ঈশপের গল্প

ঈশপের গল্প

অনুবাদ গল্প এপ্রিল ২০১৪

অনুবাদ : হোসেন মাহমুদ

শিক্ষা

Ishoperবিরাট এক বন। সেখানে নানা রকম জীব-জন্তুর বাস। একদিন এক গাধা ও শিয়াল এক সিংহের সাথে একটি চুক্তি করে। এটা সবারই জানা যে বাঁচতে হলে খাবার চাই। আর খাবারের জন্য শিকার করতে হয়। চুক্তিতে বলা হল, এখন থেকে তিনজন একসাথে শিকার করবে। শিকার যা পাওয়া যাবে তা সমান ভাবে ভাগ করে নেবে। তিনজন একসঙ্গে শিকার করলে কাউকে না খেয়ে থাকতে হবে না। সিংহের সাথে শিকারে বেরিয়ে গাধা ও শিয়ালের একটু অস্বস্তি হচ্ছিল। কিন্তু তার সাথে শিকারে যথেষ্ট খাদ্য মিলবে ভেবে জেগে ওঠা অস্বস্তি তারা ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করে। যেহেতু চুক্তি হয়ে গেছে, তাই সিংহকে বিষয়টি জানতে দেয় না তারা। শিকারে গিয়ে গাফিলতি করে না কেউ। বনের নানা জায়গা ঘোরে তারা। জলাশয়ের পাড়ে পরিষ্কার জায়গায় পৌঁছে নিজেদের মধ্যে সলা-পরামর্শ করে। তারপর দু’ ভাগে ভাগ হয়ে যায় শিকারি দলটি। সিদ্ধান্ত হয় যে গাধা শিকারযোগ্য প্রাণির ওপর তীক্ষè দৃষ্টি রাখবে। কাউকে দেখতে পেলে সে তার দিকে এগিয়ে যাবে এবং নিজের পরিচয় দেবে। অন্য দু’জন আড়াল থেকে গাধার দিকে নজর রাখবে। গাধা পরিচয় পর্ব সারার পর শিয়াল আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে গর্জন করে উঠবে। প্রাণিটি স্বাভাবিকভাবেই তখন ভয় পেয়ে যাবে। দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করবে সে। তখন শিয়াল তাকে ধাওয়া করবে। প্রাণিটি তখন শিয়ালকে এড়াতে সোজা দৌড় দেবে, আর গিয়ে পড়বে সিংহের কবলে। সিংহ তখন এক আঘাতে তার দফারফা করবে। সারাদিন ধরে শিকারের পর সন্ধ্যাবেলায় তিনজন সিংহের আস্তানায় পৌঁছে। ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত, কিন্তু ভীষণ খুশি। কারণ বিপুল পরিমাণ শিকার পাওয়া গেছে। সব শিকার ভাগ এবং তার অংশ তাকে দেয়ার জন্য সিংহ গাধাকে অনুরোধ করে। গাধা খুব খুশি হয়। ভাবে, শিকার ভাগ করার দায়িত্ব দিয়ে সিংহ তাকে বিরাট সম্মান প্রদর্র্শন করেছে। খুব সাবধানতার সাথে সে সমস্ত শিকারকে সমান তিন ভাগে ভাগ করে। তারপর দুই সঙ্গীর উদ্দেশে বলেÑ : ভাগের কাজ শেষ। এখন আপনারা দু’জন দয়া করে স্ব স্ব ভাগ গ্রহণ করুন। সিংহ ভাগগুলো একবার চেয়ে দেখে। বলেÑ : তাহলে তোমার মতে আমাদের তিনজনের ভাগই সমান হওয়া উচিত, তাই না? তুমি বোধ হয় মনে কর যে শিকারের সাথে তোমার ইনিয়ে বিনিয়ে গল্প করা আর তাকে আমার হত্যার কাজটা একই সমান! এ কথা বলেই সে গাধার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ও তাকে হত্যা করে। তারপর শিয়ালকে শিকার ভাগ করতে বলে। গাধার পরিণতি দেখে শিয়াল ভয়ে থরথর করে কাঁপছিল। অনেক কষ্টে সে নিজেকে সামলে নিয়ে ভাগ করতে বসে। যা কিছু তারা একসাথে শিকার করেছিল তার প্রায় সবই সে একভাগে রাখে। আরেক ভাগে রাখে সামান্য একটু অংশ যা কি না চোখে প্রায় পড়েই না। তারপর বড় ভাগটা নেয়ার জন্য সে সিংহকে অনুরোধ করে। শিয়ালের ভাগ করা দেখে সিংহ বেজায় খুশি হয়ে বলে- : আচ্ছা, এত চমৎকার আর ন্যায্য ভাগের কৌশল তোমাকে কে শিখিয়েছে? শিয়াল বিনয়ের সাথে বলে- : একটু আগে গাধার পরিণতি দেখে শিখেছি। শিয়াল তখনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়Ñ ভবিষ্যতে আর কোন কাজে সে কখনোই সিংহকে সাথে নেবে না।

শক্তিশালী

এক বনের কিনারে ছিল এক বিরাট গাছ। তার শিকড় যেমন মাটির অনেক গভীরে পৌঁছেছিল তেমনি ডালপালাও চারপাশের অনেকখানি জায়গা জুড়ে ছড়িয়েছিল। তার ঘন পাতার রাশি সূর্য়ের আলো প্রতিরোধ করে মানুষকে ছায়া দিত। গাছটিতে অসংখ্য পাখি বাস করত। মানুষ ও পাখির সমাগমে গাছটির চারপাশের এলাকা মুখরিত থাকত। এই বিরাট গাছের নিচে একটি গাছের চারা গজিয়ে ওঠে। এটি ছিল একটি নমনীয় ও নাজুক হলদি গাছ। সামান্য একটু বাতাসেই তা নুয়ে পড়ত। একদিন দু’ প্রতিবেশী কথা বলছিল। হলদি গাছকে লক্ষ্য বড় গাছটি বলেÑ : ওহে খুদে প্রতিবেশী, তুমি তোমার শিকড়গুলো মাটির আরো গভীরে প্রবেশ করাও না কেন? কেন আমার মত মাথা উঁচু করে দাঁড়াও না? হলদি গাছ মৃদু হেসে বলেÑ : তার কোন প্রয়োজন দেখি না। আসলে এ ভাবেই আমি নিরাপদ আছি। : নিরাপদ! তুমি কি মনে কর যে তুমি আমার চেয়ে নিরাপদ আছ? তুমি কি জান আমার শিকড় কত গভীরে প্রবেশ করেছে? আমার কাণ্ড কত মোটা ও শক্ত? এমনকি দু’জন লোক মিলেও আমার কাণ্ডের বেড় পাবে না। আমার শিকড় উৎপাটিত করবে ও আমাকে ধরাশায়ী করবেÑএমন কে আছে? গাছটি হলদি গাছের দিক থেকে বিরক্ত হয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয়। কার ভাগ্যে কখন কী ঘটে তা কে বলতে পারে? একদিন সন্ধ্যায় ওই এলাকার ওপর দিয়ে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায়। ঘূর্ণিঝড়ে শিকড়সহ গাছ উপড়ে পড়ে, বনের গাছপালা একেবারে ধ্বংস হয়ে যায়। ঝড়ের পর গ্রামবাসী ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেখতে বের হয়। আকাশচুম্বী গাছগুলোর অবস্থা শোচনীয়। সেগুলো হয় উপড়ে পড়েছে অথবা ভেঙে চুরে শেষ হয়ে গেছে। সারা বনের মধ্যে যেন গাছপালার কঙ্কাল ছড়িয়ে আছে। এর মধ্যে শুধু একটি ব্যতিক্রম সবার নজর কাড়ে। তা হলো হলদি গাছ। সেও ঘূর্ণিঝড়ের প্রবল ঝাপটার শিকার হয়ে এদিক ওদিক হেলে পড়েছে কিংবা মাটিতেও লুটিয়ে পড়েছে। ঝড় শেষ হয়ে যাবার পর সে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে ও আবার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তার বিরাট প্রতিবেশীর কোনো চিহ্নও নেই।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ