এমন যদি হতো

এমন যদি হতো

নাটিকা জানুয়ারি ২০১৫

হুসনে মোবারক#

থমথমে প্রেসিডেন্ট হাউজের দরবারকক্ষ, প্রধানমন্ত্রী, সেনাপতি ও পন্ডিত মশাই সবাই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। মহা সমস্যায় জর্জরিত আজ রাজ্যের সব বাসিন্দা। নীরবতা ভেঙে প্রথমে মুখ খোলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী : মহামান্য প্রেসিডেন্ট! অনুমতি দিলে একটি কথা বলবো। (প্রেসিডেন্ট অনুমতিসূচক দৃষ্টিতে তাকান প্রধানমন্ত্রীর দিকে) আমি বলছিলাম কী যখন থেকে এই সমস্যার শুরু, আমাদের সেই দিনটাকে আগে চিহ্নিত করা উচিত। মানে, কখন থেকে, কার কারণে, এই ধরনের বিপর্যয়ে পড়তে হয়েছে আমাদেরকে। প্রেসিডেন্ট : আপনি ঠিকই বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। যেই রাজ্যজুড়ে সুখ আর শান্তিতে ভরেছিলো প্রতিটি মানুষের জীবন, সুখে-দুঃখে একে অপরের সহযোগী ছিলো সারাক্ষণ। কী কারণে এই রাজ্যের সেই সোনালি দিনগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। মানুষের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি-মারামারি, গিবত-পরনিন্দা, খুন-খারাবি, লোভ-লালসা দিন দিন বেড়েই চলেছে। মানুষ আর আগের মতো হাসছে না। একজন আরেকজনের ক্ষতির চিন্তায় মগ্ন সারাক্ষণ। পন্ডিত : মহামান্য প্রেসিডেন্ট! আমার মনে হয় যখন থেকেই রাজ্যে স্বর্ণ নামক অমূল্য বস্তুর আগমন ঘটলো তখন থেকেই এই সমস্যার শুরু। এই স্বর্ণই সকল নষ্টের মূল। এর কারণেই মানুষের মধ্যে লোভ-লালসা বেড়েছে। সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটার আগমন ঘটেছে আমাদের রাজ্যে, সেটা হলো ‘মিথ্যা’। সবাই : মিথ্যা ! পন্ডিত : হ্যাঁ, মহামান্য প্রেসিডেন্ট! এই মিথ্যাই সকল অনিষ্টের মূল। এই রাজ্যের মানুষ এর আগে এই মিথ্যা কথা বলার কৌশল জানতো না। মানুষ জানতই না সত্যের বিপরীত অন্যকিছু আছে। সত্য সত্যই। সবসময় সত্য বলার কারণে অনেক অপরাধপ্রবণতা থেকে মানুষ বিরত থাকতো। (একজন নেশাগ্রস্ত লোককে দু’জন সৈনিক টানতে টানতে প্রেসিডেন্ট হাউজে প্রবেশ করে) প্রেসিডেন্ট : থামো, কী হয়েছে এর, একে কেন নিয়ে এসেছো? সৈনিক-১ : মহামান্য প্রেসিডেন্ট! এই লোকটি রাস্তার পাশে মাতাল অবস্থায় গালিগালাজ করছিলো, আর দোকানপাট ভাঙচুর করছিলো। রাস্তায় প্রহরারত সৈনিকরা তাকে পাকড়াও করে আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে। পন্ডিত : মহামান্য প্রেসিডেন্ট। অনুমতি দিলে এই লোকটিকে আমি কয়েকটি প্রশ্ন করতে চাই। (প্রেসিডেন্ট সম্মতিসূচক মাথা নাড়লেন) আচ্ছা আপনি কী নেশাগ্রস্ত? লোক-১ : না, আমি নেশা করিনি। আমি কিছু খাইনি। মহামান্য প্রেসিডেন্ট আমি কিছু খাইনি। পন্ডিত : আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি কিছু খাননি, আমরা বিশ্বাস করলাম। কিন্তু আপনার হাতে এটা কী? লোক-১ : হাতে, বোতল ! পন্ডিত : বোতলের মধ্যে কী? লোক-১ : এর মধ্যে পানি, হ্যাঁ মহামান্য প্রেসিডেন্ট পানি! পন্ডিত : মহামান্য প্রেসিডেন্ট! তার কথা অনুযায়ী এই লোকটির হাতের বোতলে পানি। কিন্তু আমরা পরীক্ষা করে দেখবো, আসলে এর মধ্যে কী আছে? দেখি আপনার বোতলটা, সেনাপতি আপনি বলুন তো এর মধ্য কি পানি আছে? সেনাপতি : (বোতলের ছিপি খুলে সেনাপতি শুঁকবে) হুম, এর মধ্যে তো নেশা! পন্ডিত : প্রধানমন্ত্রী, আপনি বলুন, এই বোতলে কী আছে? প্রধানমন্ত্রী : মহামান্য প্রেসিডেন্ট, এতো নেশাজাতীয় পানীয়। পন্ডিত : এবার প্রমাণ পেলেন তোÑ প্রথমে সে বলেছে, সে নেশা করেনি, দ্বিতীয়ত বলেছে, বোতলে পানি আছে। দু’টি বিষয়েই সে মিথ্যা কথা বলেছে। প্রেসিডেন্ট : কী সর্বনাশ, মিথ্যা কথা! সেনাপতি এই মিথ্যাবাদীকে বন্দী করো। যথাসময়ে এর বিচারকাজ শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী : সত্যিই চিন্তার বিষয়। এই রাজ্যের মানুষ মিথ্যা কী জানতো না। অপরাধ করলেও সে স্বীকার করতো এবং এতে অপরাধের মাত্রা অনেক কমে আসতো। কিন্তু এই লোকটি দেখছি অপরাধ করেও অস্বীকার করছে। (ফরমালিন মন্ত্রীর আগমন) ফরমালিন মন্ত্রী : মহামান্য প্রেসিডেন্ট! রাজ্যের অধিকাংশ মানুষ ভেজালযুক্ত খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে শহরের মানুষের অসুস্থতার হার বেশি। প্রেসিডেন্ট : এই অসুস্থতার কারণ কী ফরমালিন মন্ত্রী? আর বণিক সম্প্রদায়ের বক্তব্য কী? ফরমালিন মন্ত্রী : মহারাজ, তদন্ত করে জানা গেছে, শহরের অধিকাংশ ব্যবসায়ী ভেজাল খাবার বিক্রি করছে। পুরনো খাবারকে নতুন বলে চালিয়ে দিচ্ছে। পাঁচ-সাতদিন আগের খাবার আজকের বলে বিক্রি করছে। আর এই খাবার খেয়ে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। প্রেসিডেন্ট : কিন্তু মানুষ এই প্রতারণা শিখলো কোত্থেকে! পন্ডিত : মহামান্য প্রেসিডেন্ট, এখানেও এই মিথ্যার আশ্রয়। আমাদের রাজ্যে বাজারের বিক্রেতারা পণ্যের গুণগত মান আগে জানাতো ক্রেতাকে। ক্রেতা তার সাধ্যানুযায়ী পণ্য ক্রয় করতে পারতো। কিন্তু এখন সেটা হচ্ছে না। যেকোনো পণ্যের মান জানতে চাইলে বিক্রেতা তাকে ‘খুব ভালো’ বলে চালিয়ে দেয়। আর এতে করে ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছে। মিথ্যা বলে সে তার পণ্যের ভালো দাম হাঁকাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট : হুম, বুঝতে পেরেছি সব নষ্টের মূলই ঐ মিথ্যা। কোত্থেকে এলো এই মিথ্যা। আমার রাজ্যের মানুষ এই প্রতারণামূলক শব্দের সাথে আগে কখনো পরিচিত ছিলো না। অনুসন্ধান মন্ত্রী : মহামান্য প্রেসিডেন্ট! আমাদের এই রাজ্যে যখন ‘পৃথিবী’ নামক গ্রহের দু’জন নুতন মানুষ প্রবেশ করলো, তখন থেকেই এই দুর্ঘটনার শুরু। তারাই আমাদের এই রাজ্যের মানুষকে ভুলিয়ে ভালিয়ে এই মিথ্যা কথা বলা শিখিয়েছে। আর স্বর্ণকে অমূল্য বস্তু হিসেবে লোভনীয়ভাবে তারাই আমাদের সামনে উপস্থাপন করলো। এর আগে স্বর্ণ সম্পর্কে কেউ জানতো-ই না। সেনাপতি : মহামান্য প্রেসিডেন্ট! আমরাও রাজ্যে যত অঘটন আর দুর্ঘটনা দেখতে পাচ্ছি তার সাথে ঐ দুই আগন্তুকের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সংযোগ সবসময়ই পাচ্ছি। কিন্তু তারা আমাদের রাজ্যের সম্মানিত মেহমান বলে তাদের আমরা কিছুই বলছি না, সব সময় সম্মান দেখিয়েছি। প্রেসিডেন্ট : মেহমান এই রাজ্যে সবসময়ই সম্মানিত। কিন্তু সেই মেহমান যদি সম্মানের সুযোগে এ রাজ্যের শান্তি বিনষ্ট করে, গোলযোগ সৃষ্টি করে, রাজ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, তাহলে তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। যাও সেনাপতি দুই আগন্তুককে বন্দী করে নিয়ে এসো। প্রকাশ্যে, জনসম্মুখে এদের বিচার করা হবে...।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ