কাঠঠোকরা এবং বেজি -তমসুর হোসেন
গল্প মার্চ ২০১৭
অনেক কষ্টে বাসা তৈরি করলো কাঠঠোকরা। তার স্ত্রীর ডিম পাড়ার সময় হয়েছে। ডিম দেয়া হলে উভয়ে তা দিতে লাগলো। এবার দুটো ডিম দিয়েছে সোনালি। ক’দিন পরে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হবে। একদিন কাঠঠোকরা বাড়ি ফিরে দেখলো বউ গাছের ডালে বসে অঝোর নয়নে কাঁদছে। এ অবস্থা দেখে বউকে জিজ্ঞাসা করলো সে, ‘কী হয়েছে। কাঁদছো কেন?’ ‘কেউটে আমাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে।’ ‘এত বড় সাহস কেউটের! দেশে কি আইন নেই?’ ‘ও ডিমও খেয়ে ফেলেছে।’ ‘তুমি নিষেধ করোনি?’ ‘নিষেধ করিনি আবার। ও কোন কথাই শুনলো না।’ কাঠঠোকরা দেখলো কেউটে ওর বাসায় আরাম করে শুয়ে আছে। কী স্পর্ধা! জোর করে বাসায় ঢুকে ডিম খেয়ে বউকে বের করে দিয়েছে। বউটা কেঁদে কেঁদে হয়রান হলেও মনে দয়া হচ্ছে না ওর। বাসায় ঢুকে যে একটু বিশ্রাম নেবে তার সুযোগ নেই। পরের বাসায় পা চালিয়ে শুয়ে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। সে চিৎকার করে বললো, ‘এই যে বড় লোকের পুত্র। শুনতে পাচ্ছো? ভালো চাওতো বাসা ছেড়ে এক্ষুনি চলে যাও।’ ‘না গেলে কী করবে?’ ‘পুলিশে ধরিয়ে দেবো।’ ‘তবে তাই করো। দেখি কোন পুলিশ আসে।’ ‘ভালো চাওতো চলে যাও। পুলিশ এলে সমস্যা হবে।’ ‘আরে রাখো। রাজা কেউটের নাম শুনলে কেউ আসবে না।’ কাঠঠোকরা বউকে নিয়ে থানায় গেলো। থানার বারান্দায় বসে আছে মনের সুখে দারোগা ঝুটি বক। পায়ের ওপর পা দিয়ে সে গানও গাচ্ছে। তা দেখে জড়সড় হয়ে কাঠঠোকরা বললো, ‘স্যার, রাজা কেউটে আমার বাসায় শুয়ে আছে।’ ‘ভালো করে বলো। একদম শুনতে পাইনি।’ ‘ডিম খেয়ে ফেলেছে রাজা কেউটে।’ ‘কার নাম বললে?’ ‘রাজা কেউটে।’ ‘মন চেয়েছে তাই খেয়েছে। অভিযোগ কিসের?’ ‘আপনি আইনের লোক। আমরা সুষ্ঠু বিচার চাই।’ ‘বিচার চাইলে কোর্টে যাও। এখানে এসেছো কেন?’ বকের কাছে পাত্তা না পেয়ে তারা কোর্টে গেলো। কোর্টের নিয়ম কানুন কিছুই জানে না তারা। ক্ষুধার্ত দেহে তারা গাছের তলায় বসে থাকলো। তাদের দেখে ধূর্ত শেয়াল এলো সেখানে। পাশে বসে অনেক কথা বললো শেয়াল। তারপর বিনয়ের সুরে বললো, ‘বাড়ি কোথায় দাদা। কোর্টে কেন এসেছেন?’ ‘বাড়ি অনেক দূরে। মামলা করবো বলে এসেছি।’ ‘কার বিরুদ্ধে মামলা?’ ‘রাজা কেউটের বিরুদ্ধে।’ ‘কী ক্ষতি করেছে ?’ ‘বাসায় ঢুকে ডিম নষ্ট করেছে।’ ‘চিন্তা নেই। আমার হাতে ঝানু উকিল আছে।’ শেয়াল তাদেরকে ভুলিয়ে ভালিয়ে পেঁচক উকিলের কাছে নিয়ে গেলো। কালো গগস পরে দামি চেয়ারে বসে পা নাচাচ্ছে পেঁচক উকিল। শেয়াল তার কানে কানে বললো, ‘ওস্তাদ, ওরা মামলা করতে চায়।’ পেঁচক দপ্তরের কাজে দারুণ ব্যস্ত। জমিজমার জটিল মামলা নিয়ে খদ্দেরের সাথে কথা বলছে টেলিফোনে। আলাপ শেষে কাঠঠোকরার দিকে মুখ করে হেঁয়ালি কণ্ঠে বলতে লাগলো, ‘কী বিষয়ে মামলা করতে চাও?’ ‘বাসা দখল আর ডিম খাওয়ার বিষয়ে।’ ‘তাহলে দুটো কেস লাগাতে হবে।’ ‘জলদি ব্যবস্থা নিন হুজুর। আমরা আশ্রয়হীন হয়ে গেছি।’ ‘অনেক ল’ইয়ার সাথে নিয়ে লড়তে হবে।’ ‘ওকে উচিত সাজা দিন হুজুর। আমাদের কেউ নেই।’ ‘প্রচুর খরচ পড়বে কেস চালাতে।’ ‘কতো খরচ পড়বে হুজুর?’ ‘দশ লাখ। অগ্রিম পাঁচ দিতে হবে।’ ‘পেটে ভাত নেই। এতো টাকা কোথায় পাবো হুজুর।’ ‘তাহলে মামলায় এসেছো কেন?’ উকিলের দপ্তর ছেড়ে রাস্তার পাশে বসে থাকে তারা। কিছু খেয়ে নেয়া দরকার। কী করবে তারা? পকেটে টাকা নেই। এমন সময় সেখানে এলো মারদাঙ্গা বেজি। সে কাছে এসে ওদের খোঁজ খবর নিলো। ওদের করুণ দশা দেখে রেস্তোরাঁয় নিয়ে খাবার খাওয়ালো। সে আন্তরিকভাবে বললো, ‘কোর্টে কেন এসেছো তোমরা? এটা ভালো জায়গা না।’ ‘এসেছি মামলা করতে।’ ‘মামলা হয়েছে?’ ‘দশ লাখ ছাড়া পেঁচক উকিল মামলা নেয় না।’ ‘দশ লাখ! কিন্তু কেসটা কী?’ ‘রাজা কেউটে বাসা দখল করে ডিম খেয়েছে।’ ‘চলো তো দেখি। কতো শক্তি রাজা কেউটের।’ কাঠঠোকরোর সাথে বাসায় যায় মারদাঙ্গা বেজি। মাথায় আগুন ধরে গেছে তার। ডিম খাওয়া বার করবে সে। পেঁচকের কতো টাকা দরকার তাও দেখবে। সে দেখলো কেউটে কোথায় যেন চলে গেছে। খাবারের জন্য বাইরে গিয়ে থাকবে। বাসার কাছে বসে থাকলো বেজি। অনেক পরে হেলেদুলে বাসায় ফিরলো রাজা কেউটে। ওকে দেখে বেজি সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর হুঙ্কার দিয়ে বললো, ‘কোথায় গিয়েছিলে বন্ধুবর?’ ‘সেটা জানার কী দরকার?’ ‘দরকার আছে। এতো দূরে এমনি এসেছি।’ ‘পথ ছাড়ো। বিশ্রাম নিতে হবে আমাকে।’ ‘বিশ্রাম একটু পরে নিলে হয় না?’ ‘সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না।’ ‘কাঠঠোকরা কোথায় বিশ্রাম নেবে? ওর বাসা যে দখল করে আছো।’ ‘ওর ওকালতি করতে হবে না। ভালো চাইলে চুপচাপ চলে যাও।’ বেজি বুঝলো কেউটের বিবেক নেই। অন্যের ক্ষতি করা এর কাজ। ধারালো করাত দিয়ে একে ভালো করে সাইজ করতে হবে। সে লাফ দিয়ে কেউটের ঘাড়ে কামড় বসালো। কেউটেও পাল্টা আক্রমণের জন্য তৎপর হলো। শুরু হলো লড়াই। কেউটেকে পরাস্ত করে ওর দেহ টুকরো টুকরো করে ফেললো বেজি। কাঠঠোকরা বাসা ফিরে পেলো। বেজির মহানুভবতায় মুগ্ধ হলো তারা। ওখান থেকে বেজি এলো পেঁচক উকিলের দপ্তরে। উকিল তখন সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে খোশগল্পে মত্ত। ভালোই রোজগার হয়েছে তাদের। সেখানে আচমকা প্রবেশ করে বেজি বললো, ‘বেশ জমেছে তো। কতো রোজগার হলো আজ?’ ‘শুনে তোমার লাভ? তুমি হলে মূর্খ বেজি। কেন এসেছো এখানে?’ ‘এসেছি তোমার কল্লা নিতে।’ ‘বাজে কথা ছাড়ো। ভদ্র ভাষায় বলা শেখো।’ ‘ডিমের কেসে দশ লাখ নেয়া কোন ধরনের ভদ্রতা?’ ‘কি বলতে চাচ্ছো তুমি?’ ‘আমি এসেছি আগাম পাঁচ মিটিয়ে দিতে।’ ‘কাঠঠোকরোর দালালি করতে এসেছো?’ ‘তাই এসেছি। তোমার খারাপ লাগছে?’ সে উকিলের টুঁটি ধরে আছাড় মারলো। বার কয়েক আছাড় মারতেই পেঁচকের প্রাণবায়ু বেরিয়ে গেলো। ওর সহযোগীরা বেজির আক্রমণ থেকে বাঁচতে সেরেস্তা থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায়। সেখান থেকে বের হয়ে বেজি হাজির হয় বক দারোগার কাছে। খবর পেয়ে জান বাঁচাতে বক কোথায় চলে গেছে থানার কেউ বলতে পারে না। অনেক টাকা খরচ করে ওপর মহল থেকে বদলি নিয়ে অজানা জায়গায় চলে গেছে সে। হ
আরও পড়ুন...