ঈদস্মৃতি    -তাসলিমা শেখ

ঈদস্মৃতি -তাসলিমা শেখ

তোমাদের গল্প জুন ২০১৮

সেবার ঈদে অনেক মজা হয়েছিল। ঈদের দিন ফজরের পর রুটিন অনুযায়ী অর্থসহ কুরআন পড়া শেষ করলাম। বাচ্চাদের মানে আমার ভাতিজি-ভাতিজাদের জাগিয়ে দিলাম। ওরা ঘুম থেকে জাগার কিছুক্ষণ পর আনন্দে একজন আরেক জনকে রাতে দেয়া হাতের মেহেদি দেখাতে লাগলো। ঈদের জামায়াত সকাল ৮টায়। আমি প্রতিবারের মতো বাবু ও জাকিয়াকে সাজিয়ে গুছিয়ে দিলাম। ওরা বড়দের সাথে আনন্দ করতে করতে ঈদ মেলায় চলে গেলো।
দুপুরের খাবারের পর আমরা কয়েকজন মিলে বেড়াতে বের হলাম। আমি, আনিকা, রিতু, স্বপ্না, ছোট্ট রোখসানা। আমিনা ফুফুও আমাদের সাথে বের হলেন। গন্তব্য পাশের গ্রামের বান্ধবীর বাসা। সে বান্ধবীটি আমার আত্মীয়াও ছিল। কেবল সবুজ হয়ে ওঠা ধানখেতের আইল দিয়ে গল্প করতে করতে যাচ্ছিলাম আমরা। কোন কোন খেতে ধান না বোনায় সবুজ ঘাসে ছেয়ে ছিল। গত রাতে বৃষ্টি হওয়াতে দুপুর হলেও রোদের তাপে অত বেশি তীব্রতা ছিল না। নীল আকাশে হালকা হালকা সাদা মেঘ ছিলো। সুবহানআল্লাহ..! চারিদিকের পরিবেশ এত সুন্দর! গল্প করতে করতে বেশ দ্রুতই পৌঁছে গেলাম। ওখানেও খাওয়া-দাওয়া, গল্প হলো। আমরা বিদায় নিলে রেনু (আমার বান্ধবী) আমাদের এগিয়ে দিতে আমাদের সাথে সাথে এলো। হাঁটতে হাঁটতে রেনুর সাথে আমি বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছিলাম।
আর আনিকা, রিতু বার বার তাড়া দিচ্ছিল দ্রুত বাড়ি ফেরার জন্য। আমি বললাম, ‘তোমরা হাঁটতে থাক।’ ওরা হাঁটা শুরু করল। আমিনা ফুফু আর রোখসানা আমার পাশেই ছিল। গ্রামের রাস্তা ছেড়ে মাঠের পাশে চলে এসেছি। এ জন্য আমরা একটু দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম। আমি হঠাৎ পিছনে তাকালাম। একি!! রিতু, আনিকা আর স্বপ্না ভয়ে প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে আর ওদের পেছনে ছোট্ট একটি মেয়ে দৌড়াচ্ছে..!! ছোট্ট মেয়েটি ঠিক দৌড়াচ্ছে না যেন সামনের তিনজনকে তাড়া করছে। আমি চিৎকার করে বললাম, এই দাঁড়াও! দাঁড়াও!! কী হয়েছে?
কিন্তু আমার কথায় ভ্রুক্ষেপ না করে ওরা দৌড়াতেই থাকলো। একটু পেছনে তাকিয়ে দেখল যে মেয়েটি এখনো ওদের পিছু ছাড়েনি। ভয়ে ধান খেতের পানির ভেতর দিয়ে দূরে যেতে শুরু করলো।
আমরা মুহূর্তেই বুঝতে পারলাম ছোট মেয়েটিকে দেখে ওরা ভয় পেয়ছে। মেয়েটিকে না থামালে ওরা থামবে না। তাই মেয়েটিকে থামানোর ব্যবস্থা করলাম। অন্য একটি মেয়ে এসে ছোট মেয়েটিকে তাড়িয়ে বাড়ির দিকে নিয়ে গেলো। তখন বুঝতে পারলাম মেয়েটি মানসিক প্রতিবন্ধী। এ জন্যই ওরা ভয় পেয়েছে। মেয়েটিকে তো তার বাড়িতে পাঠিয়ে একটা ব্যবস্থা করা গেলো। কিন্তু ওরা তিনজন কোথায়..!!
ওদের কোথাও দেখা যাচ্ছিল না। বাড়ির দিকে যেতে হলে তো মাঠ পেরিয়েই যেতে হবে। আমরা রেনুকে আল্লাহ হাফেজ বলে ওদের খোঁজার জন্য সামনে এগোলাম।
একটু পর রোখসানা বলে উঠলো, ‘আপু! দেখেন ধান খেতে একটি নতুন জুতা ভাসছে।’ কাছাকাছি যেতেই রোখসানা বললো, আল্লাহ!! আপু, এটা তো আনিকা আপুর জুতা..! নিশ্চয়ই ভয়ে জুতা রেখেই চলে গেছে। আমি বললাম, নিয়ে নাও।
খেত পেরিয়ে সামনের বাড়িতে ঢুকলাম। কিন্তু বাড়িতে মানুষ তো দূরের কথা কোন প্রাণীও নেই। সব ঘরে তালা দেয়া। ঈদের দিন দেখে সবাই বেড়াতে গিয়েছে নিশ্চয়ই। ওরা কোথায় গেলো এটা নিয়ে কথা বলছিলাম। সব বাড়িতেই তো আর ঢুকে পড়া যাবে না। আমাদের কথা শুনেই ওরা কোথা থেকে যেন বের হয়ে এলো। আমি বললাম, কী অবস্থা!! তোমরা এতটুকুতেই ভয় পেয়ে দৌড়াচ্ছিলে..!! আমরা তোমাদের খুঁজে খুঁজে হয়রান!
আনিকা বললো, ‘তুমি কী বলো, আমি তো ভয়েই শেষ..! আমি পাগল দেখে অনেক ভয় পাই।’ ওদের পায়ে, বোরকায় কাদা লেগে গেছে। রোখসানা আনিকাকে তার জুতা দিল। আমিনা ফুফু জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কোথায় লুকিয়ে ছিলে?
ওরা হাসতে হাসতে বললো, ‘সব ঘরে তালা দেখে আমরা বাথরুমে লুকিয়ে ছিলাম!’
আপনাদের কথা শুনে বের হয়ে এসেছি। এ কথা শুনে সবাই হাসতে লাগলো।
ওদের কাণ্ড দেখে আমিও না হেসে পারলাম না। পরে সবাই হাসতে হাসতে বাড়ি ফিরলাম। সেই স্মৃতি মনে পড়লে এখনো প্রচণ্ড হাসি পায়।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ