আল মাহমুদের কিশোর  উপন্যাস । মোস্তফা মাহাথির

আল মাহমুদের কিশোর উপন্যাস । মোস্তফা মাহাথির

বিশেষ রচনা জুলাই ২০১৯

আল মাহমুদের কিশোর উপন্যাস । মোস্তফা মাহাথিরআল মাহমুদ আমার প্রিয় কবি, প্রিয় কথাশিল্পী; নিশ্চয়ই তোমাদেরও! তাঁকে নিয়ে কিছু লিখতে হবে, কিন্তু কোত্থেকে শুরু করবো! অগত্যা তাঁর কিশোর উপন্যাসের বিষয়টি মাথায় এলো। সাহস করে লেখায় হাত দিলাম। তার আগে গুগল মামার কাছে গেলাম এ বিষয়ে তার কাছে কোনো লেখাজোখা আছে কি না তা দেখতে। কিন্তু দুঃখের সাথে দেখলাম, তাঁর কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ এবং অন্যান্য রচনাসম্ভার নিয়ে প্রচুর লেখা থাকলেও প্রায় কেউই তাঁর কিশোর উপন্যাস নিয়ে লেখেননি। তার একটি কারণ এই হতে পারে যে, তিনি কিশোর উপন্যাস খুব কম লিখেছেন অথবা সবাই মূলত তাঁর সবচে বেশি আলোচিত ও পঠিত উপন্যাস নিয়েই লিখতে চেয়েছেন। তবে কিশোর উপন্যাস তিনি খুব কম লিখেছেন তাই তা নিয়ে আলোচনা হবে না, এটা কোনো কাজের কথা নয়। তুলনামূলকভাবে বলতে গেলে অনেক কবির চেয়ে তিনি কিশোর কবিতাও তো কম লিখেছেন, কিন্তু তা কি খুব সামান্য? অর্থাৎ কম বলে আলোচনার প্রয়োজন নেই, এমন? তোমরা একবাক্যে বলবে-- না, মোটেও নয়।
সম্ভবত বাংলা কিশোর কবিতায় বর্তমানে আল মাহমুদের লেখাই সবচে বেশি আলোচিত। ‘আম্মা বলেন, পড়রে সোনা/আব্বা বলেন, মন দে;/ পাঠে আমার মন বসে না/ কাঁঠালচাঁপার গন্ধে।’
কিংবা ‘আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেলো শেষে/ হেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি সারা বাংলাদেশে।’
অথবা ‘ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ/ দুপুর বেলার অক্ত/ বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি কোথায়/ বরকতের রক্ত।’
এরকম অনেক কবিতাই তো আমাদের মুখস্থ আছে। অবশ্য একজন আল মাহমুদ যখন কিশোর কবিতা লেখেন, তখন তা কেবল কিশোরদেরই উপযোগী হয় তা নয়, বরং যেকোনো বয়সের পাঠকের জন্যই তা হয়ে ওঠে অবশ্য পাঠ্য। ঠিক তাঁর অন্যান্য রচনাও এরকমই। এ মুহূর্তে আমার হাতে রয়েছে ‘কিশোরসমগ্র : আল মাহমুদ’ বইটি স্বনামধন্য প্রকাশনা সংস্থা ‘সময় প্রকাশন’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। আল মাহমুদের কিশোর সাহিত্য নিয়ে আমার উপরোক্ত কথাটির সত্যায়ন পাওয়া যাবে তাঁর এই বইটির ভূমিকায়। তিনি লিখেছেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে সাহিত্যের ভেদরেখা বুঝি না। কিশোরদের জন্য রচিত সাহিত্যও আধুনিক সাহিত্যেরই পর্যায়ভুক্ত। কারণ প্রতিভাবান আধুনিক কবি-সাহিত্যিকরাই কিশোর পাঠকদের জন্য মননশীল রচনা তৈরি করতে পারেন। ছড়া ও কবিতার মধ্যে পার্থক্য নিশ্চয় আছে। তবে কাব্যরস না থাকলে কোনো কিছুই উতরোয় না। আমি ছোটদের জন্য যেটুকু লিখেছি তা আসলে ছোট-বড় সব পাঠকের জন্যই লিখেছি। লিখে তৃপ্তি পেয়েছি।’
তাঁর উপরোক্ত লেখায় দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষণীয়। তিনি বলেছেন, ‘কাব্যরস না থাকলে কোনো কিছুই উতরোয় না।’ তারপর বলেছেন, ‘আমি ছোটদের জন্য যেটুকু লিখেছি তা আসলে ছোট-বড় সব পাঠকের জন্যই লিখেছি।’
আমাদের বর্তমান আলোচনা যদিও তাঁর ছড়া-কবিতা নিয়ে নয়, তবু প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি- আল মাহমুদের ছড়া শুধু ছড়া নয়, ছড়ার অধিক। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁর ছড়া একইসাথে কবিতাও। তাঁর বক্তব্যের সত্যতা মেলে তাঁর ছড়া-কবিতায়। এবার আমরা আমাদের মূল আলোচনায় আসি। আমাদের এই আলোচনার বিষয় হলো, ‘আল মাহমুদের কিশোর উপন্যাস’। তাঁর কিশোর উপন্যাসের কথা আসলেই আমাদের সামনে ভেসে ওঠে দুর্দান্ত অ্যাডভেঞ্চার, থ্রিলার আর নাটকীয় ঘটনার উত্তেজনাপূর্ণ একটি উপন্যাসের ছবি। এই উপন্যাসের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, এতে মানুষের কথা, মানবতার কথা এবং ধর্ম ও বিশ্বাসের কথা যেমন এসেছে তেমনি এখানে উঠে এসেছে একটি জাতিগোষ্ঠীর অনুপুঙ্খ ও শিল্পিত উপাখ্যান। পৃথিবীব্যাপী মানবতার দুশমনদের গতিবিধি, তাদের ধ্বংসলীলা এবং অবৈধ বসতি স্থাপন করে সাধারণ মানুষের অধিকার হরণ করার কদর্য দিকটিও উঠে এসেছে খুব স্বাভাবিকভাবে। বলছি আল মাহমুদের ‘মরু মুষিকের উপত্যকা’র কথা। উপন্যাসটি ছোট-বড় সবাই-ই পড়ে মজা পাবে। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রে রয়েছেন ড. লায়লা ইলাহী। তিনি একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পুরাতাত্ত্বিক। যিনি এক সুপ্রাচীন পিরামিডের অস্তিত্বের আভাস একটি দুর্ভেদ্য পাণ্ডুলিপি থেকে উদ্ধার করেছেন। সেটা হলো মেমফিসের প্রিন্সেস জুলফিয়ার পিরামিডের গঠনশৈলী আর তার অবস্থান নকশার বিবরণ সংবলিত একটি প্যাপিরাস পাণ্ডুলিপি। যে পাণ্ডুলিপির লিপিকৌশল এতকাল দুষ্পাঠ্য বলে পরিত্যক্ত হয়ে ইজিপশিয়ান গ্যালারির বাতিল মালের তাকে বস্তার সাথে নিলামের জন্য পড়ে ছিলো, যা ড. লায়লা ইলাহী কৌতূহলবশতই বাসায় এনে রেখেছিলেন এন্টিকের আলমারি সাজাবার জন্য। সে জিনিস থেকেই লায়লার চোখে ধরা পড়েছে এক সুপ্রাচীন পিরামিডের অস্তিত্বের খবর এবং এক দুর্লভ ধনভাণ্ডারের ইঙ্গিত।
লায়লার স্বামী ড. আকরাম ইলাহী, যিনি নিজেও একজন গবেষক। তিনি নিজেও এই পাঠোদ্ধারের কথা জানার পর লায়লাকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘ডার্লিং, এ কথা এখনই কাউকে জানানো উচিত হবে না। চলো কাল আমরা আল আহরাম পত্রিকার প্রধান সম্পাদকের কাছে যাই এবং তোমার আবিষ্কারের ওপর একটি প্রেস কনফারেন্সে তাকে উপস্থিত থাকতে বলে আসি। তোমার এ আবিষ্কার মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ ধামাচাপা দিয়ে নিজেদের কৃতিত্ব বলে জাহির করতে পারে। সোনাদানার প্রতি আমাদের দু’জনেরই লোভ নেই। তবে আবিষ্কারের কৃতিত্ব যে তোমার এটা পুরাতত্ত্বের ইতিহাসে স্বীকৃত হওয়া উচিত।’
কিন্তু স্বামী আকরাম ইলাহীর এই প্রস্তাব তার সরলমতি বিদুষী স্ত্রী গ্রহণ করতে পারেনি। সে বিষয়টা মিউজিয়াম প্রধানকে জানাতে চায়। তার মতে, হাজার হোক আমরা সরকারের নিমক খাচ্ছি। তাদের জানালে তারা খুশি হয়ে আমার কৃতিত্বের কথা জগৎকে জানাবে এবং প্যাপিরাসে উল্লিখিত পিরামিডটির অবস্থান নির্ণয়ে সরকারি উদ্যোগ নেবে। এতে লুকোছাপার কোনো ব্যাপার নেই। লায়লা তার স্বামীকে বোঝাতে থাকে, ‘আমরা গরিব লোক; এতবড় একটা আবিষ্কার হজম করার শক্তি আমাদের নেই। তা ছাড়া আমরা মরুভূমিতে কিংবা উপত্যকায় গিয়ে বিপুল ব্যয়সঙ্কুল খননকাজ বা এস্কেভেশন চালাতে পারবো না। মিসর সরকার তা ব্যক্তিবিশেষকে করতেই বা দেবে কেন?’
স্ত্রীর কথার যৌক্তিকতা উপলব্ধি করে তার সাথে একমত হয়ে সেদিন বিকেলেই মিউজিয়াম প্রধানের বাসায় গিয়ে বিষয়টি তাকে অবহিত করেন। মিউজিয়াম পাঠোদ্ধারকৃত প্যাপিরাসের ট্রান্সলেশনটার খোঁজ নেন। আর লায়লাও সরল মনে সব তথ্য দিতে থাকেন তাকে। একপর্যায়ে তারা দু’জনই বাসায় চলে আসেন। আসার পথে একটি রেস্তোরাঁ থেকে রাতের খাবার সেরে আসায় বাসায় এসেই তারা ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে ঘুম থেকে উঠে ড. আকরাম ইলাহী দেখেন বাসায় লায়লা নেই এবং তার খাটের ওপরের জানালায় একটি পাট বা শিকও নেই। যেন কোনো দৈত্য এসে নিঃশব্দে তা উপড়ে নিয়েছে। সারা ঘরে কোথাও লায়লা নেই। তার ড্রয়ার খোলা; সেখানে কোনো প্যাপিরাস বা লিপি অনুবাদপত্রটত্র কিছু নেই। তবে টেবিলের ওপর একটা পেপার ওয়েট দিয়ে চাপা দেয়া একখণ্ড কাগজে আরবি হরফে লেখা, ‘ইন তুরিদ আন তাকুনা হাইয়্যান আল ইয়াওম এহয়েব মিনাল মিসর।’ অর্থাৎ আজই মিসর ছেড়ে গেলে প্রাণে বাঁচবে। পালাও!

দুই.
বুক ধুকপুক করা শঙ্কা-আশঙ্কা আর তীব্র উত্তেজনার মধ্য দিয়ে কাহিনী এগোতে থাকে। আমাদের উপন্যাস সাহিত্যের চেনা গণ্ডির বাইরে একদম ভিন্ন অবস্থান ও আয়তনে কাহিনীকে স্থাপন করে আল মাহমুদ তাঁর নিজস্বতার বার্তা দেন এভাবেই। মজার ব্যাপার হলো, তিনি তাঁর উপন্যাসে কোনো চরিত্রকে ডেকে এনে খাতির করে বসান না বরং তারাই বর্ণে-গন্ধে আপনি এসে পড়ে। আংকল কারামে, জাহরা, হিজ এক্সেলেন্সি রাষ্ট্রদূত, ড্রাইভার মিজান এমনকি সেই হাফেজ সাহেব এবং তার কিশোর শিক্ষার্থী, সবাই। অবশ্য আল মাহমুদের এই ভিনদেশি ফ্লেভারের ভাষা ও কাহিনীতে তাঁর যে প্রত্যক্ষ জানাশোনা ও অভিজ্ঞতার ছাপ রয়েছে তা নিঃসন্দেহ। তিনি নিজেই বলেছেন, ‘আমি বিচরণশীল মানুষ।’ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন। সেসব দেশের মানুষের ভাষা, খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-পরিচ্ছদ, সেখানকার ঐতিহ্যÑ এসবই তিনি খুব ভালো করে অবলোকন করেছেন। আর এই অবলোকনেরই ছাপ থাকে তাঁর উপন্যাসে। ফলে তাঁর উপন্যাস হয়ে ওঠে একেবারেই নিজস্ব ও জীবন্ত।
বড়দের গল্প-কবিতা-উপন্যাস লিখে যারা খ্যাতি অর্জন করেন তারাই যে আবার ছোটদের জন্যও ভালো লিখবেন, এমন কোনো কথা নেই। অবশ্য আগেই বলে এসেছি আল মাহমুদের ছোটদের রচনাও বড়রা পড়ে মজা পাবেন এবং ছোটদের মতোই সমান উত্তেজনা অনুভব করবেন। সম্ভবত অন্যান্য কিশোর ঔপন্যাসিক বা সাহিত্যিকের সাথে আল মাহমুদের পার্থক্য এখানেই। তিনি একান্ত নিজের মতো করেই তার পাত্র-মিত্রের অবস্থা ও আকৃতি নির্ধারণ করে নেন। ‘মরু মুষিকের উপত্যকা’ ছাড়াও তাঁর অন্যান্য কিশোরতোষ গল্প-উপন্যাসের দিকে দৃষ্টিপাত করলেও এ বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়। আবার তিনি যখন ছোটদের মতো করেই ভাবেন- দেখেন, তখনও তা দারুণরকম প্রাণবন্ত এবং সব বয়সের পাঠকের জন্যই উপযোগী হয়ে ওঠে। যেমন উপযোগী তাঁর ‘মরু মুষিকের উপত্যকা’, ‘ময়নামতির ছেলে’, তার রূপকথার গল্প ‘ছায়ায় ঢাকা মায়ার পাহাড়’ এবং কিশোরতোষ গল্প ‘একটি ছবি’, ‘একটি পাহাড়ি গল্প’ এবং ‘বেপরোয়া’।
কবিখ্যাতি যখন অভ্রভেদী তুঙ্গে তখনই আল মাহমুদ হাত দিয়েছিলেন কথাশিল্পে। তার পরের গল্প পাঠকমাত্রেরই জানা। তোমরা নিশ্চয় তাঁর ‘যেভাবে বেড়ে উঠি’র কথা জানো এবং এটি পড়েছো। এটিকে বলা চলে বাংলা গদ্যসাহিত্যের সেরা আত্মজৈবনিক রচনা। যেখানে তিনি কৈশোরের অনেক স্মৃতি রোমন্থন করার পাশাপাশি ঐ বয়সের সূক্ষ্মতম অনুভূতিকেও স্পর্শ করে গেছেন দারুণভাবে। পাঠকমাত্রই উপলব্ধি করবেন তাঁর ঐতিহ্যচেতনা, দেশাত্মবোধ ও ভাষার সুনিপুণ শিল্প-সুষমা। যদিও ১৯৭৫ সালে প্রকাশিত প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘পানকৌড়ির রক্ত’ দিয়েই তিনি বাংলা কথাসাহিত্যে তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতির জানান দিয়েছেন।
যুৎসই চরিত্র, কাহিনীর গতিময়তা, পরিমিতিবোধ ও সার্বিক সঙ্গতির দিকে দারুণ মনোযোগী একজন গদ্যশিল্পী আল মাহমুদ। পাঠককে তিনি তাঁর উপন্যাসের শিল্প-সুষমায় বিবশ করে রসাস্বাদনে বাধ্য করেন। উপন্যাস পড়তে পড়তে বোদ্ধা পাঠক বুঝতে পারেন- এরকম ব্যতিক্রম দৃশ্যের যোজনা ও মুগ্ধকর শিল্পভাষ্য কেবল আল মাহমুদেরই হতে পারে। দেখা গেল, তিনি খুবই সাধারণ একটি বিষয় নিয়ে এবং খুবই সাধারণভাবে গল্পের অবতারণা করেছেন, কিন্তু তাঁর ব্যতিক্রমী বর্ণনাকৌশল এবং ধীরে ধীরে রস ও রহস্যঘন করার মাধ্যমে গল্পটিকে অসাধারণ করে তুলতেন। অবচেতনভাবেই পাঠক গল্পের মূল প্লটে ঢুকে বুঝতে পারেন, গল্পকার এমন একটি জায়গায় তীর্যক আলোকপাত করেছেন যেটা আমাদেরই চেনা পরিবেশের অচেনা দৃশ্য! আমরা পুলকিত হই; গল্পের দার্শনিক, মানবিক ও শৈল্পিক সৌন্দর্য অনুভব করি, আর ভাবনার গভীরে সঞ্চরণ করতে থাকি।

তিন.
আল মাহমুদের কথাসাহিত্যে কাব্যিক আবহ লক্ষণীয়। তিনি সমাজ-প্রকৃতির নিখাদ রূপটিই তুলে এনেছেন তার সাহিত্যে। নদী, প্রকৃতি ও মাটির কাছাকাছি তাঁর অবস্থান। পরম মমতায় তিনি চোখ রেখেছেন পৃথিবীর চোখে। দেখেছেন মানুষের ভেতরের মানুষটিকে। তারপর তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে উচ্চারণ করেছেন, ‘তোমরা যখন শিখছো পড়া/ মানুষ হওয়ার জন্য,/ আমি না হয় পাখিই হব,/ পাখির মতো বন্য।’
কিংবা তাঁকে বলতে দেখি, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস-- গান শোননি ভাই?/ মানুষ হবার ইচ্ছে আমার এক্কেবারে নাই।’
বলছিলাম তাঁর কিশোর উপন্যাসের কথা, কিন্তু এরই মধ্যে এসে গেছে তাঁর গল্প ও কবিতার কথাও। আসলে আল মাহমুদ তো প্রধানতই কবি। তাঁকে নিয়ে লিখতে গেলে অনিবার্যভাবেই এসে যাবে তাঁর কবিতার প্রসঙ্গ। উঠে আসবে তাঁর রচনার সৌন্দর্য আর প্রকৃতিনিবিড়তার ঘনিষ্ঠ সব ছবি। যেমনটি তিনি তাঁর এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমি গল্প-উপন্যাস লিখি। সেটা আগে থেকেই। আমার একটা ধারণা হয়েছে যে, উপন্যাস লিখলেই যে সেটা তিন শ’ পৃষ্ঠা হতে হবে, এর কোনো তাৎপর্য নেই। অনেকে পড়তেও চায় না। আমি ছোট উপন্যাস লেখা শুরু করেছি।
আঙ্গিকের দিক থেকে সেগুলোকে বড় গল্প মনে হলেও তাতে উপন্যাসের বিভঙ্গ আছে; প্রেম-প্রীতি, আনন্দ-বেদনা আছে। অনেকে এ ধরনের উপন্যাসকে মাইক্রো উপন্যাস বলে। তবে সব মিলিয়ে আমার যে কাজ সেটা একজন কবিরই কাজ।’
সুতরাং আল মাহমুদ কবি; তাঁর বিষয়ে লিখতে গেলে কবিতার প্রসঙ্গ এসেই যায়। তবে এই আলোচনার শেষে তোমাদের আবারও বলতে চাই তাঁর উপন্যাসের কথা। কবিতার কথা বলবো না; কারণ তাঁর কবিতা তো তোমরা প্রচুর পড়েছো। তা ছাড়া অনেকে আবার বলবে, আল মাহমুদ আমাদের প্রিয় কবি, তাঁর কবিতা তো আমাদের অনেক মুখস্থও আছে! সুতরাং তোমাদের জন্য লেখা তাঁর গদ্যের কথাই আরেকবার মনে করিয়ে দেই। বিশেষ করে তাঁর উপন্যাস ‘মরু মুষিকের উপত্যকা’, কিশোরতোষ গল্প ‘বেপরোয়া’, ‘একটি পাহাড়ি গল্প’, ‘একটি ছবি’ এবং তাঁর রূপকথার গল্প ‘ছায়ায় ঢাকা মায়ার পাহাড়’ পড়ো। আমি নিশ্চিত, ভালো লাগবে তোমাদের। আর ভালো না লাগলে কী করা যাবে, আমাকে আচ্ছা করে বকে দিও তখন! তোমরা সুন্দর থেকো, সুস্বাস্থ্য কামনা করি তোমাদের। স্বাস্থ্য ভালো থাকা চাই। এই দেখো আল মাহমুদই তাঁর ‘ভয়ের চোটে’ নামক কবিতায় বলেছেন, ‘এই মেয়ে আর এই ছেলেটির/ অসুখ থাকে রোজ/ ঘণ্টা ধরে গিলছে বড়ি/ বোতল ভরা ডোজ।
এদের মতো কে হতে চায়?/ কেউ হবে না ভাই,/ বাঁচার জন্য টগবগানো/ স্বাস্থ্য থাকা চাই।’
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ