এপ্রিল ফুলের গল্প

এপ্রিল ফুলের গল্প

গল্প এপ্রিল ২০১৫

তোফাজ্জল হোসাইন#

সামী, এই সামী, কই বাপ, হাত-মুখ ধুয়ে খেতে আয়। মায়ের ডাকে কোনো সাড়া নেই সামীর। ছেলের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে সামীর মা ঘরে এসে বললেন, কী হয়েছে বাপ তোর? শরীর খারাপ করেছে নাকি? - না মা! আমার শরীর ভালো আছে, মনটা খারাপ। স্কুলের বন্ধুরা আমার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করেছে। আমার সাথে প্রতারণা করেছে। আমাকে সবাই বোকা বানিয়েছে। আমি তাদের বললাম, তোমরা আজ আমার সাথে কেন এরকম ব্যবহার করছ? উত্তরে তারা বলে, আজ এপ্রিল ফুল। এপ্রিল ফুলে নাকি মানুষকে বোকা বানাতে হয়। আম্মু, আসলে এপ্রিল ফুল কী? বলো না আম্মু! সামীর মা বলেন, সন্ধ্যায় তোমার ডিসুম মামা আসছে, তাকে জিজ্ঞাসা করলে সে সুন্দর করে বলতে পারবে। এখন খেতে চল। মার কথায় সামী সন্তুষ্ট হলো এই ভেবে, ডিসুম মামা আসছে। সারারাত মামার নিকট থেকে গল্প শুনতে পারবে। ডিসুম মামা হলেন রাহাত। তিনি বেশ কয়েক বছর আগেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স পাস করা একজন সাচ্চা গল্পটে মানুষ। সন্ধ্যায় ডিসুম মামা বিরাট একটা কেক নিয়ে সামীদের বাসায় হাজির। সাথে তার একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু আবু আবদুল্লাহ। পারভেজ সাহেব সুযোগ পেলে সকল নিকট আত্মীয়দের বাড়িতে বেড়াতে যান। বিশেষ করে সামীদের বাসায়। সামী খুব চঞ্চল প্রকৃতির মিষ্টি ছেলে। মামাদের পেয়ে তো মহাখুশি। রাতের খাবার শেষে সামী ডিসুম মামাকে বললো, ‘মামা, তোমার কাছ থেকে এপ্রিল ফুলের গল্প শুনতে চাই। সামীর এ কথা শুনে ডিসুম মামা আশ্চর্য হলেন এবং মনে মনে ভাবতে লাগলেন, কেন সামী তাকে এপ্রিল ফুলের গল্প শুনাতে বললো, নিশ্চয়ই এর পেছনে কোন কারণ আছে? সামীর মামা বললেন, কী হয়েছে বাপ, তোমার বলো তো? মামা ভাগিনার কাছে সকল কথা শুনে মর্মাহত হলেন। আফসোস করে বললেন, আহ! না জেনেই ছাত্রছাত্রীরা ইহুদি-নাসারাদের ষড়যন্ত্রের শিকার। এ কথা বলে গল্প বলা শুরু করলেন মামাÑ এখন থেকে প্রায় ৫৫০ বছর আগে স্পেন ছিল মুসলমানদের অধীনে। এই দেশটি প্রায় আটশত বছর শাসন করেছিল মুসলমানরা। মুসলমানরা এই দেশটাকে এতোটাই আধুনিকভাবে সাজিয়েছিলো, যা এখনও ওই শহরগুলো অপূর্ব ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে পরিচিত। মুসলমানরা যখন শাসন করেছিল তখন আজকের আধুনিক ইউরোপকে বর্বর, অসভ্যদের বাসস্থান বলা হতো। কিন্তু একটা পর্যায় ইহুদিদের পরিকল্পিত প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের কারণে ও দুনিয়ার মোহে মুসলিমরা ইসলাম থেকে দূরে সরে যেতে লাগলো। খ্রিষ্টানরা অনেক আগে থেকেই ক্রুসেড শুরু করে। তার ইসলাম প্রচার, প্রসার ও বিধিবিধান পালনের প্রতি অনীহা বাড়তে লাগল এবং তারা দুনিয়ামুখী হয়ে গেল। এবং একপর্যায়ে মুসলিমদের ঈমানের অবস্থা খুবই শোচনীয় হয়ে পড়লো। ঠিক এমন এক সময় খ্রিষ্টানরা মুসলিমদের ওপর আবারও আক্রমণ করলো। যদিও কিছু মুসলিম বীর ও তাদের সাথীরা চরমভাবে আক্রমণকে প্রতিহত করলো এবং ক্রুসেড বাহিনীকে প্রায় পরাজিত করে ফেলেছিলো। কিন্তু শেষরক্ষা আর হলো না। এক্ষেত্রে খ্রিষ্টানরা মিথ্যা কৌশল অবলম্বন করল। তারা প্রচার করতে লাগল যে স্পেন এখন তাদের দখলে এবং তারা ঘোষণা দিয়ে দিল যে সকল মুসলিম যদি মসজিদ এবং সমুদ্রগামী জাহাজে আশ্রয় নেয়, তবে তারা নিরাপদ। দুর্বল ঈমানের মুসলিমরা শত্রুদের কথা মতো কাজ করলো। তারা মসজিদ ও জাহাজে আশ্রয় নিলো। পরে ক্রুসেড বাহিনী সকল মসজিদকে তালাবদ্ধ করল, এই বলে যাতে মুসলিমরা নিরাপদে থাকে। পরে তারা সব মসজিদে আগুন ধরিয়ে মুসলিমদের পুড়িয়ে হত্যা করল। আর জাহাজগুলোকে তারা ডুবিয়ে দিলো। ছলনা ও প্রতারণার মাধ্যমে এভাবে স্পেন থেকে মুসলিমদের পরাজিত করল। এবং সেখানে এমন একজন মুসলিমও ছিলো না যে কিনা আজান দেবে। অবাক বিম্ময়ে মামার কথা শুনছে সামী! বিগত ৫৫০ বছর স্পেনে কোন আজান হয়নি। মাত্র কয়েক বছর ধরে আজানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মুসলিমদের এই পরাজয়কে স্মরণ করে খ্রিষ্টানরা এপ্রিল ফুল পালন করে থাকে। মুসলিমরা এখনও বোকার মত এপ্রিল ফুল পালন করে নিজেদের ভাইদের জঘন্য হত্যার তামাশা করে, অন্য মুসলিমকে বোকা বানিয়ে। ইংরেজিতে ‘ফুল’ অর্থ বোকা, এপ্রিল ফুল অর্থ এপ্রিলের বোকা। কেউ কেউ বলেন, সপ্তদশ শতাব্দীর আগে ইংরেজি বর্ষের প্রথম মাস হিসেবে জানুয়ারির পরিবর্তে এপ্রিল গণ্য হতো। যেহেতু নববর্ষ, তাই রোমান ইহুদি-খ্রিষ্টানেরা দিনটিকে আড়ম্বরপূর্ণভাবে উদযাপন করত এবং ঠাট্টা করে একে অপরকে অভিনবপন্থায় বোকা বানাত। কেউ ধারণা করেন, যেহেতু ২১ মার্চ থেকে প্রকৃতিতে মওসুমি পরিবর্তন আসে তাই লোকেরা মনে করত, প্রকৃতি কৌতুক করে তাদের বোকা বানাচ্ছে। আরেকটি অভিমত হচ্ছে, ইহুদি-খ্রিষ্টানদের বর্ণনানুযায়ী, ১ এপ্রিলে ইহুদি রোমানরা হযরত ঈসাকে (আ:) বোকা বানিয়েছিল। একটা বিচারকাজের জন্য হযরত ঈসাকে (আ:) প্রথমে ইহুদিদের নেতা ও ধর্মীয় পন্ডিতদের উচ্চ আদালতে পেশ করা হয়, সেখান থেকে তাকে পিলাতোসের আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। পিলাতোস তাকে হিরোডাসের আদালতে পাঠিয়ে দেন যেন তার বিচার সেখানেই হয়। হিরোডাস আবার তাকে পিলাতোসের আদালতে প্রেরণ করে। এভাবে হযরত ঈসা (আ:)কে এক আদালত থেকে অন্য আদালতে প্রেরণের উদ্দেশ্য ছিলো, মূলত তার সাথে পরিহাস করা (নাউজুবিল্লাহ)। তবে সবচেয়ে বিস্ময়কর হচ্ছে, যেদিন খ্রিষ্টানদের নবীকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করা হয়েছে, আত্মবিস্মৃত হয়ে সে দিনটিকেই তারা উৎসবের জন্য বেছে নিয়েছে। তবে এপ্রিল ফুলের সাথে সম্পর্কিত সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা হচ্ছে, ১৪৯২ সালে গ্রানাডা শহরের লোমহর্ষক সেই ট্র্যাজেডি, যাতে মুসলমানদের অগ্নিদগ্ধ করে হত্যা করা হয়েছিল। বাংলাদেশসহ এই উপমহাদেশে দিনটির প্রচলন হয় ১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে ইংরেজদের সাথে যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলাহর পরাজয়ের পরিণামে। ব্রিটিশরা আমাদের প্রায় ২০০ বছর শাসন করেছিল। অন্য অনেক কিছুর মতো ইংরেজরা এ দেশে তাদের শিক্ষা ও সংস্কৃতির নানা বিষয় চালু করে। এর একটি দৃষ্টান্ত, এপ্রিলের ১ তারিখে ‘এপ্রিল ফুল ডে’ চালু করা। মূলত মুসলমানদের বিরুদ্ধে স্পেনের মাটিতে খ্রিষ্টানদের প্রতারণাপূর্ণ বিজয়ের ইতিহাস। এখন আমরা কি পয়লা এপ্রিল হাসি-আনন্দের সাথে ‘এপ্রিল ফুল ডে’ উদযাপন করবো, নাকি ইউরোপের বুকে অসহায় মুসলিম নারী-পুরুষ, শিশুদের নৃশংস হত্যাকান্ডের স্মরণে দুঃখ অনুভব করব? এপ্রিল ফুলের গল্প শুনতে শুনতে সামী বলল, ‘আচ্ছা মামা, আমাদের এখন কী করণীয়? মামা প্রশ্ন শুনে বললেন, মুসলমানদের গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্য রয়েছে তা জানতে হবে। নতুন যুগের তরুণ, শিশু-কিশোরদের বেশি বেশি জানাতে হবে এবং পালন করতে হবে। মামার কথা শুনে সামী মনে মনে শপথ নিলো। ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো, সকলকে জানাব।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ