কঠিন চ্যালেঞ্জ

কঠিন চ্যালেঞ্জ

কুরআনের আলো জুলাই ২০১৫

বইটা খুলেই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে গেল আবির। না, তার বাবা কখনোই ভুল করতে পারেন না। তা ছাড়া বইটা লেখার সময় বাবা কত পরিশ্রম করেছেন, সে তা দেখেছে। আর প্রেসে যাওয়ার আগ মুহূর্তে? বাবা তো নাওয়া-খাওয়া ছেড়েই দিয়েছিলেন বলা চলে। কত যে কাটা-ছেঁড়া, সংযোজন-বিয়োজন তিনি করেছেন, তার হিসাব কে জানে? সবকিছু ফাইনাল হওয়ার পরও অন্তত দশবার তিনি বইটি আগাগোড়া পড়েছেন। উদ্দেশ্য, একটা নির্ভুল বই উপহার দেয়া। তাহলে বাবা কেন এ কথা লিখে দিয়েছেন যে, ‘এ বইয়ে কোনো ভুল-ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে আমাদের জানাবেন, পরবর্তী সংস্করণে তা সংশোধন করা হবে’। বাবাকে তো সে খুব আত্মবিশ্বাসী বলেই জানে, তাহলে কেন এই দুর্বলতা প্রকাশ?
সাত-পাঁচ না ভেবে বাবার ঘরে ছুটে গেল আবির। বাবাকে যথারীতি কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে বসল সে। ছেলের কান্ড দেখে জনাব ফজলুর রহীম তো হেসেই খুন। মনে মনে ভাবলেন, এ তো তার আবেগ, কিশোর মনের কৌতূহলী জিজ্ঞাসা। এখনই তাকে সঠিক বিষয়টা জানানোর উপযুক্ত সময়। কিছুক্ষণ চুপ থেকে এবার তিনি মুখ খুললেন। বললেন, শোনো বাবা! কোনো মানুষই ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। মানুষ ভুল করবে, এটাই সবচেয়ে নির্ভুল কথা। এ জন্য মানুষের লেখা বইয়ে ভুল থাকাটাই স্বাভাবিক। আর পৃথিবীর কারো পক্ষেই নির্ভুল কোনো গ্রন্থ রচনা সম্ভব নয়।
আবির প্রশ্ন তুলল, সব বইয়ে ভুল থাকার সম্ভাবনা থাকলে মানুষ সঠিক জ্ঞান কোত্থেকে শিখবে? বাবা বললেন, মানুষকে সঠিক পথের নির্দেশনা দেয়ার জন্য আল্লাহ কুরআন নাজিল করেছেন। যা একমাত্র নির্ভুল গ্রন্থ। কুরআনের সূচনাতেই আল্লাহ বলেছেন, “এই সেই কিতাব, যাতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই”। (সূরা আল বাকারাহ : ২)। শুধু তা-ই নয়, বিশ্ববাসীর কাছে কুরআন এভাবে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে যে, “এই কুরআনের সমকক্ষ কোনো গ্রন্থ রচনার জন্য সমগ্র মানুষ ও জিন যদি একত্রিত হয় এবং তারা একে অপরের সাহায্যকারীও হয়; তবু তারা এর অনুরূপ কিছু রচনা করে আনতে পারবে না।” (সূরা বনি ইসরাইল : ৮৮)
আবির অবাক। তার কৌতূহলী চোখ দুটো আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠল। ‘আচ্ছা, কুরআনের এই চ্যালেঞ্জ কি কেউ গ্রহণ করেছে বাবা? আবির জানতে চাইল। বাবা বললেন, সে যুগের আরবি ভাষার বড় বড় কবি-সাহিত্যিকও বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে স্বীকার করেছেন, এটা কোনো মানুষের কথা হতে পারে না। তবে ছোট্ট একটি গল্প শোনোÑ
ইসলামবিদ্বেষী একটি গোষ্ঠী একবার সিদ্ধান্ত নিলো কুরআনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার। তারা ইবনুল মুকাফফা নামে এক প্রতিভাবান কবির সাথে চুক্তিবদ্ধ হলো। কবি দ্বিতীয় আরেকটি কুরআন রচনার জন্য এক বছর সময় নিলেন। কুরআন রচনার কাজ চলছে। কাজের অগ্রগতি দেখার জন্য ছয় মাস পর তারা কবির কাছে আবার এলো। কবি তখন কলম হাতে গভীর চিন্তায় বিভোর। তারা দেখল, কবির কক্ষ ছেঁড়া কাগজে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। মাটিতে শুধু কাগজের টুকরো। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বললেন, আমি বারবার লিখি এবং তা ছিঁড়ে ফেলি। কারণ, কুরআনের রচনাশৈলীর কাছে আমার সব লেখাই তুচ্ছ হয়ে যায়। ছয় মাসে আমি একটি লাইনও ফাইনাল করতে পারিনি। কবি লজ্জিত হলেন। অকপটে স্বীকার করলেন তার পরাজয়ের কথা।’
এক পশলা অনুভবের বৃষ্টি যেন আবিরের কচি হৃদয়টা ভিজিয়ে দিলো। বুকে তার কুরআনের প্রতি ভালোবাসা উপচে পড়ছে। না, এখন থেকে সে অর্থসহ কুরআন পড়া শিখবে। নির্ভুল গ্রন্থ পড়েই গড়ে তুলবে নির্ভুল জীবন।

গ্রন্থনায় : বিলাল হোসাইন নূরী
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ