কথার দাম   -আবদুল হালীম খাঁ

কথার দাম -আবদুল হালীম খাঁ

গল্প জানুয়ারি ২০১৭

হরমুজান ইরানের ছোটখাটো এক রাজা। রাজা হিসাবে ছোট হলেও দুষ্টুমিতে ছোট নয়। ভীষণ পাকা। ইসলামের বড় দুশমন। মুসলমানদের ভালো সে দেখতে পারে না। এবং তাদের ভালো কাজ, ভালো কথা সহ্য করতে পারে না। মুসলমানদের সাথে কয়েকবার যুদ্ধ করেছে। প্রতিবারই পরাজিত হয়ে সন্ধি করে আত্মরক্ষা করেছে, রাজ্যও রক্ষা করেছে। কিন্তু সন্ধির সে কোনো মর্যাদা দেয়নি। সুযোগ পেলেই আবার চুক্তি ভঙ্গ করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছে।
এর ফলে হরমুজানের সঙ্গে আবার যুদ্ধ বাধে। হরমুজান এক দুর্গে অবরুদ্ধ হয়। অবরুদ্ধ থেকে সে বললো : আমি আত্মসমর্পণ করবো, কিন্তু এক শর্তে।
কী সে শর্ত?
আমাকে স্বয়ং খলিফা ওমরের কাছে পাঠাতে হবে। তিনি যে বিচার করেন, সে বিচারই আমি মেনে নেবো।
আচ্ছা বেশ।
মুসলমান সেনাপতি তাতেই রাজি হলেন। হরমুজানকে বন্দী করে পাঠালেন খলিফার কাছে। হরমুজান প্রচুর ধনসম্পদ, অপরিসীম শান শওকত, রূপ জৌলুস আর লোক লস্কর নিয়ে মদিনায় এলেন খলিফার সাথে দেখা করতে। হযরত ওমর (রা) তখন মসজিদে ছিলেন। মুসলমানরা রাজা হরমুজানকে নিয়ে এলো। অতি সাধারণ এক মসজিদ। ধুলাবালি ভরা। তাতে কোনো সৌন্দর্য নেই। চাকচিক্য নেই। সেখানে কোনো মন্ত্রী নেই। সৈন্য সামন্ত নেই। প্রহরী নেই। খলিফার জন্য কোনো সিংহাসন বা বসার পৃথক কোনো আসন নেই।
মসজিদ দেখে হরমুজান বললো, এখানে আমাকে নিয়ে এলে কেন? আমাকে খলিফার কাছে নিয়ে চলো। আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করে কথা বলবো। খলিফা ওমর (রা) তখন মসজিদের এক কোণে মোটা একটা কাপড় পরে ছেঁড়া জামা গায়ে ঘুমিয়ে ছিলেন।
এ লোক বললো, আমাকে তোমরা পাগল মনে করছো?
খলিফা যেখানে সেখানে আমাকে নিয়ে চলো। তাকে দৃঢ়ভাবে বলা হলো আবার, উনিই আমাদের খলিফা হযরত ওমর। হরমুজান এবার অবাক হয়ে গেলেন। নিজের চোখকে বিশ^াস করতে পারলেন না। এ কী শুনছি! এ কী দেখছি! সে হাতে চোখ মুছে আবার ভালো করে তাকালো। না! সেই অবস্থায়ই সে যে দেখছে। সে আবার চোখ মুছে তাকালো। সাজ নেই। শয্যা নেই। সামান্য একজন প্রহরীও নেই। অর্ধ পৃথিবী যার নামে কেঁপে ওঠে, বিরাট ক্ষমতার বাদশাহ এমন ধুলাবালি ভরা মসজিদে মাদুরের ওপর শুয়ে আছেন?
আশ্চর্যের ব্যাপার তো!
লোকজনের কথায় খলিফার ঘুম ভেঙে গেল। তিনি হরমুজানকে জিজ্ঞেস করলেন, কে তুমি? কী চাও? মুসলমানরা উত্তর দিলেন, উনি ইরানের বাদশাহ হরমুজান, আত্মসমর্পণ করতে এসেছেন। খলিফা বললেন, আত্মসমর্পণ করবে, তবে এতো শান শওকত কেন?
হরমুজান রাজপোশাক খুলে সাধারণ বন্দীর বেশে খলিফার কাছে হাজির হলো।
খলিফা বললেন, হরমুজান, তুমি অনেকবার বিশ্বাসঘাতকতা করেছো। শত শত মুসলমানকে হত্যা করেছো। শতবার সন্ধির শর্ত অমান্য করছো। এখন কী রকম ব্যবহার আশা করছো?
হরমুজান ধীরে সুস্থে জবাব দিলো, আপনার যা ইচ্ছে করতে পারেন। আমার বলবার কিছু নেই।
খলিফা ওমর ফারুক গম্ভীরভাবে বললেন, তোমার মতো জালিম রাজার শাস্তি মৃত্যুদন্ড ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। আমি তোমাকে মৃত্যুদন্ড দিলাম। কী তোমার বলবার আছে, বলো।
শাস্তির কথা শুনে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললো, হযরত, আমার দারুণ পিপাসা লেগেছে। একটু পানি খাবো। আমাকে এক গ্লাস পানি দিতে বলুন।
পানি দেয়া হলো।
হরমুজান হাত জোড় করে নিবেদন করলো, আমায় অভয় দিন, হযরত এ পানি খাওয়ার আগে আমাকে মারবেন না।
খলিফা হেসে বললেন, তাই হবে। হরমুজান পানি মুখে দিলো না। গ্লাস শুদ্ধ পানি মাটিতে ফেলে দিলো। পানি তখনই মাটিতে মিশে গেল।
এরপর একটু দম নিয়ে স্মিত হেসে হরমুজান বললো, আপনি কথা দিয়েছেন হযরত, এই পানি খাওয়ার আগে আমাকে হত্যা করবেন না। মাটিতে সব পানি তো শুষে গেছে। সে পানি খাওয়া আর সম্ভব নয়। আমাকে এখন মুক্ত করে দিন হযরত। মুসলমানরা হরমুজানের চালাকি দেখে ক্ষেপে গেল। তারা গর্জন করে বললো, খলিফার সঙ্গে চালাকি! দেখাচ্ছি মজা!
খলিফা মুসলমানদের থামালেন। বললেন, আমার কথার অমর্যাদা করবো না। আমি ওকে মুক্ত করে দিলাম।
হরমুজান বেঁচে গেল। সে খলিফার উদারতা ও মহত্ত্ব দেখে তওবা করে মুসলমান হয়ে গেল।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ