথমে রাজি হয় না। তারপর আকুতি-মিনতি করে যাওয়ার অনুমতি নেয়া হয়। এভাবেই চলছে আর কি! এভাবে চলতে দেয়া যায় না। কিন্তু মন কি আর বসে থাকে। আমার ইচ্ছার চাইতে যে মনের ইচ্ছাশক্তিটা অনেক বেশি। যে কারণেই আমি পেরে উঠি না। এ তো গেল মনের ইচ্ছা।
এবার আশা যাক আমার শৈশবের কিছু কথা নিয়ে। আমি পৃথিবীতে আশার পর আমার আম্মা আগুনে পুড়ে যান। সেই সময় আমার দাদী আমার জন্য যা করেছেন তার কোনো তুলনাই হয় না। সেই ঋণ কখনো শোধ করবার মতো নয়। দাদী আমার সব চেয়ে বড় আদরের। বড় ভালোবাসার। আমি তাঁকে অনেক বেশি ভালোবাসি। যা পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের অন্তর দিয়েও কেনা যায় না। যে দাদীর হাতে আমি তখন লালিত-পালিত হয়েছি। আম্মা যখন বিছানায় পড়ে আছেন ঠিক তখন আমার দাদী আমাকে নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। আমার গোসল, খাওয়া-দাওয়া সব ক্ষেত্রেই দাদী। তখন একেবারেই শিশু ছিলাম তাই সেভাবে বোঝার ক্ষমতা আমার ছিলো না। কিন্তু এখন- আমি বড় হয়েছি। সব কিছুই বুঝি। কিন্তু দাদী তো আমার পাশে থাকেন না। কারণ আমি দূরে থাকি। যখন মন চায় তখন এক পলক দেখে আসি বাড়িতে যেয়ে। এতটুকু দেখে কি আর মন ভরে! দাদীকে আমি বলেছিলাম ঢাকায় আসার জন্য। কিন্তু নিজের ভিটে বাড়ি ছেড়ে কি আর সহজে আসতে চান। ফোনে যে কথা বলবো সে কি আর হওয়ার উপায় আছে! কারণ কথা বলতে গেলেই দিয়ে ওঠেন ধমক! ধমক শুনেই তো কলিজার পানি শুকিয়ে যায়। আর কি কথা বলবো। তারপরও বলতে হয়। যখন বাড়িতে যাই তখন দাদী আমাকে নিয়ে পাড়ায় বেড়াতে যান। এই যে ভালোবাসা এটা কি কোথাও পাওয়া যায়? আমি দোকানে গেলে দাদীকে জিজ্ঞেস করি আপনি কিছু খাবেন কি না। তখন বলেন তুই যা খাবি তাই আনবি। তবে দাদী যা খান তা সবাইকে দিয়ে খান। যেকোনো জিনিস যেমন : পান, কেক, মুড়ি, ভাজা, ফল কিংবা মিষ্টি। খাবারের পরিমাণ কম হলেও সবাই একসাথে বসে খেলে দাদী আসলেই খুব আনন্দ পান। সেই আনন্দের কথা বলে বোঝানো যাবে না। দাদীর হাসি দেখলে মনে হবে যেন এক খণ্ড চাঁদ এসে দাদীর মুখে পড়েছে। দাদীর জন্য খুব কান্না পায়। দাদীর কোনো তুলনা হয় না। সবচেয়ে বেশি দাদী আমাকেই আদর-যতœ করেন। আমাকে নিয়েই ভাবেন সব সময়। আমার কী বা করার আছে! আমি আজো বুঝতে পারি না। দাদীকে আমি সব সময় খুশি দেখতে চাই। দাদীকে আমার সবচেয়ে উঁচু স্থানে রাখি এবং রাখবো।
আমি তো আর বাড়িতে থাকি না। তবে বাড়িতে থাকাটা হলো ভাগ্যের ব্যাপার। বিশেষ করে যারা ঢাকায় থাকে তাদের ক্ষেত্রে গ্রামের বাড়ি যাওয়া মানেই ইউরোপ-আমেরিকার মতো দেশে ভ্রমণে যাওয়া। যেটাকে বলে বিলেতি। আসলে আমরা ঢাকার মানুষ খুব নিষ্ঠুর হই। কিন্তু গ্রামে যেয়ে দেখা যায় ঠিক উল্টোটা। ঢাকায় কেউ কাউকে দেখে না বা দেখতে চায় না। আর বাড়িতে সবাই সবার খোঁজ নেয়। মনে হয় যেন পুরো ইউনিয়ন তাদের আত্মীয়-স্বজন।
তাই আমি সময় পেলেই চলে যাই আমার নদীর কাছে। আমার শৈশবের কাছে। সকল বাধা উপেক্ষা করে হলেও আমি বাড়ির টানে চলে যাই। যেখানে আমার দাদুভাই শুয়ে আছেন মসজিদের সামনে। আমার ছোট দাদুভাই শুয়ে আছেন তাঁর পাশেই। যেখানে আমার চাচাতো বোন শুয়ে আছে। আমি সেখানেইতো আগে যাবো। আমার দাদী আজও আমার দিকে চাতকের মতো তাকিয়ে থাকেন আমার দিকে। যত কষ্টই হোক আমি সেখানেই আগে যাবো। চলে যাবো আমার সেই পুরনো দিনের মাটির ঘরের কাছে। যেখানে বসে আমি দীর্ঘ : নিঃশ্বাস নিবো। নিবো আমার জীবনের তাগিদে। সব উপেক্ষা করেই আমি চলে যাবো আমার ধানখেতে। নদীর বুকে। কবির ভাষায় বলবো ‘বাঁকড়া বিলের বালিহাঁস’ আবার কখনো বলে উঠবো ‘ঝিমায় যখন ঝিকরগাছা’। যখন যেখানে মন টানবে ঠিক তখনই আমি সেখানে চলে যাবো। সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো।
আসলে আমি এরকমই। আমার আর কিছুতেই এখানে থাকতে ইচ্ছে করে না। আর করবেই বা কেন!
আমি তো গাঁয়ের ছেলে। সেখানেই আমাকে ভালো মানায়।
আব্বাজান যেমন মানুষের কথা, মাটির কথা, নদীর কথা লেখেন। তাঁর লেখায় পড়ে আমার মন ছুটে যেতে চায় মাটি ও মানুষের কাছে। সুদূর গ্রামে।
আমি গ্রামের টানে, আপনজনদের টানে আবারও যেতে চাই আমার গ্রামে। আমার দাদী আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। আমার কি আর মন স্থির থাকতে পারে? দাদীর দোয়া ও ভালোবাসা কেবলই আমাকে তাঁর কাছে টানে। যে টান কোনোক্রমেই উপেক্ষা করতে পারি না।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ