ঈদ-শপিং

ঈদ-শপিং

গল্প আগস্ট ২০১২

মো: তোফাজ্জল হোসাইন...

আমবিয়া ভীষণ চিন্তায় আছে, তবে কি এবার সত্যি সত্যি ঈদের নতুন জামা-কাপড়, লাল ফিতা, লিপিস্টিক, মেহেদী হবে না ওদের? বাবার ব্যবসা ততোটা ভালো না। আর বড় ভাইদের দোকানেও তেমন  বেচা-কেনা নেই। কোনো মানে হয় ঈদের আগে আগে...
আমবিয়ার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। তার সহপাঠীদের সবার তিনটা চারটা করে ঈদের নতুন জামা, লিপিস্টিক, মেহেদী  হয়ে গেছে। এখনো কিছুই হলো না তার। বিষয়টা নিয়ে বড় ভাই টোপার সঙ্গে আলাপ করা দরকার।
তোপা ভাই, আমরা  ঈদের বাজার করতে যাব না?
শ্শ্শ্। আমবিয়ার বড় ভাই, যে এবার সবেমাত্র কলেজে ঢুকেছে, ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বলে উঠলো। মানে চুপ কর। ভয় পেয়ে গেল আমবিয়া। ফিস ফিস করে বলল, কী হয়েছে?
ছাগল! বাবা পাশের ঘরে জেগে।
তাতে কী?
উফ... বাবার ঈদের পূর্বে তেমন ব্যবসা হচ্ছে না, এ কারণে তার মন খারাপ। এর মধ্যে তোর ঈদ-শপিংয়ের আব্দার শুনলে আরো মন খারাপ করবে।
তার মানে ঈদের জামা-কাপড় হবে না?
উফ্, কাকে কী বোঝাই! আরে বোকা, তুইতো বড় হয়েছিস, ক্লাস ফাইভে উঠেছিস। তুই যদি না বুঝিস। বাবার সময়টা খারাপ যাচ্ছে। এর মধ্যে...
বুঝতে পেরেছি আর বলতে হবে না। গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমবিয়া।
বড় ভাই টোপারও মনটা খারাপ হয় আমবিয়ার জন্য। বেচারী! কিন্তু সে-ইবা কী করতে পারে! আমবিয়ার মাথায় আদর করে হাত বুলিয়ে বলে, আয়, তোকে আজ একটা সুন্দর নতুন গল্প বলবো।
সত্যি? আমবিয়ার মনটা ভালো হয়ে যায় যেন। নতুন গল্প বল।
আমবিয়া বিছানায় উঠে আসে। গুটি শুটি মেরে শোয় বড় ভাই টোপার পাশে। টোপা বড় লাইটটা নিভিয়ে ডিম লাইট জ্বালিয়ে ফিস ফিস করে গল্প শুরু করে, গ্রামের রাস্তা দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিল একটা লোক... রাত তখন অনেক... এই সময় হঠাৎ পিছনে ঝুন ঝুন শব্দ...
ঈদের আগের দিন বিকালে আমবিয়া খেলতেই গেল না। কারণ গেলেই বন্ধবীরা চেপে ধরবে কী কী কিনেছে, জানতে চাইবে ফ্রক না লাল জামা? ওরাতো লাল জামা লাল ফিতা, মেহেদী, জুতো সবই কিনেছে। ও বাইরের ঘরে বসে একটা বইয়ের ছবি দেখছিল। গল্প পড়ার থেকে গল্পের বইয়ের ছবি দেখতে ভালো লাগে বেশি আমবিয়ার। এই সময় দরজায় টুক টুক শব্দ।
কে?
আমি। দরজা খুলেই দেখে একটা লোক।
কাকে চান?
এটা ছামাদ সাহেবের বাসা?
জি।
উনি আছেন?
না। উনি হাটে গেছেন।
তুমি ওর মেয়ে?
জি। আপনি ভিতরে আসুন। আম্মুকে ডাকি?
না না দরকার নেই। আমি বাইরেই থাকি। সত্যি কথা বলতে কি, তোমাকেই বলি... এই সময়টায় তোমার বাবা থাকবেন না জেনেই এসেছি। তাকে মুখ দেখাবো সে সাহস আমার আর নেই। এই নাও এই প্যাকেটটা উনাকে দিও আর এই চিঠিটা। আমি চলি। বলে লোকটা আমবিয়ার মাথার চুলে বিলি কেটে দিয়ে উধাও হয়ে গেল।
অন্যের চিঠি পড়তে নেই জেনেও আমবিয়া চিঠিটা পড়ে ফেলে। খুব ছোট্ট চিঠি, তাতে লেখাÑ
ছামাদ দোস,
বিপদের সময় এক মাসের কথা বলে তোর কাছে টাকা ধার করেছিলাম। অনেকগুলো টাকা। জোগাড় করে দিতে তোরও কষ্ট হয়েছিল। আমার মুখ চেয়ে কাজটা করেছিলি। আর আমি কী করলাম? পুরো টাকাটা নিয়ে গায়েব হয়ে গেলাম... তিন তিনটি বছর! কেন গায়েব হলাম কী বৃত্তান্ত সেটা বলে তোর ধৈর্যচ্যুতি ঘটাতে চাই না। আজ টাকাটা দিয়ে গেলাম। পারলে এই অধমকে ক্ষমা করে দিস।
তোর অবিশ্বস্ত বন্ধু, রফিক
কেন যেন আমবিয়ার বুকটা ধ্বক করে উঠল। সে প্যাকেটটা খুলে তার ভিতর উঁকি দিয়ে দেখে একটা  মোটাসোটা একহাজার টাকার বান্ডিল।
এরপরের সব ঘটনাই মধুর। বাবা হাসি মুখে বড় ভাই তাইবুকে কিছু টাকা হাতে দিয়ে বলে, যা টোপা-আমবিয়াকে নিয়ে ঈদের নতুন জামা অর্থাৎ ঈদ-শপিং করে আয়।
বড় ভাই, টোপা আর আমবিয়া বের হয়ে আসে সেজেগুজে। সবার মুখ বেশ হাসি হাসি।
বাইরে এসেই টেম্পু পেয়ে গেল তারা। ভাগ্য ভালো বলতে হবে। বিকট শব্দ করে টেম্পু ছুটতে থাকে। যেতে যেতে আমবিয়া টোপাকে ফিস ফিস করে বল, রফিক চাচাটা এভাবে না এলে কী হত বল?
কী আর হত! একবার ঈদে নতুন জামা না কিনলে কী হয়?
আল্লাহ যা করে বান্দার কল্যাণের জন্যই করে, বুঝলি আমবিয়া! বলে বড় ভাই তাইবু। এত অধৈর্য হলে চলে না। আল্লাহ সবার জন্য সমান।


                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ