ঐতিহাসিক রাজবাড়ী

ঐতিহাসিক রাজবাড়ী

ভ্রমণ অক্টোবর ২০১২

হাসিবুল হাসান.. মানুষের মন সততই জ্ঞান অর্জন করতে উৎসুক কেননা মানুষের জন্মগত প্রকৃতি হল অজানাকে জানা। পুঁথিগত বিদ্যা মানুষকে জ্ঞানের সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে ব্যর্থ। তাছাড়া বইয়ের পাতা থেকে যে জ্ঞান ও ধারণা পাওয়া যায় তা অস্বচ্ছ ও অস্পষ্ট। আর আল্লাহর সৃষ্টি প্রাকৃতিক এই সৌন্দর্য ও বাস্তব জ্ঞান অর্জন এ সব কিছুর জন্য প্রয়োজন ভ্রমণ অর্থাৎ শিক্ষামূলক ভ্রমণের। দুই তিন দিন আগে থেকে চলছিল উত্তেজনার রেশ। ভ্রমণকে আরও উপভোগ্য ও আনন্দদায়ক করার জন্য চলছে সবার প্রচেষ্টা। যেহেতু আমাদের সফরে স্থান, দিন ও তারিখ পূর্বেই ঠিক করা হয়েছিল, তাই ব্যক্তিগতভাবে বলতে গেলে আমি ও আমার বন্ধুদের মধ্যে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা। আমাদের ভ্রমণটি ছিল আমদের স্কুল আল হেলাল ইসলামী একাডেমী কর্তৃক আয়োজিত। ভ্রমণের আগের দিন সন্ধ্যা থেকে চলছিল দারুণ আনন্দ। সারারাত উত্তেজনা ঘুমকে তাড়া করে ফিরছিল। প্রহর গুনছিলাম সকালের অপেক্ষায়। খুব সকালে গোসলসহ নামাজ সেরে নিয়ে আমরা তৈরি হয়ে গেলাম। হালকা করে প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। দিনের আলো যখন ফুটে উঠেছে, পাখিরা কিচিরমিচির ডাক শুরু করেছে, তখনই আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষক জনাব মো: মাহবুবল আলমসহ অন্যদের নির্দেশনাবলি আমরা শ্রবণ করলাম। তারপর ভ্রমণকে নিরাপদ ও সুষ্ঠুভাবে শেষ করার জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে মোনাজাত শুরু হল। যাইহোক, এর পর আমরা গাড়িতে উঠে বসলাম। আমার সিট হলো ৫ নং গাড়িতে। একটু পরে গাড়ি চলতে শুরু করল। প্রকৃতির মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতে বেজে গেল ৯টা। তারপর ৯.০৮ মিনিটে আমরা গাড়ি চলন্ত অবস্থায় নাশতা করলাম। আমরা নাটোরে প্রবেশ করে উপভোগ করলাম সেখানকার সৌন্দর্যমণ্ডিত এলাকা। দেখতে দেখতে আমরা পৌঁছে গেলাম আমাদের ভ্রমণের কেন্দ্রবিন্দু অর্থাৎ রাজবাড়ীতে। সুন্দর লাল প্রবেশপথ দিয়ে আমরা ভেতরে প্রবেশ করলাম। শুরুতে রয়েছে মনকাড়া কিছু সুন্দর ফুলগাছ দিয়ে সাজানো। ফুল বাগানে দেখলাম রাজাদের বসবাসের বাড়িসমূহ, যদিও কিছু কিছু বাড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল তবুও সবগুলোই ছিলো প্রাচীন কারুকাজমণ্ডিত। সেগুলো সত্যিই আমার মনে নাড়া দিয়েছিল। আমরা সেখানে মন্দির দেখলাম। উল্লেখিত রয়েছে যে, ছোট তরফের রাজারা শক্তির উপাসনা করতেন। সেই সংস্কৃিত আজও সেখানকার কালীমন্দির বহন করে চলেছে। সামনে দেখলাম দু’টি পুকুর। ছোট ও বড় তরফের রাজারা সেগুলো ব্যবহার করতেন। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো বহুল প্রচলিত নাটোরের কাঁচাগোল্লা। সেদিন মজা করে খেলাম। আমরা যা দর্শন করলাম শিবমন্দির : আমরা যেদিন সেখানে যায় সেই দিন শিবমন্দিরে পূজা হচ্ছিল। কয়েকজন ধর্মযাজক তাদের প্রভুর যজ্ঞ করছিল। পরিখা : রাজবাড়ীতে রাজারা শত্রুর হাত থেকে বাঁচতে রাজবাড়ীর চারপাশে এক মিটার প্রস্ত বিশিষ্ট পরিখা খনন করেছিলেন। সেই স্মৃতি আজও অক্ষত রয়েছে। আমগাছ : আমরা কিছু আমগাছ সেখানে দেখলাম যেগুলো ছিল খুবই মোটা। দেখে অনুমান করা যায় যে, হয়ত গাছগুলো ২০০ বছর আগের। কালিমন্দিরের গায়ে আমরা কিছু বাক্য দেখতে পেলাম। যার মধ্যে একটি ছিলÑ চন্ডিদাস লিখেছেন, শুন হে মানুষ ভাই, সবার ওপরে মানুষ সত্য তাহার ওপর নাই। ঘোড়াশাল : রাজাদের পালনের জন্য ঘোড়াদের পাঁচটি খাদ্য স্থান দেখলাম, যা দেখে অনুমান করা যায় সেখানে রাজাদের পালনকৃত পাঁচটি ঘোড়া থাকত। দেখতে দেখতে দুপুর হয়ে গেল আমরা খাওয়া দাওয়া সেরে নিলাম। আরেকটু এদিকে ওদিকে ঘুরে এবং কিছু কেনাকাটা করে সময় হয় রাজশাহী যাবার। দীর্ঘপথ চলার পর আমরা রাজশাহী পৌঁছলাম। শহীদ জিয়া শিশুপার্কে প্রবেশ করলাম। উপভোগ করলাম সেখানকার সুন্দর সব জিনিস। কারণ বিনোদনের জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছুই সেখানে রয়েছে। শিক্ষকদের নির্দেশনা অনুযায়ী সন্ধ্যার পরেই সময় হল ফেরার। মন চায় না, তবে কিছু করার নেই বাস্তবকে যে মেনে নিতেই হবে। শুরু করতে হবে আবার সেই চিরচেনা জীবনপ্রবাহ। আমার একটু মন খারাপ হচ্ছিল এই ভেবে যে, সব আনন্দ শেষ। তারপর আমরা রওনা দিলাম। বাসের মধ্যে পুরো রাস্তা আমরা কয়েকজন বন্ধু ভীষণ আনন্দ করলাম। অবশেষে দীর্ঘপথ পাড়ি দেয়ার পর এসে পৌঁছলাম চিরচেনা সেই সাপাহারে। মা-বাবার কাছে ভালোভাবে পৌঁছতে পেরে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করলাম। তবে এটা চিরসত্য যে, ভ্রমণ তথা শিক্ষাসফর আমাদের সবার জন্য প্রয়োজন। মন ভালো রাখাসহ একগুঁয়েমি দূর করা এবং বাস্তব জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রতি বছর শিক্ষা সফর করা অতি গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ