ঈদ হোক আনন্দময়

ঈদ হোক আনন্দময়

স্বাস্থ্যকথা ডা. এহসানুল কবীর এপ্রিল ২০২৪

ঈদের আনন্দ অন্যরকম। শিশু-কিশোরদের কাছে তো সেটা আরো বেশি প্রত্যাশিত। এই সময়ে তারা ৩ ধরণের চরম পাওয়ার পরমানন্দে বিভোর হয়ে থাকে সারাক্ষণ। একটা হলো আধুনিক ডিজাইনের নতুন জামাকাপড় প্রাপ্তির তীব্র আকাক্সক্ষা। দ্বিতীয়টা হলো মজার মজার লোভাতুর খাবারের প্রতি দারুণ আকর্ষণ। আর তৃতীয় মজাটা হলো, ঈদের সময়ে ঘুরতে যাওয়ার প্রবল এক প্রত্যাশা। হয়তো সেটা হতে পারে কাছে কিবা দূরে কোথাও। বলাবাহুল্য বড়োরা তো তাদের আনন্দ দেখেই খুশি। বলতে গেলে এভাবেই ঈদ উদযাপন হয়ে থাকে আমাদের সমাজে। কিন্তু এই খুশিটা আবার নিরানন্দের কারণ হয়ে যেতে পারে যদি একটু বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন না করা হয় ঈদের এই সময়টাতে। যেমন-

পোশাকের ক্ষেত্রে

মূলত ঈদের এই সময়টাতে এবার আবহাওয়াটা একটু অন্যরকম থাকবে অর্থাৎ দিনে গরম আর রাতে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ভাব। কাজেই পোশাকটাও আবহাওয়ার সাথে মানানসই করে কেনা ভালো। বাজারের হাল ফ্যাশনের চটকদার, জমকালো রঙিন পোশাকের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ থাকে কিশোর-কিশোরীদের। আর সেদিকটা চিন্তা করে পোশাক নির্মাতারা বা পোশাক বিক্রেতাগণ ঈদের জন্য পোশাক তৈরি বা বিক্রিতে ব্যস্ত থাকে। কাজেই কাপড়ের গুণগত মানের দিকে তাদের নজর থাকে না। ফলে এর একটা বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে শরীরের ওপর। যেমন- গায়ে এলার্জি, চুলকানি বা খোস-পাচড়া হতে পারে, বিশেষ করে রেশমী-পশমি কাপড়ে অতিরিক্ত ঘাম ঝরা অথবা কাপড়ে থাকা কেমিক্যাল বা রঙের ক্ষতিকর প্রভাব অথবা মোটা ও কয়েক লেয়ারের কাপড় দিয়ে তৈরি পোশাক পরে অতিরিক্ত ঘেমে গিয়ে পানি শূন্যতায় ভোগা, এ সবই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কাজেই পোশাকের এই ব্যাপারগুলো মাথায় রেখেই আমাদের পোশাক নির্বাচন করা উচিত। বিশেষকরে আবহাওয়ার সাথে মিল রেখে এবং দেহকাঠামো ও গায়ের রঙের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ রুচিশীল পোশাক পছন্দ করা উচিত।


খাবারের ক্ষেত্রে

সাধারণত ঈদের দিনের প্রধান আকর্ষণ হলো মজাদার খাওয়াদাওয়া। তবে একটু দেখেশুনে খাওয়াটাই উত্তম। উল্লেখ্য, ঈদের দিন সকালের নাস্তাটা হালকা ও পরিমিত আকারে হওয়াটা ভালো। যেমন- নরম খিচুড়ি বা রুটি। সাথে সেমাই, ফিরনি, পায়েস, জর্দা, কাস্টার্ড, হালুয়া, পুডিং ইত্যাদি যে-কোনো ২/৩টা আইটেম রাখা যেতে পারে। পাশাপাশি ফুচকা বা চটপটি ইত্যাদি টক-ঝালের আইটেমও রাখা যেতে পারে যেটা শিশু-কিশোরদের কাছে অত্যন্ত লোভনীয় এবং এটা হজমকারক ও ক্ষুধা উদ্রেককারীও বটে। তবে খেতে হবে পরিমিত পরিমাণে। মূলত ঈদের প্রধান খাবারটাই হয় দুপুরে। এ সময়ে পোলাও, বিরিয়ানি বা ভুনাখিচুড়ি খাওয়া যেতে পারে। খাবার শেষে টক দই খুব উপকারী হজমের জন্য। ঈদের দিনে দুপুরে ও রাতের মেনুতে সালাদ থাকাটা খুবই দরকার। কারণ এটা ক্ষুধা উদ্রেককারী ও হজমকারী। সাথে পর্যাপ্ত  পরিমাণে পানি পান করা উচিত। ঈদ বিকেলে ফলমূল খাওয়া যেতে পারে। ঈদের রাতে এমন হালকা খাবার পছন্দ করা উচিত যেটা সহজেই হজম হয়। সেক্ষেত্রে ভাত-মাছই উত্তম। এ সময় বেশি প্রোটিন ও মশলা জাতীয় খাবার গ্রহণের ফলে বুক জ্বালাপোড়া বা এসিডিটি, বমি, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া, জ্বর ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। কাজেই খাবার গ্রহণে থাকা চাই একটু সতর্কতা। 


কোথাও ঘুরতে যাওয়া

ঈদের বাড়তি আকর্ষণ এটা। যেহেতু ঈদের দিন শিশু-কিশোররা বেশি বেশি মাঠে-ময়দানে ঘুরতে বা আত্মীয়-স্বজনের বাসায় বেড়াতে যেতে পছন্দ করে সেহেতু অসতর্কতায় কিছু দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যেমন- এক্সিডেন্ট, কাটাছেড়া বা জখম, অতিরিক্ত ঘেমে ঠাণ্ডা লাগা বা বাইরের খোলা বাজারের খাবার খেয়ে বা কোমল পানীয় পান করে ফুড পয়জনিং হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। কাজেই সাবধানে চলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।

যাহোক উপরিউক্ত বিধিনিষেধগুলো মোটামুটিভাবে মেনে চলতে পারলে আশা করা যায় যে, ঈদের উৎসবটা ভালোভাবেই কেটে যাবে। এটাই প্রত্যাশা। সুতরাং সবার ঈদ হোক আনন্দময়।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ