আমার স্মৃতিতে আমার দাদু -রওজাতুল জান্নাত রুহামা
তোমাদের গল্প মার্চ ২০১৬
দেখতে দেখতে চলে গেল ক’টা মাস। চলে গেল আরেকটি ঈদ। ঈদুল আজহা অর্থাৎ কোরবানির ঈদ। সাধারণত এ ঈদে আমরা দাদু বাড়ি যাই। এবারও যাবো যাবো বলে আর যাওয়া হলো না। বাবা একাই গেলেন। দাদু বাড়িতে গেলে হয়তো ঈদটা একটু ব্যতিক্রম হতো। এবার হয়তো দাদু বাড়িতে গেলে সবাইকে দেখতে পেতাম। কিন্তু শুধু দেখতে পেতাম না আমার দাদুকে। কখনো ভাবিনি দাদুকে আর দেখতে পাবো না, কখনো আর দাদুর আদর পাবো না, ভাবতেই পারিনি দাদুকে ছাড়া কাটাতে হবে ঈদ। আমি কখনও আমার দাদা ও নানা ভাইকে দেখিনি। তাদের আদর পাইনি। কিন্তু দাদু ও নানুকে দেখেছি, তাদের আদরও পেয়েছি। তাই আজ যখন দাদু আর নেই ভাবছি তখনই খুব কষ্ট হচ্ছে। এ বছর প্রথম আমরা ও আমার আল আমীন চাচ্চুরা সবাই একসাথে রোজার ঈদে গ্রামে গিয়েছি। সাথে গিয়েছে মামুন ও গালিব ভাইয়া এবং মাহমুদ মামাসহ প্রায় বিশ জন। কিন্তু গিয়ে দেখি দাদু আর নেই। খবরটা অবশ্য আমরা রওনা দেয়ার আগেই পেয়েছিলাম। কিন্তু তখন তেমন কিছুই মনে হয়নি। সবচেয়ে বেশি কষ্ট লেগেছিল তখন, যখন দেখলাম দাদু চোখ বন্ধ করে ঘুমাচ্ছেন আর সবাই কাঁদছে। মেজো কাকী আমাকে বললেন, রুহামা দাদুকে দেখতে চল। আমি বললাম না, কাকী আমি দেখতে পারব না। আমার খুব কষ্ট হবে। তারপর আম্মুর সাথে দাদুকে দেখতে গিয়েছিলাম। তখন দাদুকে একটু মাথা ছুঁয়ে চলে এসেছি। এরপর আরও একবার দাদুকে দেখেছিলাম। তখন দাদুকে গোসল করিয়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে মাটির বিছানায় চিরনিদ্রায় শায়িত করার জন্য। আম্মু, আমার চাচাতো বোন মীম আপুকে বাবার মোবাইল দিয়ে বলল, দাদুর ছবি তুলতে। ঢাকা গিয়ে নানুকে দেখাতে হবে তো সে জন্য। আমিও পেছনে পেছনে গেলাম। গিয়ে দেখি মীম আপু ছবি তুলছে আমার দাদুর। বাবা পাশে দাঁড়িয়ে আছে নীরবে। চোখে সুরমা লাগানো। কী অপূর্ব লাগছিল আমার দাদুকে। বাবা দাদুর কপালে চুমু দিলেন। এরপর দাদুকে নিয়ে যাওয়া হলো জানাজার জন্য। ঠিক তখনই শুরু হলো অল্প অল্প বৃষ্টি। জানাজা শেষ। দাদুকে কবর দিয়ে সবাই চলে গেল যার যার কাজে। দাদু আমাদের খুব আদর করতেন। আমরা যখন দাদুবাড়িতে যেতাম তখন থেকেই শুরু হতো, আমাদের আদর পাওয়া দাদুর কাছ থেকে। দাদুবাড়িতে গেলেই দাদু জড়িয়ে ধরতেন আর চুমু খেতেন। সবার খোঁজখবর নিতেন বিশেষ করে পড়াশোনার। কিন্তু যখন চলে আসব তখন খুব কষ্ট লাগত। দাদু আমাদের জড়িয়ে ধরে চুমু দিয়ে বলতেন, আবার এসো। আমরা কথা দিতাম আবার আসব। দাদু আমাদের এগিয়ে দিতেন। যখন চলতে পারতেন না তখন উঠানে বসে তাকিয়ে দেখতেন আমাদের চলে আসা। যতদূর চোখ যায়। সবসময় পরীক্ষার আগে দাদুর কাছে ফোনে দোয়া চাইতাম। দাদু তখন স্নেহভরা কণ্ঠে বলতেন, দোয়া করি। পরীক্ষা ভালো করে দিও। রোজার ঈদে দাদুবাড়ি গেলেই দাদু সেলামি দিতেন। আমরা খুব খুশির সাথে দাদুর কাছ থেকে সেলামি নিতাম। সেই সেলামি দিয়ে আচার, চকোলেট খেতাম। এখন হয়তো সবার কাছ থেকে অনেক টাকা সেলামি পাবো কিন্তু দাদুর হাত থেকে সেই সেলামি আর পাবো না। যতই বলি না কেন দাদু আর নেই। কিন্তু কখনও আমি আমার মন থেকে দাদুকে মুছে ফেলতে পারব না। পারব না দাদুর স্মৃতি মুছে ফেলতে, পারব না ভুলে যেতে দাদুকে। দাদুর প্রতিটা স্মৃতিই যেন আজ চোখের সামনে। দাদু ছিলেন, দাদু আছেন, দাদু থাকবেন সারা জীবন আমাদের মনের মাঝে। স্মৃতির কোণে। আর প্রাণভরে দোয়া করি- হে আল্লাহ্! আমার দাদুকে তুমি রেখে দিও শান্তিতে। আর জায়গা দিও জান্নাতে।
আরও পড়ুন...