কিশোর বয়সে প্রস্রাবের ইনফেকশন

কিশোর বয়সে প্রস্রাবের ইনফেকশন

স্বাস্থ্যকথা ডা. এহসানুল কবীর ফেব্রুয়ারি ২০২৪

বর্তমানে ইউরিনের ইনফেকশন খুবই পরিচিত একটা রোগ। এটাতে আক্রান্তের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে কিশোর বয়সেও প্রস্রাবের ইনফেকশনের হার বেশ দেখা যাচ্ছে ইদানীং। মেয়েদের এটা বেশি হতে দেখা যায়। নানা কারণে কিশোর-কিশোরীরা এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই সঠিক সময়ে দ্রুততার সাথে সঠিক চিকিৎসা করাতে পারলে এবং পাশাপাশি কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে পারলে এ রোগ থেকে সহজেই পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।


প্রস্রাবের ইনফেকশন কী?

আমরা জানি আমাদের শরীরে কিডনি ছাকনির কাজ করে অর্থাৎ শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য তরল ও অতিরিক্ত পানি বের করে দেয় কিডনি। এরজন্য কিডনির সাথে সংযুক্ত আরো কিছু অঙ্গপ্রত্যঙ্গসমূহের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই কাজটি সুচারুভাবে সম্পন্ন হয়। এই কাজে নিয়োজিত টোটাল অঙ্গপ্রত্যঙ্গসমূহকে এক কথায় “মূত্রতন্ত্র” বলে। এই মূত্রতন্ত্রের যে-কোনো অংশে জীবাণুর সংক্রমনকে সোজা কথায় প্রস্রাবের ইনফেকশন বলা হয়।


কারণ কী

প্রস্রাবের ইনফেকশনের কারণ হিসেবে বলা যায় যে, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করা, যৌনাঙ্গ এবং এর চারপাশ নিয়মিত পরিষ্কার ও শুকনা না রাখা, বেশি টাইটফিট জামাকাপড় পরা, অতিরিক্ত মাত্রায় চিনিযুক্ত খাবার বা পানীয় পান করা, প্রস্রাব সম্পূর্ণ ক্লিয়ার করে না করা। এছাড়া কিডনিতে পাথর, মূত্রথলিতে জন্মগত কোনো ত্রুটি থাকা, শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং কৃমিজনিত কারণেও প্রস্রাবের ইনফেকশন হতে পারে।


লক্ষণসমূহ কী কী?

স্বাভাবিকের চেয়ে ঘন ঘন অথবা হঠাৎ করে প্রস্রাবের বেগ হওয়া, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, চুলকানি হওয়া, প্রস্রাবে অস্বাভাবিক দুর্গন্ধ ও ঘোলাটে রং বা প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া ইত্যাদি। এছাড়াও হঠাৎ বিছানায় প্রস্রাব করা, বমি বমি ভাব, তলপেটে ব্যথা, কোমর বা পাঁজরের পেছনে ব্যথা হওয়া, জ্বর হওয়া, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দেওয়া ইত্যাদি উপসর্গগুলোও থাকতে পারে। 


রোগ নির্ণয়

উপরিউক্ত লক্ষণগুলো দেখা দিলে অতি সত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসকগণ রোগের ইতিহাস ও লক্ষণ বুঝে প্রস্রাবের বিভিন্ন পরীক্ষাসহ অন্যান্য পরীক্ষা করে নিশ্চিত হবেন এ ব্যাপারে। বিশেষকরে প্রস্রাবের টেস্ট, আলট্রাসনোগ্রাফি, রক্ত পরীক্ষা ইত্যাদি করা লাগতে পারে।


চিকিৎসা

রোগের ধরণ ও নির্দিষ্ট পরীক্ষা-নিরিক্ষা শেষে সুনির্দিষ্ট এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করলে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে এর সাথে চিকিৎসক নির্দেশিত কিছু নিয়মকানুনও মেনে চলতে হয়। যেমন- পর্যাপ্ত পানি পান করা অর্থাৎ দৈনিক ৬-৮ গ্লাস পানি পান করা উচিৎ, প্রস্রাবের বেগ আসলে অনেকক্ষণ চেপে না রেখে দ্রুত প্রস্রাব করা এবং মূত্রথলি সম্পূর্ণ ক্লিয়ার করে প্রস্রাব করা, টয়লেট করার পর টিস্যু পেপার দিয়ে সর্বদা সামনে থেকে পেছনে পরিষ্কার করা, বেশি টাইটফিট জামাকাপড় না পরা ও সর্বদা সুতির পোশাক পরা, অতিরিক্ত মাত্রায় চিনিযুক্ত খাবার বা পানীয় এড়িয়ে চলা। 


প্রতিরোধের উপায়

মনে রাখতে হবে যে, প্রস্রাবের ইনফেকশন একবার হলে এটা বারবার হতে পারে। সেজন্য স্বাস্থ্য সচেতনতা খুবই জরুরি বিষয়। এছাড়া নির্দেশিত এন্টিবায়োটিকের কোর্স পুরোমাত্রায় গ্রহণ করা অতীব জরুরি। কারণ এন্টিবায়োটিকের ডোজ অসম্পূর্ণ ও সঠিক মাত্রায় না হলে পুনরায় প্রস্রাবের ইনফেকশন হবার সম্ভাবনা বেশি থাকবে। তাছাড়া ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। পারতপক্ষে পাবলিক টয়লেট এড়িয়ে চলা ভালো। তাছাড়া দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাবের বেগ আটকে রাখা উচিত নয়। পাশাপাশি মনে রাখতে হবে যে, নিয়মিত খাদ্যাভ্যাস ও মৌসুমী ফল খেতে হবে বিশেষকরে লেবু, কমলা, মাল্টা, আনারস ইত্যাদি। হ

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ