কালো মথুরা
চিত্র-বিচিত্র জাকির খান জুলাই ২০২৩
কালো মথুরা কালচে ভূ-চর পাখি। এটি বিপন্ন প্রায় পাখি। বাংলাদেশের একমাত্র সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, রেমা কালেঙ্গা অভয়ারণ্য ও লাউয়াছড়া চিরহরিৎ বনে মাঝে মধ্যে মথুরা দেখতে পাওয়া যায়।
কালো মথুরার বৈজ্ঞানিক নাম Lophura leucomelanos, ইংরেজি নাম Kalij pheasant। মথুরার ৯টি প্রজাতির মধ্যে এই প্রজাতি পূর্ব ভুটান, বাংলাদেশ, উত্তর-পূর্ব ভারত ও মিয়ানমারে দেখা যায়।
এদের দৈর্ঘ্য সাধারণত ৬২ সেন্টিমিটার, ডানা ২২ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ৩.৫ সেন্টিমিটার, পা ৭.৫ সেন্টিমিটার, লেজ ২৩ সেন্টিমিটার ও ওজন ১.৩ কেজি। স্ত্রী ও পুরুষ পাখির মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।
পুরুষ মথুরার পিঠ উজ্জ্বল নীল ও কালো রঙ মেশানো। কোমর ও পেছনের পালকের প্রান্ত সাদা। মাথার চূড়ার পালক খাড়া ও পেছনমুখী। মুখ পালকহীন, মুখের চামড়া ও গলায় ঝুলন্ত লতিকা উজ্জ্বল লাল।
স্ত্রী মথুরার দেহে অনুজ্জ্বল বাদামি পালকের ধূসর প্রান্ত আঁশের মতো দেখায়। মাথার চূড়া ও লেজের পালক প্রায় বাদামি। গলা পীতাভ-বাদামি। কোমর ও পায়ের পালকের প্রান্তদেশ ফিকে। চোখের আশপাশের অল্প একটু অংশ পালকহীন ও উজ্জ্বল লাল। স্ত্রী ও পুরুষ মথুরার উভয়ের চোখ পিঙ্গল থেকে কমলা-বাদামি। উভয়ের লেজ মোরগের লেজের মতো। পা ও পায়ের পাতা বাদামি।
অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি দেখতে প্রায় স্ত্রী মথুরার মতো, তবে পিঠে কালচে-বাদামি ও পীতাভ ডোরা দেখা যায়।
কালো মথুরা বনের প্রান্তে ও বনসংলগ্ন খোলা জায়গায় বিচরণ করে। সাধারণত জোড়ায় জোড়ায় বা পারিবারিক ছোটো দলে থাকে। ভোরে ও গোধূলিতে এরা বেশি সক্রিয় থাকে। দিনের বেলা গাছের নিচু ডালে বিশ্রাম নেয়। সকাল ও সন্ধ্যায় নিচু স্বরে মুরগির মতো ডাকে। এরা খুব লাজুক পাখি, মানুষের আনাগোনা টের পেলে দ্রুত লুকিয়ে পড়ে।
এরা মাটিতে ঘুরে ঘুরে খাবার খুঁজে বেড়ায়। এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে বাঁশবীজ, ডুমুর, বটফল, পিঁপড়া, উইপোকা, ছোটো সাপ ও গিরগিটি।
সাধারণত মার্চ থেকে অক্টোবর মাসে পুরুষ কালো মথুরার ডাকাডাকি বেড়ে যায়। স্ত্রী মথুরা ঘন ঝোপের নিচে নখ দিয়ে মাটি আঁচড়ে পাথর, লতাপাতা বা ঘাসের গোছা দিয়ে বাসা বানায়। বাসা বানানো শেষে ৬-৯টি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো ফিকে-পীতাভ বা পীতাভ-সাদা থেকে লালচে পীত বর্ণের হয়। স্ত্রী মথুরা একাই ডিমে তা দেয়। ২০-২১ দিনে ডিম ফোটে।
মথুরা আজ বিভিন্ন কারণে বিপন্ন প্রায় প্রাণী। বাংলাদেশের ১৯৭৪ ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত হয়েছে।
আরও পড়ুন...