এশিয়া কাপের অতীত-বর্তমান

এশিয়া কাপের অতীত-বর্তমান

খেলার চমক আবু আবদুল্লাহ আগস্ট ২০২৩


এশিয়ার ক্রিকেটের সবচেয়ে বড়ো আসর এশিয়া কাপ। কখনো ওয়ানডে কখনো টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আয়োজন করা হয় এই আসর। সাধারণত দুই বছর পরপর আয়োজন করা হয় এশিয়া কাপ। পালাক্রমে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে হয় এই টুর্নামেন্ট। এ বছর অনুষ্ঠিত হবে আইসিসি ওয়ানডে বিশ^কাপ, তাই দলগুলোকে  প্রস্তুতির সুযোগ করে দিতে এবার এশিয়া কাপও ৫০ ওভারে হবে। এভাবে ২০১৬ সাল থেকে আইসিসি বিশ^কাপের সাথে মিল রেখে একবার ৫০ ওভার ও আরেকবার ২০ ওভারের এশিয়া কাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়।

আসরের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা, গত আসরে তারা ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে।


যেভাবে শুরু

এশিয়ার ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করতে ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি)। পরের বছর থেকে শুরু হয় এশিয়া কাপ আয়োজন। প্রতি দুই বছর পর পর টুর্নামেন্ট আয়োজনের পরিকল্পনা থাকলেও বিভিন্ন সময় তা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। ১৯৮৪ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজায় বসে এশিয়া কাপের প্রথম আসর। সেবার অংশ নেয় তিন দেশ- ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কা তখন আইসিসি পরিবারের নতুন সদস্য। ভারত চ্যাম্পিয়ন হয় সে আসরে।

এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সম্প্রীতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই টুর্নামেন্ট আয়োজন শুরু হলেও দেশগুলোর বিভিন্ন রাজনৈতিক সঙ্কটের প্রভাব পড়েছে এতে। শ্রীলঙ্কার সাথে দ্বন্দ্বের কারণে প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন ভারত বয়কট করেছে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় আসর (১৯৮৬)। আবার ভারতের সাথে খারাপ সম্পর্কের জের ধরে ১৯৯০ এশিয়া কাপ বয়কট করে পাকিস্তান। ১৯৯৩ সালে তো এসব কারণে টুর্নামেন্টই বাতিল হয়ে যায়।

২০০৯ সাল থেকে আবার নিয়মিত দুই বছর পর এশিয়া কাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। সেই সাথে টুর্নামেন্টের সব ৫০ ওভারের ম্যাচকে ওয়ানডে স্ট্যাটাস দেয় আইসিসি। যার ফলে ওয়ানডে স্ট্যাটাস না পাওয়া কোনো দেশ যদি এই টুর্নামেন্টে সুযোগ পায়, তাহলেও তাদের খেলা ম্যাচগুলো আন্তর্জাতিক ম্যাচ হিসেবে গণ্য হবে।

এ বছরও এশিয়া কাপের আয়োজন নিয়ে কম ঝামেলা হয়নি। এবারের আয়োজক ছিল পাকিস্তান; কিন্তু রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে সেখানে গিয়ে খেলতে রাজি হয়নি ভারত। এরপর পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দুই দেশে এশিয়া কাপ আয়োজনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। যার নাম হয়ে যায় হাইব্রিড এশিয়া কাপ।


এশিয়া কাপে বাংলাদেশ 

১৯৮৬ সালে এশিয়া কাপের দ্বিতীয় আসরে প্রথমবারের মতো অংশ নেয় বাংলাদেশ। তখন বাংলাদেশ ছিল আইসিসির সহযোগী সদস্য রাষ্ট্র, এমনকি ওয়ানডে স্ট্যাটাসও পায়নি। এরপর ১৯৮৮ সালে এশিয়া কাপের তৃতীয় আসরে আয়োজক হয় বাংলাদেশে। সেটিই বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। খেলায় প্রথম সাফল্য পেতে অবশ্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ২০০৪ সাল পর্যন্ত। সেবার গ্রুপ পর্বে হংকংকে হারিয়ে সুপার ফোরে গিয়েছিল বাংলাদেশ।

২০১২ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপ বাংলাদেশের জন্য একই সাথে আনন্দ ও আফসোসের স্মৃতি হয়ে আছে। সেবারই প্রথম বড়ো দলগুলোর বিরুদ্ধে জয়ের দেখা পায় বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্বে প্রথমে ভারত ও পরে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ফাইনালে যায় সাকিব-মুশফিকরা।

গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে হারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের দেওয়া ২৯০ রানের টার্গেট তাড়া করে জেতে বাংলাদেশ। শচীন টেন্ডুলকারের শততম সেঞ্চুরির আনন্দ সেদিন মাটি হয়েছিল সাকিব-মুশফিকের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে। শেষ সময়ে সাকিবের ৩১ বলে ৪৯ আর অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের ২৫ বলে অপরাজিত ৪৬ রানের ইনিংসে টাইগারদের ৫ উইকেটের জয় নিশ্চিত হয়। আর শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ফাইনাল স্বপ্ন পূরণ হয়।

ফাইনালে প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান। শেষ ওভারে মীমাংসা হওয়া টানটান উত্তেজনার ফাইনালে মাত্র দুই রানে পরাজিত হয় বাংলাদেশ। পাকিস্তানকে ২৩৬ রানে আটকে দিয়েও জেতা সম্ভব হয়নি অল্পের জন্য। শেষ ওভারে জয়ের জন্য ৯ রান দরকার ছিল, বাংলাদেশ নিতে পেরেছে ৬ রান।

মিডল অর্ডারে নাসির হোসেনের ৬৩ বলে ২৮ রানের কচ্ছপ গতির ইনিংসটিকে অনেকে দায়ী করেন পিছিয়ে পড়ার জন্য। সেই ম্যাচে পরাজয়ের পর সাকিব-মুশফিকদের কান্না আজো মনে গেঁথে আছে এদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের।

এরপর ২০১৬ ও ২০১৮ সালে পরপর দুই আসরে ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। তবে দুবারই ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে শিরোপা বঞ্চিত হয় টাইগাররা। প্রথমবার ৮ উইকেটে ও পরের বার ৩ উইকেটে।

২০২০ সালে করোনা ভাইরাসের মহামারীর কারণে স্থগিত হয়ে যায় এশিয়া কাপ। আর সর্বশেষ ২০২২ এশিয়া কাপ অবশ্য ভালো কাটেনি বাংলাদেশের জন্য। গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে বিদায় নেয় তারা।


- শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যান সনাথ জয়সুরিয়া এশিয়া কাপে সর্বাধিক রান সংগ্রাহক। এশিয়া কাপে মোট ১২২০ রান করেছেন তিনি (২৪ ইনিংস)। সর্বাধিক সেঞ্চুরিও জয়সুরিয়ার ৬টি।

- সেরা বোলিং ফিগার শ্রীলঙ্কান অফস্পিনার অজন্তা মেন্ডিসের। ২০০৮ সালের ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে ১৩ রানে ৬ উইকেট। সবচেয়ে বেশি উইকেটও এক লঙ্কানের। মুত্তিয়া মুরালিধরন ২৪ ম্যাচ খেলে পেয়েছে ৩০ উইকেট।

- এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রান বিরাট কোহলির (১৮৩)।


এশিয়া কাপ রোল অব অনার


আসর চ্যাম্পিয়ন রানার আপ

১৯৮৪ ভারত শ্রীলঙ্কা

১৯৮৬ শ্রীলঙ্কা পাকিস্তান

১৯৮৮ ভারত শ্রীলঙ্কা

১৯৯০ ভারত শ্রীলঙ্কা

১৯৯৫ ভারত শ্রীলঙ্কা

১৯৯৭ শ্রীলঙ্কা ভারত

২০০০ পাকিস্তান শ্রীলঙ্কা

২০০৪ শ্রীলঙ্কা ভারত

২০০৮ শ্রীলঙ্কা ভারত

২০১০ ভারত শ্রীলঙ্কা

২০১২ পাকিস্তান বাংলাদেশ

২০১৪ শ্রীলঙ্কা পাকিস্তান

২০১৬ ভারত বাংলাদেশ

২০১৮ ভারত বাংলাদেশ

২০২২ শ্রীলঙ্কা পাকিস্তান


আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ