ঈদ আনন্দ

ঈদ আনন্দ

গল্প আগস্ট ২০১২

সাজজাদ হোসাইন খান..



ক’দিন থেকেই আয়োজন চলছিল। দিনক্ষণ ঠিক ঠাক হতেই গা-ঝাড়া দিয়ে উঠল। তারপর যাত্রা শুরু। সবকিছুরই হুকুম-টুকুম লাগে। আদেশের অপেক্ষায় ছিল। ঘোষণা হলো আদেশ। আর অমনি লাফিয়ে উঠল ঈদ। বিশাল মাঠ। মাঠের মাঝ বরাবর হাঁটছে ঈদ। সারা শরীরজুড়ে ঝুলে আছে খুশি আর আনন্দ। ঝিকমিক ঝিকমিক করছে চোখের মণি। যে মাঠের মাঝখান দিয়ে হাঁটছে ঈদ সে মাঠের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বেশুমার তারা, কামিনী ফুলের মতো। চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে সুগন্ধি। আনন্দের সুগন্ধি। ঈদ হাঁটছে। শাহানশাহর মতো, শির উঁচু করে। কতকটা পথ আসতেই তার মনে হলো কারা যেন তাকে অনুসরণ করছে। টুকটাক পায়ের আওয়াজ। ফিসফাস শব্দও কানে বাজল। ঈদ দাঁড়িয়ে পড়ল। তারপর ঘাড় ফিরাতেই দেখল ওরা তার পেছন পেছন হাঁটছে। ঈদ বিরক্ত হলো। জিজ্ঞেস করল, তোমরা কারা। যারা সারি বেঁধে ঈদের পেছন পেছন হাঁটছিল, একে অন্যের চোখে চোখ রাখল। তারপর সরদার মতো একজন জবাব দিল, আমরা ফেরেশতা। আপনাকে এগিয়ে দেবো, এ জন্য আসা। আমরা আপনার পাহারাদার। না, না আমার কোনো পাহারাদার-টাহারাদার লাগবে না। আমি একা একাই যেতে পারব, তোমরা যাও বলেই ঈদ হাঁটা শুরু করল। কী আর করা, ফেরেশতারা দাঁড়িয়ে থাকল ঠায়। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আনন্দে ডগমগ করা ঈদকে দেখছে। তার চারপাশটা আলো ঝলমল। মউ মউ করা সুগন্ধি, কুয়াশার মতো ছড়িয়ে যাচ্ছে। ঝুনঝুন নূপুরের আওয়াজ। ফেরেশতারা যতই দেখে ততই অবাক হয়। অবাকতো হতেই হবে। এমন আনন্দতো এর আগে ওরা কখনো দেখেনি।
কামিনী ফুল মাড়িয়ে কতকটা পথ এগোতেই ঈদ শরীরের সাথে লুকিয়ে রাখা পাখা দু’টি মেলতে শুরু করল। এতটা পথতো আর হেঁটে হেঁটে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই পাখা দরকার। উড়তে হবে। ঈদ বিশাল দু’খানা ডানা মেলে উড়ার প্রস্তুতি নিলো। ডানাজুড়ে নানান আঁকিবুকি। হাজার হাজার প্রজাপতি যেন গেঁথে আছে সেখানে। ঈদ উড়াল দিল। ফুলের পাপড়ির মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ল অনেক আনন্দ। ডানা ঝাপটিয়ে উড়ছে ঈদ, ছায়াপথ, গ্রহ, নক্ষত্রের গা ঘেঁষে ঘেঁষে। পথ আগলে শুয়ে আছে কী যেন একটা। আগুনের মতো বিরাট লেজ। ঈদ জোরে হাঁক দিলো কে গো তুমি বুদ্ধিশুদ্ধি হারিয়ে ফেলছো নাকি! পথের মাঝখানটায় এভাবে কেউ শুয়ে থাকে? ধূমকেতু তার আগুনের বিশাল লেজটি গুটিয়ে এনে ঘাড় কাত করে বলল, আমি ধূমকেতু। ঘরেতো খুব গরম, তাই মাঝে মধ্যে এ এলাকাটায় হাওয়া খেতে আসা। তুমি কে? এ তল্লাটেতো তোমাকে আর কোনদিন দেখিনি! ধূমকেতুর কথা শুনে ঈদ মুচকি হাসল। জবাব দিল, আমি ঈদ। যাচ্ছি পৃথিবীতে আর আমার সাথে যাচ্ছে আনন্দ। পথ ছাড়। ঈদের নাম শুনতেই ধূমকেতু সালাম দিল এবং পথের এক পাশে সরিয়ে নিল তার শরীর ও লেজ। ঈদ আবার চলতে শুরু করল। সালামের জবাব দিয়ে।
যাচ্ছেতো যাচ্ছেই, পথ যেন শেষ হতে চায় না। বৃহস্পতি গ্রহের পাশ দিয়ে উড়ছিল ঈদ। বৃহস্পতিতো খুশিতে লাফিয়ে উঠল একেবারে। দু’বাহু বাড়িয়ে এলো কোলাকুলি করবে এমন একখানা ভাব। ঈদ থামলো না, অন্যদিন দেখা হবে বলেই পাখার নাড়াচাড়া বাড়িয়ে দিল। পালকের ঝাপটায় বৃহস্পতির উঠানের একঝাঁক কাঁকর লাফিয়ে উঠল, তারপর ধপাস। ঈদ চলে যাচ্ছে। অনেক কান্না এসে জড়ো হয় বৃহস্পতির বুকে, চোখে। উথলে উথলে উঠছে দুঃখ-বেদনা। ঝরল কয়েক ফোঁটা। ঈদ উড়ছে কুয়াশার চাদর এ-ফোড় ও-ফোড় করে। বুধ, শুক্র, শনি সবার সাথেই দেখা হলো। কথাও হলো টুকটাক। তাও উড়তে উড়তে। আশপাশ দিয়ে পাহাড়ের মতো পাথর টুকরা ভেসে ভেসে যাচ্ছে কোথায় যেন। মঙ্গলের উঠান পার হতে গিয়ে ঈদ থমকে দাঁড়াল। তামাম শরীরে কেবল লালের ছোপ। কারা যেন আলতার শিশি ঢেলে রেখেছে। লাল ধুলা উড়ছে মঙ্গলের এখানে সেখানে। একটা নদী যাচ্ছে বয়ে, সেখানেও লালের ছায়া। দু’টি বক তাকিয়ে ঈদকে দেখছে। তারাও লালে মাখামাখি। না, এখানে আর সময় দেয়া ঠিক হবে না। খুনাখুনির ব্যাপার কি না কে জানে। তাড়াতাড়ি মঙ্গলের সীমা পার হয়ে চলে এলো ঈদ।
পৃথিবীর সিংহদরজায় দাঁড়িয়ে আছে অনেক বাতাস। সবার হাতেই ফুলের মালা। ঈদকে স্বাগত জানানোর জন্য এখানে দাঁড়িয়ে থাকা ওদের। আগেই খবর এসে গিয়েছিল ঈদ আসছে, আনন্দ আসছে। বাজছে খুশির দফ-ঢোল। ঈদের সমস্ত শরীরে লাফাচ্ছে ঝলমলে খুশি আনন্দ। পৃথিবীর সিংহদরজায় এসে নামতেই বাতাসরা একসাথে বলে উঠল আসসালামু আলাইকুম। তারপর হুড়মুড় করে অনেক মালা ঈদের গলায় পরিয়ে দিল। কোনটা ঢুকল, কোনটা ঝরল মাটিতে। পৃথিবীর ঘরে প্রবেশ করল ঈদ। রুনুঝুনু বাজছে নূপুর, হাসির গমক আর আনন্দের বার্তা নিয়ে। বাতাসের হাতে হাতে দফ আর  ঢোল বাজছেতো বাজছেই। এক অন্যরকম খুশি, পৃথিবীর মানুষ এর আগে কখনো দেখেনি। অনুভবও করেনি কোনদিন। করবে কী করে? ঈদতো এল প্রথমবারের মতো পৃথিবীতে। এসেই বিপত্তি। বেশরম মানুষগুলো এসব কী করছে। বাতাসের কানে কানে জিজ্ঞেস করতেই তারা জানাল, এটির নাম হলো ওকাজের মেলা। প্রতি বছর ওরা এভাবে নাচানাচি করে, মাতাল হয়। ঈদ তখন আঙুলের টোকায় বেলেহাজ ওকাজকে সরিয়ে দিল। এরপর সাথে করে আনা আনন্দের ঝলমলে পালকগুলো উড়িয়ে দিল। উড়ছে আনন্দের পালক, খুশির পালক। হাসতে হাসতে ঢুকে পড়ছে ভালো মানুষগুলোর ঘরে, হৃদয়ে। শান্তির ঝুনঝুনি বাজাতে বাজাতে। সময় তখন দ্বিতীয় হিজরি, খ্রিষ্টাব্দ ৬২৪। ঈদের পাখায় ঝুলে থাকা খুশির এই হিল্লোল দুলছে এখনও। দুলবে কতকাল কে জানে।


                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ